#হৃদয়ের_একূল_ওকূল(২)
***************************
বড়ো ভাই ওর কথা শেষ করে রুম থেকে চলে যাওয়ার পর মা বললেন, ‘শোন বাবা, যা হয়, ভালোর জন্যেই হয়। তুই বাইরে চলে যা। এখানে সারাবছর কাজ করে যে টাকা পাবি, বাইরে গিয়ে একমাস চাকরি করলে, তারচেয়ে অনেক বেশি টাকা পাবি। আমাদের পরিবারে লাখ টাকা বেতন কেউ পেয়েছে আজ পর্যন্ত?’
‘টাকাটাই কী সবকিছু? আমি যে যেতে চাইছি না, এটার কোনও মূল্য নেই?’
‘টাকা অনেক বড়ো ব্যাপার রে বাবা। কয়দিন পর তুই বিয়ে করবি৷ সাত হাজার টাকা বেতন শুনলে, কোনও ভদ্রলোক তাঁর মেয়ে দেবে তোকে?’
জিনিয়ার চেহারাটা মনে পড়ল। জিনিয়া বোধহয় একারণেই আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছে। চাকরি নেই বলেই সে হয়ত সাহস করে ভালোবাসার কথা বলতে পারছে না। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললাম, ‘তোমাদেরকে ছেড়ে আমার যেতে ইচ্ছা করছে না, মা। আমাকে একটু সময় দাও, মা। আমি মামার ওখানে চাকরির পাশাপাশি, তপুর সঙ্গে একটা ব্যবসা শুরু করব।’
‘তুই ব্যবসা করার টাকা কোথায় পাবি? তাছাড়া ব্যবসার তুই কিছু বুঝিস নাকি?’
‘বাইরে যাওয়ার জন্য যে টাকাটা দিতে চাচ্ছ, সেটা থেকেই না হয় কিছু টাকা দাও। ব্যবসা শুরু করলে, আস্তে আস্তে লাইন-ঘাট ঠিকই বুঝে যাব।’
‘না রে বাবা, এইসব আবদার করিস না। তুই ব্যবসা করতে পারবি না, মাঝখান দিয়ে টাকা নষ্ট হবে। শরৎ, হেমন্ত ওরা এসব শুনলে, রাগ করবে। শরৎ যা করছে, ওকে করতে দে। বাইরে তো আর সারাজীবনের জন্য যাচ্ছিস না। ছয়মাস-একবছর পরই চলে আসতে পারবি। দেখতে, দেখতেই সময়টা কেটে যাবে।’
‘এটা একটা কথা বললে তুমি? চলে গেলে, এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসা যায় না। অনেক বছর লাগবে।’
‘আরে না, এত লাগবে না। তুই এত মন খারাপ করছিস কেন? তুই নিজেই চিন্তা করে দেখ, বাবা। ডিগ্রি পাশ করে বসে আছিস তিন বছর হয়ে গেল। এই পর্যন্ত একটা চাকরিতে ঢুকতে পারলি না। এখন একটা সুযোগ এসেছে। এই সুযোগটা হেলায় হারাস না। তুই আর আপত্তি করিস না, বসন্ত।’
বুঝলাম, আমার কথা কেউ শুনবে না। এবার বোধহয় দেশটাকে ছাড়তেই হবে। তারপরও শেষ চেষ্টা হিসেবে বাবার কাছে গিয়ে আরও একবার নিজের ইচ্ছার কথা জানালাম। বাবার কথায় বুঝলাম, বাবা চায় না, আমি বাইরে যাই; কিন্তু পাঁচজনের মধ্যে চারজনের ভোট যখন একইদিকে পড়ে, তখন বাকি একজনের মতামত কেউ পাত্তাই দেয় না। বাবা মন খারাপ করে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে বললেন, ‘কিছুদিন চেষ্টা করে দেখ, থাকতে পারিস কি না। ভালো না লাগলে চলে আসবি। এত ঘাবড়ে যাস না। আমি তোর জন্য দোয়া করি, তোর ভালো কিছু হবেই।’
——————————-
কামাল ভাই পাসপোর্ট নিয়ে গেছে। যদিও বড়ো ভাই বলেছিল, ওরা টাকা দেবে; কিন্তু বাবা বলেছে, যা টাকা লাগে, পুরোটাই তিনি দেবেন। কামাল ভাইকে ইতোমধ্যেই দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। আমি জানি বাবা কেন আমার দুই ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিতে চাচ্ছেন না। ওরা টাকা দিলেই, আমার দুই ভাবী সারাক্ষণ টাকার খোঁটা দিতে থাকবে। সংসারে এ নিয়ে অশান্তিও করবে। বিষয়টা বুঝেই বাবা ওদেরকে টাকা দিতে নিষেধ করেছেন।
বন্ধুদের কাছে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারটা চেপে গেছি। এই বিষয়ে ওদের সঙ্গে আর কোনও কথা বলিনি। ওরাও ধরে নিয়েছে, বাইরে যাওয়ার বিষয়টা ক্যান্সেল হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর, চৌরঙ্গীর মোড়ে আমাদের প্রতিদিনকার আড্ডা জমে। সবাই যার যার চাকরি আর কাজ শেষ করে, এখানে চলে আসে। সারাদিনের মধ্যে আমার তো অফুরন্ত সময় আর সময়। কাজের কাজ বলতে, কখনও বাজারে যাওয়া, কখনও ভাতিজা, ভাতিজিদের দরকারের কোনও জিনিস কিনে এনে দেওয়া, এই-ই তো। আমিও তাই এই সন্ধ্যার আড্ডার জন্য মুখিয়ে থাকি। সারাদিন বাড়িতে নানারকম বাণী শোনার পর, বন্ধুদের এই আড্ডাটা আমার জন্য টনিকের কাজ করে।
আজকের আড্ডায় তপু বলল, ‘শোন, মাসের শেষে শুক্রবার-শনিবার মিলে চারদিনের একটা বড়ো ছুটি আছে। চল, আমরা ঢাকার বাইরে কোথাও যাই।’
কোথাও যাই, বলাতে সবাই সবার পছন্দের জায়গা সাজেস্ট করতে লাগল। কক্সবাজার কেউ যেতে চায় না; কারণ আমরা বন্ধুরা গত তিনবছরে দুইবার ওখানে গিয়েছি। অনেক আলোচনার পর ঠিক হলো, এবার আমরা রাঙামাটি যাব। ওখানটায় এখনও আমাদের কেউই যায়নি। শোভন বলল, ‘মাসের শেষে গেলে একটু ঝামেলা হয়ে যাবে। আমার হাত একদম খালি। এবার না হয় তোরাই ঘুরে আয়। আমি পরেরবার যাব।’
তুহিন বলল, ‘একেকজনের কেমন টাকা লাগতে পারে, বল তো? টেনশন করিস না, আমরা সবাই মিলে তোর টাকা জোগাড় করে ফেলব। তোকে ছাড়া কেন যাব? আমরা পাঁচজন কখনও আলাদাভাবে কোথাও গিয়েছি নাকি?’
মুরাদ বলল, ‘হুম, সেটাই। আমরা চারজন মিলে তোর টাকা জোগাড় করে ফেলব। যাব তো, সবাই একসাথেই যাব। নইলে যাওয়া বাতিল।’
আমার মনে পড়ছে, কতবার কত জায়গায় যাওয়ার সময়, আমার টাকা কম পড়েছে। বাড়ি থেকে টাকা চেয়ে, পাইনি। আবার কখনও লজ্জায় টাকা চাইতেই পারিনি। আমার বন্ধুরা ঠিকই সমস্যার সমাধান করে ফেলেছে। আমাকে রেখে ওরা কখনও কোথাও যায়নি। আর কয়দিন পর এদেরকে ছেড়ে, আমার চলে যেতে হবে। এটা ভেবে আমার বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠছে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে তুহিন বলল, ‘কী রে বেটা, তোর আবার কী হলো? টাকার সমস্যা? আগে থেকেই বল। একজনের জায়গায়, দুইজনের টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। কোনও ব্যাপার না।’
আমি বেকার মানুষ হলেও, আমার একটা ব্যাংক একাউন্ট আছে। স্টুডেন্ট একাউন্ট। আমি ক্লাস সেভেন এ থাকতে, বাবা করে দিয়েছিলেন। দু’শো, পাঁচশো যখন যা পারতাম, টাকা জমা দিতাম। ডিগ্রি পাশ করার পর, বছরখানেক একটা টিউশনি করেছিলাম। সেখান থেকেও কিছু জমিয়েছিলাম। ওখানে শুধু টাকা জমা করেছি। আজ পর্যন্ত কখনও টাকা তুলিনি। সব মিলে পঞ্চান্ন হাজার টাকার মতো জমেছে ওখানে। টাকাটা জমাচ্ছি যদি কোনোকিছু কোনও বিপদ আসে, তখন খরচ করার জন্য।
আমি বন্ধুদের জন্য কোনোদিন চা-শিঙাড়ার বেশি খরচ করতে পারিনি। অথচ ওরা আমার বড়ো বড়ো খরচ অনেকবার মিটিয়েছে। আমার মনে হলো, এই ভালোবাসার ঋণ এবার অল্প হলেও, শোধ করি।
আমি ওদেরকে বললাম, ‘এবারের ট্যুর আমি স্পন্সর করব। সব খরচ আমার।’
তপু লাফ দিয়ে উঠে বলল, ‘কী বললি, আরেকবার বল?’
‘এবারের ট্যুরের সব খরচ আমার।’
‘মাথা ঠিক আছে তোর?’
‘হুম।’
শোভন বলল, ‘তপু তুই বুঝলি না, বসন্ত মজা করছে তোর সঙ্গে।’
আমি বললাম, ‘আমি মজা করছি না দোস্ত, সত্যি বলছি।’
তুহিন বলল, ‘বসন্ত, তুই সিরিয়াস?’
‘হুম।’
‘ঠিক আছে, তোর কথা বিশ্বাস করলাম; কিন্তু তুই টাকা পাবি কোথায়?’
‘যেখান থেকেই পাই না কেন, সব খরচ আমার।’
মুরদ বলল, ‘যা বেটা, মজা নিস না। তুই এত টাকা কোথায় পাবি? ব্যাংক লুটেছিস নাকি?’
আমার কথা, ওদের বিশ্বাস করার কথা না। যারা এতদিন ধরে আমার খরচ চালিয়ে আসছে, আজ নাকি আমি তাদের সবার ভ্রমণ খরচ দেবো? এটা একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ওরা সবাই আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে অন্য কথায় চলে গেল; কিন্তু আমার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, আমি নিয়ে নিয়েছি।
———————-
বন্ধুরা সবাই ভীষণ অবাক হয়েছিল; কিন্তু আমি পুরো ট্যুরের সমস্ত খরচ দেওয়ায়, ওরা খুশিও হয়েছিল অনেক। চিন্তার বাইরের কোনোকিছু পেয়ে গেলে, আমরা সবাই তো খুশিই হই। আমি খুশি হয়েছিলাম সবচেয়ে বেশি, কারণ এই প্রথম আমি মন খুলে বন্ধুদের জন্য কিছু করতে পারলাম।
আমরা রাঙামাটি থেকে বেড়িয়ে এসেছি চারদিন হলো। বেড়ানোর ঘোর এখনও কাটেনি। আমরা প্রতিদিনের আড্ডায় রাঙামাটি নিয়েই গল্প করি। সবাই ঠিক করল, আসছে বছরে যদি সব ঠিক থাকে, শীতকালে আমরা আবার রাঙামাটিতে যাব।
আজকের আড্ডায় আমার মন বসছিল না। শোভন বিষয়টা খেলায় করে বলল, ‘বসন্ত, তোর কী হয়েছে রে? আসার পর থেকেই দেখছি তুই চুপ করে আছিস। কোনও সমস্যা?’
কথাটা আর লুকিয়ে লাভ নেই। কামাল ভাই বাসায় এসে, সব কাগজপত্র দিয়ে গেছে। আগামী মাসের পঁচিশ তারিখের মধ্যে আমাকে চলে যেতে হবে বাংলাদেশ ছেড়ে! আমি যাব স্বপ্নের প্যারিসে! একসময় স্বপ্ন দেখতাম, আইফেল টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলব। ফরাসী দেশে ঘুরে বেড়াব। অথচ আজকে আমার একটুও উত্তেজনা হচ্ছে না, একটুখানিও ভালো লাগছে না। কথাটা ওদেরকে বলতেই, বিস্ফোরণ ঘটল। শোভন চিৎকার করে উঠল, ‘মানে কী? তুই না বললি, যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে গেছে। এখন আবার বলছিস পঁচিশ তারিখ যেতে হবে। ফাইজলামি করিস আমাদের সঙ্গে?’
মুদার বলল, ‘ফাইজলামি করলে ঠিক আছে। তুই কিন্তু সিরিয়াসলি যাওয়ার চিন্তা করিস না।’
‘বিশ্বাস কর তোরা, আমি সত্যি চলে যাচ্ছি। টিকিট কাটা হয়ে গেছে।’ মোবাইল ফোন থেকে ভিসা আর টিকিটের ছবি বের করে, ওদেরকে দেখালাম।
এক হাত থেকে অন্য হাত ঘুরে ঘুরে, মোবাইল ফোন আমার হাতে ফিরে এল। শোভন আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘এতদিন বলিসনি কেন?’
তপু আমার হাত ধরে বলল, ‘যাস না দোস্ত। আমাদের দলটা ভেঙে দিস না।’
এতক্ষণ হৈহল্লা চলতে থাকা আড্ডায়, হঠাৎ নিরবতা নেমে এল। কেউ কোনও কথা বলছে না। ওরা সবাই রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। লোকজনের যাওয়া-আসা দেখছে। মুরাদ সামনের নিম গাছটায় ঘুষি দিয়ে বলল, ‘ভাল্লাগে না, কিচ্ছু ভাল্লাগে না। সবাই খালি দূরে চলে যায়। আম্মা হুট করে মরে গিয়ে, আমাকে এতিম করে দিয়ে গেল। সারাদিন পর, তোদের কাছে এসে শান্তি পেতাম। এখন তোরাও একজন একজন করে চলে যাবি।’
আড্ডা আর জমল না। মন খারাপ নিয়ে যে, যার বাড়িতে রওনা দিল।
————————-
আমি বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি, এমন সময় পেছন থেকে কেউ নাম ধরে ডাকল। তাকিয়ে দেখি, জিনিয়া! এই সময়ে ওকে এখানে দেখে ভীষণ অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেমন আছ জিনিয়া?’
‘ভালো। আপনি ভালো আছেন?’
‘হুম। কোথায় যাচ্ছ?’
‘আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’
অপেক্ষা করছিলে! তুমি একটা ফোন করতে, আমি তো চৌরঙ্গীর মোড়ে ছিলাম। চলে আসতাম।’
‘সমস্যা নাই। আমি এখনই এসেছি। আপনি কেমন আছেন?’
‘যেমন তুমি রেখেছ।’ কথাটা বলে আমি নিজেই বোকা হয়ে গেলাম। এমন কোনও কথা আমি বলতে চাইনি, অথচ মুখ ফসকে এই বেফাঁস কথাটারই বের হতে হলো?
জিনিয়া বলল, ‘আপনাকে অনেকদিন অপেক্ষা করালাম। স্যরি।’
এটা বলতেই সে এখন এসেছে!
‘আমি আসলে সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। আমার ফ্যামিলি এইসব বিষয়ে ভীষণ কড়া। আমি প্রেম করছি জানতে পারলে, আব্বা আমাকে মেরেই ফেলবে। আমি তাই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।’
‘সমস্যা নাই। ফ্যামিলির বিপক্ষে গিয়ে কোনও কাজ করা উচিত না।’
‘হুম। আমি কোনোদিন বাবা-মার কথার বাইরে কোনও কাজ করিনি; কিন্তু….’ কথাটা শেষ না করে, জিনিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘কিন্তু কী? কোনও সমস্যা হয়েছে? সমস্যা থাকলে, আমাকে বলতে পার।’
জিনিয়া লম্বা শ্বাস নিয়ে যা বলল, তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সে বলল, ‘বসন্ত ভাই, আমি অনেক চিন্তা করেছি। অনেক কিছু ভেবে, আমি ঠিক করেছি, আমার মনের কথাটা আপনাকে জানানো দরকার।’
‘বলো, কী বলবে।’
‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি; কিন্তু এবার আর পারছি না। আমার মনে হচ্ছে, আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এবার আর বাবা-মার কথামতো চলতে পারছি না। গত সাতদিন ধরে আমি নিজের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ করেছি। শেষ পর্যন্ত নিজের কাছে হেরে গেছি।’
আমি বুঝতে পারছি না জিনিয়া কী বলতে চাইছে। ও কী আমার সঙ্গে মজা করছে? গত দেড় বছর ধরে সে আমাকে অপেক্ষায় রেখেছে আর আজকে যখন আমার হাতে একমাসও সময় নেই, তখন সে বলছে, সে আমাকে ভালোবাসে! ভাগ্য কী আমার সঙ্গে তামাশা করছে?
‘বসন্ত ভাই, শুনছেন আপনি?’
‘হুম বলো।’
‘আমি তো বললাম।’
‘কী বললে যেন?’
‘আপনি কী অন্য কিছু ভাবছেন? আমি কী চলে যাব?’
‘না, না। অন্য কিছু ভাবছি না। আমি আসলে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না।’
‘আমার নিজেরও বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে মনে হলো, ভালোবাসার কথা কেন লুকিয়ে রাখব? এতদিন ধরে বুকের ভেতর যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। বুঝে গেছি, ভালোবাসি কথাটা না বলা পর্যন্ত এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাব না। তাই আজকে বলেই ফেললাম।’
আমি মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। কী বলা উচিত, বুঝতে পারছি না। জিনিয়া বলল, ‘আপনি কিছু বলবেন না?’
আমি কী বলব? আমি কী জিনিয়াকে বিদেশ চলে যাওয়ার কথাটা বলব? কথাটা শুনে জিনিয়ার কী প্রতিক্রিয়া হবে? জিনিয়া কী চলে যাবে? যে কথাটা শোনার জন্য আমি এতদিন অস্থির হয়ে ছিলাম, আজ সেই কাঙ্খিত কথা শুনে আমার কেমন যেন হতবিহ্বল লাগছে। আমি কী বাসায় গিয়ে পাসপোর্টটা ছিঁড়ে ফেলব? মাথা কাজ করছে না। কী ভয়ানক দ্বিধায় পড়লাম আমি! হায় আল্লাহ, আমার সাথেই কেন এমন হচ্ছে?’………………………..
(চলবে।)