হৃদয়ে তুমি পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0
1300

#হৃদয়ে_তুমি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
অন্তীম পর্ব

৫ বছর পর_
গুটিগুটি পায়ে পুরো বাড়ী ভ্রমন করছে আরোহি।আর কিছুসময় পর পর এসে জিজ্ঞাস করছে
“আম্মুই আব্বু কখন আসবে ”
আমি ব্যাগ গোছাচ্ছিলাম
আমার চোখে মুখে বিরক্তির চাপ কিন্তু মেয়েকে তা বুঝতে দিলাম না এক গাল হেসে বললাম
“এইতো মা একটুপরই চলে আসবে”
এই নিয়ে আধা ঘন্টায় প্রায় দশ বার এসেছে আমিও একই জবাব দিতে দিতে হাপিয়ে গিয়েছি। পাঁচ মিনিট পর আবার এসে জিজ্ঞাস করছে
“আম্মু
মেয়ে এতোটুকু বলতেই আমি বেশ কড়া গলায় ধমক দিয়ে উঠলাম
” বার বার একই প্রশ্ন কেনো করছো বলেছি না একটু পর তোমার আব্বু চলে আসবে। এসো এদিকে এসো জামা কাপড় সব তো নোংরা করে ফেলেছো।আসো আমি চেঞ্জ করে দিই।উফফ এই বাপ মেয়ে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে

আমি আবারো আরোহীর দিকে তাকাতে দেখলাম আরোহী দরজার সামনে টলমল চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো আমার কথা গুলো তার ভালো লাগে নি। আমি মুচকি হেসে ব্যাগ সাইডে রেখে মেয়েকে গিয়ে কোলে নিবো এমন সময় উনি এসে আরোহীকে কোলে নিয়ে নরম গলায় বললেন
“কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসটার কাঁদছে কেনো সে।
বাবার এমন কথায় আরোহীর কান্না আরো গতি বেগে বেড়ে গেলো
এবার উনি আরোহীর কপালে একটা আলতো করে চুমু দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন
” কে মেরেছে আমার প্রিন্সেসটা কে?কে বকেছে বলো মা
এবার আরোহী দুই হাত দিয়ে চোখ মুখ মুছে হাত দিয়ে আমার দিকে ইশারা করে বললো
“আম্মুই”
এবার উনি মেয়েকে শান্তনা দেওয়ার জন্য আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন
“দেখুন মিস ওহ সরি মিসেস নিহা।আপনাকে এই বাড়ীতে থাকতে দিয়েছি তাই বলে আপনি ভাববেন না যে আপনি আমার মাথা কিনে নিয়েছেন।আর প্রিন্সেসকে তুমি ধমক দাও কোন সাহসে।নেক্সট টাইম ধমক দিলে একদম বাপের বাড়ি দিয়ে আসবো তোমায় গট ইট।

উনার কথায় আরোহী খিলখিল করে হেসে উনার গালে চুমু দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
” আব্বু আমরা কখন যাবো বেড়াতে ”
উনি এবার মেয়ের নাকে নাক ঘসে বললেন
“এইতো একটুপরেই যাবো আমরা।কিন্তু প্রিন্সেস তোমার ড্রেস তো নোংরা করে ফেলেছ।এদিকে আসো আমি চেঞ্জ করে দিই এটা”
এবার উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“যাও আমার প্রিন্সেসের ড্রেস নিয়ে আসো ”

আমি আরোহীকে কোলে নিয়ে গাড়ীর পেছনের সিটে উঠে বসলাম_উনি এসে আমার কোল থেকে আরোহীকে নিজের কোলে নিয়ে স্টাইল মেরে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
“এই যে মিস” আমি কোনো ড্রাইভার না সো সামনে এসে বসো।
আমি মুখে ভেংচি কেটে এসে সামনের সিটে এসে বসলাম
আমাদের যাত্রা পথ চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাচ্ছি। ওখান থেকে জাফলং যাওয়ার প্ল্যান আছে।আপাতত সিলেট হোটেল ব্রিটানিয়ায় উঠবো।

এই পথ যদি না শেষ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো (২)
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো
তুমি বলো
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো

কোন রাখালের ওই ঘর ছাড়া
বাশিঁতে সবুজে
ওই দোল দোল হাসিতে রাখালের
কোন ঘর ছাড়া বাশিঁতে সবুজের
ওই দোল দোল হাসিতে
মন আমার মিশে গেলে বেশ হয়।
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো

নীল আকাশের
ওই দূর সীমা ছাড়িয়ে এই গান
যেনো যায় আজ হারিয়ে আকাশে
নীল দূর সীমা ছাড়িয়ে এই গান
যেনো যায় আজ হারিয়ে
প্রানে যদি এগানের রেশ রয়

যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো

গাড়ির কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছি আমি। আর “এই পথা যদি না শেষ হয়” গানটা আয়ান ড্রাইভ করতে করতে গাইছেন। গানটা উনার মুখে অসম্ভব গেয়েছেন।

রাত আটটায় আমরা হোটেলে পৌছালাম। সারা শরীর কেমন অবোশ হয়ে আছে।হয়তো এতো দূরের যাত্রা পথের জন্য। আরোহীকে আমার পাশে শুইয়ে আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আরোহী ঘুমিয়ে আছে। আয়ান নিচে নাস্তা আনতে গেলেন। মানুষটা পুরোটা রাস্তা ড্রাইভ করেছেন না জানি মানুষটার কেমন লাগছে।

রাত একটা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো আমার।এক পাশে উনি আর অন্য পাশে আরোহী বেশ জড়োসড়ো ভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। আমি বাপ মেয়ে দুজনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালাম।

কাঁচের জানালা দিয়ে মধ্য রাতে বাহিরের লাইটিং গুলো অসম্ভব সুন্দর লাগছে। হোটেলে আমাদের ঘর ছিলো ৭তলায়। সেখান থেকে নিচের মানুষগুলোকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। পুরো শহর জুড়ে লাল নীল সবুজ হলুদ লাইটিং টা বেশ ভালো লাগছে। এর মাঝে আয়ান আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘুমঘুম চোখে বললেন
“উমম এখানে কি করছো চলো ঘুমাবে
আমি এবার উনার দিকে তাকিয়ে উনার দুই কাঁদে হাত রেখে বললাম
” দেখুন পুরো শহর টা অদ্ভুত সুন্দর লাগছে” আকাশটাও কেমন যেনো থমথমে হয়ে আছে।

উনি এবার বললেন
“কিছু মানুষ আলো হয়ে আমাদের জীবনে আসে আর হঠাৎ কালো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যার আর রেখে যায় অসংখ্য স্মৃতি”

আমি এবার উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
” সাদা শার্টে অসম্ভব সুন্দর লাগছে মশাই। আমাকে কি দ্বিতীয় বারের মতো মেরে ফেলার প্ল্যান করতেছেন নাকি?
এবার উনি মুচকি হেসে বললেন
“তোমাকে তো তার থেকেও বেশী সুন্দর লাগছে। ওই মায়াবী চোখের নেশায় আমি আসক্ত।
আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে চাই। আমার #হৃদয়ে_তুমি।কেবল আর কেবল তুমি।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে