হৃদয়ের গহীনে পর্ব-০২

0
3519

#হৃদয়ের_গহীনে🍁
part 2
#সারা_মেহেক

আকাশ মুসকান এর দিকে অনেকবার আগানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রতিবার ই সে বাধা পাচ্ছে।আর এ বাধাটা দিচ্ছে তার মন আর বিবেক।
আকাশের মন বারবার বলছে সে যেনো মুসকানের কোনো ক্ষতি না করে।
শেষপর্যন্ত নিজের মন আর বিবেক কে প্রশ্রয় দিয়ে আকাশ মুসকানের কাছ থেকে দূরে সরে এলো। সে গিয়ে বারান্দায় রাখা সোফায় বসলো।
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে,

“আচ্ছা এতোদিন আমার এমন তো হয়নি। এতোদিন কোনো মেয়ের সাথে রাত কাটাতে গিয়ে আমার মন তো আমাকো বাধা দেয়নি। এতোদিন আমার বিবেক কোথায় ছিলো!!!
এই মেয়ের মধ্যে নিশ্চয় আলাদা কিছু আছে। নাহলে এমন সুন্দরী মেয়ে আমার সামনে থাকবে আর আমি তাকে একটু ছুঁয়েও দেখবো না!!!কি যে হচ্ছে আমার সাথে!!!”

🍁🍁

সকালের মিষ্টি রোদ মুসকানের চোখে মুখে এসে পরায় সে জেগে উঠে সে।জেগে উঠার সাথে সাথে কালকের ঘটনা মনে পরে যায়। কালকের সব কথা মনে এসেই ঘামতে শুরু করে সে। তাড়াতাড়ি করে আগে নিজেকে দেখে সে। কম্বল গায়ে দেয়া ছিলো। কম্বল সরিয়ে আগে নিজের শরীরের দিকে তাকায় সে।নিজেকে আগের মতো স্বাভাবিক দেখে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুসকান।

শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আকাশ দেখে মুসকান নিজের দিকে তাকিয়ে আছে।এটা দেখে আকাশ মুআকি হেসে বলে,

“তোমার সাথে কিছু হয়নি মিস কালকে রাতে। তুমি একদম পাক পবিত্র আছো।”

হঠাৎ করে পুরুষ মানুষের আওয়াজে বুক ধক করে উঠে মুসকানের। চোখ তুলে সে আকাশকে দেখতে পায়।গায়ে গায়ে শুধু টাওয়াল জড়ানো। ভিজা চুল আর হালকা ভিজা শরীরে দেখলে যেকোনো মেয়েই পাগল হয়ে যাবে।কিন্তু মুসকানের এমন কিছু হলো না। হবেই বা কি করে। সে এখন ভয়ে আছে। মনে মনো ভাবছে কালকে রাতে এই ব্যক্তিটা কিছু করেনি। কিন্তু আজকে যদি কিছু করে তখন!!
এ কথা মনে আসতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো মুসকানের।

আকাশ নিজের মাথার চুল মুছছে আর মুসকানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুসকানের চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছে সে।সে ধীরে ধীরে মুসকানের দিকে এগুতে থাকে।

এদিকে আকাশের এভাবে এগুনো দেখে মুসকান ভয়ে কুঁকড়ে যায়।সে ভয়ে বলে,

“প্লিজ, আমার কোনো ক্ষতি করবেন না প্লিজ।দয়া করে এমন কিছু করবেন না।”

মুসকানের কথা শুনে আকাশ দাড়ীঁয়ে যায়।মুসকান যে তার থেকে খুব ভয়ে আছে সেটা বুঝতে পারছে সে।সে বললো,

“ভয় নেই।আমি কিছুই করবো না। এটুকু নিশ্চিন্তে থাকো তুমি।”

এটুকু বলেই আকাশ সোফিয়াকে ডাক দেয়।কিছুক্ষণ এর মধ্যে সোফিয়া রুমে এসে উপস্থিত হয়।আকাশ সোফিয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“সোফিয়া আন্টি,প্লিজ লুক আফটার দা গার্ল কেয়ারফুলি। সি ইজ এ স্পেশাল পার্সন।
এন্ড আন্টি, টেক হার নেক্সট টু মাই রুম।

“ওকে,মাই চাইল্ড।”

সোফিয়া এগিয়ে গেলো মুসকানের কাছে।
মুসকানের মন প্রথমে সম্মতি না দিলেও পরে নিজের মনকে সে বুঝালো যে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সামনে থাকা মহিলার উপরেও তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু এখন বিশ্বাস করতেই হবে।

মুসকান সোফিয়ার সাথে গেলো। আকাশের পাশের রুমেই মুসকানকে থাকতে দেওয়া হলো।
মুসকানকে রুমে নিয়ে যাওয়ার পথে সোফিয়া শুধু আকাশের বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে।
সে জানে আকাশ কোনো মেয়ের সাথে রাত কাটানোর পর এতো কেয়ার করে না। সে মেয়েকে কোনো পাত্তা দেয়নাৃ অথচ এ মেয়ের সাথে এতো ভালো বিহেইভ করছে কেনো!!!নিজের বাড়ীতে আশ্রয় পর্যন্ত দিলো!!!

মুসকানকে রুমে রেখে সোফিয়া খাবার আনতে গেলো।
এদিকে মুসকানের মন থেকে কোনোভাবেই ভয় যাচ্ছে না। কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। করবেই বা কিভাবে। বিশ্বাস করেই তো এন্ড্রিউ এর সাথে এসেছিলো।শুধু একটু থাকার জায়গা পাওয়ার আশায়। কিন্তু এসে উপস্থিত হলো আকাশের বাড়ীতে। যেখানে আকাশ চাইলেই তার সাথে যা ইচ্ছা করতে পারে।এখানে কে তাকে সাহায্য করবে। কেউই না।

সোফিয়া খাবার এনে মুসকানকে পরম মমতায় খাইয়ে দিলো। প্রথমে মুসকান খেতে না চাইলেও পরে সোফিয়ার কথায় রাজি হয়ে যায়।

এভাবে দুদিন কেটে গেলো। এ দুদিনে মুসকান রুম থেকে একটুও বের হয়নি।এখন এ রুমটাকেই তার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মনে হয়। কারন পাশাপাশি আকাশের রুম থাকা সত্ত্বেও আকাশ এই দুদিনে একবারও মুসকানের রুমে আসেনি।
আকাশ চেয়েছিলো আসতে কিন্তু পরে মুসকানের কথা চিন্তা করে আসেনি। কারন সে জানে মুসকান ভয়ে আছে।এই অবস্থায় যদি আকাশ মুসকানের কাছেও যায় তাহলে সে স্বাভাবিক হতে পারবে না। কয়দিন একটু একা থাকলে হয়তো নিজের ভয়টাকে ওভারকাম করতে পারবে মুসকান।

সারাদিন একা একাই সময় কাটায় মুসকান। কাজের ফাঁকে সোফিয়া এসে একটু গল্প করে যায় মুসকানের সাথে।

বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে আছে মুসকান। একধ্যানে বাইরের পরিবেশ দেখে যাচ্ছে সে। শুভ্র আকাশটা আজকে বড়ই সুন্দর লাগছে।এতোক্ষন মন ভালো থাকলেও হঠাৎ করে সব অতিত মনে পরে যায় মুসকানের। সব মনে পরতেই নিজের মধ্যেই আঁতকে উঠে সে। তার ভবিষ্যত কোন পথে যাচ্ছে সে নিজেও জানে না। এক অজানা অচেনা জায়গায় সে আছে।যেখানে কাউকেই সে চিনে না। একটা দিন,দুইটা দিন, নাহয় তিনটা দিনই থাকা যায় এখানে এভাবে।এরচেয়ে বেশিদিন সে কি করে থাকবে।এখন ভয়টা একটু কমলেও আগামী দিনের কথা চিন্তা করলে ভয় এমনিই জেঁকে ধরে।

নিজেকে একটা অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে মুসকানের।যার থাকার নেই কোনো জায়গা। কিন্তু আছে বেঁচে থাকার তাগিদ।এ বেঁচে থাকার তাগিদের জন্যই সে এখনো এ বাড়ীতে আছে। নাহলে এতোক্ষনে সে এখান থেকে পালিয়ে যেতো।অবশ্য পালিয়ে যেতোই বা কোথায়। আপনজন বলতে তো কেউই নেই তার এ দুনিয়ায়। কেউ থাকলে হয়তো তার কাছে আশ্রয় নিতো।।কিন্তু আপাতত এ অপরিচিত মানুষটার কাছেই আশ্রয়ে থাকতে হবে তাকে।

সব কিছুই আজব লাগছে মুসকানের কাছে। কোথাকার কোন এক অপরিচিত ব্যক্তি প্রথমে তার ক্ষতি করতে চাইলেও এখন নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছে তাকে।
।কিন্তু কতোদিনই বা এভাবে আশ্রিতা হয়ে থাকবে সে।

মুসকান মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো তাকে দেশে ফিরে যেতে হবে। সেখানে কোনো একটা কাজ জোগাড় করে টিকে থাকতে হবে। এখন তার এ দুনিয়ায় টিকে থাকার উপর প্রশ্ন চলে আসছে।কিন্তু পরক্ষনে তার মাথায় আসলো যে তার পাসপোর্ট ই তো নেই কাছে। সেদিন পালিয়ে যাওয়ার সময় তো ব্যাগটাই ফেলে আসে সে।এখন তো চাইলেও সে দেশে যেতে পারবে না।

ড্রইং রুমে বসে আকাশ তার বন্ধু আফনানের সাথে কথা বলছে।আকাশ আর আফনানের বন্ধুত্ব ছোটো থেকেই। আকাশ লন্ডনে আসার পর তার সেই আংকেলের মাধ্যমে আফনানের সাথে পরিচিত হয়। আফনানের বাবা আর আকাশের আংকেল দুজন ফ্রেন্ড। সে জন্যই আকাশ আর আফনানের পরিচিত হয়।

আকাশ বললো,

“এ বাড়ীতে একটা সুন্দরীমেয়ে আছে।”

আকাশের কথায় আফনান হেসে জবাবা দিলো,

“সে তো আমিও জানি। সোফিয়া আন্টী তো আছে। তুই এমনভাবে বলছিস যে নতুন কেউ এসেছে।”

“হ্যাঁ, নতুন ই তো।”

“নিউ মেইড রেখেছিস??”

“আরে ধুর,মেইড এর আর দরকার কি।
সি ইজ ফ্রম বাংলাদেশ। এন্ড ওকে খুঁজে পেয়েছে এন্ডিউ আংকেল।”

আকাশ মাতা নিচু করে আবারো বললো,

“একচুয়ালি আংকেল ওকে এনেছিলো আমার জন্য।আমার সাথে রাতে সঙ্গ দেওয়ার জন্য।”

আফনান মুখ বাকিয়ে হাসি দিয়ে বললো,

“বাহ। তো কেমন সঙ্গ দিলো?”

“আমাদের মাঝে এমন কিছুই হয়নি।আমি তো মেয়েটাকে টাচ পর্যন্ত করেনি।”

এ কথা শুনে আফনান যেনো আসমান থেকে পরলো।সে তে অবাকের চরম সীমায় পৌছে গিয়েছে। কারন সে যতদূর আকাশকে চিনে, আকাশ এমন ছেলে না যে কোনো যুবতী মেয়ে তার সামনে থাকবে আর সে কিছুই করবে না।

আফনান বসা থেকে উঠে বলে,

“আকাশ, তুই ঠিক আছিস তো দোস্ত??”

“আরে হ্যা ঠিক আছি।”

“তাহলে এ আমি কি শুনছি?তুই মেয়েটাকে টাচ পর্যন্ত করিস নি!!!বাট কেনো?”

“সে তো আমি নিজেও বুঝছি না।এমন হলো কেনো…”

“সেটাই তো ভাবার বিষয়।”

“আচ্ছা যাই হোক।তোকে মেয়েটা সাথে মিট করিয়ে দেই।আমি দুদিন ধরে দেখাই করিনি। কারন ও বেশ ভয়ে ছিলো।
আর ওর থেকে জানতেও তে হবে যে কি করে ও রাতে এভাবে রাস্তায় পৌছালো।ওর ফ্যামিলি ই বা কোথায়।”

“ঠিক আছে চল।”

এদিকে মুসকান আকাশের সাথে কথা বলার জন্য রুম থেকে বের হয়েছিলো।কিন্তু আকাশের সাথে আফনানকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।সে ভাবে সেদিনকার সেই ছেলেটা আর এ বাড়ীর ছেলেটা একসাথে কেনো আসবে?তার কোনো ক্ষতি করতে তে নয়!!
মুসকান তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আবারো সেই ভয় জেঁকে ধরেছে মুসকানকে।

আকাশ আর আফনান রুমের দরজা নক করেই যাচ্ছে কিন্তু মুসকান খুলছে না। কারন সে ভাবছে দুইটা ছেলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পরলে সে কিছুই করতে পারবে না।

আফনান আকাশকে বললো,

“দেখ মেয়ে মনে হয় তোর থেকে ভয় পেয়েছে।”

“হুম ঠিক বলছিস। ওয়েট আমি দরজা খুলতে বলি।দেখি কাজ হয় নাকি।”

“হুম বল।”

“এই যে মিস,শুনছেন?দরজাটা একটু খুলুন। আপনার সাথে জরুরী কথা আছে।আপনার পরিচয়,আপনার ফ্যমিলি নিয়ে জানতে চাচ্ছিলাম।
আর বিলিভ মি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না।”

আকাশের এ কথা যেনো ম্যাজিকের মতো কাজ করলো। মুসকান সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো।

আফনান তো মুসকানকে দেখে চরম অবাক হয়ে গেলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে