হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0
861

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৩১|
#শার্লিন_হাসান

আহিয়া কল কেটে দেয়। সীতারা আহম্মেদ রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। তার মনে হচ্ছে গেম শুরু করলো সে আর গুটি ছিনিয়ে নিলো অন্য কেউ!
সব এলোমেলো হয়ে গেলো কীভাবে? নাজিয়ার তেমন খোঁজ মেলাতে পারেনি সীতারা আহম্মেদ। সেই চিন্তায় তার অবস্থা খারাপ।

শামিম সরদার বসে,বসে বকাঝকা করছে সবাইকে। সে শুধুই বসে আছে। না আনায়াকে না নাজিয়াকে পেল আর না নিবরাসকে। তাদের মধ্যের কেউ সব উলোটপালোট করে দিয়েছে।

*****
আনায়া, আহিয়া,তাহিয়া বসে,বসে গল্প করছে। আহিয়া অনেকবার ক্ষমা ও চেয়েছে আনায়ার থেকে! সে তো কিছুই জানতো না। তাহিয়ার থেকে শুনেছে নিবরাসের কারণেই সে বেঁচে আছে। আনায়া ও নিবরাসকে বলেনি কিছু সে কোথায় আছে না আছে।

আনায়াকে যে গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো সেই গাড়ীতে আবার আহিয়ার পাঠানো লোক অ্যাটাক করে। শামিম সরদারের লোক সব হসপিটালে ভর্তি। আহিয়া আনায়াকে নিয়ে তাঁদের বাড়ীতে চলে এসেছে। তাহিয়ার সাথে তার দেখা হয়েছে দুইদিন পূর্বে। সে নিজেই গিয়েছিলো সেই বাড়ীতে। তাহিয়া আহিয়ার চক্ষু আড়াল হতে গিয়েও হতে পারেনি।

নাজিয়াকে নিয়ে আনায়ার চিন্তা হচ্ছে। কোন খোঁজ খবর মিলাতে পারেনি কেউ। তবে এটা নিশ্চিত যে শামিম সরদার বা জায়ান কারোর কাছেই নাজিয়া নেই।

তাঁদের খোশগল্পের মাঝে আনায়া বলে উঠে,

-নিবরাসকে বলি এসে আমায় নিয়ে যেতে?

তখন আহিয়া বলে,
-আরে কয়েকদিন পর বলিস। আমাদের বাড়ীতে কয়েকদিন থেকে যা!

-একটা মাত্র জামাই আমার সে যদি হার্ট অ্যাটাক করে বসে?

-আচ্ছা থাক আগামী কালকে বললেই হবে। রাতটা কাটুক।

আনায়া মাথা নাড়ায়। তহিয়া আহিয়ার থেকে কিছুটা দূরত্বে এসে তার বাবাকে কল দিয়ে জানায় সে সেভ আছে। চিন্তা যাতে না করে। তবে নিবরাসের কথা তার মনে পড়ছে। সবার আড়ালে নিবরাস কে মেসেজ পাঠিয়ে দেয় আনায়া।

-আমি ঠিক আছি। আগামী কালকে নিতে আসবেন!

আনায়ার মেসেজ দেখে নিবরাসের জেনো প্রাণ ফিরে আসো। তড়িঘড়ি কল দেয় নিবরাস। আনায়া রিসিভ করতেই বলে,

-আমি আসছি আর দূরে থাকতে হবে না।

-আরে আমি ঠিক আছি। আ জকের রাতটা কাজিনদের সাথে কাটাই না?

-গত দুটো রাত তো জামাই ছাড়া ঠিকই কাজিনদের সাথে ছিলা। তৃতীয় রাতটা জামাইয়ের সাথে থাকো!

-আপনি আর ভালো হলেন না।

-আসছি আমি!

নিবরাস কল কেটেই ছুট লাগায় আহিয়াদের বাড়ীর উদ্দেশ্য। তাহিয়ার সামনে পড়ার ইচ্ছে তার নেই তবুও পড়তে হবে।

কলিং বেল বাজাতে তাহিয়া নিজেই দরজা খুলে দেয়। নিবরাসকে দেখে মুচকি হাসে তাহিয়া। নিবরাস সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ভেতরো যেতে আনিসুল হক নিবরাসকে ঘিরে ধরে। নিবরাস ভদ্রতা দেখিয়ে সালাম দেয়। আনিসুল হক সালামের জবাব দিয়ে বলে,
-ক্ষমা করে দিও আমায় তেমায় ভুল বুঝার জন্য। অনেক মিথ্যের আড়ালে সত্য থাকে তবে সত্য কখনো চাপা থাকে না। যেটার প্রমাণ পেলাম।

-অবশেষে বুঝলেন মামাশ্বশুর।

-হ্যাঁ! তোমার জন্যই আমার তাহিয়া বেঁচে আছে।

-আচ্ছা মামাশ্বশুর আমার বউকে আসতে বলুন তাকে নিয়েই আমি চলে যেতে চাই।

-আসবে! তুমি বসো ডিনার করবে।

-করে এসেছি! এমনিতে ভয় করে যদি পানির সাথে কিছু মিশিয়ে আমায় মে’রে ফেলার চেষ্টা করেন।

-ইয়ার্কি আর গেলো না।

নিবরাস আনিসুল হকের সামনের সোফায় বসে পড়ে। আহিয়া তখন রাতের ডিনার টেবিলে গুছাচ্ছে। নিবরাস তাকে দেখে বাঁকা হাসে। খোঁচা মেরে বলে,

-শত্রুর জন্য এতো আয়োজন মিস আহিয়া!

-দুঃখিত!

-ভালো,ভালো।

অতঃপর তারা সবাই ডিনার করে একসাথে বসে। আনায়ার সাথে কথা বলার সুযোগ নিবরাস পাচ্ছে না।
আনিসুল হক অনেক করে বলেছেন নিবরাসকে থাকতে সে নাছোড়বান্দা। ডিনার করেই আনায়াকে নিয়ে রওনা দেয়। এখন অব্দি তাঁদের মধ্যে কথা হয়নি! বলা যায় নিবরাস কিছুটা রাগ করেই আছে। আনায়া বুঝেছে তবে কিছু বলছেনা।

মির্জা বাড়ীতে এসে সোজা রুমে চলে যায় নিবরাস। আনায়া পেছন দিয়ে আস্তে,আস্তে হেঁটে আসছে। নিবরাস ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। আনায়াও কোনরকম ফ্রেশ হয়ে নিবরাসের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। নিবরাস তাকে আগলাচ্ছে না। তাতে জেনো আনায়ার দুঃখ রা ভীড়ছে! তখন নিবরাস আনায়াকে সরিয়ে দিয়ে বলে,

-প্লিজ ঘুমাতে দাও আমায়! দুইটাদিন ঘুমাতে পারিনি।

-স্যরি!

-শুনতে চাইনি আমি।

-অনেক খুঁজেছেন তাই না?

-জেনেও জিজ্ঞেস করছো?

-আমি কোথায় ছিলাম বলুন?
যেখানো আঁধার হারালো। আমি তো ছিলাম
আপনার হৃদয় কোঠায় পূর্নিমার চাঁদ হয়ে! আপনি সহস্র পথ মিছি মিছি ঘুরলে!

– মিছি,মিছি ঘুরিনি আমার চাঁদকে আগলে রাখতে সহস্র পথ ঘুরলাম। ভালোবাসি তাই!

-ভালোবাসি।

আনায়া নিবরাসের কপালে নিজের অধর ছোঁয়ায়।

****

এরই মাঝে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। এমপির বউকে খুঁজে পাওয়া গেছে সেটাও জানে লোকে। তবে নাজিয়ার খোঁজ মিলেনি! সীতারা আহম্মেদকে পুলিশ এরেস্ট করেছে তার কৃতকর্মের জন্য। সেই সাথে শামিম সরদারকেও। তিয়াশ খান নিজেও তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দিয়েছে।জায়ানের কেস আদালতে উঠে। তার কৃতকর্মের জন্য যাবতজীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।

সেই সাথে তাহিয়ার খোঁজ মিলে। তবে সেদিন তাহিয়ার জায়গায় কে ছিলো সেই হিসেবটা মিলাতে পারেনি কেউ! এমনকি কেউ জানেও না তাহিয়া কীভাবে বেঁচে গেছে।

