হৃদয় জুড়ে শুধু তুমি পর্ব-১২+১৩

0
1815

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_১২
#জান্নাতুল_বিথী

“আচ্ছা দিয়ুপাখি তোমার জীবন সঙ্গী হিসেবে কেমন ছেলে পছন্দ।.????”(অয়ন)

কথাটা শুনে আমি অয়নের দিকে আড় চোখে তাকাই।তাকিয়ে দেখি অয়ন আধ ঘন্টা আগে যেমন ছিলো এখন ও ঠিক ওই ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ সারাদিন আমি অয়নদের বাড়িতে অথচ অয়নকে দেখছি রাত ১০ টায়।তাও আবার কোথা থেকে যেনো এসে আমার হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে আসে।এসে নিজের পাশে আমাবে বসতে বলে নিজেই হাত ধরে বসিয়ে দেয়।

তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।আজ আকাশের তারাদের খেলা।চারদিকে তারারা জ্বল জ্বল করছে। চারদিকের পরিবেশ আমি মুগ্ধ নয়নে দেখছি।শহরের কোলাহল তো আছেই।কিন্তু তার মাঝেও এমন একটা পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ না হয়ে পারি নাই।অয়নের গত আধ ঘন্টা ধরে চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো।এতক্ষনে তার মুখে একটা কথা শুনলাম মাত্র।আমি অয়নের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলি..

“আমি আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে এমন একজনকে চাই যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে।কখনো চোখে হারাতে দিবে না।সব সময় আমার খেয়াল রাখবে।তার থেকে কেয়ার পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে আমি কেয়ারলেস হতেও রাজি।সে প্রতিদিন না হলেও সময় পেলেই আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।আমার ছোট ছোট আবদার গুলো সব সময় হাসি মুখে পূরন করবে।

আমি ভুল করলে আমাকে শাসন করবে ঠিকই কিন্তু কখনোই ছেড়ে যাবে না।যে আমার উপর রাগ করলেও আড়ালে আমার খোজ নিবে যত্ন নিবে।মুখে না বললেও চলবে যে ভালোবাসি প্রিয় কিন্তু কাজে তা প্রকাশ করতে হবে।যে মানুষটা শতকিছু হয়ে গেলেও আমার হাতের বাধন ছাড়বে না।আর বলবো..????”(আমি)

অয়ন মুগ্ধ চোখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ও ভাবতেও পারে নাই ওর মনে এমন কিছু আছে।অয়ন মুচকি হেসে বলে..

“না থাক আর বলতে হবে না।যতোটুকু বলছো তাতেই এনাফ।আচ্ছা এটা বলো তুমি কি করতে পছন্দ করো…”(অয়ন)

“Gardening…”(আমি)

“সত্যিই.?? “(অয়ন অবাক চাহুনিতে বলে)

“হুমম সত্যি।জানেন আমার না অনেক ইচ্ছা আমার অনেক বড় একটা বাগান থাকবে যেখানে সব ধরনের ফুল থাকবে।চারদিকে পাখিদের আনাগোনা। আর সেখানে প্রিয় মানুষটির পাশে বসে তার কাধে মাথা রেখে চাঁদনী রাতে দুজনে বসে অনেককক গল্প করবো।মনের কথা বলবো।কিন্তু আমার এই ইচ্ছে টা হয়তো কখনোই পূরন হবে না।..”(আমি)

অয়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিমি এসে খেতে ডেকে নিয়ে যায়।

আমি আর ইমা শুয়ে শুয়ে গল্প করতেছি।সিমি শিহাব ভাইয়ার সাথে চেটিং করতেছে।এটা নিয়ে ওকে কিছুটা জ্বলাতন করেছিলাম।কিন্তু সিমি আর কিছুই বলে নাই।..

“জানচ দিয়ু আমি না অয়ন চৌধুরির উপর ক্রাশ খাইছি।..”(ইমা)

ইমার কথা শুনে আমি খানিকটা রেগে যাই।..

“ওই বজ্জাত মাইয়া একদম এই কথা বলবি না।”

ইমা আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে..

“তোর এতো জ্বলে কেনো.???”(ইমা)

ইমার কথা শুনে আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাই তারপর আমতা আমতা করে বলতে থাকি..

“ই-য়ে তুই জানচ না ক্রাশ মানেই বাশ।ক্রাশ খাইলেই বাশ খেতে হয়।আর আমি তো চাইনা আমার বন্ধু এই বয়সে বাশ খেয়ে ব্যাকা হয়ে যাক।”(আমি)

আমার কথা শুনে ইমা হেসে দেয়।..

“দোস্ত অন্য কিছুর গন্ধ পাইতাছি কিন্তু।..”(ইমা)

“তোর তো এমনই মনে হবে।যা সর কথা বলবি না একদম আমার সাথে।..”(আমি)

হঠাৎ আমার ফোনে মেসেজের টুংটাং শব্দ হয়। স্কিনে লেখা ‘অচেনা পাগল’ মেসেজটায় যা লেখা

‘Diyupakhi ato rat obdi jage thakle sorir kharap korbe to.jao gumao pakhi.noyto kopale dhukko ase kintu.’

আরেহ আবারও থ্রেট।এবারতো আমার ইচ্ছে করছে ওই অচেনা পাগলকে ইচ্ছে মতো দোলাই দিতে।কিন্তু কে এই অচেনা পাগল।ইমা কে বলতেই ও বলছে অয়ন।আমারও অয়নকে সন্দেহ হয়।কারন অয়নই শুধু আমাকে দিয়ুপাখি বলে ডাকে।হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।কিভাবে এই অচেনা পাগলকে ধরবো তার উপায় হিসেবে।ভাবতেই মুখে ডেবিল মার্কা হাসি ফুটে উঠে।

(বাবারে বাবা দিয়াও দেখছি ডেকিল মার্কা হাসি দিতে জানে:লেখনিতে লেখিকা আপা)

#চলবে_কি…..?????

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_১৩
#জান্নাতুল_বিথী

এক ঘন্টা যাবত অয়নের পেছনে পেছনে ঘুরতেছি একটু তার নাম্বারটা নিতে কিন্তু সে শুধু বলতেছে তার নাম্বার কোনো মেয়েকে নাকি দিতে পারবেনা সে।তাকে নাকি ডিস্টার্ব করবে।এই কথা শুনে আমার অনেক রাগ লাগে।কিন্তু কিছু বলি নাই।দেখতে দেখতে সিমির বিয়ের দিন চলে আসে।এর মধ্যে দুইদিন আমি অয়নের সাথে কথাও বলি নাই আর না করেছি দেখা।বাড়ি ভর্তি মানুুষ গিজগিজ করছে।আমার বেশি মানুষের মধ্যে থাকতে বিরক্ত লাগে তাই রুমে বসে আছি।সব রুম জুড়েই মানুষের আনাগোনা শুধু সিমির রুম ছাড়া।কারন অয়ন নিষেধ করছে এই রুমে কারো ডুকতে।তাই কেউ সাহস করে ঢুকে না।আর আমিও শান্তিতে আছি।যাইহোক সিমিকে রেডি করানো হচ্ছে।পার্লারের মেয়েরা আসছে।সিমিকে লাল বেনারসি পরানো হইছে।চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া গাড় লিপস্টিক মুখে অনেক সুন্দর করে মেকাপ করা।চুলগুলো বেলি ফুল দিয়ে মোড়া।সিমিকে সাজানোর পর আমি ওর দিকে মুগ্ধ নয়নে ছেয়ে আছি।কারন সিমিকে অনেক সুন্দর লাগছে।..

“উপপপপ আজকে তো তুমি শিহাব ভাইয়াকে পাগল করে দিবে।”.(ইমা)

“একদম ঠিক কইছো দোস্ত।এতোটুকুই যথেষ্ট ভাইয়াকে পাগল করার জন্য।..”(আমি)

আমাদের কথোপকথনে সিমি অনেক লজ্জা পায়।..

“উপপ আপু তোমরা এবার একটু রেডি হয়ে নাও প্লিজজ।..”(সিমি)

আমি আর ইমা দুজনেই জোরে হেসে দেই।

_______________________________

অয়ন বেচারির আজ দুদিন অবস্থা বেহাল।আজ দুদিন যাবত নিজের প্রেয়সী কে দেখছে না।কতো চেষ্টা করছে অথচ দেখাই মিললো না।অয়ন নিজের বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো।..

“দুর এর থেকেও নিজেদের বাড়ি থাকলেই আরও বেটার হতো।”(বিরবির করে বলে অয়ন)

“কিরে অয়ন কি বিরবির করচ।.??”(রিহান)

“হ্যা হ্যা জানি অয়ন।এটা কিন্তু প্রেমে পড়ার পূর্ব লক্ষন।..”(টিটকারি করে বলে নিলা)

“প্রেমে তো পড়ছি সেই কতো আগেই।নতুন করে আবার পড়তে হবে নাকি.???”(অয়ন)

কথাটা শুনামাত্রই অয়নের সব বন্ধুরা ওওও বলে চিৎকার করে উঠে।একজন একদিক থেকে প্রশ্ন ছৃড়ে দিতেছে।অয়ন কিছু বলার আগেই একজন বলে উঠে.

“দেখ অয়ন তোর বোন আসতেছে।.???”(নিলা)

অয়ন ওইদিকে তাকাতে তার দুচোখ আটকে যায়।সিমির সাথে তার পরীও যে নামছে।আজ দুদিন পর তার পরীকে সে দেখছে।তাও আবার শাড়ি পরায়।দিয়া আজ মেরুন কালারের একটা শাড়ি পরেছে।সাথে হাত ভর্তি লাল চুড়ি। ঠোটে হালকা লিপস্টিক।চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া।মুখে আর কোনো প্রসাদনি ইউজ করে নাই।এই টুকুতেই অয়ন ফিদা হয়ে গেছে।চোখের পলক পড়ছেনা।

________

আমি আর ইমা পাশাপাশি হাটতেছি।আমি বেহায়া দুচোখ কেনো জানি অয়নকে খুজতেছে।হঠাৎ পিচ্ছি মেয়ে এসে আমার হাত হ্যাচকা টাক দিয়ে বলে..

“আপুই আমাকে একটু ওই রুমটায় নিয়ে চলো না প্লিজজ।”

আমি পিচ্ছিটার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলি।.

“আচ্ছা ঠিক আছে চলো।তুই(ইমার দিকে তাকিয়ে) দাড়া আমি এখনই আসছি।”

বলেই আমি পিচ্ছির হাত ধরে এগিয়ে যাই।পিচ্ছি মেয়েটা আমাকে রুমের মধ্যে ডুকিয়ে বলে..

“আপুই ওই দেখো কি এটা…”(পিচ্ছি)

আমি ওই দিকে তাকাই।দেখি ওইখানে একগুচ্ছ গোলাপ রাখা।আমি ওই দিকে যেতে নিলে দরজা বন্ধ করার শব্দে চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকাই।দেখি দরজা বন্ধ করা আর সাথে সাথে পুরো ঘর অন্ধকারে ডেকে যায়।কেপে উঠি আমি।দরের দিকে যেতে নিলেই হাতে টান অনুভব করি।ওই দিকে ফেরার আগেই একজন আমাকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।আমি ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলি।একটু পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে আরও ভয় পেয়ে যাই।চারদাকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।অচেনা লোকটি আমাকে পেচন দিকে ফিরিয়ে আমার চুলে কি যেনো করছে।এর মধ্যে আমার বকবক তো আছেই..

“আরেহ কে আপনি।আর কি করছেন এটা।ছাড়ুন আমাকে লাগছে আমার।”(আমি)

কিন্তু কে শুনে কার কথা। সে তার কাজ করে আমার হাতে কিছু একটা ধরিয়ে দিয়ে অন্ধকারে মিশে যায়।আর সাথে সাথে দার খুলে যায়।আমি এক দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।হাতে তাকিয়েদেখি আমার হাতে একটা চিরকূট।যাতে লেখা..

“আজ তোমার থেকে চোখ তোলা দায় হয়ে পড়ছে প্রিয়।তারপরও তোমার সাজটা কেমন জানি সম্পুর্ন হলো না।তাই সম্পুর্ন করে দিলাম।..”

আমি আমার মাথায় হাত দিয়ে দেখি কতোগুলো বেলি ফুলের মালা দিয়ে মোড়া আমার চুল।আমার মুখে স্নিগ্ধময় হাসি ফুটে উঠে।হঠাৎ আমার সামনে একটা ছেলে এসে দাড়ায়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই অয়ন ছেলেটাকে নীল বলে ডাক দেয়।ছেলেটা চলে যায়।আমি অয়নের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আকাশি রঙের পাঞ্জাবি তে অয়নকে একদম হিরোর মতো লাগছে। অয়ন আমার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে স্থান ত্যাগ করে।

_________________________________

দেখতে দেখতে বিয়ে শেষ হয়ে বিদায়ের সময় চলে আসে।সিমি তার বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করছে।উনারাও নিজেদের চোখের পানি আটকাতে পারে নাই।আমি অয়নকে আজ প্রথমবার দেখলাম কাদতে।একটা বোনকে ছেড়ে যাওয়ার পিলিংসটা একজন ভাই ছাড়া হয়তো আর কেউই বুঝে না।আজ আমি আমার ভাইয়ের অভাব বোধ করছি।আজ যদি আমার একটা ভাই থাকতো তাহলে কি হতো।এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ি এসে পৌছাই।বাবা আমাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়েছে তাই আমরা চলে আসছি।আজ প্রায় ;;;তিনদিন অয়নের সাথে কথা বলি না আমি।ভালো লাগছে না কিছু তাই।


অন্ধকার রুমের মেঝেতে বসে আছে অয়ন।হাটুতে মুখ গুজে দিয়ার একটা ছবির দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মনটা অনেক খারাপ।

“দিয়ুপাখি ভেবেছিলাম তোমাকে পড়ালেখা কমপ্লিট করা পর্যন্ত টাইম দেবো।কিন্তু এখন দেখছি তোমাকে ছাড়া আমার একটা মুহূর্ত ও হাজার বছরের মতো লাগে।আমি আর পারছি না পাখি তোমাকে ছাড়া থাকতে।প্লিজজ করবে কি আমায় বিয়ে।খুব শীগ্রই তোমাকে আমার করে নেবো দিয়ুপাখি। তৈরি থেকো।..”(বলতে বলতে অয়নের চোখ থেকে একফোটা জল গড়িয়ে পড়ে)

#;চলবে_কি.?????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে