#হৃদয়ে_তুমি
#তানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্ট_৫
সবাই তরীর হাতের দিকে তাকিয়ে শক খায়।
আর্দ্র- কিরে আরুশ তুই তো ফাটিয়ে দিয়েছিস ভাই।
আরুশী- দাদাভাই এটা সত্যি তুই করেছিস।
আরুশ- কোনো সন্দেহ আছে।
অদ্রি- বাব্বা দাদাভাই তুই এত ভালো ডিজাইন পারিস বলিস নি কেন,
আরুশ- আমি নিজেই জানতাম না, তবে মানুষ চেস্টা করলে সবই সম্ভব বুঝলি।
মিলি- সত্যি আরুশ তোমার জবাব নেই,তুমি যা ডিজাইন করলে আমরা সবাই অবাক।
আরুশ- হুম।তোমরা নিচে যাও আমি ফ্রেশ হবো।
সবাই যে যার রুমে চলে যায়।থাকে শুধু তরী, আরুশী আর আরুশ।
তরী- ওই একটা ছবি তুলে দেনা।
আরুশী- আমি পারবো না।
আরুশী চলে যায়,তরী মন খারাপ করে চলে যেতে গেলে আরুশ আটকায়।
আরুশ- ফোনটা দাও।
তরী ইশারা করে ফোনটা দেখালো।
আরুশ- লক কি??
তরী- ফেস লক।
আরুশ তরীর মুখের সামনে ধরলো ফোনটা খুলে গেলো।আরুশ তরীর কয়েকটা ছবি তুলে দিলো,তারপর নিজের ফোন বার করে তরীর সাথে কয়েকটা ছবি তুলে দিলো।
পরেরদিন-
আজকে অদ্রির বিয়ে সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত।অদ্রিকে তরী সাজাচ্ছে।
মিলি- তরী তুমি তো ভালো সাজাতে পারো।
আরুশি- দেখতে হবে না কে ওহ।
তরী- আরু চুপকর তো।
তরী অদ্রিকে সাজিয়ে স্টেজে বসিয়ে দেয়।তরী অদ্রিকে বসিয়ে নামছে আরুশ ওর পাশে এসে বলে- ম্যাম রেডি হবেন কখন।
তরী- হুম গিয়ে হবো।
আরুশ- বেশি সাজবে না বলে দিচ্ছি।
তরী- কেন??
আরুশ- এতো কেন কেন করবে না,যেটা বলছি সেটা শুনবে নাহলে সেদিনের মতো ( নিজের ঠোঁট হাত বুলিয়ে)
তরী- শয়তান।
তরী চলে যায় ওখান থেকে।আরুশ হাসে তরীর কান্ড দেখে।
তরী একটা নীল কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে।মাথায় নীল হিজাব,মুখে হালকা মেকআপ, কাজল ,পিংক কালারের লিপস্টিক,হাতে নীল চুড়ি পড়েছে দারুণ লাগছে।
আরুশি- তরীরে তোকে যা লাগছে না।
তরী- তোর দাদাভাই মেরে ফেলবে আমায়।
আরুশি- কিছু বলবে না চল।
আরুশি তরী কে নিয়ে আসে আরুশ দেখে মুগ্ধ হয়।আরুশকে ওদিকে আস্তে দেখে আরুশী চলে যায় আরুশ তরীর পাশে দাঁড়িয়ে বলে- দারুন লাগছে তোমায়।
তরী- ধন্যবাদ।
বরযাত্রি চলে আসে সবাই ব্যস্ত হয়ে যায়।বরপক্ষের একটা ছেলে আনিস তরী কে বলে- হাই
তরী- হ্যালো।
আনিস- আপনি কনের কে হন।
তরী- বন্ধু।
আনিস- মানে রনিতের শালিকা তাইতো।
তরী- হুম।
আনিস- আমি আনিস রনিতের বন্ধু।আপনার সাথে কথা বলতে পারি।
তরী- হুম( মেকি হাসি দিয়ে)
আনিস- ওকে।
আনিস বকবক করতে থাকে আর তরী মুখে কোনোরকমে হাসি দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।
তরী – আরুশ দেখলে তুমি উপরে তরী( মনে মনে)
আরুশ নজর পরে ওদের দিকে,আরুশ আরুশীকে বলে তরী কে ডেকে দিতে আরুশি তরী কে গিয়ে বলে- তরী তোকে দাদাভাই খুঁজছে।
তরী- হুম যাচ্ছি।
তরী তাড়াতাড়ি কেটে পড়লো,আরুশী আনিসকে খেয়াল করেনি।আরুশি চলে যেতে গেলে আনিস ডাক দেয়।
আনিস- হাই।
আরুশী- কে?
আনিস- আমি আনিস রনিতের বন্ধু।
আরুশি- ওহ। আমি আরুশী অদ্রির বোন।
আনিস- আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি।
আরুশি- হুম বলুন।
আনিস- এখনি যে মেয়েটা চলে গেলো ওর নাম কি?
আরুশী- কোন মেয়ে।
আনিস- আপনি বললেন দাদাভাই ডাকছে উনার কথা বলছি।
আরুশী- ওহ তরী, কিন্তু আপনি যেনে কি করবেন।
আনিস- আমার ওকে পছন্দ হয়েছে।
আরুশী চোখ বড়বড় করে তাকায়।
আরুশী- এর মনে হয় মরার ইচ্ছা গেছে,কার জিনিসে নজর দিচ্ছে নিজেই জানে না( বিরবির করে)
আনিস- কি বলছেন।
আরুশি- আপনি কাকে পছন্দ করেছেন ওই তরী কে।
আনিস- কেন কী হয়েছে( ভ্রু কুঁচকে)
আরুশী- আরে ওহ তো কিছুদিন আগে মেন্টাল হসপিটাল থেকে ফিরেছে।
আনিস- কী??
আরুশী- হুম।ওর পাগলামি এখনো ভালো হয়নি।মাথায় রাগ উঠলো কামড়ে দেই,একবার একটা ছেলে ওকে ভালোবাসি বলে ছিলো বলে তাকে আধমরা করেছিলো বেচারা ২ মাস হসপিটালের আই.সি.ইউ তে ভর্তি ছিলো।
আনিস ভয়ে তে ঢোক গিলতে লাগলো।আরুশী ওসব বলে কেটে পড়েছে।আরুশী একপাশে গিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
আনিস- এমন মেয়েকে পছন্দ করার দরকার নেয়।
ওদিক-
তরী- ডেকে ছিলেন।
আরুশ- ওই ছেলের সাথে এতো কথা কিসের।
তরী- কি কথা বললাম।
আরুশ- আমি দেখেছি সব।
তরী- ভালো করেছো দেখেছো,থাকো তুমি ..
তরী রেগে চলে যায়,আরুশ শক খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তরী রাগ করে হলেও ওকে তুমি বলেছে প্রথম বার।
অদ্রি আর রনিত এর বিয়ে ভালো ভাবে হয়ে যায়,অদ্রি শশুর বাড়ি যাবার সময় খুব কান্না করতে থাকে।আরুশি আরুশ, আর্দ্র ওদের বাবা মা খুব কান্না কাটি করছে তরী সবাই কে বুঝিয়ে শান্ত করে।
তরী- আরু এভাবে কাদছিস কেন আরে অদ্রিআপু তো শশুর বাড়ি গেছে আবার আসবে তো এভাবে তুই কান্না করলে আন্টি ওতো কান্না করবে যা আন্টির কাছে যা।
পরেরদিন-
আজ অদ্রির বৌভাত।আরুশের বাড়ি থেকে সকলে অদ্রির শশুর বাড়ি তে যাচ্ছে।
তরী- এরপর পালা আরুর।
আরুশী- আগে দাদাভাই এর তারপর আমি করবো।
আরুশ- হুম আমার বউটা আর কতদিন একা রাখবো বল,এবার আমার ঘরে নিয়ে আসবো।
আর্দ্র- সে তো বটেই।
তরী একটু গলাটা পরিস্কার করে বললো।
তরী-আর্দ্রদা তোমার স্বপ্নের রাজকুমারীর খবর কী??
আর্দ্র- পাইনি রে এখন ওহ।
তরী- আহা গো।
আরুশ- এবার চল নাহলে দেরি হয়ে যাবে।
তরী- হুম।
ওরা সবাই অদ্রির শশুর বাড়িতে এসে পৌঁছায়।অদ্রি সবাইকে দেখে খুব খুশি হয়ে যায়।আনিস তরীর থেকে দূরে ছিলো তরী ব্যাপারটার মাথা মুন্ডু বুঝতে পারে না । কিন্তু এটা ভেবে হাপ ছাড়ে যে বকবক করতে কেউ আসবে না।আরুশি সবটা দেখে হাসতে থাকে।
রাতের বেলা অদ্রি ওর বরের সাথে আরুশের বাড়িতে চলে আসে।
পরেরদিন-
আসফাক- মিলি একবার আমার ঘরে এসো তো।
মিলি ডাক শুনে তাড়াতাড়ি এসে বলে- হুম আঙ্কেল বলুন।
আসফাক- তোমার নাম মিলি।( চমকে উঠে)
মিলি- হুম।
আর্দ্র,আরুশ, তরী,অদ্রি,আরুশী সবাই মুচকি হাসছে।ওদিকে আসিফ( আর্দ্রের বাবা), আসফাক ( আরুশের বাবা) একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে।
আসিফ- তোমার নাম সত্যি মিলি ।
মিলি- হুম কেন??
আরুশ- আসলে মিলি হলো আমার মায়ের নাম তাই।(হাসতে হাসতে)
মিলি কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায়।তরী আরেকটু শয়তানি করে বলে-আমরা আন্টির নাম ধরে ডাকবো কেমন করে।তোমাকে কি বলা যায় বলো তো।
মিলি বুঝতে পারে তরী ইচ্ছা করে এমন করছে এজন্য তরীর উপর রেগে যায়।
আসিফ- তরী মামনি আজকে তুই চলে যাবি।
সবাই অবাক হয়ে তরীর দিকে তাকায়।
তরী-হুম।
আরুশী- আরো কয়েকদিন থাক না।
তরী- নারে আর পারবো না আজকেই যেতে হবে।
আসফাক- আরু ওকে আটকিয়ো না,আজই ওহ চলে যাবে আরুশ ওকে রেখে আসবে ।
মিলি- আরুশ আর তরীর মধ্যে কিছু একটা সম্পর্ক তো আছে, কিন্তু আরুশ শুধু আমার ।( মনে মনে)
১ বছর পর—-
আজকে অদ্রির বিবাহ বার্ষিকী।আগের বারের মতো আজ ও সবাই একসাথে হয়েছে। শুধু এখনো আসেনি তরী।
আরুশ- আরু তরী আসবে না।
আরুশী- হুম আসবে তো।
আরুশ- ওহ।
আর্দ্র- ওই তো তরী।
আরুশ আর্দ্রের কথা শুনে ওদিকে তাকায় তরীর দিকে তাকায় তরী একটা কালো কালারের গাউন পরেছে।মাথায় ম্যাচিং কালো কালারের হিজাব।মুখে হালকা মেকআপ।আরুশ হা করে তাকিয়ে আছে।পাশ থেকে আর্দ্র বলে উঠলো- ভাই মুখটা বন্ধ কর মাছি ঢুকে যাবে।
আর্দ্রের কথা শুনে আরুশ হকচকিয়ে গেলো।তরীর সাথে সকলে কথা বলতে লাগলো।আরুশ ওর দিকে তাকাচ্ছে আড়চোখে।এই বিষয়টা কেউ খেয়াল না করলেও একজন করেছে মিলি।
মিলি অদ্রির কাছে গিয়ে বলে- অদ্রি আমাকে একটা কথা বলতো।
অদ্রি- কি কথা ।
মিলি- আরুশ আর তরীর মধ্যে সম্পর্ক কী?
অদ্রি- হুম এটা হয়তো তোকে আগেই বলা উচিত ছিলো কিন্তু বলা হয়নি। দাদাভাই আর তরীর বিয়ে ঠিক করা আছে।
মিলি- ওহ।
অদ্রিকে একজন ডাকে অদ্রি চলে যায়,মিলি মনে মনে ভাবতে থাকে- আরুশ শুধু আমার হবে।
আনিস ওহ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছে।আনিস আরুশীর কাছে আসে- হাই আরুশী।
আরুশী- হ্যালো।
আনিস- কেমন আছেন।
আরুশী- ভালো আপনি।
আনিস- ভালো একটা কথা বলো তো সেদিন যে কথা গুলো বলেছিলে ওই কথা গুলো তরী জানে।
আরুশীর সেদিনের কথা মনে পড়াতে লজ্জা পেয়ে যায়।
আনিস- থাক লজ্জা পেতে হবে না। আমি সত্যিটা জানি।রনিতের থেকে জানতে পেরেছি।তবে কথা গুলো দারুন ছিলো তরী কে জানাতে হবে।
আনিস হাসতে হাসতে চলে যায় আরুশী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল।
অদ্রি আর রনিত কেক কাটতে লাগে মিলি শুধু তরীর উপর নজর রাখছে। মিলি খেয়াল করে তরী কারোর সাথে চোখে চোখে কথা বলছে ওহ তরীর দৃস্টি অনুসরন করে দেখে আর্দ্র ইশারা করে তরী কে কিছু বলছে। তরী ইশারা করলে আর্দ্র চলে যায় তার পরে তরী ওহ যায় মিলি সবটা দেখে আর ওদেরকে ফলো করে।
কিন্তু আর্দ্র আর তরী কোথা চলে যায় মিলি খুঁজে পাইনা।
মিলি- কোথায় গেলো ওরা,আমর মনে হচ্ছে আর্দ্র আর তরীর মধ্যে কিছু একটা চলছে এটাই সুযোগ আরুশের থেকে তরী কে সরানোর।( বাঁকা হেসে)
কয়েকদিন পর-
মিলি তরীর পেছনে লোক লাগিয়েছে।তরীর প্রতিমুহূর্তের খবর মিলি পাচ্ছে।
মিলি- হ্যালো।
– ম্যাম তরী আর আর্দ্র একসাথে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে।
মিলি- কোন রেস্টুরেন্ট।
– ……..
মিলি- ওকে আমি আসছি।
ফোনটা কেটে দেয়।মিলি বাঁকা হেসে বলে- তোমার দিন শেষ তরী।
মিলি ঠিকানা অনুযায়ি চলে যায়।ওহ তরী দের। খুঁজতে খুঁজতে যা দেখে তাতে ওর চোখ চরক গাছ হয়ে যায় ……
#চলবে….
#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকা_তানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্ট_৬
তরীকে একজন কিস করছে পেছনটা থেকে মনে হচ্ছে ছেলেটা আর্দ্র। মিলি অবাক হয় এইভাবে ওদের দেখবে ভাবতে পারেনি।মিলি তাড়াতাড়ি ছবিটা তুলে নেয়।
মিলি- তরী তোমাকে আরুশের থেকে আমি আলাদা করবোই।
মিলি ওখান থেকে চলে যায়।
অন্যদিকে-
আরুশ প্ল্যান করছে তরী কে কীভাবে প্রোপস করবে।তখনি ওর ফোনে নোটিফিকেশন আসে।আরুশ তরীর ওইরকম ছবি দেখে আকাশ থেকে পড়ে।প্রচুর পরিমাণে রেগে যায় এবং তরী কে কল করে।
আরুশ- তুমি কোথায়।
তরী- একটা কাজে একটু বেড়িয়েছি।
আরুশ- এখনি আমাদের বাগানবাড়িতে আসবে।
তরী- কেন??
আরুশ- আমি বলেছি তাই,কোনো কথা হবে না, চুপচাপ আসবে।( রেগে)
আরুশ ফোনটা কেটে দেয়।তরী অবাক হয় আরুশের এমন কান্ডে তরী বুঝতে পারে আরুশ কোনো কারনে খুব রেগে আছে।
তরী- আর্দ্রদা আমি আসছি ।
আর্দ্র- কোথায় যাবি।
তরী- তোমার ভাই বাগানবাড়িতে যেতে বললো কোনো কারণে রেগে আছে মনে হয়।
আর্দ্র- ওহ,আমি দিয়ে আসবো।
তরী- না থাক ওহ জানতে পেরে যাবে আমি তোমার সাথে ছিলাম।
আর্দ্র- ওকে তুই তাহলে যা।
তরী- হুম।
তরী চলে যায় আরুশদের বাগানবাড়িতে।
তরী ঢোকার সাথে সাথে আরুশ ওকে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।তরী আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে যায়।
তরী- কি হলো।
আরুশ- কোথায় ছিলে তুমি, কার সাথে ছিলে বলো।
তরী- কি বলছেন।
আরুশ- দ্যাখো বেশি নাটক করবেনা,আমি সবকিছু জানি।
তরী- কি জানেন।
আরুশ- তুমি কী কুকীর্তি করছিলে সেটা আমি জানি।
তরী- মানে।
আরুশ- একদম ভালো সাজবি না লজ্জা করেনা একটা ছেলের সাথে প্রাবলিক প্রেসে ছিঃ।
তরী কিছু বুঝতে পারছে না ওর সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।আরুশ প্রচুর পরিমাণে রেগে আছে ওর মাথার ঠিক নেয়।
তরী- আচ্ছা আপনি শান্ত হন।
আরুশ- চুপ একদম চুপ।
তরী- আমি কী করেছি সেজন্য আমাকে এরকম বলছেন।
আরুশের রাগটা দ্বিগুণ বেড়ে যায়,নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তরীকে একটা থাপ্পর মারে।তরী মেঝেতে পড়ে যায় এবং ওর ঠোটটাও কেটে যায়।
আরুশ তরীর সামনে বসে তরীর চুলটা আঁকড়ে ধরে,তরী ব্যথা পেয়ে আরুশের কাছে অনুরোধ করে ওকে ছেড়ে দেবার জন্য কিন্তু আরুশ অতিরিক্ত রাগের জন্য তরীর অনুরোধ ওর কানে পৌঁছায় না।
আরুশ তরীর চুলটা আরো শক্ত করে ধরে বলে- কি করেছিলাম আমি কেন আমাকে এভাবে ঠকালি,আমি তোকে ভালোবাসতাম তোকে আমি আমার হৃদয়ে রাখতে চেয়েছিলাম।আমার #হৃদয়ে_তুমি আর অন্যকারোর জায়গা নেয়।কেন করলি এমন আমি তোকে আর কোনো দিন ওহ ক্ষমা করবো না,কোনো দিন ওহ না।
আরুশ রেগে চলে যায় ওখান থেকে।তরী কান্নায় ভেঙে পড়লো ওহ বুঝতে পারছে না আরুশের রাগের কারন।
সন্ধ্যা বেলা-
তরী ওর বাড়ি না গিয়ে কোনোরকমে ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়িতে যায়,ওকে এই সময় ওর বন্ধু দেখে খুব অবাক হয়।
রিতা- তরী তুই??
তরী- হুম পড়ে বলছি সব এখান আমাকে তোমার রুমে নিয়ে চল।
রিতা তরীর বেস্ট ফ্রেন্ড।রিতার বাবা নেয়,ওর মাকে নিয়ে ওর সংসার।ওর মা একজন শিক্ষিকা, তরী কে খুব ভালোবাসেন।
তরীকে এমন সময় ওখানে দেখে অবাক হয়।
রিতার মা- তরী মা তুই??
তরী- হুম।
রিতা- মা একটু পানি দাও তো।
রিতার মা তাড়াতাড়ি তরী কে পানি এনে দেয়,তরী মুখে হিজাব বাঁধা ছিলো পানি খাবে বলে মুখটা খুলতেই রিতার মা বললো- কী হয়েছে তোর ঠোঁটে।
তরী- আন্টি আমি পড়ে গিয়েছিলাম মা জানলে টেনশন করবে তাই আমি চলে এসেছি।
রিতার মা তরীর দিকে সন্দেহের চোখে তাকালেন। কিন্তু কিছু বললেন না।
তরী- আন্টি আমি রুমে যাবো,ফ্রেশ হবো।
রিতার মা- হুম যা।
তরী ওয়াশ রুমে গিয়ে দরজা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
রিতার মা- রিতা আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে তরীর আমাকে বলতে চাইছে না,তুই ওর থেকে যান সত্যিটা।
রিতা ওর মায়ের দিকে তাকালো ওর মা একজন বুদ্ধিমতী মহিলা।একা রিতাকে বড়ো করেছেন মেয়ের কথা ভেবে বিয়ে করেননি এবং মায়ের বাড়ির ওহ কোনো সাহায্য নেননি নিজে রোজগার করে সংসার চালাচ্ছেন।
রিতার মা- আমি খাবার দিচ্ছি খাবারটা নিয়ে তরীর কাছে যা।
রিতা ওর মায়ের দেওয়া খাবার টা নিয়ে তরীর কাছে যায়। তরী ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়েছে।রিতা তরীর ঠোঁটে ঔষধ লাগিয়ে দেয়।
রিতা- তরী এই নে খেয়ে নে।
তরী- আমার ভালো লাগছে না।
রিতা- তরী কী হয়েছে সত্যি করে বল।
তরী- কিছু হয়নি বললাম তো পড়ে গেছি।
রিতা- তরী তুই সবার থেকে লুকাতে পারলেও আমার থেকে লুকাতে পারবি না,আমি জানি তুই অতটা অসতর্ক নয় যে পড়ে গিয়ে ঠোঁট কেটে ফেলবি। কিছু একটা তো হয়েছে কিন্তু সেটা কী বল।
তরী নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা রিতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো, তরী কে কাঁদতে দেখে রিতা অবাক হয় কারন তরী খুব শক্ত প্রকৃতির মেয়ে সহজে কান্নাকাটি করেনা।
রিতা- কি হয়েছে কাদছিস কেন??
তরী কান্নার জন্য কথা বলতে পারেনা রিতা ওকে শান্ত করায়।তরী রিতা কে ছেড়ে দিয়ে মুখে হাত চাপা দিয়ে কাঁদছে, তখনই ওর মাথায় কেউ হাত রাখে।তরী মাথা তুলে দেখে রিতার মা।
রিতার মা- তরী মা শান্ত হ, জীবনে যাই হোক না কেন এত সহজে ভেঙে পড়লে হবে না,শক্ত হতে হবে লড়াই করতে হবে।আর তুই তো শক্ত মনের মেয়ে তুই যদি এভাবে ভেঙে পড়িস তাহলে কীভাবে হবে বল।
তরী একটু শান্ত হয়।
রিতার মা – বলতো কী হয়েছে।
তরী কিছু বলে না। রিতার মা তরী কে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বললো- কীরে এই মা টাকে বলবি না।
তরী রিতার মাকে জড়িয়ে ধরলো। রিতার মা তরী র মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।রিতা সবটা দেখে মুচকি হাসতে লাগলো।রিতার জীবনের সবথেকে প্রিয়,কাছের মানুষ ওর মা আর তরী,এই দুজনকে নিয়েই ওর জীবন।
রিতার মা- বল এবার।
তরী সবটা বলে,সবটা শুনে রিতার মা,রিতা থমকে যায়। রিতা আরুশ আর তরীর ব্যাপারে সবটা জানতো,তরী রিতার কাছ থেকে কোনো কিছু আড়াল করেনি।
রিতা- আরুশদা এমন করেছে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।
তরী- আমি ও ওটা মেনে নিতে পারছিনা,ওর ব্যবহার টা মেনে নেওয়ার মতো নয়।
রিতার মা- তরী আমার মনে হচ্ছে আরুশ কোন কারণে তোকে ভুল বুঝেছে, তুই ওর সাথে একবার কথা বল।
তরী- আন্টি আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি ও প্রচুর পরিমাণে রেগে ছিলো।
রিতার মা- এই রাগটা খুব খারাপ জিনিস।আরুশের অতিরিক্ত রাগ ওর জন্য একদিন বিপদ হয়ে না দাঁড়ায়।
রিতা- মা এসব বলো না।
রিতার মা- হূম,তরী আরুশের সাথে কথা বল।নিজের সমস্যা মিটিয়ে নে,আমি জানি তোরা একে অপরকে খুব ভালোবাসিস আর আমি আরুশকে খুব ভালো করে চিনি।
রিতা- কী??
রিতার মা- হুম আরুশ আর আর্দ্র আমার স্টুডেন্ট ছিলো। ওদের দুভাইয়ের সবকিছু একই তবে আরুশের রাগটা একটু বেশি।আরুশ নিজের জিনিস কখনোই স্যাক্রিফাইস করেনা,ওর যেটা সেটা ওহ নিয়েই ছাড়ে।
তরী- হুম।
রিতার মা- তুই রেস্ট নে আমি রান্নার জোগাড় করি,রিতা আমার সাথে আয় তো।
রিতা আর ওর মা চলে যায়।তরী বিছানায় বসে আগের কথা ভাবতে থাকে।
ফ্ল্যাশব্যাক–
তরী তখন সবে মাত্র ক্লাস ৯ এ পড়ে।একদিন প্রাইভেট পড়ে বন্ধুদের সাথে সামনের মেলা ঘুরতে যায়।সবাই যে যার মতো কেনাকাটা করছে।
মিতালি- কী নিবি তোরা।
রিতা- আরে দাঁড়া না দেখি কি নেবো এত তাড়াতাড়ি করছিস কেন।
মিতালি- আরে ভীড় জমছে তো।
তরী- ওই রিতা তাড়াতাড়ি কর তো।
ওরা তিনজন ছিলো।আসতে আসতে মেলা তে ভীড় বারতে থাকে।তরী একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় আর ওর বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়।ওহ রিতাদের খুঁজতে থাকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একজনের সাথে ধাক্কা খায়।
তরী- ওমাগো মরে গেলাম গো,কোন শয়তান আমাকে ধাক্কা মারলি রে আমার কোমড় পুরো শেষ।
আরুশ- সরি আসলে আমি বুঝতে পারিনি।
তরী কোনো ছেলের কন্ঠ শুনে মাথা তুলে তাকালো,তরীর পুতুলের মতো চেহারা দেখে আরুশ মুগ্ধ হয়ে যায় হা করে তাকিয়ে থাকে তরীর দিকে।তরী আরুশকে একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো- এই মিস্টার এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন, মেয়ে দেখেননি নাকি কোনোদিন।
তরীর এমন কথায় আরুশ হকচকিয়ে যায়। ওকে কোন মেয়ে এমন বলবে ওহ ভাবেনি আরুশ অনার্সের ছাত্র ওর পেছনে হাজারো মেয়ের লাইন সেখানে একটা বাচ্চা মেয়ে ওকে এভাবে বললো এটা মানতে পারলো না আরুশ।
আরুশ- এই মেয়ে কী বললে।
তরী- ঠিকিই তো বলেছি আপনি এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলেন কেন।
আরুশ- ওরে আমার কোন দেশের মহারানি এসেছেরে আমি ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবো।
তরী- আমি মহারানিই হি.হি
আরুশ তরীর হাসির উপর ক্রাশ খেয়ে যায়।তরীর দিকে তাকাতে গিয়েও তাকায় না।ওর তখনের কথা মনে পড়ে যায়।
তরী- এই সরি বলুন।
আরুশ- কী( চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে)
তরী- আপনি আমাকে ধাক্কা মেরেছেন সরি বলুন।
আরুশ- পারবো না।
তরী- আপনাকে সরি বলতে হবেই।
আরুশ- কখনো নয় তোমার মত একটা পিচ্চিকে আমি কিছুতেই সরি বলবো না।
তরী- আপনি সরি বলবেন হ্যা কি না।
আরুশ- না
তরী- আপনি না বললে আমি কান্না করবো আর সবাইকে বলবো আপনি আমায় কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছেন তখন কী হবে বুঝতে পারছেন( শয়তানি হেসে)
আরুশ- কি বিচ্ছু মেয়েরে বাবা( বিরবির করে)
তরী- কি হলো কি করবেন বলুন।
আরুশ- আচ্ছা বলছি সরি ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গেছে এবারের মতো মাফ করে দেন।( দাঁতে দাঁত চেপে)
তরী- মাফ করতে পারি একটা শর্তে।
আরুশ শক খায় তরীর কথা শুনে- এই মেয়ে তো খুব শয়তান ।( মনে মনে)
আরুশ- কি।
তরী- আমার বন্ধুদের খুঁজে দিতে হবে।
আরুশ- কোথায় তোমার বন্ধুরা।
তরী- জানিনা হারিয়ে গেছে,খুজে দিন।
আরুশ- ওকে চলো।
তরীকে সাথে করে আরুশ তরীর বন্ধুদের খুঁজতে থাক।
তরী- ওই তো আমার বন্ধুরা।
তরী দৌড়ে ওদের কাছে চলে যায়।আরুশ দাঁড়িয়ে সবটা দেখতে থাকে।
রিতা- কোথায় গিয়েছিলি তুই।
তরী- হারিয়ে গিয়েছিলাম,একজন হেল্প করলো।
মিতালি- কে??
তরী- ওই তো ওখানে দাঁড়িয়ে আছে, তোরা দাঁড়া এখানে আমি কথা বলে আসছি।
তরী আবার দৌড়ে আরুশের কাছে আসে।
আরুশ- কী হলো।
তরী- একটা কথা বলার ছিলো।
আরুশ- কী?
তরী যা বললো আরুশ আকাশ থেকে পড়ল।আরুশ ভাবতে পারেনি এই টুকু মেয়ে এতো দুস্টু…..
#চলবে_