সীতারা আহমেদের বিরুদ্ধের যত প্রমাণ তাহিয়ার কাছে ছিলো সবই নিবরাসকে দিয়ে দেয়।

সীতারা আহমেদ জেলে বসেই আফসোস করছে। না কিছু করতে পারছে না বলতে পারছে। সে হাজারো শুকরিয়া আদায় করে নিবরাস বা আহিয়া তাকে নিজ হাতে মারেনি আইনের আওতায় উঠিয়ে দিয়েছে। তার হাজবেন্ড তিয়াশ,তার ভালোবাসাও তার বিরুদ্ধে চলে গেলো। তার ছেলে মেয়ে তাঁদের তো খোঁজই নেই। নাজিয়ার খোঁজ পেলো না সে। হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। জায়ান তো তার শাস্তি ভোগ করছে।

পাপের সাগরে ডুবে ছিলো এতোদিন খুজেনি ভালোকিছু!

*****
নাজিয়া সুস্থ হতে সীতাব জুম্মান তাকে বাড়ীতে দিয়ে আসার কথা বলে। নাজিয়া তাকে অনেক ধন্যবাদ দেয়। সেদিন তো সে তাঁদের ফ্যাক্টরী থেকেই পালিয়ে এসেছিলো। জায়ান আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিলো। ভাগ্যিস এরেস্ট হয়েছে নাহলে তার সাথেও খারাপ কিছু করতো।

সীতাব জুম্মানের মা সিয়ারা জুম্মা নাজিয়ার বেশ যত্ন করে। মেয়েটাকে তার ভালো লাগে সেই সাথে তার অমায়িক ব্যবহার।

অপরিচিত একটা বাড়ী,অপরিচিত মানুষ তাঁদের সাথে এই কয়েকটা দিন থেকেছে এটাই অনেক কিছু। নিবরাসকে বলেছুলো সো সেভ আছে। আনায়ার কত,কত বকা শোনলো।

নাজিয়াকে নিয়ে খান বাড়ীতে আসো সীতাব জুম্মান। গাড়ী থেকে নেমে সীতাব জুম্মানকে নিয়ে ভেতরে যায় নাজিয়া। তার বাবা,বড় বাবা আর বড় আম্মু নাস্তা করছে। তার মা’কে দেখতে পায়নি নাজিয়া।

নাজিয়ার সাথে ডক্টর সীতাব জুম্মান চৌধুরীকে দেখে তিয়াশ খান উঠে পড়ে। সীতাব ও তাকে দেখে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে নেয়।

নাজিয়া বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে সব! তখন তিয়াশ খান বলেন,

-আমার ক্লায়েন্টের ছেলে সীতাব। ওর সাথে আমার আগে থেকে পরিচয়! তুমি ওকে কোথায় পেলে নাজিয়া?

-ওহ্! উনিই আমায় সেদিন পেয়ে তাঁদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। আর আন্টি অনেক ভালো।

-হ্যাঁ সেদিন ও আমার গাড়ির সামনে পড়েছিলো।

নাজিয়াকে জড়িয়ে ধরে সুহাসিনী আদর করছে। এমনিতে তাঁদের পরিবারের উপর অনেক ঝড়ঝাপটা। সেই সাথে জায়ান যা করলো!

সীতাব জুম্মান সবার সাথে কথাবার্তা বলে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে তার হসপিটালের উদ্দেশ্য।

*****

আজকে সীতারা আহম্মেদের কেসের ফাইনাল ডেট। খান পরিবারের সবাই কোর্টে যাবে। সেই সাথে আহিয়া,তাহিয়া,নিবরাস তারা সবাইও যাবে। অবশ্য উকিলকে সব প্রমাণ দিয়ে রেখেছে নিবরাস তবে তার কাছেও কপি করা আছে সব! সে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভরসা করতে পারে না।

নাজিয়ার মন খারাপ। তার মায়ের এমন অবস্থা চোখের সামনে দেখবে কী করে। আজকে নিশ্চয়ই সব ফাঁস করবে।

নির্দিষ্ট সময় সবাই কোর্টে হাজির হয়। সীতারা আহম্মেদকে আনা হয়।

‘নারী পাচারের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো সে। সেই সাথে তাঁদের কোম্পানি থেকে অনেক ড্রাগস পাচার করা হতো সেসবে সীতারা আহম্মেদ আর জায়ান খান ছিলো। তাহিয়াকে মারার পরিকল্পনা করা। শামিম সরদার নিজেও সাক্ষী দিয়েছিলো। সীতারা আহম্মেদের কৃতকর্মের জন্য তাকে ফাঁ সির ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তার চোখে মুখে কোন ব্যর্থতা কষ্টের চাপ কিছুই দেখা যায়নি।

শামিম সরদারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তাহিয়াকে তার বেঁচে ফেরার কথা জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে,

-সেদিন শামিম সরদার আমায় বাঁচিয়ে দেয়। সীতারা আহম্মেদ কোন কাজে আটকে যায় তাই আসতে পারেনি আমায় মা’রতে। আর তাকে শুধু শোনানো হয় আমি মরেছি। আর অন্য কারোর মৃত ব’ডি দেখানো হয়। ম’র্গ থেকে নেওয়া হয়ত বা।

তাঁদের আদালতের কাজ শেষ হতে বাইরে বেড়িয়ে আসে সবাই। নাজিয়ার মনটা ভীষণ খারাপ। অনেক কিছুই তো জানা হলো না। বিশেষ করে নিবরাস! অনেক কিছু লুকিয়েছে তার থেকে।

কিন্তু এসব জিজ্ঞেস করলো আদৌ মুখ খুলবে তো নিবরাস? সে নিজেও তো সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা কালো জগতের রাজা। যার রাজ্য সম্পর্কে কেউ জানে না। না কেউই জানে না তার আড়ালের কৃতকর্মের সম্পর্কে।

খান পরিবারের সবাইকে অনেকক্ষণ স্বান্তনা দেয় নিবরাস। নাজিয়াকেও বুঝায় নিবরাস। নাজিয়ার তাতে হেল দোল নেই। সে তার পরিবারের সাথে বাড়ীতে চলে যায়।

নিবরাস ও বাড়ীতে চলে আসে। আজকে অনেকদিন পর তার ভালো লাগছে। ভাবছে অনেকদিন হলো আনায়াকে সারপ্রাইজ দেওয়া হয়না কিছু একটার ব্যবস্থা করবে।

যেই ভাবা সেই কাজ! রোহিতকে বলে বাংলোতে সব আয়োজন করতে বলে। সন্ধ্যায় তারা সেখানে যাবে। আনায়াকে তার রাজনীতি,কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত রাখে না নিবরাস। তাকে এসবের বাইরে রাখে! সে চায়না আনায়ার মনে প্রশ্ন তৈরী হোক তাকে নিয়ে। তার ও ভুলভ্রান্তি আছে তবে সামনে থেকে সব সুন্দর ভাবে চলার চেষ্টা করবে সে।

****

বাড়ীতে এসে মন খারাপ করে নিজের রুমে শুয়ে পড়ে নাজিয়া। অনেকক্ষণ কান্না করার পর সীতাবের কলের দেখা মিলে নাজিয়ার। রিসিভ করতে অপরপাশের ব্যক্তি বলে,

-তোমার তো মন খারাপ চলো না কোথাও ঘুরতে যাই। বেশী না জাস্ট কফি খেতে যাবো ক্যাফেতে।

-আপনার কী মনে হয় এতো কিছুর পর আমার মন ভালো আছে আর এসবের মুড আছে? প্লিজ এসবের কথা আমায় বলবেন না। রুড বিহেভ করলে তো আবার আমার শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে কথা তুলবেন। আপনার এতো এনার্জি আপনি একাই যাব। আসছে আজাইরা আলাপ করতে।

নাজিয়া মুখের উপর কল কেটে দেয়। সীতাব অনেকটা বোকা বনে যায় নাজিয়ার এমন কান্ডে।

******

ডার্ক চকলেট কালারের শাড়ী পরিধান করেছে আনায়া। নিবরাসের সাথে সন্ধ্যায় বের হয়েছে সে। আজকে নাকী কী সারপ্রাইজ আছে তার জন্য। আনায়া চুপচাপ নিবরাসের কান্ড দেখে যাচ্ছে।

বাংলোতে আসতে আনায়ার হাত ধরেই ভেতরে নিয়ে যায় নিবরাস। লিভিং রুমটা সাদামাটা। আনায়া বুঝতে পারছে না কোথায় গিয়ে সারপ্রাইজ দিবে নিবরাস। ভেতরে প্রবেশ করতে অন্ধকার অনুভব করে। কিছুক্ষণ পর নিবরাস লাইট অন করতে দেখে সোফা আর ট্রি টেবিল টা সাজানো। নানারকম ড্রিং,গিফ্ট,ফ্লাওয়ার দিয়ে।

তাঁদের দু’জনের সুন্দর একটা মূহুর্ত কাটে। আনায়ার নিজেকে অনেক লাকি মনে হয়। নিবরাস তাকে এতোটা ভালোবাসে ভাবলে নিজেকে প্রশ্ন করতে মন চায়, ‘আনায়া তুই এতো ভাগ্যবতী কেনো? দেখ তোকে কেউ ঠিক কতটা ভালোবাসে!’

এমনই ভালোবাসা সবার জীবনে আসুক এবং অটুট থাকুক।

*****

বেশ কয়েকমাস কেটে যায়। নাজিয়ার রেজাল্ট ও আসে। সে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। ইতালির ভিসা ও পেয়ে গেছে। দেশে থাকার ইচ্ছে ও তার নেই। দম বন্ধ লাগে তার। এরই মাঝে সীতাব তাকে অনেকবার দেখা করতে বলে। নাজিয়া বরাবরের মতো না করে দেয়।

আজকে নাজিয়ার ফ্লাইট। তার পরিবারের সবাই এয়ারপোর্টে আসে। আনায়া,নিবরাস ও আসে। নাজিয়ার খারাপ লাগছে না দেশ ছাড়তে। আজকে তার বেশ খুশি লাগছে। তার মায়ের কথা ভাবলে মনের ক্ষতটা আরো বেশী বেড়ে যায়। তবে বুঝাতে পারে না কাউকে।

তবে যাওয়ার আগে সীতাবকে ছোট্ট করে মেসেজ দেয়,

‘প্রণয় যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে অচিরেই আবার আমাদের দেখা হবে। আপনার হৃদ কোঠরে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে থাকবো সেদিন! মানবো না কোন বাঁধন।’

নাজিয়াকে বিদায় দিয়ে আনায়া, নিবরাস ও রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। নিবরাস ড্রাইভ করছে। আনায়া তার পাশের সীটে বসা। সেও গোমড়া মুখ করে বসে আছে। তখন নিবরাস বলে,

-আর ইউ ওকে?

-নাজিয়া চলে গেলো!

-দু’বছর পরে হলেও ও চলেই যেতো।

-হুহ! ভালো। তবে ও ভালো নেই!

-জানি তো।

-এসব না করে বুঝালে হতো না?

-অনেক তো হলো। যে বুঝার তাকে একবার বললেই হয়ে যায়। আর তোমার মায়ের কাছে এসব কাজ করা নেশার মতো ছিলো যা সে সহজে কাটাতে পারতো না আর না কাটাতো।

-কেউ পাপের শাস্তি পাচ্ছে। কেউ বা তার শাস্তি দেখে নিজে গুমরে মরছে। আসলে ঘৃণার আড়ালে ভালোবাসাটা কোন এক কোণে চাপা পড়লেও কোন একসময় বুঝা যায় এখনো ভালোবাসা বেঁচে আছে।

-সবাই ভালো থাকুক আর তাড়াতাড়ি আমরা বাবুর পাপা আর মাম্মাম হয়ে যাই।

-অ’সভ্য লোক বাজে কথা আর গেলো না।

-বাজে কথা কী? একদিন তো আমরাও বাবা আর মা হবো। কী বলো হবো না?

-হবো! তো?

-তাহলে বললে এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে।

-নিলজ্জ জামাই!

-আমার লজ্জাবতী বউ। ভালোবাসী!

– আমি ভালোবাসী আমার নিজেকে।

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে