#হৃদমাঝারে – [২২+২৩]
১৫,
অর্ণার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। দূর দূরান্ত থেকে মেহমান আসতে শুরু করে দিয়েছে। মাঝে আর দুটো দিন তারপর পরেই অর্ণা আর রওনার শুভ বিবাহ। মুন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো ওর মোবাইলটা বেজে চলেছে। বিছানার কাছে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আকাশ কল করেছে। মুন কলটা রিসিভ করে বলল,
– কোথায় তুই?
– আমি তো পৌঁছে গেছি তুই কোথায়?
– আমি এখুনি বাসা থেকে বের হবো।
– হোয়াট। আমাকে তাড়া দিয়ে এখন ম্যাডাম নিজেরই কোন খবর নাই। আমি ওয়েট করছি কিন্তু মুন।
– আচ্ছা রাগ করিস না। আমি আসছি।
নবদিগন্ত ফ্যাশন হাউজের সামনে এসে গাড়িটা ব্রেক করলো মুন। গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেল আকাশ ওর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুন আকাশের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশ একটু রাগী চোখে ওর দিকে তাকাতেই মৃদু হাসলো। এক হাতে কান ধরে বলল, সরি।
– ঠিক আছে। এত ফরমালিটি করতে হবেনা, এবার চল ভিতরে যাওয়া যাক।
– হুম।
দুজনে মিলে নব-দিগন্ত ফ্যাশন হাউজের ভিতরে প্রবেশ করে। ফ্যাশন ডিজাইনার অনন্যার ডিজাইন করে কিছু লেহেঙ্গা দেখছে মুন। ডিজাইনার হিসেবে অনন্যা অনেক নাম শুনেছি। আজ নব-দিগন্ত এসে সেটা নিজের চোখে দেখে দেখেও নিলো। প্রত্যেকটা লেহেঙ্গার ডিজাইন ইউনিক। মুন নিজের পছন্দমত তিনটা লেহেঙ্গা নিয়ে নিল একটা নিজের জন্য আর অন্যটা অর্ণার জন্যে। ফ্যাশন হাউজ থেকে বের হয়ে মুন আকাশকে নিয়ে চলে যায় রনি ফ্লাটে। অনন্যা এখন মিষ্টি কে নিয়ে আলাদা একটা ফ্ল্যাটে থাকে ফ্যাশন ডিজাইনিং তারা এখন প্রফেশনাল কাজ। মেয়েটার ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হবে আর আজ সে দেশের অন্যতম নামকরা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। কলিং বেল বাজাতে অনন্যা এসে দরজা খুলে দেয় দরজার ওপাশে মুনকে দেখে বেশ অবাক হয়ে অনন্যা, সাথে বাকরুদ্ধ। উৎফুল্লতার সাথে জিজ্ঞেস করে,
– আপু তুমি এখানে? তুমি আমার বাসা হঠাৎ কি মনে করে! আসো আসো ভিতর আসো। দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় অনন্যা। মুন আর আকাশ ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখতে পেলো মিষ্টি বল নিয়ে খেলা করছে। মুনকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে ওকে জাপটে ধরলো মিষ্টি। মুন মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ওকে আদর করতে লাগলো। তারপর মিষ্টির গাল দুটো টেনে বলল,
– কেমন আছো মামনি?
– আগে বল তুমি এতদিন আসো নি কেন? জানো আন্টি পাপাও আমার কাছে আসে না। আন্টি তুমি আমার পাপাকে বকে দিবে। আর বলবে আমি তাকে খুব মিছ করচি। মিষ্টির কথা শুনে মুন আর অনন্যা একে অপরের দিকে তাকায়। অনন্যা চোখের ইশারায় বলে, মেয়েটা আর পাপাকে ছেড়ে একদমই থাকতে পারে না। মুন মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ঠিক আছে মামনি আমি তোমার পাপাকে বকে দিবো।
– তুমি খুব ভালো আন্টি। মিষ্টু আবারও মুনকে জড়িয়ে ধরে।
ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছে আকাশ মুন আর অনন্যা। মিষ্টি এখন ওর রুমেই আছে। কথার ফাকে অনন্যা জিগ্যেস করলো, আচ্ছা আপু বললে না তো হঠাৎ কি মনে করে তুমি আমার বাসায় আসলে?
মুন একটা শপিং ব্যাগ অনন্যার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, দেখো এটা পছন্দ হয়েছে কি না? অন্যনা শপিং ব্যাগ থেকে লেহেঙ্গা বের করে অবাক হয়ে মুনের দিকে তাকায়। মুন অনন্যার দৃষ্টি বুজতে পেরে বলে, নিজের ডিজাইন করা লেহেঙ্গা উপহার পেয়ে অনুভূতি কেমন হচ্ছে। অনন্যা লেহেঙ্গাটা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, খুব খুব খুব ভালো লাগছে।
– আচ্ছা শুনো তাহলে, পরশু অর্ণার বিয়ে। তুমি কিন্তু কাল সকালে আমাদের বাড়ি চলে আসবে।
– কালকেই? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অনন্যা।
– হ্যাঁ, কেন তোমার কোন প্রবলেম আছে?
– না ঠিক তা নেই। কিন্তু,,,,,
– কোন কিন্তু নয়। কাল সকালে তুমি মিষ্টিকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসছো ব্যাস।
অনন্যার ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে মুন সোজা ওর বাড়ি চলে যায়। আকাশও আসে সাথে। মুন আকাশকে নিয়েই বাড়ি এসেছে। কিন্তু বাড়িতে এসে যখন দেখলো ফারহান রওনাক আরো একটা ছেলে এসেছে ওদের বাসায় তখন মুনের মাথাটা গরম হয়ে যায়। গত কাল রাতে ফারহান কল করে মুনকে। প্রথম দুইবার কল রিসিভ করে না মুন। তারপরেও যখন ফারহান কনট্রিনিউ কলটা করেই যায় বিরক্ত হয়ে মুন কল রিসিভ করে। আর তখনি ফারহান মুনের উপর চেঁচিয়ে উঠে। কল রিসিভ করতে দেরী হয়েছে কেন সেই কইফিয়ত চায়। এতে মুন রেগে যায় আর সে উল্টো ফারহানের উপর চেঁচামেচি শুরু করে। মুনকে রাগাতে পেরে মৃদু হাসে ফারহান।ফারহান ইচ্ছে করে মুনকে রাগিয়ে দিয়েছে যাতে একটু বেশি সময় ধরে মুনের সাথে কথা বলতে পারে।একদিকে মূন রাগে ফুঁসছে আর অন্য দিকে মিটমিট করে হাসছে ফারহান। এভাবে প্রায় অনেকক্ষণ কেটে যায় তারপর হঠাৎ করে ফারহান বলে উঠলো,
– আই লাভ ইউ মুন। প্লিজ আর রাগ করে থেকো না আমার উপর। আমি আমাদের এই দূরত্ব আর নিতে পারছি না। তুমি যা শাস্তি দিবে আমি সেটাই মাথা পেতে নিব। প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে। প্লিজ, প্লিজ কাম ব্যাক।
মুহূর্তে শান্ত হয়ে যায় মুন। শক্ত চোয়ালগুলি ধীরে ধীরে নরম হতে থাকে। অস্ফুটভাবে ভাবে বলে,
– ফারহান, আপনি আবার এসব বলছেন। কতবার বলছি আপনি আমাকে কল করবেন না। রাখছি, এরপর কল করলে আপনি আপনার নামে ইভ টিজিং এর মামলা করবো।
– আমি একজন সৈনিক মেহরিমা। আর তুমি আমার নামে ইভ টিজিং এর মামলা করলেই যে পুলিশ সেটা গ্রহন করবে সেটা নয়। আমরা সাধারণ পাবলিকের নিরাপত্তা দেই।
-বলবো নিজের ক্ষমতার সুযোগ নিচ্ছেন। এখন তো আবার সবাই রক্ষকের নামে ভক্ষক।
– মুন।
– রাখছি।
-ওয়েট। তুমি এখন কলটা কাটবে না আমার কথা আছে তোমার সাথে। আমার কথার অবাধ্য হলে কিন্তু আমি তোমার বাড়ি চলে আসবো।
– আপনি যা খুশি তাই করেন এবার আমি কলটা রাখছি। বলে শেষ করে কল কেটে দেয় মুন। বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পরে।
রাগী দৃষ্টিতে কটমট করে ফারহানের দিকে তাকাতেই ফারহান চোখটিপ দিয়ে ফ্লাইং কিছ ছুড়ে দেয়। আর চোখের ইশারায় বলে, বলেছিলাম না বাড়িতে চলে আসবো। যেটা দেখে মুন ক্ষেপে যায়। আর ওর নানুভাইকে ডেকে বলে, এরা এখানে কি করছে? রওনাক এসে মুনের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, আরে কুল শালিকা। এত হাইপার কেন হচ্ছো। আসলে আমার মামাতো ভাই এসেছে তো তাই ওকে নিয়ে আসলাম অর্ণার সাথে পরিচয় করাবো বলে। তুমি বসো না এখানে আমরা একসাথে আড্ডাদেই। তারপর আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, হাই আমি রওনাক। আকাশ রাওনাকের সাথে হ্যান্ডসেক করে বলল, আমি আকাশ, মুনের বেস্টফ্রেন্ড।
নিজের রুমে বসে পাইচারি করছে আর একা একা বকে চলেছে মুন। দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকের উপর হাত ভাজ করে মুনকে দেখে চলেছে ফারহান। মুনকে প্রান ভরে দেখছিলো। মুনকে দেখতে পেয়ে ফারহানের তৃষ্ণার্থ চোখদুটো যেন শান্ত হয়ে আসছ ক্রমশ। মনে ভীতরে জমে থাকা ভালোবাসার পাহাড় যেন গলে গলে পড়ছিলো। ঠোঁটের কোন মলিন হাসি নিয়ে দেখে যাচ্ছে রাগি মুনকে।
কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে আতকে উঠে মুন। কিন্তু মুনের নানুভাইকে দেখে অধোরে হাসি ফুটিয়ে বলে,কি বলবে নানুভাই?
-বলছি এভাবে দূর থেকে দেখে কি শান্তে পাও বলতো।
– কি করবো বলো, তোমার নাতনীটা তো আমাকে তার কাছে যেতে দিচ্ছে না।
– সে খুব অভিমানি এভাবে ধরা দিবে না। তুমি ওকে বাধ্য করো যাতে সে নিজে তোমার কাছে ছুটে আসে।
– মান,, ভ্রু কুকচে প্রশ্ন করে ফারহান।
#হৃদমাঝারে -[২৩এবং শেষ]
মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুম কেটে যায় মুনের। ঘুমঘুম চোখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে। মুন তাড়াতাড়ি করে কলটা রিসিভ করে। ডক্টরদের এক এক প্রবলেম, কখন যে কোথা থেকে কল আসে বুঝা মুশকিল।
– হ্যাঁ, ডঃ মেহরিমা খান বলছি।
– ম্যাম, আপনি একটু তাড়াতাড়ি আমাদের ব্রাঞ্চে আসতে পারবেন। আমাদের স্যারের এক্সিডেন্ট হয়েছে। প্লিজ ম্যাম যদি দয়া করে আপনি একটু আসতেন। স্যারের মাথা থেকে প্রচুর ব্লাডিং হচ্ছে।
– ব্রাঞ্চ, স্যারের এক্সিডেন্ট! এই আপনি কে বলছেন বলুন তো। আর কোন ব্রাঞ্চের কথা বলছেন?
– ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে পলাশ বলছি। আমাদের স্যার মানে ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিকের একটা এক্সিডেন্ট হয়। এত রাতে কোথায় নিয়ে যাব কিছু বুঝতে পারছিলাম না তাই ব্রাঞ্চেই নিয়ে চলে আসলাম। প্লিজ ম্যাম একবার একটু আসেন।
পলাশের আর কোন কথাই মুনের কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না। ফারহানের নামটা শুনার সাথে সাথে ওর কান থেকে মোবাইলটা পরে গেছে। থো মেরে বসে আছে মুন। ফারহানের এক্সিডেন্ট হয়েছে! কতটা ক্ষতি হয়েছে। আচ্ছা এখন কেমন আছে ফারহান? নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার মধ্যে। কিন্তু মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি উঠে উড়না দিয়ে মাথাটা পেঁচিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পরে মুন।
উঁচু বিল্ডিং এর সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করে মুন। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে চলে যায় বিল্ডিং এর ভিতরে। কলিং বেল বাজাতেই পলাশ এসে দরজা খুলে দেয়। মুন হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। পলাশ দরজা আটকে দিয়ে চলে যায় ফ্লাটের বাইরে। মুন প্রথমেই ফারহানের কেবিনে ডুকে কিন্তু সেখানে ফারহান নেই। পাশের রুম ড্রয়িং লিভিং কোন জায়গাতেই নেই ফারহান। মুনের উত্তেজনা আরো বেরে যায়। এক্সিডেন্ট অবস্থায় কোথায় গেলো ফারহান। পালাশ কে কয়েকবার ডাকলেও কোন সারা মেলে না। ফারহানের বেড রুমে এসে বিছানায় বসে পরে মুন। চোখের কোনে অশ্রুর ভীড়। দু-হাতে মুখ চেপে ধরে বলে উঠে,
– কোথায় তুমি ফারহান। প্লিজ একটা বার আমার ডাকে সারা দাও। আমি আর তোমার থেকে দূরে যাব না। প্লিজ ফারহান, আমি তোমার কাছে থাকতে চাই।
আচ্ছা একবার ছাদে যাব, না অসুস্থ শরীর নিয়ে কি ও ছাদে যাবে। পলাশ বলছিলো প্রচুর ব্লাডিং হচ্ছে তাহলে এই অবস্থায় কোথায় গেলো। ছাদে গিয়ে দেখে আসবো একবার। যদিও জানি ফারহান ছাদে নেই। তবুও মনের শান্তির জন্যে তো যেতেই পারি। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় মুন। দু-হাতে চোখের জল মুছে বেড়িয়ে পরে।
শিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় কানে টিংটং গিটারের শব্দ আসলো। থমকে দাঁড়িয়ে পরে মুন। গিটারের আওয়াজ, কিন্তু এত রাতে ছাদে গিটার বাজাচ্ছে কে? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো মুন। আর তখনি ওর কানে ভেসে এলো একটা গানের লাইন। মুহূর্তেই মুনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এই কন্ঠ এই সুর এটা যে চিরচেনা। ওর চিরচেনা সেই মানুষটার গলার স্বর এটা। দ্রুত শিঁড়ি দিয়ে উঠে যায়। ছাদে পা রাখতেই দেখতে পায় ফারহান ছাদের কার্নিশ ঘসে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধে ঝুলানো গিটারে টুংটাং আওয়াজ করে
গান গাইছে। মুন নিষ্পলক তাকিয়ে রইল ফারহানের দিকে তারপর ছুটে গিয়ে ফারহানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে উঠল ফারহান পরক্ষণেই সে আবার থমকে যায়। এতদিন পর হঠাৎ এমন মুনর স্পর্শে ওর শিরায়-উপশিরায় শিহরণ বয়ে যায়। হার্ট দ্রুত বিট করতে শুরু করে। ভালো লাগায় ছেয়ে যায় মনটা সাথে শরীরটাও। মুন ফারহানের পিঠে মাথা রেখে কান্নারত গলায় বলে উঠে,
-কিভাবে অ্যাক্সিডেন্ট হল তোমার।কোথায় লেগেছে? কোথায় ব্যথা পেয়েছ তুমি ফারহান। প্লিজ দেখাও আমাকে দেখাও। ফারহানকে ছেড়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ায় মুন। ফারহান ততক্ষনে গিটার টা পাশে রেখে মুনর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। তারপর দৃঢ় স্বরে প্রশ্ন করে,
-কেন এসেছো? আমার এক্সিডেন্ট হোক যা খুশি হোক তাতে তোমার কি? তুমি তো চাও আমি তোমার থেকে দূরে থাকি চাওতো। তাহলে আমি মরি বাচি তাতে তোমার কি যায় আসে।
– আমার যায় আসে। হুম আমার যায় আসে বুঝেছো তুমি।
– কেন?
– কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি। সাত বছর আগে যতটা ভালোবাসতাম ঠিক ততটাই ভালো এখনো বাসি। তোমার থেকে ছয়বছর দূরে থেকেও তোমাকে ভুলতে পারিনি আমি। কারন তুমি আছো আমার হৃদমাঝারে। তোমায় ভুলিবো বলো কি করে।
ফারহান দু-পা এগিয়ে মুনের একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দু-হাতে মুনের গাল ধরে ওর মুখটা একটু কাছে এনে বলে, তাহলে এতদিন কেন কষ্ট দিলে আমায়?
– কারন আমি রেগে ছিলাম তাই। তাছাড়া তুমিও তো আমায় কষ্ট দিয়েছো তার বেলা।
– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে সরি। এই দেখো আমি কান ধরছি। আর কখনো তোমায় কষ্ট দিবোনা। তোমাকে অবিশ্বাস করবো না।
– হয়েছে কান ছাড়ো আর ঢং করতে হবে না।
– আমি ঢং করি। বলেই মুনের কোমড় জড়িয়ে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ফারহান। আমি ঢং করি হুম। বলো বলো। ফারহান শক্তকরে মুনের কোমড়টা চেপে ধরে। মুন কোন প্রতিক্রিয়া না করে শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,
– বললে না তো, কিভাবে এক্সিডেন্ট হলো। আচ্ছা তোমার খুব লেগেছে তাইনা।
– না, আমার কোন এক্সিডেন্ট হয়নি। আসলে তোমারকে কিছুতেই মানাতে পারছিলাম না তো তাই একটা ছলনা করতে হলো।
ফারহানের কথা শুনে মুন বিস্ফারিত চোখে তাকায় ওর দিকে। আর খুব রাগী গলায় বলে উঠে তাই বলে এভাবে এত রাতে। আমি কি জানতাম না কি আমার অ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনলে তুমি এত রাতে পাগলের মতো ছুটে আসবে। আর তাছাড়া আমি পলাশকে না করেছিলাম যেন এত রাতে তোমায় খবর না দেয়। পালশও আমার কথা শুনল না আর তুমিও এক্সিডেন্টের কথা শুনে পাগলের মতো ছুটে চলে এলে। এই তুমি এতটাই ভালোবাসো আমায়। কথাগুলো বলার সময় ফারহানের চোখ-মুখে দুষ্টু হাসির দেখা দেখা গেলো। মুন রাগি গলায় বলল, এই একদম হাসবে না বলে দিলাম। ওকে আর হাসবো না। বলেই ফারহান মুনকে তার বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো। আর মুন সেই তার ভালোবাসার মানুষটার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর,
– মুন,
– বলো।
– উইল উই ম্যারি মি?
ফারহানের বুক থেকে মুখ তুলে সামনে তাকায় মুন। চোখের অশ্রুর ভীড় ঠোটে হাসি। এভাবেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ফারহান ও মুনের দিকে তাকিয়ে আছে মুন কি এ্যানসার দেয় সেইটা জানার জন্যে। মুন উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দেয়।ফারহার খুশি হয়ে মুনকে ঝাপটে ধরে বলে, থ্যাংকস মুন। এত আমরা একে অপরের থেকে দূরে থেকে দুজনেই কষ্ট পেয়েছি। আর নয়।এবার আমরা এক হবো। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে। আমরা একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবো।
পরেরদিন ছিলো রওনাক অর্ণার গায়ে হলুদ আর সেদিন ফারহান সবাইকে বলে সেও বিয়ে করতে চায়। আর রাওনাকের সাথে ওর ও সেদিনই বিয়ে হবে। ফয়সাল শিকদার পাত্রীর কথা বললে ফারহান বলে সে মুনকে বিয়ে করবে। তখন আমেনা বেগম বাধা হয়ে দাঁড়ায় আর বলে, আমরা তোর বিয়ে পরে দিবো। এখন রওনাকে বিয়েটা হয়ে যাক তারপর ধুমধাম করে তোর বিয়ে দিবো। এতেও ফারহানের আপত্তি। তার এক কথা সে যখন বলেছে বিয়ে করবে তখন বিয়ে করবেই। আর সবাইকে বলে, তোমরা আমার সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে আমি একা বিয়ে করে নিবো। কি আর করার ফারহানের জেদের কাছে হার মেনে রওনার আর অর্ণার সাথে ফারহান ও মুনের বিয়েও হলো।
ফারহান রুমে ডুকতেই দেখতে পেলো মুন বিছানায় মন মরা হয়ে বসে আছে। ফারহার মুনের কাছে এসে পাশে বসে হাতটা ধরতে গেলে মুন এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলে, একদম ছুবে না আমায়। ফারহান বুঝতে পারলো মুনের অভীমান হয়েছে। না সে বোনের বিয়েতে আনন্দ করতে পেরেছে আর না নিজের বিয়েটা অনুভব করতে পেরেছে। ফারহান মুখ টিপে বলে, তাহলে চলে যাবো।
– হ্যাঁ যাও।
ফারহার কিছু না বলে নিঃশব্দে প্রস্থান করে। মুন বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে একটা হাতাকাটা স্লিপলেস ব্লাউজ পরে পাতলা সাদা শাড়ি পরে নেয়। তারপর এসে বিছানায় শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ পর রুমে আসে ফারহান। বিছানার দিকে তাকাতেই স্মিত হাসে সে। তারপর মুনের কাছে গিয়ে পাশে শুয়ে মুনের কোমড়ে হাত রাখে। ফারহানের হাতটা মুনের শাড়ির বেদ করে উন্মুক্ত পেটে গিয়ে পরে। হালকা কেপে উঠে মুন। ফারহান মুনের কোমড় ধরে টেনে ওকে নিজের সাথে মুনকে।
– এখনো রেগে আছো?
কোন জবাব দেয়না মুন।
– আচ্ছা তুমি খুশি হওনি এই বিয়েতে।
– আমি রেগে নেই।
– কি করে বুঝবো তুমি রেগে নেই।
মুন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ফারহানের মুখের দিকে। ফারহানের মুখের অভিব্যক্তি বেশ উৎসুক। মুন জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে হাসে। আর তারপর ফারহানের ঠোটেট ভাজে নিজের ঠোট বসিয়ে দেয়। ফারহান দু-হাতে মুনকে কাছে টেনে। মুনের হাত বিচরণ করছে ফারহানের পুরো পিঠজুড়ে। ধীরে ভালোবাসর উষ্ণতায় ভরে উঠে দুজন। হাড়িয়ে যায় ভালোবাসায়।
অপরদিকে রওনাক আর অর্ণার চিত্রটাও প্রায় একরকম। তারাও একে অপরকে ভালবাসতে ব্যাস্ত। এই ভালোবাসা ময় রাতে একটা অন্ধকার ঘরে বসে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে আকাশ। চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরছে। ছোটবেলার বন্ধু থেকে কখন যে প্রেমিকাতে পরিনিত হয়েছে মুন সেটা বুঝতেও পারেনি আকাশ। যখন বুঝতে পারলো তখন মুন ফারহানকে মন দিয়ে বসেছে। তাই আর আকাশের মনের কথাটা প্রকাশ করা হলো না। আর আজ সেই ভালোবাসার মানুষটা তার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছে। চোখের সামনে নিজের ভালোবাসা অন্যার হতে দেখে সত্যিই খুব কষ্টের। আধোখাওয়া সিগারেটটা নিচে ফেলে দিলো। ওয়ালেট বের করে সেখানে রাখা মুনের ছোটবেলার ছবিতে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,
– ভালোবাসি তোকে মুন। খুব বেশী ভালোবাসি। জানি তুই অন্যকারো কিন্তু আমার পক্ষে তোকে ভুলা সম্ভব না। আমি না হয় তোকে দূর থেকে ভালোবাসবো। কাছে এসে স্পর্শে ভালোবাসা প্রকাশ করলেও ভালোবাসাটা বেড়ে যায় না। দূরে গেলে ভালোবাসার প্রখরতা বুঝতে পারা যায়। যেমনটা আজ আমি বুঝেছে। আমি তোকে এভাবেই আজিবন ভালোবেসে যাবো। কারন তুই তো আছিস আমার #হৃদমাঝারে।
মুনকে বিদায় দেওয়ার পর থেকেই মিষ্টি খুব কান্না করেছে। বারবার বাবার কথা বলছে। আজ অনন্যার ও মনে পরছে রনির কথা। লোকটা যতই খারাপ হোক সে কিন্তু খারাপ স্বামি নয়। অনন্যাকে তো সেও খুব ভালোবাসতো। মিষ্টিকে বিছানায় শুইয়ে বারান্দায় চলে আসে অনন্যা। রনির সাথে কাটানো কিছু মুহূর স্মৃতিচারণ করলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুন। কি হবে সেদিন, যখন রনি জেল থেকে ছাড়া পারে। অনন্যা কি রনিকে ভালোবসে কাছে টেনে নিবে নাকি খুনি ভেবে ওকে দূরে সড়িয়ে দিবে।
সমাপ্তি,,,,,