হৃদয় জুড়ে শুধু তুমি পর্ব-০৯

0
1857

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_০৯
#জান্নাতুল_বিথী

“চলো ভাবী তোমাকে রেডি হতে হবে তো।..”(মিলি)

মিলির কথা শুনে আমি দমে যাই।আমি কখনোই ভাবতেও পারি নাই যে মিলির মতো মেয়ে দিনের পর দিন আমার সাথে বেইমানি করেছে।ওকে তো আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছি।আজ ও বেস্ট ফ্রেন্ড নামের কলঙ্ক।আমার হাত ধরে মিলি কথা টা বলতেই আমি ওর হাত ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে ওকে চড় দেই।..

“আমার ভুল ছিলো কি সেটা বল।তোকে বিশ্বাস করেছিলাম চোখ বন্ধ করে আর তুই সেই বিশ্বাসকে এভাবে ভেঙ্গে দিলি।কিভাবে পারলি তুই এটা।ছিহহহহহ তোর মতো মেয়েকে আমি আমার ফ্রেন্ড ভাবতাম কি করে সেটাই ভাবতেছি তাও আবার বেস্ট ফ্রেন্ড।..”(আমি)

আমার কথা শুনে মিলি হেসে দেয়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদি হাত উচু করে কিছু বলতে নিষেধ করে।আর আমার কাছে এগিয়ে এসে আমাকে উল্টো থাপ্পড় দেয়।যার ফলে আমি চিটকে নিচে পড়ে যাই।আদি আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে..

“আমার বোন তো শুধু মাত্র আমাকে সাহায্য করেছে।কখনোই তোকে বন্ধু মনেই করে নাই।শুধু তোর তালে তাল মিলিয়ে অভিনয় করে গেছে।তুই আমার বোনকে চড় মারার কে। এর শোধ সুদে আসলে নেবো আমি।শুধু একটু অপেক্ষা কর।…”

কথা গুলো বলেই আদি আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে দাড় করায়।আর আমাকে টেনে নিয়ে যেতে নেয়।আমার এক হাত আদি ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে একদিকে অপর হাতে টান অনুভব করায় আমি ওই দিকে ফিরে তাকাই।তাকাতেই অয়নকে দেখে আমার প্রান মনে হলো ফিরে পেয়েছি।আদির হাত আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমি অয়নকে জড়িয়ে ধরি।এই মুহূর্তে আমি নিজের মধ্যে নেই।তাই কি করছি নিজেও জানিনা।

অন্যদিকে আদি নিজের হাতে টান অনুভব করায় পেচনে ফিরে যা দেখে তাতে ও রীতি মতো ঘামতে থাকে।কিন্তু পরক্ষনেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে।..

“আরেহ তোমরা কে কোথায় আছো দেখো হিরো চলে এসেছে তার হিরোইনকে বাছাতে।উপপপপপ দেখার মতো বিষয়।what a romantic moment!!!!!!!! ”

আদির কথা শুনে অয়ন আমাকে চাগিয়ে একপাশে দাড়করিয়ে বলে..

“হিরো কি জানিনা তবে তোর মতো পশুর হাত থেকে কোনো মেয়েকে বাচাতে তো অবশ্যই আসতে পারি।..”

“হ্যা সেটা তো অবশ্যই জানি।তবে এখন অন্যের জীবন নয় নিজের জীবন বাচাও।”

বলেই হো হো করে হাসতে থাকে আদি।হাসা একটু থামিয়ে আবার বলতে শুরু করে..

“এই বাগি পুরো আমার গার্ড দিয়ে ঘেরা।বাড়ির ভেতরে দিয়ার মা বাবা আর তোমরা দুজন ছাড়া সবাই আমার লোক।তো কে বাচবে আর কে মরবে সেটা এখন নিজেই দেখে নাও।…”

বলেই আবারও হাসতে থাকে পাগলের মতো।আদির কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে অয়নের শার্ট খামচে ধরি।বাবা মাও প্রচুর ভয় পেয়ে গেছে।শুধু অয়ন কিছু বলছে না চুপ করে দাড়িয়ে আছে।হয়তো কারো অপেক্ষায় আছে।কারন দেখলাম বার বার দরজার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে।আদি আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে..

“আরে জান পাখি আমাকে তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো।আমি তোমার স্বামী লাগি যে।এভাবে আমাকে ভয় ফেলে চলে।..আর তুই(অয়নের দিকে তাকিয়ে)তোর হবু বউকে আজ আমি বিদেশে পাচার করে দেবো।একা ওকে না আর ৯৯ টা মেয়েকে ওর সাথেই পাচার করবো তুই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবি।কিছু করতে পারবি না।..”

বলে যেই না আমার হাত ধরতে যাবে ওমনেই অয়ন আদির হাত ধরে পেছন দিকে মচড়ে ধরে বলে…

“টাইপে একটু মিস্টেক হইছে মিস্টার আদি খান। এখন তুমি না কারো ক্ষতি করতে পারবে আর না দিয়ুপাখির কোনো ক্ষতি করতে পারবেন।…”

বলেই আদিকে মারতে থাকে।হঠাৎ এমন আক্রমনে আদি পাল্টা কোনো আক্রমন করতে পারছে না।মিলি ভাইয়া বলে চিৎকার করছে।আর সব গার্ডদের বলছে আদিকে গিয়ে ছাড়াতে কিন্তু সবাই তাদের মতো করেই দাগিয়ে আছে।কেউ অয়ন আর আদির মাঝখানে যেতে চায় না।মিলি দোড়ে যেতে নিলে কয়েকজন গার্ড এসে ওকে আটকে দেয়। অয়নের কাজে আমি নিজেও ঘাবড়ে যাই।কারন যেভাবে উনি মারতে শুরু করছে ওকে তো মেরেই ফেলবে।আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে অয়নকে ধরতে গেলে শিহাব ভাইয়া আমাকে আটকে দেয়।উনাকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।কারন উনি এতক্ষন এখানে ছিলেন না।..

“কি করছেন ছাড়েন আমাকে।উনি যেভাবে মারা শুধু করছে একদম মেরেই ফেলবে আদিকে।..”(আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলি)

“ভাইয়া নিজের রাগ না তোলা পর্যন্ত মারবে আপনি গিয়েও লাভ নেই।উনার রাগ কমাতে দিন।”(শিহাব)

উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।কিসের এতো রাগ উনার।কিন্তু এখন এসব ভাবার টাইম নেই আমার।তাই আমি তাড়াতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে অয়নের কাছো দৌড়ে গিয়ে বলি..

“কি করছেন মেরে ফেলবেন নাকি উনাকে..???”(অয়নকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলি)

“হ্যা মেরে ফেলবো ওর সাহস হয় কি করে তোমার গায়ে হাত তোলার.ওর হাত ভেঙ্গে ফেলবো আমি…”(অয়ন আদিকে মারতে মারতে বলে)

এবার শিহাব ও এগিয়ে এসে অয়ন কে ছাড়িয়ে নেয়।অয়ন হাপাতে থাকে।আদিকে মারতে মারতে আধমরা বানিয়ে ফেলে।..

“বলেছিলাম না তোর টাইপে একটু না পুরোই ভুল আছে।সব কিছুই আমাদের প্লেন মতো হয়েছে।এখন তোর হাতে না আছে ৯৯ টা মেয়ে আর না আছে দিয়ুপাখি। আর না আছে তোর বাবা।তোর বাবার এই ধরনের কাজের জন্য উনাকে আবার এরেস্ট করা হয়েছে আর এখন তোরা দুজনও ওই এবই জায়গায় যাবি।আর বাকী রইলো এখানের গার্ড ওদের তো অনেক আগেই আমার কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছি।..”(অয়ন)

অয়নের কথা শুনে আদি ঘাবড়ে যায়।..

“আমার বাবা তোদের কি ক্ষতি করেছে।আমার বাবাকে কেনো ধরলি..???”(আদি)

“বাবা মায়ের কাজ হলো তাদের সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা।তাদেরকে প্রতিশোধের চিন্তা মাথায় দিয়ে বড় করা নয়।তোর বাবা নিজে অপরাধ করেছে তার জন্য অনুশোচনা করা উচিত।কিন্তু তা না করে আবারও স্মাগলিন শুরু করে তাও আবার দেশের নারীদের। আর সাথে নিজের ছেলে মেয়ে দের নিয়ে।ওয়াও কেমন পিতা তোমার।ভাবতেই অবাক লাগছে।…”(অয়ন)

আদিকে আর মিলিকে নিয়ে যাওয়া হয়।মিলিকে নেওয়ার পরে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। আমার অনেক খারাপ লাগছে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে জেলে যেতে দেখে।অয়ন এসে আমার কাধে হাত রেখে বলে…

“যারা ভালো তাদের জন্য কাদলে মনকে বোঝানো যায় ভালো কিন্তু দিয়ুপাখি তুমি যার জন্য কাদছো সে কখনোই ভালো ছিলো না।ও শুধু ভালো হওয়ার অভিনয় করেছিলো।এতে তোমার কোনো দোষ নেই।প্লিজ তুমি কান্না করবে না।”(অয়ন)

অয়নের কথা শুনে বাবা মাও আমাকে অনেক শান্তনা দেয়।সবার কথা শুনে মন কে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি।বাবা অয়নের সাথে কথা বলছে।এক পর্যায়ে অয়ন বলে..

“আংকেল আমাকে এখন যেতে হবে।আমার কিছু কাজ আছে ভালো থাকবেন আপনারা।..”(অয়ন)

অয়ন চলে যেতে নিলে বাবা অয়ন কে বলে..

“আর আসবে না তুমি..????”(বাবা)

“আংকেল দিয়ুপাখি কে আমি বিয়ে করি নাই।সেদিনের সব কিছুই ছিলো কেবর মাত্র অভিনয়।আদিকে ধরার জন্য আমাকে এমন করতে হয়েছে।তাই আমাকে আপনাদের মেয়ের জামাই প্রশ্নই উঠে।…”(অয়ন)

অয়নের কথা শুনে বাবা মা দুজনেই অবাক হয়ে যায়।কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।অয়ন আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার কানে কানে বলেন….

“নিজের যত্ন নিবেন কেয়ারলেস মেডাম।আর সময় মতো খাওয়া দাওয়া করবেন।এখন যদি নিজের যত্ন না নাও তাহলে দেখবে তোমার মতো পেত্নিকে কেউ বিয়ে করবে না।…?”(শেষের কথাটা বলতে গিয়ে অয়ন হেসে দেয়)

“আমার মতো পেত্নিকে আসলেই বিয়ে করার মতো কেউ নেই।..”(ঠোট বাকিয়ে বলি আমি)

আমার কথা শুনে অয়ন কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলে..

“তোমার মতো পেত্নিকে জীবন সঙ্গী করার জন্য কেউ হয়তো পাগল হয়ে আছে।”

কথাটা বলেই অয়ন চলে যায়।উনার যাওয়ার ফানে তাকিয়ে থাকি আমি।

______________________________

কেটে যায় বেশ কিছুদিন।এর মধ্যেই আমি অনেকটা নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলি।বাবা আমার কাছ থেকে ক্ষমা চায়।যদিও আমার বলার মতো কিছুই ছিলো না।না বুঝে বাবা এমন করেছে তাই আমারও বলার মতো কিছুই নেই।এর মধ্যে অয়নের সাথে আমার আর দেখা হয় নাই।আমি ভার্সিটিও যাই নাই এতো দিন।অয়নের কথা আমার প্রতিটা মুহূর্তেই মনে পড়তো।কিছু অনুভুতির সৃষ্টি হয় উনার জন্য।উনার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত মনে পড়ে যায়।কিন্তু আমি নিজেকে দমিয়ে রাখি।তার সবচেয়ে বড় কারন অয়ন একটা মেয়েকে পাগলের মতো ভালোবাসে।এটা ভাবতেই কেনো জানি মেয়েটার প্রতি প্রচুর জেলাস ফিল করছি আমি।এর মাঝেই আমার ফোন বেজে উঠে.তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার।ভাবতে থাকি কে হতে পারে।আমার ভাবনার মাঝেই ফোনটা কেটে যায়।আবার বেজে উঠায় আমি কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ফোনটা কেটে যায়।আমি অবাক হয়ে যাই।আর ইচ্ছে মতো গালি দিতে থাকি ফোনের ওই পাশের মানুষ টাকে।শালা ফোন করচ একে তো চিনি না তার উপর হ্যালো বলতেই ফোনটা কেটে দেয়।ফোনে মেসেজের টুংটাং শব্দে চমকে উঠে স্কিনে তাকিয়ে দেখি ওই আননোন নাম্বার থেকেই একটা মেসেজ আসছে যাতে লেখা আছে…

“Amon koro keno jan pakhi just tomar khonto ta sunte iccah korcilo tai phn korlam tar jonno buji ato gali deya lage..???”

মেসেজটা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।আমি ওই লোকটাকে গালি দিতেছি তা ওই লোকটা কিভাবে জানলো..??একটু পর আরেকটা মেসেজ আসে যাতে লেখা..

“মনের এই গহীনে তোমারই আনাগোনা হে প্রিয়।কি মায়া করলে তুমি আমায় চাইলেও যে ভুলতে পারি না তোমায়।আসবে কি ফিরে আমার কাছে.???নাকি দুরেই সরিয়ে রাখবে সারাজীবন।”

#চলবে_কি..?????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে