হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-০৪

0
1398

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_4
#sarika_Islam
,
,
অন্তরা কান্না করছে,,পেটে হাত দিয়ে “ব্যাথা ব্যাথা ” বলছে, হৃদয় কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,,সে অন্তরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

_আচ্ছা তুমি দাড়াও আমি আম্মুকে ডেকে আনি,(বলেই পিছে ফিরতে নিলে অন্তরা বাধা দেয়)
_নাহ আমাকে একা রেখে যাবেন না,,
_আচ্ছা ঠিক আছে যাব না, তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি,,

বলেই দৌড় লাগাল তার আম্মুর রুমে,,কিছুক্ষন পর তার আম্মুকে নিয়ে রুমে ঢুকল,,দেখল অন্তরা আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে,,হেনা চৌধুরী দ্রুত অন্তরার কাছে গেল,,হৃদয় বাহিরে চলে গেল,,হেনা চৌধুরী আরামসে সব সামলাল,তারপর অন্তরার আম্মুকে ফোন করল,,সব কিছু খুলে বলায় তার আম্মা বলল,,

_ভাবি আমার মেয়েটা কিছুই বুঝে না এইসময়,আমি অনেক কষ্টে ওকে বুঝাই ওকে সামলাই,,আপনিও একটু বুঝিয়েন,,(বলেই কান্না করে দিল)
_আরে ভাবি কান্না করেন না, আমিও ওকে আমার মেয়ের মতোই রাখব,,মেয়ের মতো কি ওতো আমার মেয়েই,,আপনি একদম চিন্তা নিবেন না,,

আরও টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দিল,দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে সবাই সবার রুমে গেল,,,হৃদয় তার মার রুমের দরজায় নক করল,,

_আম্মু আসব?
_আরে আয়,
_আম্মু অন্তরা এখন কেমন আছে? ও
কোথায়?
_ওতো ওর রুমে,
_আচ্ছা ঠিক আছে,

বলেই চলে গেল অন্তরার রুমে,,অন্তরা মন খারাপ করে বসে আছে,,হৃদয় অন্তরার পাশে গিয়ে বসল,,

_অন্তরা চলো ঔষুধ খাবে,,
_নাহ আমি খাবো না,,আমি লাফালাফি করতে পারব না আন্টি বাড়ন করে গিয়েছে,আর আমার এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগে না,আমি কি করবো হৃদয় ভাইয়া?সারাদিন কি এভাবে বসেই থাকবো?(মুখ ফুলিয়ে)
_আচ্ছা তাহলে একটা কাজ করি তোমার জন্য রাতে একটা ডল নিয়ে আসবো আসার সময় এখন তো ঠিকআছে?
_হুম হুম ঠিক আছে,,(বলেই হৃদয়ের গলা জরিয়ে ধরল)

হৃদয় মুচকি হেসে তার মাথায় হাত রাখল,,, হৃদয় অন্তরাকে ঔষুধ খাওয়াল,তারপর শুয়িয়ে দিল,,হৃদয় তার রুমে আসল,,হঠাৎ ফোন টা বেজে উঠল স্ক্রিনে দেখল ডাক্তার চাচা ফোন করেছে,

_হ্যা চাচা বলেন,,
_হৃদয় তোমার রোগির অবস্থা কেমন?
_হুম ভালোই, যা ভেবেছিলাম তা হই নি,
_যাক তাহলে তো ভালোই,,শরিরে এডজাস্ট হয়েছে,, আর শুনো একটা কথা,,
_জি বলুন,,
_ওকে সাতটা ইঞ্জেকশন দিতে হবে সাত দিনে,আর এই ইঞ্জেকশনের মধ্যে ওর ব্রেন আস্তে আস্তে খুলবে,,এই সময় তুমি ওকে খেয়াল রাখবা,দেখে রাখবা আগলে রাখবা,পারবে না হৃদয়?

হৃদয় কোন কথা বলছে না,,কিচ্ছুক্ষন চুপ করে আছে,হৃদয়ের নিশ্চুপে ডাক্তার আবার বলল,,

_কি হলো হৃদয়?তুমি কি পারবে না?
_জি জি,ডাক্তার চাচা আমি পারবো,,
_গুড,তুমি একজন ডাক্তার তোমাকে তো পারতেই হবে,,,আচ্ছা তাহলে রাখি,
_ঠিক আছে,

বলেই ফোন রেখে দিল হৃদয়,,,সে ভাবতে লাগল সে কি পারবে?নাকি পারবে না,,তার প্রথম ট্রিটমেন্ট হবে অন্তরাকে নিয়ে সে কি সফল হবে?নাহ তাকে কোন মতেই হক সফল হতেই হবে,,নানান কথা আওড়াতে লাগল,,,

সন্ধ্যায় হৃদয় বাহিরে গিয়ে অন্তরার জন্য খুব সুন্দর একটি ডল কিনল,,অন্তরার রুমে গেল তাকে ডল দেওয়ার জন্য গিয়ে দেখল অন্তরা ঘুমিয়ে গিয়েছে,,হৃদয় অন্তরার পাশে ডল টা রেখে ভালো ভাবে তার গায়ে কাথা মুড়ি দিয়ে চলে গেল,,

সকালে,,হেনা চৌধুরী কফি হাতে তার ছেলের রুমে গেল,গিয়ে দেখল তার ছেলে ঘুম,,তার ছেলেকে ডাকতে লাগল,,

_হৃদয় বাবা উঠ,,

হৃদয় আড়মোড়া দিয়ে উঠল,,দেখল পাশে তার মা হাতে কফি নিয়ে বসে আছে,,

_আম্মু,,তুমি,
_হুম,, আমি আর তোর আব্বু বাহিরে জাচ্ছি,,তোর আব্বুর বিসনেস পার্টি আছে সেখানে যেতে হবে,,তুই বাবা একটু অন্তরার খেয়াল রাখিস,,
_ঠিকআছে আম্মু,তোমারা নিশ্চিন্তে যাও,,অন্তরা কোথায় উঠেছে?
_নাহ এখনও উঠেনি,,উঠে নাস্তা দিস ওকে,,
_আচ্ছা ঠিকআছে,,

হেনা চৌধুরী চলে গেল,,হৃদয় উঠে ফ্রেশ হয়ে অন্তরার রুমে গেল, অন্তরা উঠেছে নাকি দেখার জন্য,,গিয়ে দেখল অন্তরা এখনও উঠে নি,,হৃদয় আর অন্তরাকে জাগাল না সে নিচে গিয়ে একাই ব্রেকফাস্ট করে নিল,,হৃদয় তার রুমে গিয়ে লেপ্টপে কাজ কর‍তে লাগল,,হঠাৎ হাসির শব্দ পেল,,হাসির শব্দ শুনে হৃদয় উঠল,ভাবল অন্তরা হয়ত জেগে গেছে তাকে ঔষুধ খাওয়াতে হবে,,অন্তরা তো তার ডল পেয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে,,,হৃদয় গিয়ে দেখল অন্তরা তার ডল নিয়ে হাসছে খেলছে,,হৃদয় ও অন্তরার পাশে গিয়ে বসল,,অন্তরা হৃদয়কে দেখে বলল,,

_হৃদয় ভাইয়া দেখ, কে জানি এই ডল টা এইখানে নিয়ে এসেছে,,
_হুম,,(বলেই হাসল)অন্তরা তোমার খিদা লেগেছে না আসো খাবা,,
_আচ্ছা চলো,,

হৃদয় অন্তরার জন্য খাবার নিয়ে এলো,তাকে খাইয়ে দিল,সাথে ঔষুধও,তারপর অন্তরাকে বলল,,

_তুমি খেল ডল দিয়ে,, কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিও,,

অন্তরা ডলের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াল,যার অর্থ “ঠিকআছে” হৃদয় তার রুমে চলে গেল আবার কাজ করতে,,হঠাৎ বিদুৎ এর গর্জনে অন্তরা দৌড়ে হৃদয়ের রুমে চলে এল,,ভয়ে থরথর করে কাপছে,,ডল টাকে ঝাপ্টে ধরে আছে,,হৃদয় অন্তরার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে অন্তরার কাছে গেল,,

_কি হয়েছে অন্তরা?
_আমার একা ঘরে ভয় করে,,
_আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এইখানে বসে খেল আমি কাজ করি,,
_আচ্ছা,,

অন্তরা হৃদয়ের বিছানায় বসে খেলছে,আর হৃদয় কাজ করছে,,হঠাৎ অন্তরা হৃদয়কে প্রশ্ন করে বসে,,

_আচ্ছা হৃদয় ভাইয়া ডলের আম্মু আব্বু কোথায়?

হৃদয় অন্তরার দিকে হা করে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল,, কি থেকে কি বলে ফেল্ল অন্তরা?কিচ্ছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে বলল,,

_তুমিই তো ডলের আম্মু দেখ তুমি কত্ত আদর কর ডলকে,,
_হ্যা ঠিক বলেছ,,তাহলে আব্বু কে?

হৃদয় ভবতে লাগল আব্বু কে?কাকে বলবে?অন্তরা আবার বলল,,

_তাহলে তুমি ডলের আব্বু,,

হৃদয় কিছু না বলে তাকিয়ে রইল অন্তরার দিকে,

_ভাইয়া বল না,,
_হুম ঠিক আছে এখন খেল,,

অন্তরা তার ডল নিয়ে খেলায় বেস্ত,, আর হৃদয় কাজ করছে আর আড়চোখে অন্তরাকে দেখে জাচ্ছে,,,অন্তরা আবার বলল,,

_ভাইয়া আসো না আমরা খেলি,,পিংকু আগে আমার সাথে কত্ত খেলতো,,তুমিও খেলবে আসো না,,,
_কি খেলতে পিংকুর সাথে?
_ছুটোছুটি,কানামাছি আরও অনেক কিছুই,,কিন্তু এখন তো আর ছুটোছুটি করতে পারব না তুমি আর আন্টি বাড়ন করেছ,,এখন আমরা অন্য কিছু খেলব,,
_কি খেলবে তুমি?
_আমরা ডলের আম্মু আব্বু খেলব,,

হৃদয় তাকিয়ে রইল অন্তরার দিকে কি বলবে সে খেলবে?যদি না খেলে অন্তরা মন খারাপ করবে,,না ও করতে পারছে না আবার হ্যা বলতে ও কেমন জানি লাগছে,,এত্ত চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে হৃদয় বলল,,

_আচ্ছা ঠিকআছে তুমি শুরু করো কিভাবে খেলবে?
_আচ্ছা,,

বলেই অন্তরা বাহিরে গেল,,হৃদয় শুধু দেখছে অন্তরা কি কি করছে,,অন্তরা রুমে ঢুকল, হৃদয় হায়ায়া করে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে,,অন্তরা নিজের ড্রেস খুলে ব্লাউজ বিহিন শারি পরেছে ওড়না দিয়ে,,তা দেখে হৃদয় অবাক হয়ে শুধু তাকিয়েই আছে,,আর ভাবতে লাগল,,

_এত্ত সুন্দর মেয়ে কি করে হয় বুঝি না আমি পুরাই রাধিকা,,(মনে মনে)

হৃদয়ের হাত পা কাপা কাপি করছে,,অন্তরার ঝাকিনিতে হৃদয় হুশ ফিরে,,

_হৃদয় ভাইয়া,হৃদয় ভাইয়া,এই নাও,

হৃদয়ের হাতে একটি সিগারেট আর এক্সট্রে ধরিয়ে দিল,হৃদয় একবার সিগারেটের দিকে তাকায় একবার অন্তরার দিকে,,অন্তরা বল্ল,

_তুমি ইজি চেয়ারে বসে এই এইটা খাবা আর এইখানে ফালাবা, আমি আমার আব্বুকে দেখেছি,,যাও যাও,,

অন্তরা ঠেলে হৃদয়কে উঠিয়ে দিল,,হৃদয় গিয়ে বসল, অন্তরা আবার বলল,,

_তুমি বসে আমাকে দেখবে আর আমি আমদের বাবুকে ঘুম পারাবো,, আমি আম্মুকে দেখেছি,,

হৃদয়ের আর কি করার সে বসে রইল অন্তরার দিকে তাকিয়ে,সে কখন সিগারেট মুখে দেই নি কিন্তু অন্তরার জন্য করতে হল,,সে সিগারেট জ্বালাল কিন্তু মুখে দিল না,,অন্তরা আবার বলল,,

_আমাদের বাবু ঘুমিয়ে গেছে,,,
_তো?
_তো কি আসো আমরাও ঘুমুবো,,

বলেই হৃদয়ের কাছে গিয়ে দাড়াল,হৃদয় এখন ও আগের মতোই অন্তরার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে,,অন্তরা আবার বলল,,

_কি হলো আমাকে কোলে নাও,,
_কেন?
_কেন কি আমি তোমার বউ না তাহলে আমাকে কোলে নিয়ে বিছানায় যাও,,

হৃদয় বাকরুদ্ধ হয়ে গেল,,সে এক অন্য ঘোড়ে চলে গেল নেশা ধরে গেছে তার, সে অন্তরাকে কোলে নিল,,তাকে বিছানায় বসালো হৃদয় আগের ন্যায় অন্তরার দিকে তাকিয়েই আছে,,তার চোখ সরছেই না অন্তরার থেকে,,অন্তরার পাশে বসল হৃদয়,, অন্তরা বলল,,

_দাড়াও আমি বাবু টাকে সরাই,,

বলেই ডল টাকে হাল্কা সাইড করল,ডল টাকে ঘুড়ানোর সময় হৃদয়ের দিকে পিঠ দিয়ে বসল,,পিঠ থেকে তার চুল সরে গিয়েছে,,কালো তিল দেখা যাচ্ছে,,যা হৃদয়ের ভিতর তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে,,হৃদয় যেন আরও নেশা কাজ করছে,,সে নেশার ঘোড়ে অন্তরাকে পিছন থেকে টাইট করে ধরে সেই তিল টাতে জোরে কামড় বসিয়ে দিল,এত্ত জরেই ছিল কামড়টা রক্ত বের হয়ে গেল,,অন্তরা উফফফফ করে উঠল,,কান্না করতে লাগল, অন্তরার কান্নায় হৃদয় ছেড়ে দিল অন্তরাকে,, অস্থির হয়ে পরল,,

_আমি কান্না করলে আম্মু আমাকে চুমু দেয় তুমিও দাও,,(বলেই কান্না করতে লাগল)

হৃদয় দিতে চাইছে না কিন্তু অন্তরার জোরাজুরির সাথে আবার পারছে ওনা,,হঠাৎ হৃদয়ের অন্তরার ঠোটের দিকে চোখ যায়,গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোট,,ডুবে গেলও যেন তৃষ্ণা মিটে যাবে,,এইসব ভাবতে লাগল হৃদয়,,অন্তরার জোরাজুরিতে আর না পেড়ে অন্তরার গালে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে তার ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিল,,হৃদয় অন্তরার নরম ঠোট জোরা শুষে নিচ্ছে পরম আবেশে,সে যেন এক অন্য দুনিয়ায় চলে গেছে,তার যেন ঘোড় কাটছেই না,,হঠাৎ অন্তরা “উমমমমম” কর‍তে লাগল,,অন্তরার শব্দে সে হুশে ফিরল,,

_এ আমি কি করছি,,ও ছেলেমানুষী দেখে কি আমিও?আমার কি হয়ে গেছে?

মনে মনে বলে তারাতারি অন্তরাকে ছেরে এক মুহুর্ত নষ্ট না করে বারান্দায় চলে গেল,,ছেড়ে দেওয়ায় অন্তরা যেন নিজের জান ফিরে পেয়েছে,,ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে, হৃদয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল,,সে একি করল আজ?হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল,,,

_হ্যালো আম্মু,,
_হ্যা হৃদয় আজ আমরা আসব না,,আমরা তোর খালাদের বাসায় থাকব,, বাহিরে কত বৃষ্টি,,
_আচ্ছা ঠিক আছে,,
_অন্তরার ধেয়ান রাখিস,, কেমন আছে অন্তরা?তোকে জালাত্বন করছে না তো?
_না নাহ মা,, আচ্ছা রাখি,

বলেই জবাবের আশা না করে ফোন রেখে দিল,,সে বারান্দার থেকে অন্তরার দিকে তাকিয়ে রইল,,দেখল অন্তরা আগের মতো ডল নিয়ে খেলতে লাগল তার কোন পরিবর্তন নেই,,হৃদয়ের বুক চিড়ে একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল,,

চলবে🖤,,,
(ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🥰)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে