হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-০১

0
967

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমায় বিয়ে করবে মিশান ভাই?”

-“বয়স কতো তোর?”

মিশান এর করা প্রশ্নে ষোড়শী কন্যা সায়রার সহজ সরল উওর

-“ষোল বছর হতে আর তিন মাস বাকি।
চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি। তুমি তো কাল চলে যাবে লন্ডন। ”

-“কিসে পড়িস তুই?
কি যোগ্যতা আছে তোর আমার বউ হওয়ার?”

মিশানের এমন কথায় কিশোরী সায়রা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন

-“তুমি এসব কেন বলছো?
তুমি তো আমায় ভালোবাসো।”

-“কে বলেছে আমি তোকে ভালোবাসি?
বা কখনো আমি নিজে তোকে বলেছি যে আমি তোকে ভালোবাসি?
শুন যে দিন লেখা পড়া করে আমার যোগ্য হতে পারবি সে দিন আমি তোকে বিয়ে করবো।
এখন যা আমার রুম থেকে বিদায় হও।
অনেক কাজ এখনো বাকি আছে আমার।
কাল সকালে আমার ফ্লাইট। ”

মিশানের এমন ব্যবহারে যেনো ছোট সয়ারা বাকরুদ্ধ।
এই মূহুর্তে কি বলা উচিত এই কিশোরীর মাথা আসছে না।

কথা গুলো বলতে বলতে মিশান সায়রাকে ঘর থেকে ঠেলে বের করে দিয়ে ভিতর থেকে দরজা টা ঠাস করে বন্ধ করে দেয়।

সায়রা চোখ ততক্ষণে জল গড়িয়ে পড়ছে।
সায়রা যেনো দরজা বন্ধ করার শব্দে সম্মতি ফিরে পেলো
আর তৎক্ষনাৎ ছোট সায়রা ছোট ছোট হাত দ্বারা দিয়ে আবারও মিশানের কক্ষের দরজায় কড়া আঘাত করে।

-“প্লিজ মিশান ভাই এমন করে বলো না।
আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি। ”

কিন্তু না খোলে নি সে দিন মিশান তার রুমের দরজা আর নাই কোনো উত্তর দিয়েছে ছোট সায়রার এতো এতো করা প্রশ্নের।

—————

-“শোন আজ ভার্সিটি না গেলে হয় না?”

প্রিয়তা মির্জা রান্না ঘর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ডাইনিং টেবিল রাখতে রাখতে মেয়ে কে প্রশ্ন করে।
সাদনান মির্জা মেয়ের মুখে খাবার তোলে দিচ্ছে।

পাশে প্রহর বসে আরভীর সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলছে আর নাস্তা করছে।
সামনের চেয়ারে আয়ান বসে পেপার পড়ছে আর কফি খাচ্ছে। মাইশা রান্না ঘরে পরটা বানাচ্ছে।

-“না মা আজ একটা পরীক্ষা আছে যেতে হবে।”

-“আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরবার চেষ্টা করিস।
তোর ছোট মনি আসবে।”

-“হ্যাঁ, বাবা গিয়ে নিয়ে আসবো।
প্রহর আর আরভী তোমরাও কলেজ ছুটির পর আপুর জন্য দাঁড়াবা।
আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরবো।
আয়ান কি আজ অফিস যাবি?”

আয়ানের চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন সাদনান মির্জা।

-“না তুমি যাও।
আমি রাহানদের নিতে যাব।”

-“আচ্ছা। ”

তার পর সবাই খাবার খেয়ে যে যার কাজে চলে গেলো।
প্রিয়তা আর মাইশা দু’জনে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
অনেক কিছু করতে হবে।
আজ পাঁচ বছর পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরবে বলে কথা।

—————–

সে দিন মিশান লন্ডন চলে যাওয়ার পর আজ পাঁচ বছর কেটে গেছে।
সায়রা মিশানের সাথে এই পাঁচ বছরে এক বারও যোগাযোগ করে নি।
কিন্তু চুপিচুপি ঠিক মিশান কে দেখেছে।
মিশান দেখতে আগের চাইতে অনেক সুন্দর হয়েছে।
সায়রা মিশানের ছবি আরভীর ফোনে দেখেছে।
আরভী আয়ান আর মাইশার মেয়ে।
মিশান যখন বাড়ির সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতো তখন সায়রা আগে পিছে ঘুরঘুর করতো। তবে মিশান কখনো সায়রার সাথে কথা বলতো না।
তাই সায়রাও নিজে কে শক্ত করে নিয়েছে।
এখন মিশান বাড়ির সবার সাথে যখন কথা বলে তখন সায়রা নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। আর আগের মতো বেহায়াপনা করে না।
নিজে কে গড়েছে। এসএসসি তে ভালো রেজাল্ট না করলেও এচএসসি তে ভালো রেজাল্ট করেছে। ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে।
মন দিয়ে লেখা পড়া করছে।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো কেউ এই সব নিয়ে কখনো কোনো কথা বলে না। যেমন এই যে মিশান কেন সায়রার সাথে কথা বলে না? সায়রার খারাপ লাগে কেউ কেন মিশান কে কিছু বলে না? আবার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়।
মিশান ভাই কি সবাই কে বলে দিয়েছে? সে যে মিশান কে ভালোবাসে।
কিন্তু জানলে কেউ কিছু বলে না কেন? সায়রার এই ছোট্ট মাথায়
এতো এতো প্রশ্ন কিন্তু উত্তর কে দিবে?
বাড়ির সবাই জানে আজ রাত সাত টার সময় মিশান বাংলাদেশ আসছে। শুধু সায়রা ছাড়া।
মিশান নিজেই জানাতে না করেছে।
এই জন্যই রাহানরা সবাই আজ ঢাকা আসছে।

—————-

-“আপু চলো না আমরা শাড়ী পড়ি প্লিজ। ”

সন্ধ্যা ছয় টার বেশি সময় বাজে এখন
সায়রা দোলনায় বসে কোনো একটা গল্পের বই পড়ছিল।
ঠিক তখনি আরভী ওর পাশে বসতে বসতে কথা টা বলে।
সায়রা কিছু না বলে বই টা বন্ধ করে।
অতঃপর থুতনিতে হাত রাখে।
কিছু ভাবে। মলিন হয় মুখ।

-“কিন্তু আমি তো শাড়ী পড়তে পারি না। আর না তুই পারিস।
মা, ছোট মনি বড় মনি আজ অনেক কাজ করছে।
তাহলে পড়িয়ে টা দেবে কে?”

-“হুম,,
আপু আমরা ইউটিউব এ ভিডিও দেখে পড়তে পারি।”

প্রথম মন খারাপ করলেও পরে বেশ উৎসাহ নিয়ে বলে আরভী।

-“হ্যাঁ। এটা করা যায়।
তবে চল পড়ে ফেলা যাক।”

সায়রা আর আরভী বেলকনি হতে রুমে এসে সায়রা আলমারি খোলে দুটো শাড়ী বের করে একটা আরভী আর একটা নিজে নেয়।সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ফোনে ভিডিও দেখে দেখে শাড়ী পড়তে শুরু করে। বেশ অনেক টা সময় নিয়ে দু’জনে
শাড়ী পড়তে সক্ষম হয়। তার পর দুজনে হালকা করে সাজুগুজু করে নিচে চলে আসে।
কারণ ছবি তোলার জন্য এখন তাদের প্রহর কে প্রয়োজন।
প্রহর সোফায় বসে কাগজে কিছু লিখছে।
প্রহর এভার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি হ’য়েছে।
আবার পরীক্ষাও শুরু হবে কয় দিন পর তাই বেশ চাপ যাচ্ছে পড়ার।
আর প্রহর পড়া লেখা নিয়ে অনেক সচেতন সাথে ব্রিলিয়ান্ট। তাই তো ক্লাস টু না পড়ে থ্রি তে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। এই জন্যেই তো সায়রার এক বছর জুনিয়র।

-“ভাই তুই কি কিছু করছি?”

-“হুম সামনে পরীক্ষা।
তোর কিছু লাগবে?”

-“হুম তোকে।সাথে তোর ক্যামেরাটাও।”

-“আচ্ছা। এখন তো রাত বাহিরে তো নিশ্চয়ই যাবি না।
তোরা বরং দরজার ডান পাশে সিঁড়ি কাছটায় দাঁড়া আমি রুম থেকে ক্যামেরা নিয়ে আসছি।”

-“আচ্ছা। ”

প্রহর উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। সে বোনের শাড়ী পড়া দেখেই বুঝতে পেরেছে।
সায়রাও আরভী কে নিয়ে প্রহর এর কথা মতো দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সাথে আরভী বিভিন্ন রকম স্টাইল করছে।কিভাবে ছবি তোল কি করবে এসব বলছে সায়রা কে।

বেশ অনেক টা সময় নিয়ে যখন প্রহর আসছে না দেখে আরভী গেলো উপরে প্রহরের খুঁজ করতে।

ঠিক সে সময় বাড়ি বাহিরে গাড়ি শব্দ হলো।
সায়রা ভাবলো হয়তো ওর বাবা আর বাবাই এসছে।রাত আটটা বাজতে চলে।
তাই খুশি হয় কারণ সাদনান মির্জা মেয়ে কে এভাবে দেখলে অনেক খুশি হবে ভেবেই সায়রা বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে মেইন দরজা খোলে।কিন্তু দরজা ওপাশের ব্যক্তি গুলো কে দেখে নিমিষেই হাসি খুশি মুখ টা বিষাদময় হয়ে উঠে।

-“কি রে তুই এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
ওদের কে ভিতর ডুকতে দে।
দেখেছিস না ছেলে টা মেয়ে টা কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে?”

প্রিয়তা মির্জা কথা গুলো বলতে বলতে এসে সায়রা কে দরজা হতে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ওপাশে থাকা মানুষ গুলো কে ভিতরে ডুকতে বলে।

অতঃপর নিজেও হন্তদন্ত হয়ে ডাইনিং টেবিল হতে পানির গ্লাস আনে।
ততক্ষণে বাহিরে থাকা প্রতি টা ব্যক্তি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেছে।

#চলবে….

[season 2 বেশি বড় হবে না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে