#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ৩৫
হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠল।
তরী- এই সময় আবার কে এলো,আরুশ মনে হয়,একবার খুলে দেখি।
তরী ধীরে ধীরে গিয়ে দরজাটা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে অবাক হলো।
তরী- মিতা তুমি
মিতা- হুম আমি
তরী- তুমি এই সময় কি ব্যাপার।
মিতা- তোমার সাথে একটা দরকার ছিলো
তরী- কি দরকার
মিতা- ভেতরে চলো
তরী- আচ্ছা এসো।
তরী আর মিতা ভেতরে যায়।
তরী- কি বলো
মিতা-জানো তোমার উপর না আমার অনেক রাগ।
তরী অবাক হয়ে বললো- মানে
মিতা- মানে তুমি যেটা শুনছো সেটাই।
তরী- কিসব বলছো তুমি
মিতা- হুম তোমার জন্য আমি আরুশকে পাইনি,কত চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। শেষে আরুশের অফিসে কাজ নিলাম কিন্তু তবুও আরুশের মন পেলাম না।
তরী- এখানে আমার দোষ কোথায়
মিতা- তুমি যদি না আরুশের জীবনে আস্তে তাহলে আমি আরুশের বউ হতাম।
তরী- আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকতো আমি না আসলে কিন্তু আরুশ তোমার হত না কারন আরুশ তোমার হলে হয়ে যেতো।আমাদের বন্ধন সারাজীবন এর তাই কেউ চেস্টা করেও আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
মিতা হাসতে লাগলো।
তরী অবাক হয়ে বললো- হাসছো কেন
মিতা- তোমাকে আমি আরুশের থেকে আলাদা করেই ছাড়বো।
তরী- মানে।
ওদিকে…
আরুশ মিটিং এ ব্যস্ত ছিলো, মিটিং শেষ করে নিজের ফোন বের করে আর্দ্র এর দেওয়া মেসেজটা দেখে তাড়াতাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
অন্যদিকে….
রিতা- আমাকে কবে বাড়ি যেতে দেবে
আর্দ্র- আরো কয়েকদিন পর
রিতা- আমার এখানে ভালো লাগছে না আমার তরীর জন্য মন কেমন করছে।
আর্দ্র- মন খারাপ করো না তরী একদম ঠিক আছে।
রিতা- হুম।
তরী- মিতা তুমি কি করতে চাইছো বলো তো
মিতা কিছু বলেনা তরীর দিকে একপা একপা করে আগাতে থাকে।
তরী- দ্যাখো মিতা আমি প্রেগন্যান্ট আমার বেবির কোনো ক্ষতি করো না প্লিজ আমি তোমার কাছে রিকুয়েস্ট করছি প্লিজ।
তরী মিতার কাছে রিকুয়েস্ট করতে থাকে,আর একপা করে পেছাতে থাকে পেছাতে পেছাতে তরী মেঝেতে পড়ে যায়।
তরী- আ( চিৎকার করে)
মিতা- অনেক জালিয়েছো এবার তোমাকে কে বাঁচাবে,তোমার বাচ্চা ওহ বাঁচবে না আর না তুমি।
মিতা নিজের পা তুলে তরীর পেটে লাথি মারার জন্য,তরী অনেক কস্ট করে উল্টে যায় ফলে মিতার পায়ের আঘাত টা তরীর পিঠে লাগে।তরী যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠে তবু ওহ মিতার মনে দয়া মায়া হলো না।
তরী- আরুশ তুমি কোথায়
মিতা- তোমাকে কেউই বাঁচাতে আসবে না।এখানেই তুমি মরো।সবাই যখন আসবে তখন আর কেউ কিছু করতে পারবে না।
মিতা তরীকে রেখে চলে যায়।
তরী- মিতা এরকম করো না আমার বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো দেখতে দাও প্লিজ
মিতার কানে কিছূই গেলো না।এদিকে যত সময় যেতে লাগলো তরীর অবস্থা তত বেশি খারাপ হতে লাগলো। পেটে অসহ্য যন্ত্রনা করছে।
তরী নিজের পেটে হাত দিয়ে বললো- সরি বাবু তোর মা তোর জন্য কিছু করতে পারলো না তোর মা তোকে এই পৃথিবীতে আনতে পারলো না। ( চোখ দিয়ে পানি পড়ছে)
তরীর চোখটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,ওহ আবছা দেখতে লাগলো কেউ একজন এসেছে।
আরুশ তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসে দেখলো,দরজাটা খোলা,প্রথমে খুব অবাক হয়।
আরুশ- তরী কোথায় আর দরজাটা খোলা কেন
আরুশ তাড়াতাড়ি ভেতরে গিয়ে তরীকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পেলো না।
আরুশ- তরী তুমি কোথায় গেলে।
আরুশের হঠাৎ চোখ পড়লো একটা হাতের দিকে আরুশ তাড়াতাড়ি ওদিকে গিয়ে দেখলো তরী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
আরুশ চেঁচিয়ে উঠলো- তরী
আরুশ তাড়াতাড়ি তরীর মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়- তরী তোমার কি হয়েছে তুমি এখানে শুয়ে আছো কেন,এই তরী চোখ খোলো না এই তরী।
আরুশ তরীকে ডাকতে থাকে কিন্তু তরী কোনো সাড়াশব্দ দিল না। আরুশ তাড়াতাড়ি তরীকে কোলে তুলে নেয় তারপর হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
গাড়িতে তরীকে শুইয়ে দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আর্দ্র কে ফোন করলো- হ্যালো
আর্দ্র- বল
আরুশ- আর্দ্র তরী( কাঁদতে শুরু করল)
আর্দ্র কিছু বুঝতে পারলো না।
আর্দ্র- আরুশ কি হয়েছে
আরুশ- আমি জানি না আমি যখন বাড়ি আসলাম তখন দেখলাম তরী মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আমি বুঝতে পারছি না কি করবো আমি এখনি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।( কথাগুলো ঠিক করে বলতে পারলো না আটকে আটকে যাচ্ছে)
আর্দ্র-আচ্ছা তুই আয় আমি এখানের সব ব্যবস্থা করছি।
হসপিটালে…..
তরী কে তাড়াতাড়ি হসপিটালে ভর্তি করানো হয়,সোহাগ- আরু,অদ্রি অদ্রির বর সবার আসার কথা ছিলো রিতার ছেলেকে দেখার জন্য,সবাই ছিলো তরীকে হঠাৎ এখানে আনাতে সবাই অবাক হয়ে যায়।
আরু- তরীর কি হয়েছে
আর্দ্র- পড়ে সব বলছি,ডাক্তার আপনি দেখুন তাড়াতাড়ি।
ডাক্তার ভেতরে চলে যায়। তরীর বাবা মা ,রিতার মা সবাইকে খবর দেওয়া হয়।
সোহাগ- আর্দ্রদা তরীর কি হয়েছে।
আর্দ্র- জানিনা আরুশ যেটুকু বললো তাতে কিছুই বুঝতে পারছি না।
সোহাগ- মানে
আর্দ্র সবটা সোহাগকে বললো।
সোহাগ- আমার তো সবটা গন্ডগোল লাগছে।
আর্দ্র- হুম আমার ওহ, আমি যায় আরুশের কাছে।
আর্দ্র আরুশের কাছে যায়।
আর্দ্র- আরুশ তরীর কিছু হবে না নিজেকে সামলা।
আরুশ- আমি কিভাবে সামলাবো বল তরীর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।।
আর্দ্র- আরুশ এসব কথা বলিস না প্লিজ কিছু হবে না
সবাই খুব চিন্তিত,ডাক্তার আসলেন।
আরুশ- ডাক্তার আমার তরী কেমন আছে।
ডাক্তার- প্রেসেন্ট এর অবস্থা খুব একটা ভালো না,আমাদের যতটা মনে হচ্ছে মা আর বাচ্চার মাঝে যেকোন একজনকে বাঁচাতে পারবো।
আরুশ- ডাক্তার আমার তরীকে বাঁচান প্লিজ,আমার তরী থাকলে আর কাউকে লাগবে না কিন্তু তরী না থাকলে আমি বাঁচতে পারবো না।
ডাক্তার- ওকে আমি দেখছি।
ডাক্তার চলে যায়,আরুশ বসে পড়ে।।ভেতরে অপারেশন হচ্ছে। তরীর বাবা মা চলে এসেছে,তরীর মা,আরুশের মা কান্নাকাটি করছেন,আরু,অদ্রি ওনাদের সামলাচ্ছে,রিতা এসবের কিছুই জানে না আর্দ্র এর মা রিতার কাছে আছেন।। আরুশ মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ আরুশের কাঁধে একজন হাত রাখলো।আরুশ মাথা তুলে দেখলো ওর বাবা।
বাবা- কি রে
আরুশ আর নিজেকে সামলাতে পারলো না ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
বাবা- কাঁদছিস কেন পাগল তরীর কিছু হবে না
আরুশ- বাপি আমার খুব ভয় করছে আমি তরীকে কিছুতেই হারাতে পারবো না বাপি আমার কিছু চাই না প্লীজ আমার তরীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
বাবা- ধৈর্য ধর।
আরুশের কান্নাই গোটা হসপিটাল কেঁপে উঠছে।আরুশের কান্না দেখে তরীর মা আরো কান্নাকাটি করছেন।
আরু- মা দ্যাখো কান্না করো না কিছু হবে না তরীর ( চোখে পানি নিয়ে)
ওদিকে…
আর্দ্র এর মা ওহ উশখুশ করছেন,তরীকে ওমন দেখেছেন তিনি ওহ কিছুতেই মন বসাতে পারছেন না,তরীকে তো উনি ওহ খুব ভালোবাসেন।
আর্দ্রের মা- রিতা তুমি থাকো আমি একটু আসছি
রিতা- কোথায় যাচ্ছেন
আর্দ্রের মা- না মানে দেখি একটু আর্দ্র কোথায় গেলো
রিতা- আচ্ছা।
আর্দ্র এর মা চলে যায় রিতার কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে,তাই রিতা ওর শাশুড়ি মার পেছন নিলো।
রিতা ওর শাশুড়ি র পেছন পেছন এসে দেখলো গোটা চৌধুরী পরিবার,তরীর বাবা মা,রিতার মা সবাই এখানে।
রিতা- সবাই এখানে কেন আর দেখে মনে হচ্ছে কাঁদছে কি হয়েছে,তবে কি তরীর কিছু হয়েছে।
রিতা একপা একপা করে এগিয়ে যেতে লাগলো।তখনি ডাক্তার বেড়িয়ে আসলেন।
আরুশ- তরী কেমন আছে
ডাক্তার- আপনার মেয়ে হয়েছে,নার্স ওনার মেয়েকে দিন
আরুশ- ডাক্তার আমি জিজ্ঞেস করেছি আমার তরী কোথায়
ডাক্তার চুপ করে থাকে।
আরুশ- কি হলো ডাক্তার বলুন
আর্দ্র- আপনি চুপ করে আছেন কেন বলুন
ডাক্তার যা বললো তাতে সবাই…
#চলবে…….