#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ৩৬( অন্তিম পার্ট)
রিতা ডাক্তারের কথা শুনে থমকে দাঁড়ালো,ওর চলার শক্তি ওহ হারিয়ে ফেলেছে।
তরীর মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
আর্দ্র- ডাক্তার আপনি কিসব বলছেন।
ডাক্তার- হুম ঠিকই বলছি তরীর হাতে খুব বেশি সময় নেয় যেকোন সময় যা কিছু হতে পারে,ও বারবার আরুশের নাম উচ্চারণ করছিলো ,আরুশকে হন ওনার আপনি তাড়াতাড়ি যান।
আরুশ- ডাক্তার আমি বলেছিলাম তো আমার তরীকে বাঁচাতে
ডাক্তার- সরি,আমি ওনার কথা ফেলতে পারি নি
আরুশ- মানে
ডাক্তার- আমরা যখন অপারেশন করবো বলে ঠিক করছিলাম তখন
তরী- ডাক্তার বাবু
নার্স- স্যার আপনাকে ডাকছে
ডাক্তার- কে
তরী- আমি
ডাক্তার- কি বলো
তরী- আমার একটা শেষ ইচ্ছা রাখবেন
ডাক্তার- এরকম করে বলো না
তরী- আমি জানি আমার সময় হয়ে গেছে,আপনারা আমাকে বাঁচাতে পারবেন না তাই চেস্টা করবেন না প্লিজ আপনি আমার বেবিকে এই পৃথিবীর মুখ দেখবেন প্লিজ।
ডাক্তার- তোমার হাসবেন্ড বলেছে তোমাকে
তরী- পাগলটা বড্ড ভালোবাসে আমায় তাই কিন্তু আপনি আমাকে কথা দিন আমার বেবিকে বাঁচাবেন।
ডাক্তার- আচ্ছা।
বর্তমান-
ডাক্তার- আমি একজন মায়ের অনুরোধ ফেলতে পারিনি সরি,আপনি তাড়াতাড়ি ভেতরে যান
ডাক্তার কথাটা বলে চলে যায়,আরুশের সবটা এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে।
আর্দ্র আরুশের কাঁধে হাত দিয়ে বললো- আরুশ যা।
আরুশ এলোমেলো পায়ে কেবিনে ঢুকলো।তরী বেডে শুয়ে আছে মাথার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে,মুখটা কেমন ফ্যাকাশে লাগছে।
আরুশ তরীর সামনে থাকা চেয়ারটাতে গিয়ে বসলো,তরী চোখ বন্ধ করে আছে,তরীর হাতটা ধরে আরুশ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তরীর চোখের পাতা কেঁপে উঠলো।
তরী কাঁপা কাঁপা গলায় বললঃ আরুশ
আরুশ- কেন করলে এমন
তরী- কি করবো বলো আমি যে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে পারবো না।
আরুশ- আর আমাকে মেরে ফেলতে পারবে তো
তরী- এমন বলো না
আরুশ- কি বলবো বলো আমি তোমাকে ছাড়া যে বাঁচবো না।
তরী- কিছু হবে না আমি তোমার পাশে সারাজীবন থাকবো,আমার বাচ্চা কোথায়
নার্স এসে তরীর মেয়েকে আরুশের কোলে দেয়।
তরী- তোমার রাজকন্যা হয়েছে
আরুশ- হুম।
তরী- আমি আর তোমাকে রাজকুমার দিতে পারলাম না, একবার আমাকে ওকে দাও।
তরীকে আরুশ ওর মেয়েকে দেয়, তরী মেয়েকে মন ভরে আদর করতে থাকে, তরীর চোখ থেকে পানি পড়ছে।
তরী- নাও
আরুশ তরীর কাছ থেকে মেয়েকে নিলো,মেয়েকে সামলে নিয়ে তরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো তরীর আর কোনো সাড়া শব্দ করছেনা।
আরুশ ওর মেয়ে কে তরীর পাশে শুইয়ে দিলো
আরুশ- তরী এই তরী কথা বলো না
আরুশ তরীকে ডাকতে লাগলো কিন্তু তরী আর কথা বললো না তরী সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে,না ফেরার দেশে।
আরুশ- তরী তুমি এটা করতে পারো না,আমাকে এভাবে একা ফেলে যেতে পারো না তুমি বলেছিলে না আমরা বাঁচতে হলে একসাথে বাঁচবো আর মরতে হলে একসাথেই মরবো।তাহলে কেন একা চলে গেলে।
আরুশের দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।
আরুশ ওর মেয়ের কপালে একটা চুমু খায় তারপর তরীর কপালে একটা চুমু খায়।
অনেকক্ষন পর…
নার্স এসে দেখে আরুশ তরীর কপালে চুমু খাচ্ছে নার্স হেসে নিজের কাজ করতে থাকে,আরো মিনিট পনেরো কেটে যায়,আরুশকে উঠতে না দেখে নার্সের মনে সন্দেহ হয় আরুশকে ডাকার জন্য আরুশের গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠলো।
নার্স দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার কে ডেকে নিয়ে আসলেন,ডাক্তারকে তাড়াতাড়ি করে ভেতরে ঢুকতে দেখে সবাই চিন্তিত হয়ে যায়।
ডাক্তার বাইরে আসতে তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল- কি হয়েছে ডাক্তার
ডাক্তার ইশারা করে ভেতরে যেতে বললেন।
সবাই ভেতরে গিয়ে চমকে উঠলো,আরুশ আর তরী দুজনেই চুপচাপ শুয়ে আছে।
আর্দ্র- আরুশের কি হয়েছে
ডাক্তার- সি ইজ নো মোর।
সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো
আরু- আপনি কিসব বলছেন
ডাক্তার- হাঁ, তরী আর আরুশ দুজনেই মৃত।
সোহাগ- কিন্তু ডাক্তার আরুশ তো সুস্থ ছিলো এটা কিভাবে হলো।
ডাক্তার- আরুশের ব্রেন হ্যামারেজ হয়েছে, অতিরিক্ত চাপ নেওয়ার ফলে ওর পুরানো ক্ষততে আঘাত লাগে আর ওহ সেটা সহ্য করতে পারেনি মারা যায় সরি আমরা দুজনের কাউকে বাঁচাতে পারলাম না।
গোটা পরিবার সবাই ভেঙ্গে পড়লো। সমস্ত ফর্মালিটি শেষ করে তরী আর আরুশকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওদিকে…..
মিতা নিজের বাড়িতে বসে আছে, কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পেয়ে দরজা খুলে চমকে উঠলো।
মিতা- পুলিশ
সোহাগ- হা পুলিশ।
মিতা- কিন্তু আমার বাড়িতে কেন
সোহাগ- তরী চৌধুরী কে মারার অপরাধে আপনাকে গ্রেপ্তার করছি
মিতা- তরী মরে গেছে।
সোহাগ- হ্যা
মিতা- এবার আরুশ শুধু মাত্র আমার( মনে মনে)
সোহাগ- আপনার তরীকে মারার কারন মনে হয় আরুশ তাই তো
মিতা- আপনি কিসব বলছেন আমি তরীকে মেরেছি মানে
সোহাগ- সবপ্রমান আছে আমাদের কাছে
মিতা- কি প্রমান
সোহাগ- সেটা আপনার না জানলেও চলবে।
মিতা- আপনি আমার নামে মিথ্যা মামলা আনতে পারেন না।
সোহাগ- সেটা সময় বলবে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল,ওকে নিয়ে যাও
মিতাকে নিয়ে যেতে যাবে সোহাগ বলে উঠলো- তরী আর আরুশের ভালোবাসা সত্যি তাই ওদের কেউ কোনো দিন আলাদা করতে পারেনি আর পারবেও না।
মিতা- তরী তো মরে গেছে না
সোহাগ- হুম সাথে আরুশ ওহ
মিতা- কি
সোহাগ- হুম আরুশ- তরী দুজনেই একসাথে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।আরুশের হৃদয়ে তরী আর তরীর হৃদয়ে শুধু আরুশ সারাজীবন ছিলো আর থাকবে।কেউ আর কোনোদিন ওদের আলাদা করতে পারবে না ওদের ভালোবাসা জিতে গেলো।
মিতাকে নিয়ে চলে যায়,সোহাগ কাঁদতে কাঁদতে ওখানে বসে পড়লো- তরী দেখিস তোর খুনি কে আমি শাস্তি দেবো,শাস্তি দেবো।যার জন্য তোর মেয়েটা অনাথ হয়ে গেলো তাকে আমি ছাড়বো না।ওর জন্য তুই মরে গেলি।তোদের ভালোবাসার গল্প শেষ হয়ে গেলো, কিন্তু তরী তুই তো ভাগ্যবতী রে তোর ভালোবাসা জিতে গেছে তোরা তোদের কথা রেখেছিস তোরা বেঁচেছিলি একসাথে আর মরলি ওহ একসাথে।ভালো থাকিস তোরা।
ওদিকে….
সবাই কান্নাকাটি করছে আর কিছু ক্ষন পর তরী আরুশকে নিয়ে চলে যাবে।
আরু- তোমরা কাঁদছো কেন কেঁদো না তোমরা দ্যাখো দাদাভাই আর তরী তো ভালো থাকবে।
আরুশের মা-আর বাচ্চাটা
আরু ঢুকরে কেঁদে উঠলো।
তরীর মা- হে আল্লাহ এই বাচ্চাটা কি দোষ করেছিলো কেন ওর কাছ থেকে তুমি ওর বাবা মা কে কেড়ে নিলে কেন অনাথ করে দিলে।
রিতা- কে বলেছে ওহ অনাথ ওহ অনাথ নয়।ওহ আমার মেয়ে।
আর্দ্র- হ্যা, আমি যেন কখনো না শুনি ওহ অনাথ ওহ আমার ভাই ,বন্ধু আরুশ আর বোনের মতো তরীর আদরের মেয়ে। আরুশ- তরীর ভালোবাসার শেষ চিহ্ন ওকে আমি আমার পরিচয়ে বড়ো করে তুলবো।
আর্দ্র তরীর মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।
আর্দ্র- মারে আজ থেকে তুই আমাদের মেয়ে( কপালে চুমু দিয়ে)
সোহাগ- আর্দ্র দা ওদের নিয়ে যেতে হবে
আর্দ্র- হুম
তরী আর আরুশকে নিয়ে চলে যায় আমাদের সবার শেষ ঠিকানায়।তরী- আরুশ আর ফিরে আসবে না কখনো।সবাই কান্নাকাটি করতে থাকে। রিতা তরীর মেয়েকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে তরী আর আরুশের মতো। রিতা এভাবেই আগলে রাখুক মেয়েটাকে।মেয়েটার মা হয়ে উঠুক।
তরী আর আরুশের ভালোবাসা সারাজীবন বেঁচে থাকুক ওদের মেয়ের মধ্যে থেকে।তরী- আরুশ উপর থেকে ওদের মেয়েকে সবসময় আগলে রাখবে।তরী আর আরুশের ভালোবাসার গল্পের এক অন্যরকম সমাপ্তি হলো।আরুশ সবসময় বলতো আমার #হৃদয়ে_তুমি কথাটা আজ প্রমান করে দিলো।দুজন মরে গিয়েও নিজেদের ভালোবাসাটাকে জিতিয়ে দিলো।
—সমাপ্ত—
সকল পাঠক-পাঠিকাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।আমার পাশে এভাবে থেকে সাপোর্ট করার জন্য,এভাবেই এই ছোট্ট লেখিকার পাশে থাকবেন আশা করি ।
ধন্যবাদ।
Faltu. Sad ending na dilao partan
Khochhor itor she’s ta ki dilen bhai 🥺