হৃদয় জুড়ে শুধু তুমি পর্ব-১০

0
1907

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_১০
#জান্নাতুল_বিথী

ভার্সিটি যেতেই আমার কিছু ফ্রেন্ড এসে আমাকে ঘিরে দরে।সবাই অলরেডি সব কিছু যেনে গেছে।মিলি আমার সাথে কি করেছে ওর ভাই সহ সবাই কি করেছে বা করতে ছেয়েছে সব কিছু এই কয়দিনে সবাই জেনে গেছে।সবাই আমার আর মিলির জুটি নিয়ে অনেক সুনাম করতো কিন্তু এখন এমন টা হওয়ায় সবাই এখন ওকে ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখে।ওর কথা এই কয়দিনে কেউ শুনতেও চায় না। আমি কিছুক্ষণ ওদের সাথে গল্প করে তার পর এক বিষয় ক্লাস করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসি।তারপর হেটে একটা নদীর পাড়ে এসে একটা বেঞ্চিতে বসি।জায়গাটা একদম জনমানবশূন্য। কিন্তু তারপর ও আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে কেউ একজন গভীর দৃষ্টিতে মনোযোগ দিয়ে আমাকে দেখছে।আমি চারপাশটা ভালো করে দেখে নেই।কিন্তু কোথাও কাউকে দেখতে পাই না।তাই আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আবার প্রকৃতির দৃশ্য উপভোগ করতে থাকি।সত্যিই জায়গাটা এক কথায় অসাধারন।আমি একা থাকলে কেনো জানি অয়নের কথা মনে পড়ে যায়।উনাদের বাসায় থাকা কালে আমি কখনোই একা থাকতাম না।আমার সাথে কেউ না কেউ থাকতোই।অয়নের সাথে কাটানো দুষ্টু মিস্টর সময় গুলো মনে পড়ে যায়।আনমনেই হেসে উঠি আমি।আর সাথে সাথে আমার ফোনে মেসেজ আসে একটা যা দেখে আমি পুরোই অবাক হয়ে যাই।তাতে লেখা..

“এভাবে হেসো না প্রিয়সী। পাগল হয়ে যাই তোমার মন মাতালো হাসিতে।”

মেসেজটা দেখে আমি আবারো আশেপাশে তাকাই কিন্তু কাউকে দেখতে পাই নাই।ওই নাম্বারে ফোন করতেই ওই পাশ থেকে বলে উঠে..

“আপনার ডায়াল কৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। দয়া করে অপেক্ষা করুন নয়তো আবার চেষ্টা করুন।”

এইবার আমি বিরক্ত বোধ করি।আর সব চায়ে অবাক ব্যাপার হলো এই নাম্বারটা থেকেই এখন মেসেজ আসছে যে নাম্বার থেকে কালকেও ফোন+মেসেজ আসছিলো।কালকেও আমি সাথে স্থে ফোন করেছিলাম তখনও ফোন বন্ধ বলেছিলো।এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই আমি উঠে দাড়াই।আর হাটতে শুরু করি।আকা বাকা মেঠো পথ দিয়ে হেটে এসে রাস্তায় দাড়াতেই দেখি একটা শুভ্র রঙের গাড়ি।গাড়িটা দেখতেই আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না এটা কার গাড়ি।কিন্তু সে এখানে আসবে কেনো।হ্যা এটা অয়নের গাড়ি। আর এখন আমি এটা ভাবছি যে অয়নের গাড়ি এখানে কি করছে। আমি গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি ভেতরে কেউ নেই।একটু খারাপ লাগে।মন খারাপ করে পেছনে তাকাতে গিয়ে আমি কারো বুকের সাথে জোরে ধাক্কা খাই।পড়ে যেতে নিয়েও পড়ি না। আর আমি অয়নের দিকে তাকিয়ে আছি অবাক চোখে।অয়ন কে কি কিউট লাগছে এখন। সাদা-কালো টি-শার্ট হাতা ফোল্ড করা চুল গুল স্পাইক করা আর চোখে সানগ্লাস। মুখে হাসি নেই তবে চিন্তিত মনে হচ্ছে।..

“আর ইউ ওকে দিয়ুপাখি..???? “(ব্যস্ত কন্ঠে বলে অয়ন)

“জ্ব-জ্বি।আপনি এখানে.???”(ভ্রু কুচকে)

“আ-আসলে এখানে একটা কাজে এসেছিলাম..”(অয়ন)

কাকতালীয় ভাবে আজ অয়নের ড্রেসের সাথে আমার ড্রেসের রঙ মিলে যায়।অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে বলে..

“হঠাৎ আমার ড্রেসের সাথে মিলিয়ে ড্রেস পড়লে কেনো..???”(অয়ন)

অয়নের কথা শুনে আমি অবাক চোখে অয়নের দিকে তাকিয়ে বলি..

“আজিব আমি কেনো আপনার সাথে মিলিয়ে পড়তে যাবো।আজ জানি না কিভাবে মিলে গেলো। আসলে আমি হোয়াইট আর ব্ল্যাক কালার টা অনেক পছন্দ করি তো তাই সব সময় এই কালার টাই বেছে নিতে পছন্দ করি।..”(আমি)

“আই সি।কিন্তু একটা কথা তোমাকে ব্ল্যাক কালারে অনেক সুন্দর লাগে।একদম পরীর মতো।”(আনমনে বলে উঠে অয়ন)

অয়নের মুখে আমার প্রশংশা শুনতে ভালোই লাগে।কিন্তু পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে অয়নের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলি!…

“আপনার লাভার গার্ল যদি এই কথা শুনে তাহলে তুলকামাল হয়ে যাবে।নিজের প্রেমিকের মুখে অন্য একজনের প্রশংসা শুনলে।..”(একটু হেসে বলি আমি)

“কখনোই না। আমার মেডাম এতোটাও হিংসুটে নয়।..”(অয়ন)

“তাহলে তো ভালোই হলো। বাট যদি আমি হতাম তাহলে কিন্তু খবর ছিলো।আমি ছাড়া যদি অন্য কোনো মেয়ের মুখের দিকে তাকায় তাহলে ওর চোখ তুলো ফুটবল খেলতাম।..”(ঠোট বাকিয়ে বলি আমি)

আমার কথা শুনে অয়ন ফিক করে হেসে দেয়।..

“বাপরে বাপ এতো ডেন্জারাস মেয়ে তুমি ভাবা যায়.???”(ভাবার অভিনয় করে)

“আচ্ছা দিয়ুপাখি চোখ তো অনেক চোখ এটা দিয়ে ফুটবল খেলা যাবে না তুমি চাইলে মারবেল খেলতে পারো”(অয়ন)

অয়নের কথা শুনে আমি হেসে দেই।..

“আচ্ছা অয়ন আপনাকে একটা কথা বলি..

“হুমমম..”(অবাক হয়ে)

“আমার দিয়া নামটাতো অনেক ছোট সেটাকে আপনি এতো বড় করে ডাকার কারন টা কি..????”(আমি)

আমার কথা শুনে অয়ন আমার মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে..

“তুমি চাইলে ডাকবো না।দিয়া বলেই ডাকবো।..”(অয়ন)

“সেটা বলি নাই আমি..?(আমি)

“তাহলে আর কিছু বলতে হবে না।চলো তোমাকে ড্রপ করে দেই।..”(অয়ন)

তারপর অয়নের সাথে গল্প করতে করতে বাসায় যাই।অয়নের সাথে গল্প করতে করতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো টের পাই নাই।তারপর আমি বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে ঘুমাই। ঘুম থেকে উঠে দেখি অলরেডি ৮ টা বাজে।আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে হালকা একটু নাস্তা করে পড়তে বসি।এতোদিন এতোকিছুর প্যারায় পড়া লেখা একদম করাই হয় নাই।তার উপর আবার সামনে পরীক্ষা। আজকেই নোটিশ ফেলাম আগামী ৩ দিন পর নাকি আমাদের পরীক্ষা। এতোদিন যা পড়ছি সব খেয়ে ফেলছি (আমার মতো😂😂) তাই পড়তে বসি।

________________________________

“কিরে অয়ন আর কতো দিন এভাবে ব্যাচেলার হয়ে থাকবি।বিয়ে কি করা লাগবে না..????তুই যদি বলচ তাহলে আমরা ওদের বাড়ি বিয়ের প্রোমোজম পাঠাবো।..”(অয়নের বাবা)

“না বাবা ওকে একটু সময় দাও।আমি হুট করেই বিয়ে করে ফেলতে চাই না।আমি চাই যাকে আমি বিয়ে করবো সে আমাকে ভালোবাসুক।তারপর বিয়ের দিকে যাবো।আর তা ছাড়া দুই একেই ওদের এক্সাম শুরু হবে।এতো প্যারার দরকার নেই আপাতো।..”(শান্ত হয়ে বলে অয়ন)

অয়নের কথা শুনে অয়নের বাবা একটা দীর্যশ্বাস ফেলে বলে..

“এতোদিনে হয়তো ও অন্যকারো হয়ে যাবে..??”(অয়নের বাবা)

“কখনোই এমন হবে না বাবা।আমি ওকে একবার হারিয়ে অনেক খোজার পর পেয়েছি।আর হারাতে কখনোই দিবো না।..”

বলেই দাড়িয়ে হাটা শুরু করে।দরজা পর্যন্ত এসে থেমে গিয়ে পেছনে না ফিরেই বলে..

“আমার একটা important মিটিং আছে।যেতে হবে।..”

বলেই হনহনিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।

#চলবে_কি..??????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে