হৃদয়েশ্বরী | ছোটগল্প

0
1712

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০
#গল্প_হৃদয়েশ্বরী
#ক্যাটাগরি:ছোটগল্প
#কলমে_ ফাতেহা আফরিন শিফা

একটা মেয়েকে প্রস্তাব দেওয়া সত্যিই দূর্লভ।তিন মাস যাবৎ চেষ্টার পরও সাহস হয় নি।কথাটা প্রিয় বন্ধু রাফসানকে বললাম, আর প্রতুত্ত্যরে বললো..
রাফসান:আজকের চেপে রাখা কথাগুলো হয়তো কালকের জন্য আফসোস,আক্ষেপ হয়ে দাঁড়াবে।সময় নষ্ট না করে ওহিকে বল..
আমি : হুম..কথাটা মন্দ না।কিন্তু…
রাফসান: আরেহ্..
আমি:ওহিকে বলি তাহলে.!

ওহির কন্টাক্ট নম্বর ছিলো।আমরা দুজনই ফিজিক্স নিয়ে পড়ছি।এর আগে কথা বলার সাহস পাইনি।মেয়েটাও কখনো কথা বলে নি,তবে আমাকে ওর সাথে কথা বলার জন্য আকর্ষন করছে।দু’টি চুম্বক পরস্পর যেভাবে বিপরীত মেরুকে আকর্ষন করে ঐভাবে আকর্ষন করছে।ওহিকে ফোনে বললাম..
আমি:হ্যালো ওহি.!!
ওহি:জ্বি..কে.?(মৃদু স্বরে)
আমি:আয়নান..
ওহি:ও ও আচ্ছা।আজ হঠাৎ ফোন.?কিছু বলবে.?
আমি:তীতাসের পাশের বড় উদ্যানটায় আসবে.?
ওহি:আধ ঘন্টা সময় লাগবে..
আমি:আচ্ছা আচ্ছা আমি আছি..সাবধানে এসো।

আমি দ্রুত নীল পান্জাবি,প্যান্ট,হাত ঘড়ি,চশমা পরে নিলাম।২০ মিনিটে উদ্যানে আসলাম।হাতে এক গুচ্ছ কাঁশফুল।হঠাৎ দেখি ওহি আসছে..
পরনে তার বাদামী পাড়ের নীল শাড়ি।আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, মনে হচ্ছে প্রকৃতির আধ খানি সৌন্দর্য নিয়ে হাঁটছে।

ওহি: এই! এই যে.!!এ্যাইইই…
আমি:হ..হ্যাঁ.. বলো..(ওহির কথায় ঘোর কাটলো)
ওহি:এই উদ্যানে ইনভাইট করার কারন.?
আমি সাহস করে ওর হাত আমার বাঁ হাতের উপর উপুড় করে ধরে, হাঁটু গেঁড়ে বসে কাঁপা কাঁপা ডান হাত থেকে ওহিকে একগুচ্ছ কাঁশফুল উৎসর্গ করে বললাম…
আমি: ওহি..!তোমার প্রিয় ফুল
ওহি:দিবে আমাকে.?
আমি:আমরন কাল পর্যন্ত দেওয়ার অধিকার দিবে.?
ওহি:এক গুচ্ছ ফুলের জন্য আমরন পর্যন্ত অধিকার.?আ..আ…ঠিক আছে,তাই হোক।

আমার প্রস্তাবে ওহির সম্মতিসূচক বাক্যে অত্যাধিক খুশিতে নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলাম।ওহির ডান হাতে কাঁশফুল।বাঁ হাত আমার ডান হাতের সাথে কুশল বিনিময় করছে।চিরসবুজ প্রকৃতিও যেনো আজ ভালোবাসার শ্লোগানে চারিপাশ মুখরিত করে রেখেছে।আকাশ,পাতালের সবটুকুতেই আজ বসন্ত নেমে এসেছে।আনমনে দুজনে হাঁটছি আর যত সামান্য মত বিনিময়ও হচ্ছে।দুপুরের পূর্বেই ওহিকে বাসায় দিয়ে আসলাম।

বাসায় এসে রাফসানকে বললাম..
আমি:আরেহ্ ইয়ার!!আমি সক্ষম..
রাফসান:কনগ্রেটস.. ট্রিট.?
আমি:ধৈর্য পেয়ে যাবি।

কথা বলা শেষে আবারও বের হলাম।রাফসানের হাত ঘড়ি খুব প্রিয়।ট্রিট হিসেবে এক জোড়াই দিলাম।

রাতে ওহিকে ফোন করে বিরক্ত করি নি।পরদিন ক্যাম্পাসে আসার মেসেজ করলাম।
এখন ভোর রাত।ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা না করে, নির্ঘুমে রাত পার করার আনন্দ উপভোগ করছি।জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম।আকাশপানে চেয়ে দেখি বৃত্তাকার পূর্ণিমার চাঁদ।নব প্রেমিক হিসেবে চাঁদ দেখে আনমনেই হাঁসছি।আযানের ধ্বনি মনোযোগ দিয়ে শুনছি।পাখিদের সমস্বরে গানের সাথে সুর তুলতে ইচ্ছা হলো।আগে নামাজ আদায় করে নিলাম।সূর্যের কারনে চারিদিকে লাল রেখার অস্তিত্ব স্পষ্ট।

এবার চোখের উপর তাজিনডং এর মতো উঁচু নিদ্রার পাহাড় চেপে বসলো।আমিও পাহাড়ের চূড়ায় নিজেকে বিলীন করে নিদ্রাদেবীর আহ্বানে সাড়া দিলাম।

৮:০০ টায় উঠে ফ্রেশ হয়ে, নিজেকে পরিপাটি করে নিলাম।
ক্যাম্পাসে ওহি আমার আগেই উপস্হিত।বুঝে নিলাম,ভালেবাসা দু তরফা’ই।
ওহির সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলেছি।হঠাৎ ওহি বললো..

ওহি: তোমার অর্ধাঙ্গীনি করে কবে তোমার গৃহবাসে স্হান দিবে.?
আমি: তোমার আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলতে..
ওহি:যত দ্রুত সম্ভব বলো।
আমি: দ্রুত.!!আচ্ছা বলবো।

আমার আব্বু আর আম্মুকে নিয়ে ওহির বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাই।কেউই দ্বি-মত করে নি।৪ দিনের মাথায় বিয়ে ঠিক হলো।

আজ বিয়ে।আমার বন্ধুদের ইনভাইট করেছি,স্যারদেরও করেছি, সবাই এসেছেন।বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা সময় ওহি সুদীর্ঘ ঘোমটা দিয়ে ছিলো।দেখার সৌভাগ্য হয় নি।খাওয়া শেষে সবার আদেশে রুমে আসি।ঘোমটা ছোটো করে রেখেছে।আমি পাশে বসার পর ওকে দেখলাম।

ওহির চোখের কালো কাজলের কারনে মনে হচ্ছে চোখ জোড়া দিয়ে আমাকে সর্পের মতো দংশন করে ওই কালো কাজলের রঙে বিষাক্ত করে দিবে।
মেয়েটার বর্ণনায় কিছুই বলার নেই কারন..মেয়েটা ভয়ংকর সুন্দর।তার চক্ষুদ্বয় যেনো মৃত সাগর।যার ঘনত্বে স্বেচ্ছায় ঢুবতে চাইলেও পারা যায় না।কিন্তু সে প্রতিনিয়ত আকর্ষন করছে তার মৃত সাগরে অবগাহন করার জন্য।অসম্ভব!! কিন্তু ওহি তা অতি সহজেই সম্ভবের জন্য আহ্বান করছে।তার চক্ষুদ্বয় ভারী রহস্যময়। মুখের হাঁসিটাও মোনালিসার মতো..কখনো মনে হয় হাঁসছে কখনো বা কাঁদছে।স্পষ্ট চোখে মনে হয় ওর ওষ্ঠ্যদ্বয় খুবই কোমল.!!একটু আঁচড়েই যেনো চৌচির হয়ে যাবে।
হাঁসি দেওয়ার সময় গালের টোল লক্ষনীয়।সাথে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে যায়..।ওহি যেনো চোখ বন্ধ করে হাঁসিটাও উপভোগ করে।হাঁসিতে কোনো শব্দ নেই।শব্দওয়ালা হাঁসির চেয়ে ওর এই শব্দহীন হাঁসিটা কয়েক শত গুন বেশি সৌন্দর্য্য প্রকাশ করে।চোখে চোখ রাখলে মনে হয় এই বুঝি চোখ দিয়েই গিলে নিবে..

ওহিকে বললাম…

আমি:আচ্ছা ওহি..বিয়েটা দ্রুত করতে বলার পিছনের কারনটা কি শুনি..
ওহি:দেখো..সম্পর্ক কন্টিনিউ করা যায় তবে শেষ পরিনতি কি হয় বলা যায় না।একটা সময় আসবে যখন শ্বাস নেওয়ার সময় আত্মবিশ্বাসী মনে হবে,কিন্তু প্রশ্বাসের বায়ুটা ভারী হবে।যাকে বলে দীর্ঘশ্বাস।আর আমি চেয়েছি,দীর্ঘশ্বাস ফেলার পরিবেশ যেনো না আসে।কাউকে যেনো দীর্ঘশ্বাস ফেলতে না হয়, কেউ যেনো পরক্ষনে কষ্ট না পাই তাই বলেছি।
আমি: বাহ্..!!সুন্দর চিন্তা।তা ঘুমুতে হবে তো তাই না.?
ওহি:রাতটা স্মরনীয়, বরনীয়ও হোক.?
আমি:এটাই শ্রেয়।

ওহি পরিবারের সবার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।হয়তো এটাই মেয়েদের বিশেষ গুন।পরিবারের সবার সাথে ওহির এই বন্ধনকে রসায়নের কোন বন্ধনের আওতায় ফেলা যায় আমি জানি না।কোন সূত্র ব্যাবহার করে ও সবাইকে আগলে রেখেছে তা আমার জানা নেই।তবে আইজ্যাক নিউটনের প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া বলের মতো জানি না আমরা ওকে কতটুকু দিতে পেরেছি।ওর ভালোবাসার প্রতিক্রিয়া স্বরুপ মন থেকে শ্রদ্ধা, দোয়া আর ভালোবাসাই দিতে পারবো।

আজ বিয়ের এক সপ্তাহ্ শেষ হলো।ওহির প্রয়োজনীয় ব্যাবহার্য সামগ্রীর জন্য শপিংমলে যেতে হবে।ওহিকে বললাম..

আমি:ওহি.!রেডি হয়ে নেও।শপিং এ যাবো।
ওহি: আজব.!!তুমি ই তো পারো।আবার আমি কেনো.?
আমি:আমি তো জানি না তুমি কি কি ইউজ করো।
ওহি: শুনো..তোমার যা পছন্দ তা-ই হবে।
আমি: তোমারও তো পছন্দ আছে তাই না.?
ওহি:যদি শাড়ী/কাপড় নেও তাহলে তেমার পছন্দের রঙ,কাজ করা নিও।তোমার যে পারফিউম পছন্দের আমার জন্য ঐ টাই নিও।আমাকে যে ঘড়ি বা যে ফ্রেমের চশমাতে তোমার দৃষ্টিতে সুন্দর মনে হবে তা-ই নিও।

আমি রিতীমতো অবাক হচ্ছি।একজন পুরুষ হিসেবে বলতে পারি,অন্য পুরুষও এমন অর্ধাঙ্গীনি কামনা করে।লক্ষি মেয়ের মতো স্বামির পছন্দকেই নিজের পছন্দ হিসেবে মেনে নিলো.?জানি না কোন পূন্যের পুরষ্কার হিসেবে ওহিকে পেয়েছি।ওহিকে হ্যাপি রাখাটাই আমার কর্তব্য।

শপিং শেষে বাসায় এসে ওহিকে বললাম..
আমি: ওহি..আসো আজ আঙ্গিনায় গোঁধূলি দেখবো।
আমার এক কথায় ওহি সায় দিলো।দুজনে গোঁধুলি দেখছি।আর কথা বলছি…

আমি:তুমি চোরাবালির মতো। উপর থেকে শান্ত,নির্মল কিন্তু ভিতরগত ভাবে এক মায়াবিনী।সর্বানাশী।
চোরাবালির পৃষ্ঠদেশে কেউ পাড়া দিলে সে আস্তে আস্তে বোলি গর্ভে পতিত হয়..এক এক করে সর্বাঙ্গ বালি গর্ভ নিজের করে নেয়।তুমিও না আমার জন্য এমনই একজন।কতটা মায়াবি তা স্রষ্টা জানে।
ওহি: সর্বনাশী বললে যে..
আমি: আমার সময়ের যে ভাগটুকু তুমি পাও এই সময়েই তুমি তোমার মায়ার মধুতে এই ভ্রোমরকে বিভোর করো।মাতোয়ারা করে দেও।কাছে যাওয়ার প্রত্যাশায় আমি যে মরিয়া হয়ে যাই..তা কি সর্বনাশ নয়.?
ওহি: আচ্ছা..এই দোষ বা গুন সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলাম না তো।নতুন মনে হচ্ছে। আগে বলতে পারতে..

আমি: তোমার সম্মুখে আমার শব্দের,ছন্দের পতন হয় বুঝো.?
তোমাকে যে আমার পন্ঞ্চাশটি বর্ন কিংবা কার ফলায় আবদ্ধ করতে পারি না।তুমি যে সব বর্ণমালার অতিশয় সুন্দর শব্দের পতন ঘটিয়ে এরচেয়ে অধিক উপরে স্হান নেও.. বুঝো.?

ওহি: কতটুকু উপরে.?
আমি: এই ধরো আমার বাক নিঃসৃত তোমার গুনের বর্ণনা স্বরুপ শব্দগুচ্ছ সর্বোচ্ছ সিলিং ছুঁতে পারে..কিন্তু তুমি যে প্রকৃতপক্ষে অন্তরীক্ষেরও সীমান্ত অতিক্রম করো।

ওহি: আর তুমি কেমন জানো তো..!
আমি: কেমন.?
ওহি: তুমি আমার জন্য সুবিস্তৃত বিশাল সমুদ্র..যে কিনা আমার হৃদে জোয়ার ভাটার খেলায় মগ্ন।কখনো বা শান্ত, কখনো বা উত্তাল।তোমার স্পর্শে যেনো হৃদ স্পন্দন কয়েকগুন বেড়ে যায়।তোমার মিষ্ট বাণী শ্রবন করি আর চক্ষু দর্পনে এক অবাস্তব বিম্ব গড়ে তুলি।তুমি এমন এক সত্ত্বা যাকে আমি নিত্যদিন কল্পনার রাজ্যের রাজার সিংহাসনে বসাই।গোঁধূলির কিছু মুহূর্ত তোমাকে উপহার দিয়ে স্মরনীয় করতে চাই..আগে জানা ছিলো.?
আমি: মাত্র জানা হলো.. হা হা হা (কথাটা বলে অট্টহাঁসির জোয়ার উঠালাম)।আর কি প্রকাশ করতে চাও আমাকে নিয়ে বলো..

ওহি: তোমাকে প্রকাশ করার জন্য যে শব্দগুচ্ছের প্রয়োজন তা এখনো আবিষ্কৃত হয় নি প্রিয়..।
আমি: যদি হয়.?
ওহি: আবিস্কৃত হলেও শব্দের অর্থগুলোর জন্য কখনো কোনো অভিধান সৃষ্টি হবে না।অপ্রকাশিতই রয়ে যাবে সব।
আমি:অপ্রকাশিত সত্য সম্পূর্নরূপে জানার কৌতুহল কার না থাকে.?
ওহি:যত দিন তা তুমি জানবে না,ততদিন ইচ্ছা থাকবে।
আমি:জানা তো অপরাধ না।
ওহি:জানার পর অনেকেই বকপক্ষির মতো উড়ে যায়,আপন খাঁচার মায়া ত্যাগ করে।ত্যগ করার চেয়ে জানার আগ্রহ নিয়ে ঠুনকোভাবে বেঁচে থাকাটাই স্বার্থকতা।

কথাটা বলে ওহি প্রস্হান করলো।””অনেকেই বকপক্ষির মতো উড়ে যায়,আপন খাঁচার মায়া ত্যগ করে “”কথাগুলো দ্বারা ওহি কি বুঝাতে চেয়েছে.?এক মুহূর্তের আনন্দ কেনো যেনো বিষাক্ত হয়ে গেলো.?ওর কথাটা শুনার পর মনে হলো কিছু একটা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

পিছন থেকে ওহিকে ডেকে বললাম..
আমি: আমি তো তোমাকে ছেড়ে যাবো না।তবে কি তুমি আমায় নিঃস্ব করবে.?
ওহি:মায়া, ভালোবাসা তো মিথ্যা ছিলো না তাহলে নিঃস্ব করবো কেনো.?হৃদয়ে তুমি ছিলে,আছো নিঃসন্দেহে অনন্তকাল থাকবে।এই নশ্বর গ্রহে তুমি আমার অবিনশ্বর উপহার।এখনো ভয় হয়.?

[ওহি তার ধারালো চোখগুলো আমার চোখে রেখে কথাগুলো বললো।ওর সবকিছুই রহস্যময় নাকি আমিই ওকে হারিয়ে ফেলার ভয় পাচ্ছি.?আমি বললাম..

আমি:আমার হৃদয়েশ্বরিও যদি বকপক্ষি হয়ে সত্যিই উড়ে যায়.?পেয়ে নিঃস্ব হওয়ার বেদনা বুঝো.?
ওহি:আহ্..!!!যাবো না তো, ঐ যে দেখো শুকতারা সাক্ষী।
আমি:শুনো…
ওহি: হ্যাঁ বলো..
আমি:আমার ভীষন ভয় হচ্ছে।
ওহি:নক্ষত্রপুঁজ,রবি,শশী,তারা ঝাঁক সবকিছুকে জানান দিয়ে বললে বিশ্বাস হবে.?
আমি: তোমার বলা প্রতিটি শব্দ,বর্ণ আমি বিশ্বাস করি।বিশ্বাস করি বিধায় সব কথা বন্দুকের গুলির মতো বুকে গিয়ে বিঁধে।
ওহি:আরেহ্ পাগল.!এত সিরিয়াস হওয়ার কি আছে.?যত আলেকবর্ষ দূরত্বেই থাকি না কেনো মনে রাখবে ওটা মনের দূরত্ব না কেমন.!!নাস্তা করবে আসো।

মানুষও সর্বগুনে গুনান্বিত হতে পারে তার দৃষ্টান্ত স্বয়ং ওহি।ওর কথায় ভয় হয় আবার ভয় দূর হয়।কথাটা ভাবতে ভাবতে ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফুটন্ত পানিতে করা উষ্ণ অর্জুন চা পান করছি।

আগামিকাল আমার আর ওহির ফাইনাল ইয়ার এক্সামের রেজাল্ট হবে,প্রতীক্ষা।রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি।কারন,বকপক্ষির মতো প্রিয় মানুষদের চলে যাওয়ার কথাটা ওহি এমনিতেই বলেছে।আমিই বেশি সিরিয়াস হয়েছি।ওহি তার কোমল হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আমিও ওকে অপলক তাকিয়ে দেখছি।সত্যিই ও খুব মায়াবিনী,সর্বনাশি,আমার বকপক্ষি,আমার হৃদয়েশ্বরী,প্রিয়ন্তী।

সূর্যের তীব্র আলো জানালার পর্দা ভেদ করে চোখে আপতিত হচ্ছে।এখন আর স্বস্তিতে ঘুমানো যাবে না।তাই বিছানায় না থেকে ফ্রেশ হয়ে এক গ্লাস উষ্ণ অর্জুন চা পান করছি।আমি গ্লাসে করেই চা,পানি সবকিছু পান করি।বেলা ফুরাচ্ছে আর আমি জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে গ্লাসের পর গ্লাস চা পান করছি।ওহি পিছন থেকে এসে ওর দুহাত আমার বুকের উপর রেখে,মাথাটা পিঠে ঠেকিয়ে সজোরে আলিঙ্গন করে বলছে..

ওহি: ট্যান ট্যানা…আমাদের দুজনেরই সিজিপিএ গ্রেড পয়েন্ট ফোর।
আমি: কিহ.!!!সত্যিই তাই..!!
ওহি: একদম।

ফোন বের করে মেসেজ দেখেছি..সত্যিই তাই।আমি ভীষন খুশি কারন আব্বু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভালো রেজাল্ট করলে বিদেশে পড়াবে।আর আব্বু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন না এই দৃঢ় বিশ্বাস আমার আছে।
আব্বুর কথা অনুযায়ি আর এক সপ্তাহ পর আমি আর ওহি দেশ প্রস্হান করবো,বিদেশে পড়ার উদ্দেশ্যে।

ওহি সবার সাথে নিজেকে খুব গুছিয়ে নিয়েছে।তাই ওহির খুব মন খারাপ।আমার সাধ্যনুযায়ী ওর মন ভালো রাখার চেষ্টা করছি তবে তা বৃথা।কোনো লাভ হচ্ছে না।কান্না করতে করতে বাসার সবার থেকে বিদায় নিলো।

আমরা এ্যায়ারপোর্টে।
আমার যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আয়নান।আমি সবাইকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আমি তোমাকে ছাড়াও থাকতে পারবো না।আমার হাতের আঙ্গুলে ওহি তার আঙৃগুল গুঁজে কথাগুলো বললো।

আমি: দেখো এত কিছুর প…
আমার কথা শেষ না হতেই ওহি বললো..
ওহি: প্লিজ…পরিবারই তো আসল।আর এ ক’দিনে তোমরা আমাকে যতটা মায়ার ইন্দ্রজালে জড়িয়ে নিয়েছো আমি এই ইন্দ্রজাল ছিন্ন করতে চাই না।

আমি ওর কথা বার্তায় বরাবরের মতো থ হয়ে আছি।সত্যিই ওহি সর্বগুনে গুনান্বিত।তা না হলে কি অল্প ক’দিনে পর বাড়ির লোকদের এতটা আপন করতে পারে.?পুনরায় বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি ধরলাম।আমাদেরকে দেখে সবাই অবাক। আর আমি অবাক আমার হৃদয়েশ্বরীকে দেখে।
আমার হৃদয়েশ্বরী বাসায় এসে সবার সাথে প্রাণখুলে কথা বলছে।ওর চোখে মুখে রহস্যময় হাঁসি।মাতোয়ারা করার মতো হাঁসি।ও যেনো স্বর্গের সুখ পাচ্ছে।ও চোখ বন্ধ করে হাঁসছে, গালে টোল.. আমি দেখছি আর ভাবছি আমার পরিবারকে এতটা ভালোবাসে.?বর্তমানে এমন মেয়ে পাওয়া দূর্লব।আর আমি যেহেতু পেয়েছি তাই ও আমরন কাল আমার হৃদয়েশ্বরী হয়ে থাকবে।একান্তই আমার।

#হৃদয়েশ্বরী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে