#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৯|
#শার্লিন_হাসান
হসপিটাল থেকে বাড়ী ফিরবেন আনিসুল হক। সীট কেটে দেওয়া হয়েছে। আহিয়া ঔষধপত্র সব নিয়ে গাড়ীতে বসেছে। বিকেলে আবার শামিম সরদারের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে।
বাড়ীতে এসে সব ঠিকঠাক করে নেয় আহিয়া। তেমন কেউই থাকে না বাড়ীতে।
আনিসুল হকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সে বেড়িয়ে পড়ে।
বাংলোতে আসতে আহিয়া খবর পায় মির্জা পরিবার চট্টগ্রাম যাবে।
শামিম সরদার সহ বসে প্লানিং করছে কী করা যায়।
-আচ্ছা ওর ভাগ্নেটাকে দিয়ে শুরু করি?
শামিম সরদার বলে। তখন আহিয়া হেঁসে বলে,
-আইডিয়াটা মন্দ না। ওর ভাগ্নেটাকে কিডন্যাপ করে ওকে জব্দ করবো। একবারে ওকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিবো। তারপর এমপি নির্বাচনে তুমি প্রার্থী হবা আর আমিও আমার প্রতিশোধ নিতে পারবো। মানে এক ডিলে দুই পাখি মারা।
-হুম! তাহলে চলো আমরাও যাই চট্টগ্রামে। আমাদের দলের কিছু এলাকায় থাকুক বাকীরা চট্টগ্রাম রওনা দেবো।
-তোমরা যাও আমি আমার বাবার কাছে থাকবো। অবশ্য এই বাংলোতেই তো সবাই একজোট হবো।
-তাহলে এই কথাই রইলো।
আহিয়া বেড়িয়ে যায়। শামিম সরদার তার দলের লোকদের বলে রেডি হয়ে নিতে তারা বের হবে।
****
বিকেলের দিকে সনাই রেডি হয়ে নেয়। বড় মাইক্রো করে তারা চট্টগ্রাম যাবে। রোহিত,পরাগ যাবে তাঁদের সাথে। তারিশা রেডি হয়ে গাড়ীর সীটে বসে পড়ে। মাইশা,মরিয়ম মওয়াজ তারা ও বসে পড়ে। নিবরাস সাইডে কলে কথা বলছে। আনায়া এখনো আসেনি তারই লেট হচ্ছে।
হিজাব ওরনা টা ঠিকঠাক করে বেঁধে নেয় আনায়া। সাধাসিধা টাইপ ড্রেসআপ পড়েছে আনায়া। লং ড্রাইভে লং কুর্তি সাথে হিজাব ওরনা! হিজাব বাঁধে না মাথা ব্যথা হয়ে যায় আধঘন্টা গেলেই। নিজের দরকারী জিনিস গুলো ব্যাগে ঢুকাচ্ছে আনায়া। হাত ব্যাগে ফোন নিয়ে নেয়। জুতা হাতে বেড়িয়ে আসে রুম থেকে।
লিভিং রুম পেড়িয়ে বাইরে এসে জুতা পড়ে নেয়।
আনায়া লেট তারিশার বিরক্ত লাগছে। বাকীরা ঠিকঠাক ভাবে আছে। আনায়াকে নিবরাস কিছু বলছে না লেটের জন্য!
আনায়া আসার পরেও নিবরাসের লেট। এবার আর তারিশা কিছু বলতে পারছে না। তবে মনে,মনে জামাই,বউ দু’জনকে বকা দিচ্ছে। নিবরাস বউ পাগ’ল হয়ে গেলো! অথচ আনায়ার জায়গায় তার থাকার কথা ছিলো। নিবরাস এতোটা স্ট্রং ছিলো যে মচকে যায়নি। নারীবাদী ছিলো! কিন্তু তার জীবনে তারিশা ছাড়াও আহিয়ার বোন ঢুকতে চেয়েছিলো। অবশ্য এই সবই তারিশা জানে!
নিবরাস আসতে গাড়ী স্টার্ট দেয় ড্রাইভার। সামনে পরাগ বসেছে। নিরব মির্জা যাবেন না। পরের সারিতে রোহিত,মাইশা, মরিয়ম নওয়াজ বসেছে। তৃতীয় সারিতে নিবরাস,আনায়া,মিসবাহ আছে। তারিশা একাই পেছনে। তাকে বলেছে মাইশা রোহিতের সাথে বসতে সে বসেনি। সবার পেছনে একাই বসেছে।
নিবরাসের পাশের সীট খালি। আনায়া ভাবছে কখন৷আবার তাারিশা বসে পড়ে ঠিক নেই। নিবরাস ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
*****
খান বাড়ীতে শাহরিয়ার সায়ন্তিক, নিধি এসেছে। নিধির নানু বাড়ীতে দাওয়াত পড়েছে তারাও চট্টগ্রাম যাবে। সন্ধ্যায় রওনা হয় তারা সবাই। দু’টো কার নিয়ে রওনা হয় তারা।
রাতে তারা রেস্টুরেন্টে যায়। নাজিয়া খাবার শেষ করে কফি নিয়ে বসেছে। বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে! এই ওয়েদারে কফি বেশ উপভোগ করছে নাজিয়া। তখন জায়ান এসে বসে তার পাশের সীটে। নাজিয়া জায়ানকে দেখে ব্রু কুঁচকে তাকায়।
-আয়াত পতেঙ্গা সমুদ্রে যাবা?
-আজ্ঞে না! তুমিই যাও, আমার ভালো লাগছে না।
-তুমি চিন্তিত?
-হ্যাঁ!
-কী নিয়ে?
-আচ্ছা ভাইয়া তুমি এমপিকে চেনো?
-হুম, চিনি।
গম্ভীর হয়ে জবাব দেয় জায়ান। নাজিয়া বলে,
-খুব ভালো মানুষ সে।
-মোটেও না। তুমি তাহলে জানো না! ওর বাইরের রুপটা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে কিন্তু ওর কিছু ভয়ংকর অতীত জানলে যে কেউ নাক ছিটকাবে।
-এই শোনো রাজনীতিতে এসে কেউই সৎ থাকতে পারে না। ঘাতকে প্রতিঘাত করতে হলে এমন খারাপ হওয়া লাগেই। আচ্ছা একটা কথা দেখাই, ‘আমি রাজনীতিতে আসলাম আমি সৎ হয়ে চলতে চাই। সৎ হয়ে চলতে পারতাম যদি বিপরীত দল আমার পেছনে না পড়তো। ওদেরকে ধমিয়ে রাখতে অসৎ কাজ দু চারটা করা লাগে। তুমি নিজে সরে আসলেই তো সে সুষ্ঠু রাজনীতি করতে পারে।’
-সনারই ক্ষমতা পাওয়ার ইচ্ছে থাকে। ওই সাদা পান্জাবি পড়ে এলাকা চড়বে! ভাষণ দিবে, মানুষ নেতা বলে সম্মোধন করবে সবারই আশা থাকে।
-সেজন্য ব্যবহার আর পার্সোনালিটিও লাগে স্ট্রং,গাঁজা খোরদের নেতা মানায় না।
কথাটা বলে নাজিয়া উঠে যায়। জায়ান বুঝেছে নাজিয়া কথাটা কাকে খোঁচা মেরেছে। শামিম সরদারকে নিয়ে একটু আধটু সবারই ধারণা আছে। আপাতত এলাকার বড় সন্ত্রাসী ও বলা যায়।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে সবাই কারে বসে। নাজিয়া জায়ানের পাশের সীটে বসেছে। জায়ান ড্রাইভিং করছে। তাদের পেছনে শাহরিয়ার সায়ন্তিক শিকদার সাথে নিধি আছে। গাড়ী চালাতে,চালাতে জায়ান প্রশ্ন করে,
-আচ্ছা শামিম সরদারের সাথে আমার মেলামেশা দেখে তুমি এসব বলছো?
-আমি কখন কী বললাম তোমায়?
-কিছু না।
-হুম! আজে বাজে মানুষের সাথে চলা ছেড়ে দাও।
-তুমি বলছো?
-হুম! তুমি খান বাড়ীর ছেলে, তোমার স্টাইল,ব্যক্তিত্ব সব আলাদা রকমের হবে যাতে এই ধরনের মানুষ তোমার আশেপাশে ঘেঁষতে না পারে।
-তাহলে চেন্জ করে নেই সব।
-আমার কথায়?
-হুম।
-আমার কথায় কেন?
-ভালো লাগে, তোমার উপদেশ।
-কাজে লাগাও।
মাথা নাড়ায় জায়ান। শাহরিয়ার সায়ন্তিককে নাজিয়া প্রশ্ন করে,
-আচ্ছা জিজু এমপিকে আপনার কেমন লাগে? মানুষ হিসাবে বা তার ব্যক্তিত্ব যতটুকু দেখেছেন বা শুনেছেন?
-তুমি এমপির পেছনে পড়লা কেন পাখি? সে কিন্তু ম্যারিড।
-তেমাকে এখনে কে বলেছে বা হাত ঢুকাতে? আর সে ম্যারিড এটা সবাই জানে ওকে? তুমি অন্য মাইন্ডে নেও কেন? উপজেলার এমপি তাকে নিয়ে দু’একটা কমপ্লিমেন্ট শুনছি মানুষের থেকে। তোমার মাইন্ড এতো ডার্টি কেন?
জায়ানকে বলে নাজিয়া। নাজিয়ার কথায় নিধি শব্দ করে হেঁসে দেয়। তখন শাহরিয়ার সায়ন্তিক বলে,
-শালা বাবু মুখটা বন্ধ রাখো শালিকা কিন্তু আগুন।বুঝেশুনে কথা বলো ওর সাথে।
-না জায়ান ভাইয়া ব*লদের সাথে থাকতে,থাকতে নিজেও দিনদিন আ*বাল হয়ে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সঙ্গ পরিত্যাগ করো ভাইয়া। নাহলে এমন অপমান ছাড়া কিছুই জুটবে না কপালে।
জায়ান আর টু শব্দই করে না। তার মনে হচ্ছে আসলেই শামিম সরদার তার জন্য শনি। তার পরিবার পছন্দ করে না ব্যপারটা। সবচেয়ে বড় কথা আয়াত পাখি এসব পছন্দ করে না। তার উচিত সঙ্গ পরিত্যাগ করা। আজকেও কতগুলো জ্ঞান দিলো ওই টুকুন মেয়ে। বয়সের তুলনায় একটু বেশী ম্যাচিউর হয়ে গেলো না?
-বলুন জিজু?
-যতটুকু শুনেছি আমি ভালোই শুনেছি। তার ভালো কাজগুলো সত্যি প্রশংসনীয়। কিন্তু তার শত্রু বেশী।
-ভালো মানুষের শত্রু থাকে ব্যপার না। সবচেয়ে বড় কথা অধম আছে যারা তারাই এমন ভালো মানুষের পেছনে পড়ে।
জায়ান আড়চোখে তাকায় নাজিয়ার দিকে। কথাগুলো তার গায়ে বিঁধে যাচ্ছে। না আর উপায় নেই শামিম সরদারের সঙ্গ পরিত্যাগ করে নাজিয়ার মতো এমপির প্রশংসা করতে হবে এখন থেকে।
-এমপির শালিকা আমি! দেখি আমার পরিবারে আর কে তার শত্রুর সাথে হাত মেলায়। আমার বোনের পরিবারটা হ্যাপি থাকুক আর শত্রু কমুক এটাই চাই।
মনে,মনে বলে নাজিয়া। জায়ানের মুখের দিকে তাকাতে তার হাসি পাচ্ছে। যা অপমান দিলো মনে হয় সোজা হয়ে গেছে তার ভাই।
*****
রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার সেরে গাড়ীতে বসেছে সবাই। আনায়া নিবরাসের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিবরাস ও তাকে আগলে নেয়। তবে তারিশা আনায়ার পাশের সীটে বসেছে। নিবরাস তারিশার মাঝখানে আনায়া। তারিশা বসার পর ভেবেছে নিবরাস মাঝখানে বসবে কিন্তু আনায়া মাঝখানে বসে শেষে নিবরাস উঠে গাড়ীতে। তারিশা মুখটা সে কখন থেকে কালো করে রেখেছে। তাতে নিবরাসের কিছু যায় আসে না। সে তার অর্ধাঙ্গিনীকে আগলে রাখছে।
ভোরের আলো ফুটতে তারা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। নিবরাস আনায়াকে নিয়ে তাঁদের রুমে চলে যায়। সব গুছিয়ে রাখা হয়েছে তারা আসবে সেজন্য। আনায়ার পা থেকে জুতা জোড়া খোলে তাকে সুন্দর ভাবে শুইয়ে দেয় নিবরাস। কেন জানি আনায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে তার। এক ধ্যাণে তাকিয়ে আছে আনায়ার দিকে নিবরাস।
কিছুক্ষণের মধ্যে ফজরের আজান পড়ে যায়। নিবরাস আনায়াকে ডাক দেয়। কয়েকবার ডাক দিতে রেসপন্স পায়নি নিবরাস। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-এই যে নিবরাসের পাখি উঠুন না? নামাজ পড়বেন না?
আনায়া নড়েচড়ে উঠে। নিবরাস আবারো ডাক দেয়,
-পাখি উঠো? দেখো ভোরের পাখিরাও জেগে গেছে শুধু তুমি জাগতে লেট করছো।
আনায়া উঠে। নিবরাস সহ নামাজ আদায় করে নেয়। পুনরায় নিবরাসের বুকে মাথা গুঁজে দেয় আনায়া। নিবরাস তার চুলে বিলি কেটে দেয়।
-আচ্ছা আপনার এতো শত্রু যদি কখনো এই রাজনীতির জন্য আমায় বা পরিবারের কাউকে হারাতে হয়।
-তোমার আমার সম্পর্কে ধারণা নেই পাখি। এই যে তুমি এখানে আছো আমার পরিবার এখানে আছে তোমাদের সুরক্ষার সব ব্যবস্থা করা আছে। তুমি চিনতে পারবে না আসলে কারা তারা! কিন্তু আমাদের আশেপাশে আছে তারা।
-হুম ভালো। কী দরকার ছিলো রাজনীতিতে আসার? শুধু,শুধু শত্রুতা।
-রাজনীতিটা আমার নেশা নয়, পেশা। ভার্সিটি লাইপ থেকে রাজনীতি বেছে নিয়েছি। আমি জানি এই রাজনীতি মঞ্চে সৎ থাকা যায় না। আমিও পারিনি সৎ থাকতে। তবুও আমি কারোর উপরকার করলাম, কেউ বিপদে আমার দ্বারা উপকার পেলো এটাই অনেক। আমি জানি আমি একাবারে ভালো না। ভালো খারাপ দু’টো মিলিয়ে মানুষ হয়ত আমি একটু বেশী খারাপ তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমার দায়িত্ব আর কাজ বলে আমি মনে করি।
-হয়েছে আপনি যার কাছে যেমন হোন না কেন আমার লিডার আমার কাছে বেস্ট এন্ড অলওয়েজ বেস্টই থাকবে।
-আমি খারাপ হতাম না পাখি শুধু তোমার জায়গাটায় অন্য কাউকে বসাইনি,বসতে দিইনি। তোমার জায়গায় যেই হতো সেই জিততো।
-আমি জিতছি? বাট আপনি তো কখনো বললেন না আমি জিতছি এরকম বউ পেয়ে।
-বউ আনরোমান্টিক! জিতলাম আর কোথায়?
-আমি মোটেও আনরোমান্টিক না আমি লজ্জাবতী।
-আচ্ছা সমস্যা নেই আমার পাখি! তুমি লজ্জাবতী থেকো আমি নাহয় একটু ঠোঁটকাটা হবো।
#চলবে