#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ২৯
আর্দ্র তরীকে ফোন করে,তরী বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরে।
তরী- হ্যালো বলো।
আর্দ্র- ওই পেছনের দরজাটা খুলে দে না।
তরী তো আর্দ্র এর কথা শুনে রেগে বোম, কাল ওর জন্য সারারাত ঘুমাতে পারেনি আবার আজ এসেছে,জ্বালাতে ।
তরী- আমি পারবো না।
তরী ফোনটা কেটে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। ওদিকে আর্দ্র দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রিতাকে ফোন দেয়, কিন্তু রিতার ফোন বন্ধ, আর্দ্র রেগে আবার বাড়ি চলে যায়।
রিতা ওহ ঘুমাতে পারে না, উশখুশ করছে তরী চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।
আর্দ্র রেগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো আরুশ বসে আছে ওর বিছানায়।
আর্দ্র- আরুশ তুই
আরুশ- দেখতে এসেছিলাম তোকে,এসে দেখলাম তুই নেয়, কোথায় গিয়েছিলি।
আর্দ্র- আমি
আরুশ- মিথ্যে বলতে হবে না,তোর জন্য কাল সারারাত তরীর ঘুম হয়নি আজ আবার ওকে জ্বালাতে গিয়েছিলি।
আর্দ্র- আমি কি করবো আমার তো রিতাকে ছাড়া ঘুম আসে না।
আরুশ- আর তো দুটোদিন বল তারপর তোর বউ তোর কাছে।
আর্দ্র- হুম।
আরুশ- ঘুমিয়ে পড় আমি গেলাম।
আরুশ চলে যায়, আর্দ্র চুপচাপ শুয়ে পড়ে কিন্তু চোখে ঘুম নেয়।
অন্যদিকে…….
এটা কিভাবে হলো,আরুশ তো মরে গিয়েছিলো,আরুশ বেঁচে গেলো কিভাবে,আরুশ সুখে ঘর করবে এটা কিছুতেই হতে পারেনা। আরুশ চৌধুরী তুমি সুখে থাকবে এটা আমি সহ্য করতে পারবো না। তোমার সুখ আমি তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেবো, তরীকে আমি তোমার সাথে থাকতে কিছুতেই দেবো না,কিছুতেই নয়( জোরে চিৎকার করে)
আবার কোন বিপদ আসতে চলেছে তরী আর আরুশের জীবনে।
পরেরদিন সন্ধ্যাবেলা………
তরী আর রিতার হাতে মেহেদি লাগানো হচ্ছে।
তরীর কাজিন- হাতের মেহেদী যত বেশি লাল হবে তার বর তাকে তত বেশি ভালোবাসবে।
রিতা- আমাদের আরুশ তো তরীর জন্য ফিদা,সেই কবে থেকে কালকের দিনটার জন্য অপেক্ষা করছে।
তরীর কাজিন- হুম ওদের ভালোবাসা সত্যি,মনে রাখার মতো।
সবাই যে যার মতো কথা বলছে কিন্তু তরীকে আনমনা লাগছে। রিতা বিষয়টা খেয়াল করলো।
আরু ভিডিও কল করে।
আরু- কিরে মেহেদী দেওয়া শেষ।
তরী- হুম
অদ্রি- ডিজাইন টা দ্যাখা
তরী আর রিতা ওদেরকে ডিজাইন দেখাতে লাগলো।
আরু ফোনটা নিয়ে এসে আরুশ আর আর্দ্র এর সামনে ধরে।
আরু- দ্যাখ তোদের বরদের অবস্থা
আরুশ- কেন কি হয়েছে
আরু- মুড অফ সব
আর্দ্র- মুড অফ কেন হবে
আরু- এমনি সব বুঝি বুঝি।
আর্দ্র- কি বুঝিস।
আরু- কিছু না।
ওরা কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
মেহেদী দেওয়া শেষ করে, তরী নিজের রুমের বারান্দায় বসে আছে,রিতা গিয়ে দেখলো তরী যেন কোনো গভীর চিন্তায় আছে।
রিতা- তরী
তরী- কে
রিতা- আমি
তরী- বল
রিতা- কি ভাবছিস।
তরী- কিছু না
রিতা- বল কি
তরী- আমাদের শত্রু কিন্তু এখনো ছাড়া আছে,সে কিন্তু কালকে কিছু একটা করার চেস্টা করবে।
রিতা- এসব বলিস না দেখবি সব ঠিকঠাক হবে।
তরী- হুম।
ওদিকে…..
আরুশ- আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা তারপর তরী আমার হয়ে যাবে,সারাজীবনের জন্য।
আর্দ্র আগের রাতে না ঘুমানোর জন্য,ঘুমিয়ে পড়েছে আজকে।
পরেরদিন সকাল………
আজকে বিয়ে দুইবাড়িতেই জোড়দার আয়োজন চলছে,সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।
বিকাল ৪টার সময় তরী আর রিতা দুজনে বিউটি পার্লারে যায়,বাড়িতে আসার কথা ছিলো কিন্তু তরী পার্লারে গিয়েই সাজবে।তরীর কথার বাইরে কেউ কথা বলেনি।
রিতা- তরী বাড়িতে সাজলেই তো ভালো হতো
তরী- না
রিতা- কেন
তরী- ভালো লাগছে না এতো প্রশ্ন চুপচাপ থাক তো
রিতা- ওকে।
২ঘন্টা পর,
রিতা আর তরীকে সাজানো শেষ।
তরী একটা রানি কালারের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে,গা ভর্তি গহনা,হালকা সিম্পল ব্রাইডাল লুক দারুন লাগছে ওর দিক থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।
আর রিতা একটা মেরুন কালারের লেহেঙ্গা,গা ভর্তি গহনা হালকা সিম্পল ব্রাইডাল লুক ।রিতাকেও খুব সুন্দর লাগছে।
পার্লারের মেয়ে- ম্যাম আপনাদের দুজনকেই খুব সুন্দর লাগছে।
তরী- ধন্যবাদ।
তরী আর রিতা একসাথে গাড়িতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
রিতা- তরী এই গাড়িতে উঠলি ,এটা তো আমাদের গাড়ি নয়।
তরী-হুম চুপ করে থাক।দাদা গাড়িটা সোজা রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবেন না।
ড্রাইভার- ঘুরিয়ে নিয়ে যাবো তো
তরী- হুম
তরীর এমন কাজের কারন রিতা খুঁজতে থাকে কিন্তু ফলাফল শূন্য।
তরী- রিতা এসব কথা কাউকে কিছু বলতে হবে না।
অনেকক্ষন কেটে যায়, কিন্তু রিতা আর তরী বাড়ি ফিরে আসে না। গাড়িটা অন্য রাস্তা থেকে আসার জন্য আসতে অনেক দেরি হচ্ছে। তরীর মা আর রিতার মা চিন্তা করছে মেয়েদের নিয়ে।
রিতার মা-মেয়ে গুলো কোথায় গেলো বলো তো।
তরীর মা- আমি তো বুঝতে পারছি না , আমি যেতে বারন করেছিলাম ওদেরকে।
রিতার মা- আমার মনে আরুশদের জানানো উচিত কথাটা।
তরীর মা- হুম।
তরীর মা আরুশকে ফোন করতে যায় তখনি তরী আর রিতা চলে আসে।
ওরা আসতেই একের পর একটা প্রশ্ন আসতে থাকে।
তরী- মা সাজতে দেরি হয়ে গেছে চিন্তা করো না।
কথাটা চাপা পড়ে যায়,তরী আর রিতার বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই ব্যস্ত হয়ে যায়।
সন্ধ্যার পর বরযাত্রী আসে,সবাই আনন্দে মেতে ওঠে।
আরু- ওরে তোদের কি লাগছে রে পুরো আগুন।
অদ্রি- খুব সুন্দর লাগছে।
অনেক অপেক্ষার পর সেই সময়টা আসে।
আরুশের বাবা- আরু,অদ্রি ওদের নিয়ে এসো।
আরু,অদ্রি, তরী আর রিতাকে বিয়ের ওখানে নিয়ে আসার জন্য যায়।
আরু- চলুন কনেরা বিয়ের ওখানে।
তরী- রিতার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, রিতা যদিও এই জিনিসটার সাথে আগে পরিচিত কিন্তু তাও এক অন্য অনুভূতি হচ্ছে। আর তরীর মনে একটা ভয়, আনন্দের সংমিশ্রণে একটা অন্য অনুভূতি হচ্ছে। অনেক লড়াই করার পর তরী তার ভালোবাসার মানুষটিকে পাবে।
তরী আর রিতাকে তাদের নিজের ভালোবাসার মানুষের পাশে বসানো হয়, তরী ঘোমটার নিচে থেকে আরুশের দিকে একনজর তাকিয়ে দেখলো- আরুশ একটা সাদা রঙের সেরোয়ানি পড়ছে, লাল পায়জামা, ফর্সা , জিম করা চেহারায় সাদাটা সুন্দর লাগছে।
আরুশের পাশে তরীকে বসানো হতেই আরুশ ওর একটা হাত তরীর হাতের উপর রাখে সবার চোখের আড়ালে।তরী আরুশের এমন কাজে হাসে।
ওদের বিয়ে পড়ানো চালু হয়,প্রথমে আর্দ্র কে বলা হয় বলার জন্য আর্দ্র একদমে কবুল বলে দেয়, আর্দ্র এর কান্ডে সবাই হাসে বেচারা আর্দ্র লজ্জাই পড়ে যায়। উৎসাহে ওহ ভুলে গিয়েছিলো এখানে সবাই আছে। তারপর রিতাকে বলতে বলা হয়, রিতা শান্তকন্ঠে কবুল বলে দেয়। রিতা আর আর্দ্র এর আগেই কোর্ট ম্যারেজ হয়ে গিয়েছিলো তাই ওদের আর রেজিস্ট্রি হলোনা।
এবার আমাদের তরী আর আরুশের পালা।প্রথমে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন হয়,তরী কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে দেয়।তারপর…
কাজি সাহেব- ……………….. বাবা তুমি কি এই বিয়েতে রাজি, রাজি থাকলে বলো কবুল।
আরুশ- কবুল,কবুল,কবুল।
কাজি সাহেব-………………..মা, তুমি কি রাজি,রাজি থাকলে বলো কবুল।
তরী কিছু বলে না চুপ করে থাকে,ওর কস্ট হচ্ছে এরপর ওর আপন মানুষগুলো পর হয়ে যাবে।
আরু- তরী বল
অদ্রি- কি তরী বল।
আরুশ তরীর দিকে আশ্বাসের চোখে তাকায়,তরী আরুশের দিকে চোখ বন্ধ করে কাঁপা গলায় তিনবার কবুল বলে।
তরী- কবুল,কবুল,কবুল।
বিয়ে হবার পর সবাই আনন্দ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
অদ্রি আর আরু ওদের দুজনকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।সবাই খুব খুশি,আরুশের বাবা আর তরীর বাবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে।
তরী আর আরুশ সারাজীবনের জন্য এক হয়ে যায়,ওরা আবদ্ধ হয়ে যায় পবিত্র বন্ধনে।
সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে গেছে।
আরুশের বাবা- এবার তাহলে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
তরীর বাবা- হুম।
আর্দ্র এর বাবা- দাদা আমি আগে সবাইকে পাঠিয়ে দেয়,তারপর আমরা বের হবো।
তরীর বাবা- হ্যা এটাই ভালো হবে।
আর্দ্রের বাবা সব গেস্টদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।এখন এই বাড়িতে শুধুমাত্র তরী দের বাড়ির আত্মীয়-স্বজন,আর ওরা নিজেরা।
আরুশের বাবা আরুকে বললেন- আরু ওদেরকে নিয়ে এসো,বাড়ি ফিরতে হবে।
আরু- ওকে।
আরু ওদের ডাকতে যায়।
আরু- তরী,রিতাকে নিয়ে যেতে বললো,বাড়ি যাবে বলে।
এবার চালু হয় কান্নাকাটি, রিতা ওর মাকে ধরে কাঁদতে থাকে আর তরী ওর মাকে।তরীর মা কাঁদছে একমাত্র মেয়েকে ছেড়ে থাকতে হবে। এতদিন এতকস্ট করে বড়ো করলেন আর সেই মেয়েকে আজ শশুর বাড়ী পাঠাতে হবে,মেয়েটা আর তার কাছে থাকবে না।
তরী, রিতা কে জোড় করে বাইরে নিয়ে আসা হয়,সবাই তরী আর রিতার মাকে থামাচ্ছে। তরী ওর বাবাকে দেখে ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলেন,তরীর বাবা মেয়েকে পরম আগলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
তরী- বাপি আমি কিভাবে তোমাদের ছেড়ে থাকবো।
বাবা- ঠিক হয়ে যাবে,আর সবাইকে তো তুই চিনিস,সবাই তোকে কত ভালো বাসে।
তরী- আমি তোমাদের ছেড়ে যাবো না
বাবা- এমন বলতে নেয় মা এটাই যে মেয়েদের নিয়ম, আর স্বামীর ঘরই মেয়েদের আসল ঘর।
তরী কাঁদতে থাকে। ওর বাবার ওহ চোখে পানি অনেক কস্ট পানি আটকে রেখেছে,মেয়ের সামনে কাঁদলে তো মেয়ে আরো ভেঙ্গে পড়বে তাই।
তরীর বাবা নিজেকে শক্ত করে নিজের মেয়ের হাত আরুশের হাতে তুলে দিলেন- বাবা আমার আদরের মেয়েটাকে দেখে রাখবে।
আরুশ- হুম।
তরীর বাবার চোখে পানি চিকচিক করছে।
রিতা তরীর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে- আমার বাবা থাকলেও আমাকেও এভাবে জড়িয়ে ধরতো।
তারপর তরীর বাবা যা করলেন…..
#চলবে……..
#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ৩০
তরীর বাবা রিতার কাছে আসেন,তারপর রিতাকে বলে- কিরে মা এই বাপটাকে বিদায় জানাবি না।
রিতা তরীর বাবার কথা শুনে অবাক হয়,নিজের মনের মধ্যে রাখা কান্নাটা বেরিয়ে আসে তরীর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।তরীর বাবা ওহ পরম আবেশে জড়িয়ে ধরলেন।
বাবা- মা কান্না করিস না,এটাই যে মেয়েদের জীবন।
রিতা- হুম।
বাবা- আর তোর তো সকলে চেনা,কান্না করিস না।
রিতা- হুম
বাবা- চল।
তরীর বাবা রিতাকে নিয়ে আর্দ্র এর সামনে আসে।
বাবা- আর্দ্র
আর্দ্র- হ্যা আঙ্কেল বলুন
বাবা- রিতা ওহ আমার মেয়ের মতোই,ওকে তুমি দেখে রেখো।
আর্দ্র- হুম।
তরীর বাবা রিতার হাত আর আর্দ্র এর হাতে দিয়ে দেয়।
ওরা সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গাড়িতে আরুশ তরীকে আর আর্দ্র রিতাকে সা
চৌধুরী বাড়িতে সমস্ত রীতি মেনে-টেনে,রিতা আর তরীকে বাসর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
চারিদিকে ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে,হাজারো ফুলের মাঝে বসে আছে আরেক ফুল তরীতা জাহান।তরীর মনে হাজারো অনুভূতি, ভালোবাসার মানুষটা এখন শুধু তার,আবার ভয় ওহ হচ্ছে, সম্পর্ক গুলো নতুন ওহ পারবে তো সকলকে ভালো রাখতে।
ওদিকে…
আরুশ আর আর্দ্র নিজের রুমে আসবে বলে কিন্তু মাঝরাস্তায় আটকে গেছে।
আরুশ- কি হলো পথ আটকে দাঁড়ালি কেন?
আরু- টাকা দাও আগে।
আর্দ্র- কিসের টাকা
অদ্রি- আমাদের পাওনা।
আরুশ- আচ্ছা বল কত দিতে হবে।
অদ্রি- তুই ২০ আর দাভাই ৩০
আর্দ্র- আমি ৩০কেন
আরু- তোমার সেকেন্ড বার এটা তাই
আর্দ্র- এটা কিরকম কথা
আরু- এটাই কথা।
অদ্রি- দিয়ে দে তাড়াতাড়ি আর চলে যা।
আরু- হুম, তাড়াতাড়ি দিয়ে চলে যা।
আরুশ- এই নে আমার কার্ড তোরা টাকা তুলে নে।
আরু তাড়াতাড়ি কার্ডটা নিয়ে নেয়।
আরুশ- আমি আসি
আরু- আচ্ছা,যা
আরুশ হাসতে হাসতে চলে যায়।আরুশের হাসির মানে সবার অজানা।
অদ্রি- তুই তাড়াতাড়ি বার কর
আর্দ্র- আমার থেকে বেশি নিবি কেন,দ্যাখ আরুশ কার্ড দিয়েছে ওর থেকে টাকাটা নে।
আরু- আচ্ছা,
আরু ভালো করে কার্ডটা দেখে – অ্যা
অদ্রি- কি হলো
আরু- এটা দ্যাখ
আরু কার্ডটা অদ্রিকে দেয়।
অদ্রি- এটা তো পুরানো কার্ড,আর এটা এখনো চালু আছে কিনা সেটাই সন্দেহ
আরু- হুম, দাদাভাই আমাদের সাথে চিট করলো
অদ্রি- হুম,দাভাই তুই ৫০হাজার বার কর
আর্দ্র- অ্যা
আরু- অ্যা নয় হ্যা, চুপচাপ বার কর নাহলে আজকে এখানেই রেখে দেবো সারারাত
আর্দ্র- দ্যাখ এটা কিন্তু ঠিক নয়
আরু- এটাই ঠিক,দে চুপচাপ
আর্দ্রের কাছ থেকে ওরা পুরো ৫০হাজার টাকাই নিয়ে নেয়।
আর্দ্র- আমার ওহ দিন আসবে
আরু- দেখা যাবে। যা এখন
আর্দ্র চলে যায়,ওরা দুজন হাসিতে ফেটে পড়লো।
ওদিকে..
আরুশ ঘরের দরজা খুললে তরীর বুক কেঁপে উঠল,তরী চাদরটা খাঁমচে ধরলো শক্ত করে।
আরুশ- তরী,ফ্রেশ হয়ে এসো।
তরী চুপচাপ গুটিগুটি পায়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।তরী ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই আরুশ তরীর সাথে কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে,তরী আরুশের এমন কান্ডে কস্ট,অবাক হয়।
অন্যদিকে….
আর্দ্র রুমে ঢুকে দেখে বিছানায় কেউ নেয়,সারা রুম খুঁজে দ্যাখে কোথাও রিতা নেয়।
আর্দ্র- রিতা কোথায় গেলো।
আর্দ্র এর ভাবনার মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খুলার শব্দ হয়। আর্দ্র তাকিয়ে দ্যাখো রিতা পুরো ফ্রেশ হয়ে বেরোচ্ছে। আর্দ্র মনে মনে ক্ষুদ্ধ হয় রিতার এমন কাজে ওর ইচ্ছে ছিলো ওহ রুমে এসে রিতার ঘোমটা খুলে লজ্জা রাঙ্গা মুখটা দেখবে কিন্তু না সবটাই পানি ঢেলে দিলো।
আর্দ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিতা বললো- খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন, সরো আমি ঘুমাবো।
আর্দ্র- অ্যা
রিতা- কি হলো, আমি কি ভুল বললাম এমন করলে
আর্দ্র- আজকে কেউ ঘুমায় নাকি
রিতা- তবে কি করে??
আর্দ্র- এই তুমি কি ফাজলামি করছো আমার সাথে
রিতা- ফাজলামি করবো কেন
আর্দ্র কোনো কথা না বলে রিতাকে কোলে তুলে নেয়।
রিতা- কি হলো
আর্দ্র- চুপ করবে,নাহলে ফেলে দেবো
রিতা চুপ করে যায়, আর্দ্র রিতাকে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।
আর্দ্র- আজ আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই
রিতা- কি কথা।
আর্দ্র- ভালোবাসি
রিতা আর্দ্র এর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনে অবাক হয়, আর্দ্র ওকে ভালোবাসে সেটা ওহ বুঝতে পারে কিন্তু আর্দ্র কখনো মুখে বলেনি এটাই প্রথম।
আর্দ্র- সেটা আজ থেকে নয়।
রিতা আর্দ্র এর এমন কথায় অনেকটা অবাক হয়।
রিতা- মানে
আর্দ্র- আরুশ আর তরীর দেখা যেদিন হয়েছিলো সেদিন থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমাকে আমি দেখিনি সেদিন পেছনে,একটা সাইট দেখেছিলাম,কেন জানি মনের মাঝে ওই মেয়েটাই আটকে ছিলো। তোমাকে নিজের মাঝে কল্পনা করতে করতে কখন ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও জানিনা।সেদিন তোমাদের পুরানো ছবিগুলো,দেখতে গিয়ে আমি বুঝতে পারি যাকে আমি এতদিন ভালোবেসে ছিলাম সে আমার সামনেই ছিলো আমি তাকে চিনতে পারিনি।নিজের অজান্তেই তাকে কস্ট দিয়েছি,খুব কস্ট হয়েছিলো তখন,নিজেকে দোষ দিয়েছিলাম তোমাকে কস্ট দেবার জন্য। আমাকে মাফ করে দিয়ো আমি না বুঝে তোমাকে অনেক কস্ট দিয়েছি।
আর্দ্র এর কথা শুনে রিতা অবাক,খুশি হয়।তার ভালোবাসার মানুষটিও তাকে ভালোবাসে আবার সেটা ওহ ভালবাসার অনেক বছর আগে থেকে।
রিতা- এমন বলো না প্লিজ,আমি তোমার কোনো কাজে কস্ট পাইনি।
আর্দ্র- বলো তো এই অপেক্ষারত প্রেমিকটাকে কি তুমি আরো অপেক্ষা করাবে।
রিতা- মানে
আর্দ্র- আমাকে ভালোবাসায় নিজেকে পূর্ণ করবেন মিসেস আর্দ্র চৌধুরী।
রিতা- হুম
রিতা আর আর্দ্র ডুব দেয় ভালোবাসার সাগরে।এই বন্ধন সারাজীবন অটুট থাকুক।পূনতা পাক সমস্ত ভালো বাসা।
ওদিকে….
আরুশ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে,চুপচাপ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে।তরী মন খারাপ করে বারান্দায় চলে যায়।
তরী মনখারাপ করে বাইরে তাকিয়ে আছে,বাইরে ঠান্ডা বাতাস বয়ছে। তরী বুঝতে পারছেনা আরুশের এমন কাজের কারন।
হঠাৎ তরী অনুভব করে কেউ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে,ওর বুঝতে অসুবিধা হলো না ওটা আরুশ,তরী আরুশের স্পর্শে কেঁপে উঠলো।
আরুশ- রাগ করেছো আমার উপর
তরী- না
আরুশ- বললেই হবে গলা শুনে মনে হচ্ছে।
তরী- কি মনে হচ্ছে
আরুশ- মনে হচ্ছে,আমার তরী রানি তার রাজার উপর খুব অভিমান করেছে।
তরী কিছু বলেনা।
আরুশ- তোমায় কেন ফ্রেশ হতে বললাম জানো
তরী তাও কিছু বলেনা।
আরুশ- আমার তরী রানিকে এমনিতেই খুব সুন্দর লাগে,আমার তরী আমার কাছে সব সময় সুন্দর। তোমাকে সুন্দর লাগার জন্য কোনো সাজের দরকার হয় না বুঝলে ( তরীর ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে)
তরী আরুশের কাজে কেঁপে উঠলো,বুকের মাঝে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে।
আরুশ- এখনো রেগে আছো
তরী- না
আরুশ- হুম,তা মিসেস আমাকে কি আরো অপেক্ষা করিয়ে রাখবেন।
তরী কিছু না বলে আরুশের দিকে ঘুরে আরুশকে জড়িয়ে ধরে,আরুশ ওর উওর পেয়ে গেছে। আরুশ আর তরীর ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো আজ।
পরেরদিন সকালে
তরীর আরুশের বুকে নিজেকে আবিস্কার করলো। আরুশের দিকে তাকিয়ে তরী হেসে ফেলে,আরুশ বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাচ্ছে।
তরীর হাসির শব্দ পেয়ে আরুশের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
আরুশ- কি হলো হাসছো কেন সকাল সকাল
তরী- এমনি,সরো উঠবো
আরুশ- না আরেকটু
তরী আরুশকে সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়ে,আজকে ওদের বৌভাত।
তরী আর রিতা ফ্রেশ হয়ে নীচে নামতেই
অদ্রি- ভাবিরা ঘুম কেমন হলো
তরী- কেন ননদিনী ঘুম কি খারাপ হবার কথা ছিলো।
আরু- না মানে বাসর রাত তো
তরী- বড্ড পেকে গেছ তুমি
আরু- বাবারে পাকবো না ঠিক বয়সে বিয়ে দিলে একটা বাচ্চা থাকতো
তরী- তবে রে দাঁড়া।
তরী আরুর কান ধরে টান দেয়।
আরু- বোন ছাড় আমাকে আমি আর বলবো না
তরী- মনে থাকে যেন
তরী আর আরুর কান্ড দেখে সবাই হাসতে থাকে।
অদ্রি- তুই শুধু আরুকেই ভালো বাসিস।
আরু- হিংসুটে
অদ্রি- তুই।
আরু- হুম,আজকে আমার সব বন্ধুরা আসবে
অদ্রি- আমার ওহ, কাল তো কারোর কোনো বন্ধুই আসেনি।
তরী- কেন
আরু- দাভাই তো বললো সবার কাজ আছে
রিতা- ওহ সব বিজি মানুষ,তরী সোহাগ কাল আসেনি না
তরী- নারে,আজকে আসবে( আরুর দিকে তাকিয়ে)
আরু লজ্জা পেয়ে যায়,আর ওখান থেকে চলে যায় কেউ আরুর কাজের মাথা মুন্ডু বোঝে নি তরী ওহ না।
রিতা- কি হলো
তরী- জানিনা।
অদ্রি মাঝখান থেকে একটা কথা বলে….
#চলবে……..