#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_১৫
#জান্নাতুল_বিথী
চোখ পিটপিট করে তাকাতেই দেখি অয়ন আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে।অয়নকে এভাবে তাকাতে দেখেই আমি আবার চোখ বন্ধ করে ফেলি।আমার কাজে অয়ন নিশব্দে হাসে।মাথায় আলতো হাতে বিলি কেটে বলে..
“এখন কেমন লাগছে.????”(অয়ন)
অয়নের কথা শুনে আমি চোখ খুলে লাফদিয়ে উঠতে গিয়ে মাথায় ব্যাথ্যা লাগায় আউচ বলে উঠতেই অয়ন আমাকে ধরে বসায়।আমি অয়নের মুখের দিকে তাকাতেই রেগে বলে উঠে…
“তুমি সারাজীবনের কেয়ারলেস কেয়ারলেসই থেকে যাবে।ইডিয়েট।”(অয়ন)
আমি অয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে কাদো কাদো গলায় বলি…
“আমি কি করেছি.???”(আমি)
“কি করছি মানে.??বৃষ্টিতে ভিজতে কে বলছে তোমায়।যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে.???(অয়ন)
“তাহলে কি.????”(ভ্রু কুচকে)
“তোমার মাথা।…”(অয়ন)
“আচ্ছা আমার আবার কি হলো..?????”(আমি)
“কি হয়েছে মানে সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে আর মেডাম বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজতেছে।..”(অয়ন)
“কই কি হলো আমি তো একদম ঠিক আছি..”(আমি)
“জ্বরের কারনে উল্টা পাল্টা বকা শুরু করছো আবার বলো যে তুমি ঠিক আছো।???”(অয়ন)
আমি কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
“জীবনেও শুধরাবে না তুমি।”(অয়ন)
“শুধরে দেওয়ার জন্য কেউ থাকলে তবেই তো শুধরাবো।”
“খুব কথা বলতে শিখছো দেখছি।”(অয়ন)
“আমি তো ছোট বেলা থেকেই কথা বলতে পারি।নতুন করে শিখতে হবে নাকি।”(আমি)
আমার কথা শুনে অয়ন মাথায় হাত দিয়ে বিরবির করে বলে..
“ইয়া আল্লাহ কোন পিচ্ছি মেয়ের প্রেমে পড়লাম আমি।”
“কিছু বলছেন আপনি.???”(আমি)
অয়ন কিছু না বলে আমার দিকে ঝুকে আসতেই আমি একটু সরে যেতে নিলেই অয়ন আমাকে এক হাত দিয়ে কাছে এনে কপালে হাত দেয়। তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে বলে..
“দেখছিলাম জ্বর আছে কিনা।এমনিও তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”(অয়ন)
তার মুখে এই কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়ি। নিজের দুই কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি।পরক্ষনে ভেবে দেখি সে তো আর আমাকে ভালোবাসে না যাকে ভালোবাসে হয়তো তার কথাই ভাবে সারাক্ষন।আমি কি আর তার কিছু লাগি নাকি।তারপরও চিৎকার করে বলি..
“যদি এটাই সত্যি হয় তাহলে বিয়ে করলেন কেনো।কেনো এতো কেয়ার করেন।এন্সার মি.”(চিৎকার করে)
“তোমার উপর আমার কিছু দায়িত্ব আছে স্বামী হিসেবে।তাই পালন করার চেষ্টা করছি।”(অয়ন)
“চাই না আমি এই ধরনের কেয়ার।এমন দায়িত্ব পালন করার প্রয়োজন বোধ করি না।আমি নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারি।”
বলেই আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ি।দিয়ার কাজে অয়ন ভ্যবাচেকা খেয়ে যায়।পরক্ষনে নিজেকে সামলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
★
★
সারাদিনে আমি আর অয়নের সাথে দেখা করি নাই।অনেক কান্না করেছি আমি সারাদিনে।অয়নের কিছু কাজে মনে হয়েছিলো অয়ন আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু আমার ধারনা সত্যিই ভুল ছিলো।এটা আমি মেনে নিতে পারি নাই।তাই কান্না করছি।সারাদিনে অয়নকেও আমি আর দেখি নাই।রাত অনেক হয়েছে অথচ অয়ন এখনো অব্দি বাড়ি আসে নাই।আমি বালিশে হেলান দিয়ে বসে অয়নের জন্য অপেক্ষা করছি।যতোই রাগ বা অভিমান করি না কেনো এখন অনেকটা চিন্তা হচ্ছে। ফোন হাতে নিয়ে অয়নকে কয়েকবার ফোন করি।কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই।এক পর্যায়ে ফোন দিতে দিতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি।..
★
রাত ২ টা
অয়ন রুমে ডুকে আস্তে দরজা বন্ধ করে দেয়।যেনো কারো ঘুম না ভাঙ্গে।অয়ন রুমে এসে লাইট না জ্বালিয়েই ফ্রেস হতে চলে যায়।ফ্রেস হয়ে এসে দেখে দিয়া খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।হয়তো তার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ছে।অয়ন আস্তে করে দিয়াকে নিজের বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ে।
,
সকালবেলা সূর্যের আবছা আলো মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।উঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।কেউ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।আমি হালকা মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখি আমি অয়নের বুকে শুয়ে আছি।দেখতেই মুখে হাসি ফুটে উঠে।কিন্তু অয়নের কপালে ব্যান্ডেজ দেখে আমি আৎকে উঠি।তাড়াতাড়ি অয়নের হাত সরাতে নিতে গেলেই অয়ন আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমাকে।..
“অয়ন দেখি ছাড়ুন আমাকে।”(আমি)
“দিয়ুপাখি সারারাত ঘুমাতে পারি নাই এখন তো ঘুমাতে দাও।”(ঘুম ঘুম চোখে অয়ন বলে)
“আজিব। আপনি ঘুমান আমাকে ছেড়ে।আর আঘাত লাগছে কি করে আপনার.???”(আমি)
“তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসবেও না দিয়ুপাখি। “(অয়ন)
“এমনিতে তো আমার প্রতি আপনার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।তাহলে একথা বলেন কেনো।.???”
আমার কথা শুনে অয়ন আমাকে ছেড়ে দেয়।আমি উঠে বসতেই অয়নও উঠে বসে।তার হাতেও ব্যান্ডেজ করা।এবার আমি আরও ভয় পেয়ে যাই।তার হাত হাতের মুঠোয় নিয়ে বলি….
“কি হইছে আপনার এতো আঘাত লাগলো কি করে।.????”(আমি)
“আমি ঘুমাবো ডিস্টার্ব করবে না আমাকে।”(অয়ন)
“আগে বলেন কিভাবে এতো আঘাত লাগলো আপনার.????”(আমি)
“কাল রাতে কিছু লোক ট্রাক বোঝাই করে পেনসিডিল নিচ্চিলো তাদের সাথে মারামারি করতে গিয়ে হালকা একটু আঘাত লাগছে দিয়ুপাখি।”(চোখ ছোট ছোট করে বলে অয়ন)
“এভাবে কেউ মারামারি করে।????লাল তেলাপোকা নীল কুমিরের বাচ্ছা এক লাথি দিয়ে উগান্ডায় পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।তোদের যদি সামনে পাই তাহলে ডিসুম ডিসুম দিয়ে দিমু।কুত্তা।”(আমি)
অয়ন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।..
“কার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্দার করতেছো।..????”(অয়ন)
“যাদের কারনে আপনার এই অবস্থা হলো তাদের।”(আমি)
আমার কথা শুনে অয়ন ফিক করে হেসে দেয়।..
“আমি না কোনো দিন নীল কুমির দেখি নাই দেখাবে একটু প্লিজজজজ।..???”(অয়ন)
কথা শেষ করেই অয়ন হাসতে থাকে।অয়নকে এভাবে হাসতে দেখে তার মুখে আমি বালিশ ছুড়ে দেই।তাতে তার হাসির শব্দ আরও দ্বিগুন হলো।আমি ভেংচি কেটে ওয়াশরুমে চলে যাই।ফ্রেস হয়ে এসে আমি সর্তকতার সহিত অয়নের আঘাত গুলোকে ড্রেসিং করে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেই।এর মধ্যেই অয়ন ঘুমিয়ে গেছে।
#চলবে_কি.??????