হৃদয়ে তুমি পর্ব-০৪

0
1603

#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্ট_৪

পরেরদিন বিকালে-

আজকে অদ্রির ৩ জন বন্ধু এসেছে।সবার সাথে কথা বলছে।

মিলি- হাই আরুশ …দা কেমন আছো।
আরুশ- ভালো তুমি।
মিলি-এতক্ষন ছিলাম না আজ ভালো হয়ে গেলাম।
আরুশ- কেন
মিলি- তোমাকে দেখে।
আরুশ- ওহ তাই নাকি।
মিলি- হুম।

তরী আর আরুশী কথা বলে নামছিলো,তরী মিলি আর অদ্রিকে কথা বলতে দেখে একটু রেগে যায়।আরুশী সেটা বুঝতে পারে।

আরুশি- ওটা মিলি অদ্রির বন্ধু।
তরী- ওহ।
আরুশী- দাদাভাই এর উপর ক্রাশ।

তরী কিছু বলে না,চুপচাপ নীচে নেমে এলো।

আরুশী- কেমন আছো মিলি।
মিলি- ভালো তুমি।
আরুশী- ভালো।
মিলি- ওটা কে??
আরুশী- ওহ হলো তরী আমার

আরুশ আরুশীকে বলতে না দিয়ে বললো- বাপির ফ্রেন্ড এর মেয়ে।
মিলি- ওহ।আমি অদ্রির সাথে দেখা করে আসি।

মিলি চলে যায়।আরুশ তরীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়।

কিছুক্ষন পর আর্দ্র আর আরুশ এর দু’জন বন্ধু আসে।

আরুশ- হাই কেমন আছিস।
রোহান- ভালো তুই।

সবার সাথে কথা বলছে ওদের চোখ পড়ে তরীর দিকে

জিসান- আরুশ ওটাকে।
আরুশ- বাপির বন্ধুর মেয়ে তরী।
রোহান- হাই তরী।
তরী- হ্যালো।

জিসানকে আর্দ্র ইশারা করে কিছু একটা বলে। জিসান সেটা বুঝতে পেরে বাঁকা হাসে।

জিসান- হাই তরী।
তরী- হ্যালো।
জিসান- তোমার নামের মতো তোমার কন্ঠটাও খুব সুন্দর।
তরী- ধন্যবাদ

জিসান আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো আরুশ ওকে আটকে দিয়ে বললো- তোরা রেস্ট নিবি চল।
জিসান- বাই তরী পড়ে কথা হবে।

ওদের নিয়ে আরুশ রুমে চলে যায়।

জিসান- ওই আরুশ ওর সাথে লাইন করে দে না‌
আরুশ- কার সাথে।
জিসান- আমার বোনের সাথে করলে আমি লাইন করে দিতাম কিন্তু ওর সাথে নয়।
রোহান- কেন??
আরুশ- কারন তরী আমার‌
জিসান- ওহ বাবা বাপির ফ্রেন্ডের মেয়ে।
আরুশ- দূর

আরুশ চলে যায় ওরা হাসতে লাগল।

রাতে ছাদে বসে সবাই আড্ডা মারছে।আরুশরা উপরে যায়।

আর্দ্র- কি করছিস সব।
আরুশী- ট্রুথ আর ডেয়ার খেলবো চলো।
আরুশ- আমি খেলবো না।
আরুশী- সত্যিটা প্রকাশ হবার ভয়ে।
আরুশ- কীসের সত্যি।
আরুশি- আমি জানি না।
আরুশ- ওকে খেলবো।

সবাই গোল হয়ে বসে,আরুশ, আর্দ্র,আরুশী,অদ্রি,রোহান,জিসান,মিলি, সুমি আর দীপা( অদ্রির বন্ধু)আর তরী।

আরুশ আর তরী সোজাসুজি বসেছে।প্রথম বোতল ঘোরালো গিয়ে থামলো অদ্রির কাছে।

আরুশী- কি নিবি।
অদ্রি- ট্রুথ।
আরুশী- কে প্রথম বলেছিলো
অদ্রি- সে।
আরুশি- আর তুই রাজি হয়ে গেলি।
অদ্রি- এবার মার খাবি।

একে একে সবার হতে লাগলো।এবার মিলির কাছে বোতল দাঁড়ালো।

অদ্রি- কি
মিলি- ট্রুথ
আরুশি- কাউকে ভালোবাসো।
মিলি- হুম।
আরুশি- কে।
মিলি- আরুশ।

সবাই আরুশ আর মিলির দিকে তাকাতে থাকে।তরী তো রেগে বোম।

অদ্রি- কি বলছি তুই।
মিলি- হুম আমি জানি আরুশ ওহ আমাকে পছন্দ করে।

কথাটা আরুশ বিষম খেয়ে যায়।তরী তো রেগে বোম।বাকি সবার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে।

রাতে খাবার জন্য ডাক পড়ায় জিনিসটা থেমে যায়।

পরেরদিন বিকালে-

আজ অদ্রির গায়ে হলুদ।সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে।তরী রুমে রেডি হচ্ছে। হঠাৎ পেছনে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে পেছনে ঘুরতে গিয়ে ওর মাথা আরুশের বুকের সাথে ধাক্কা লাগে।

তরী- আ
আরুশ- আস্তে লেগে গেলো তো।
তরী- এভাবে কেউ পেছনে এসে দাঁড়ায়।
আরুশ- আমি দাঁড়ায়।

আরুশ তরীর দিকে আগিয়ে যেতে থাকে তরী পেছাতে থাকে।

তরী- আগাচ্ছেন কেন
আরুশ- তুমি পেছাচ্ছো কেন?

তরী পেছাতে পেছাতে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খায়।আরুশ ওর কাছে এসে নিজের হাত দুটোকে তরীর পেছনে দেয়ালে রাখে। আরুশ একবার তরীর দিকে তাকিয়ে বলল- এই লুক দেখার অধিকার শুধু আমার।

তরী নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর গায়ে কোনো ওড়না নেয়। ও লজ্জায় নুইয়ে গেলো ।

আরুশ- আর লজ্জা পেতে হবে না আমিই তো নাকি।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নীচে আসো।

আরুশ চলে যায় ,তরী একটা হলুদ কালার শাড়ি পড়ে নীচে যায়।সারা বাড়ি গমগম করছে।হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাদে করা হয়েছে।তরী ছাদে চলে যায়।

অদ্রিকে হলুদ পরী লাগছে পুরো।সবাই একে একে অদ্রিকে হলুদ ছোঁয়াতে লাগলো।তরী আর আরুশ একসাথে গেলো।

অদ্রি- বাব্বা একসাথে।
আরুশ- কোনো প্রবলেম আছে
অদ্রি- না।

ওর দুজন একসাথে হলুদ লাগায়।আরুশ ওখান থেকে চলে আসতেই মিলি আরুশের সামনে আসে।

মিলি- তোমায় হলুদ লাগায়।
আরুশ- না আমার হলুদে এ্যালাজি আছে।
মিলি- ওহ‌

আরুশ ওখান থেকে গিয়ে তরী কে নিয়ে একটা সাইটে চলে আসে।

তরী- এভাবে আনলেন কেন??
আরুশ- সবাই হলুদ মাখছে তুমি মাখবেনা।
তরী- না।

তরী অনুভব করলো ওর পেটে ঠান্ডা কিছু একটা ঠেকছে।ওহ নীচু হয়ে দেখে আরুশ ওর পেটে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে।

তরী- এটা কী হলো।
আরুশ- কিছু নয় তো।

আরুশ তরীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তরীর পেটে নিজের গাল ঠেকায়।তরী আরুশের স্পর্শে কেঁপে উঠলো।আরুশ নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে উঠে হলো। তারপর একটা বাঁকা হেসে ওখান থেকে চলে গেল।তরী স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

আরুশের দেখা হয় আরুশীর সাথে।

আরুশি- দাদাভাই তোকে হলুদ লাগালো কে??( জোরে চেঁচিয়ে)
আরুশ- আরে আস্তে বোন আমার।

আরুশীর কথা শুনে মিলি আরুশের কাছে আসে।

মিলি- আরুশ তুমি বললে না তোমার হলুদে এ্যালাজি
আরুশী- দাদাভাই তোর আবার কবে এ্যালাজি হলো।
মিলি- আরুশ তোমার নেয়।
আরুশ- না আমি মজা করে বলেছিলাম।
মিলি- তাহলে এখন লাগাই।
আরুশ- না।
মিলি- কেন
আরুশ- ভালো লাগছে না।

আরুশ ওখান থেকে চলে যায়।মিলি মন খারাপ করে চলে গেলো।আরুশী কিছু বুঝতে না পেরে মাথা চুলকাতে থাকে।

পরেরদিন-

আজকে মেহেদির অনুষ্ঠান।সবাই হাতে মেহেদি করছে।তরী অদ্রির হাতে করছে।

আরুশি- ওই তরী হাতে মেহেদি দিয়ে দিবি।
আর্দ্র-ওই নিজে দিতে পারিস না ওকে বলছিস ও কত জনের করবে।
আরুশী- তুই চুপ কর ।
তরী- আমি করে দেবো।
আরুশি- এই তো সোনা মেয়ে।
আরুশ- আমি করে দেবো।
আরুশী- না।কী কাকের মাথা ছাতার মাথা করবি কে জানে‌ ,আমি তোকে করতে দেবো কখনো নয়।
আরুশ- মিলি তোমার।
মিলি- না আমার ওহ করতে হবে না।
আরুশ- ওহ।

আরুশ হতাশ হয়ে চলে যায়।

তরী অদ্রির শেষ করে আরুশীর,মিলির আর কয়েকজনের করে দেয়।

আরুশী- তুই করবি না।
তরী- হাত ব্যথা করছে।
আরুশী- এটা বললে কি হবে তুই আমাদের করলি আর তোর হাত ফাঁকা থাকবে।
তরী- আমি কীভাবে করবো।
অদ্রি- যাই হোক কর।
তরী- ওয়েট।

তরী আরুশের কাছে গিয়ে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দেয়।আরুশ ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।তরীর এমন করায় সবাই অবাক হয়।

আরুশি- কী করছিস
তরী- আপনি আমার হাতে মেহেদি করে দিন।
আরুশ- সত্যি
তরী- হূম

সবাই অবাক হয় তরীর কান্ডে।

আরুশ- ওকে।
আরুশি- তরী তুই সত্যি।
অদ্রি- আরু ওর ইচ্ছে হচ্ছে করুক। দাদাভাই তুই তরী কে নিয়ে তোর রুমে যা ।
আরুশ- চলো।
আর্দ্র-আমরা যেতে পারি।
আরুশ- একটু পর তোরা আয়।

আরুশ তরীর হাত ধরে নিয়ে যায়।মিলি রেগে যায় ওটা দেখে।

আরুশ নিজের রুমের বিছানায় বসাই তরীকে। তারপর ওর হাত দুটোকে নিজের হাতে নেয় তরী অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আরুশ নিজের ঠোঁটের স্পর্শ তরীর হাতে ছোঁয়ায়।তরী চোখ বন্ধ করে নেয়।আরুশ তরীর দিকে তাকিয়ে বলল- ব্যথা কমেছে।

তরী খেয়াল করে আরুশের স্পর্শে তরীর ব্যথা হালকা হয়ে গেছে।

আর্দ্র- আমরা হাজির।

সবাই চলে আসে।আরুশ মেহেদি করা শুরু করে,তরী একভাবে আরুশের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাই খুব উৎসুক দেখার জন্য আরুশ কি করে।

কিছুক্ষণ পর-

আরুশ- শেষ।

সবাই তরীর হাতের দিকে তাকায়…

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে