হৃদমাঝারে পর্ব-০৭+০৮

0
1029

#হৃদমাঝারে
নাঈমা জান্নাত
পর্ব-০৭+০৮

শুক্রবার মানেই স্বস্তির দিন। সারা সপ্তাহ ধরে অফিসে খাটা মানুষদের প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেওয়া দিন। সারা সপ্তাহের সব ক্লান্তি থেকে মুক্তির জন্য বিশ্রাম নেয়। তেমনি মেঘের কাছেও শুক্রবার বিশ্রামের দিন। তাই তো বেলা নয়টা বেজে গেছে সে এখনও শুয়ে আছে। শুভ্রতা এসে দু’বার ডেকে গেছে কিন্ত সে উঠার নামই নিচ্ছে না।
‘আমি আর একবার ডাকবো এর পরও যদি না উঠা হয় তবে আজকে আর নাস্তা পাওয়া যাবে না!’ শুভ্রতা খানিক জোরে মেঘকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে। কিন্ত মেঘের কোনো ভাবান্তর নেই। সে আলসেমি করে একবার এপাশ আবার ওপাশ করছে। শুভ্রতা এবার ভীষণ চটে গেলো ওড়নাটা কোমড়ে বাধাই ছিলো এখন আবার আরেকটু শক্ত করে রান্নাঘর থেকে রুমের দিকে যায়। আজ এই লোকের আলসেমি সে ভাঙ্গাবেই। ‘আজকে ওই লোকটার একদিন কি আমার একদিন।’

রুমে গিয়ে দেখে মেঘ উপুড় হয়ে একপা বালিশের উপর দিয়ে শুয়ে আছে। শুভ্রতা তা দেখে নাক মুখ কুঁচকে বলে,,’আজ খাবেন না বললেই হতো! আরামের ঘুম হারাম করে নাস্তা বানালাম কেনো?’
এবারও মেঘের দিক থেকে উত্তর এলো না। শুভ্রতা বুঝলো মেঘ তাকে তাতিয়ে দেওয়ার জন্য এসব করছে। কিন্ত তাও রাগ দমন করতে পারছে না। শুভ্রতা এবার আর কোনো কথা না বলে ড্রয়িংরুম থেকে একগ্লাস পানি এনে অর্ধেকটাই মেঘের উপর ঢেলে দিলো। ফলস্বরুপ মেঘ দ্রুত উঠে বসতে নেয়। শুভ্রতা একটু ঝুঁকে পানি ঢেলেছিলো যার কারণে মেঘ হঠ্যাৎ উঠে ব্যালেন্স হারিয়ে মেঘের উপরই পড়ে যায়। আকস্মিক কান্ড দু’জনেই থ হয়ে যায়। মেঘ শুভ্রতার দিকে ভ্রু নাচিয়ে তাকিয়ে রইলো। শুভ্রতা তা দেখে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,’আগামী ৫ মিনিটের মধ্যে আপনাকে টেবিলে না দেখলে খবর আছে!’ কথাটা বলে শুভ্রতা ড্রয়িংরুমের দিকে যেতে নিলে পেছন থেকে মেঘের আওয়াজ ভেসে আসে,,’বউ বউ গন্ধ পাচ্ছি যেনো!’
‘ঘরে বউ থাকলে বউ বউ গন্ধ না পেয়ে কি ভাবি ভাবি ফিল পাবেন?’ শুভ্রতা চোখ গরম করে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে। মেঘ ভয় পাওয়ার ভান করে বলে,,’ও আমি তো ভুলেই গেছি। আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসছি!’ মেঘ ওয়াশরুমে যেতেই শুভ্রতা ফিক করে হেসে দেয়। ও নিজেই মেঘের সাথে ফ্রি হতে চায়। তাই অনেক কথাই নিজ থেকে বলে। তাও যদি সম্পর্কটা ভালো হয়!
_____________________
‘শুভ্র তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। আমি চেঞ্জ করে আসছি পাশের রুমের থেকে।’
মেঘ কথাটা বলে পাশের রুমে চলে যায়। আজ যেহেতু ছুটির দিকে তাই মেঘ ঠিক করেছে আজ হালকা ঘুরাঘুরি করবে। শুভ্রতা তো সারাদিন রুমেই বসে থাকে। শুভ্রতাও নিজেদের সম্পর্কটাকে আলাদা একটু টাইম দেওয়ার জন্য রাজি হয়,তার চেয়েও বড় কথা সারাদিন এই চার দেয়ালের মাঝে বসে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে। খাটের উপর ব্ল্যাক আর গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশনে শাড়ি,গোল্ডেন কালারের স্টোনের চুড়ি,আর গাজরা। এইসবটা মেঘ নামাজ পড়ে আসার সময় এনে দিয়েছে। আর শুভ্রতাকে এগুলো পড়ার জন্যই বলেছে। সবটাই শুভ্রতার খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আর দেরী না করে ঝটপট শাড়ি গায়ে জড়িয়ে নিলো। কিন্ত নতুন শাড়ি হওয়ায় শুভ্রতার পড়তে অসুবিধে হচ্ছে। নিচের কুঁচি গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেই শাড়িতে টান পড়তে নিচে তাকালো শুভ্রতা মেঘ অতি যত্নে কুঁচিগুলো ঠিক করে দিচ্ছে।

কুঁচি ঠিক করা শেষে উঠে দাঁড়িয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে,,’কিছু জিনিসের অধিকার ব্যক্তিগত ভাবে শুধুই আমার!’
মেঘের কথায় কি যেনো ছিলো। শুভ্রতা তাতে মুগ্ধ হয়। একদৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে রয়। তার শাড়ির সাথে মিলিয়েই পাঞ্জাবী পড়েছে,হাত কালো ঘড়ি। মেঘকে অন্যদিনের তুলনায় আজ যেনো একটু বেশী সুন্দর ঠেকছে শুভ্রতার কাছে।
‘তুমি কাজল পড়ো না?’ মেঘের কথায় শুভ্রতার ঘোর কাটে। মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বুঝায়। ‘আমি কাজল পড়তেই পারি না। আগে রুহিপু আইলাইনার দিয়ে কাজ সারিয়ে দিতো!’ শুভ্রতার কথায় মেঘ ড্রেসিংটেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। সবকিছু ঘেটে একটা কাজল ফেলো। তারপর শুভ্রতার মুখ খানিকটা উঁচিয়ে অতি যত্ন সহকারে কাজলটা পড়িয়ে দেয় যেনো লেপ্টে না যায়। তারপর নিজে নিজেই বলে,,’পারফেক্ট!’
শুভ্রতা মেঘের কান্ডে খানিক অবাক হলেও মন জুড়ে ভালো লাগা ছুঁয়ে গেলো। লোকটা মাঝে মাঝে হুটহাট এমন কাজ করে বসে যাতে ভালো লাগা না ছুঁইয়ে থাকা যায় না।
‘আচ্ছা তোমার আর কিছু বাকি থাকলে করে শেষ করো। আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি।’ মেঘের কথায় শুভ্রতা মাথা নাড়িয়ে বলে,,’আর কিছু না। শুধু গাজরাটা লাগানো বাকি!’ মেঘ ছটফট গাজরাটা হাতে নিয়ে শুভ্রতার মাথায় লাগিয়ে দেয়। এরপর আয়নার সামনে গিয়ে শুভ্রতার পাছনে দাঁড়িয়ে বলে,,’একেবারে পারফেক্ট!’ কিন্ত কথাটা শুভ্রতার সাজকে নাকি ওদের দুজনকে একসাথে বলেছে সেটা ঠিক বুঝলো না শুভ্রতা। তাই নিজের মনেই বলে,,’আসলেই আপনি পারফেক্ট মেঘ!’
__________________
রিক্সার পাশাপাশি বসে আছে দুজনে। মেঘের এতোটা কাছে বসে আছে দেখে শুভ্রতার অস্বস্থি হচ্ছে না। নিজের স্বামীর পাশে বসে বাইরের খোলা আকাশ দেখছে শুভ্রতার বেশ ভালোই লাগছে। মেঘের বাইক থাকলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ রিক্সায় ছড়বে। কোথায় যাচ্ছে জানে না শুভ্রতা। কিন্ত যেখানেই যাক না কেনো তার এই সময়টা বড্ড ভালো কাটছে। ঢাকা শহর মানেই হাজারো মানুষের ভীড়। আর শুক্রবারের দিন গুলোতে ঘুরার জায়গা গুলোতে যেনো একটু বেশীই ভিড় হয়। কিন্ত এর মাঝে শুভ্রতার একহাত ধরে বেশ সাবধানেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘ। যেতে যেতে কোলাহল থেলে বেরিয়ে নির্জণ সরু রাস্তার সামনে থামলো দু’জন। এদিকটা কোলাহল একটু কম। যার কারণে বেশ ভালো লাগছে। দু’ধারেই গাছ লাগানো। মৃদু বাতাসে দুজনেই হেটে চলেছে। শুভ্রতার হাত এখনও মেঘের হাতের মুঠোয়। হাতটা ছাড়তে চাইছে না নাকি ছাড়তে ভূলে গেছে জানা নেই শুভ্রতার।
মনে মনে বলে,,’হাতটা শক্ত করে ধরে রাখুন মেঘ। আমার হাতটা ধরার মতো যে কেউ নেই। আমি যে বড্ড একা!’
দু’জনের কারো মুখেই কোনো কথা নেই কিন্ত একে অপরকে দারুণভাবে ফিল করছে।
______________________
ঘুরতে গিয়ে বাইরের টুকিটাকি জিনিস খেয়ে শুভ্রতার পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। মেঘ অনেকবার বারণ করেছে কিন্ত কে শুনে কার কথা। এখন পুরো খাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মেঘ দু’বার করে বকে গেছে। কিন্ত এখন বকে কি হবে। হঠ্যাৎ করে গা গুলিয়ে আসতেই ওয়াশরুমে চলে যায়। মেঘ ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে এসে শুভ্রতাকে না দেখে বিচলিত হয়। কল কেটে বিছানায় ছু্ঁড়ে মারে। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজে এগিয়ে যায়। শুভ্রতা মাথায় হাত দিয়ে বেসিনে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ দ্রুত এগিয়ে যায় সেদিকে। কোনোমতে শুভ্রতাকে ধরে এনে বিছানায় বসায়। তারপর নিজেও শুভ্রতার পায়ের দিকটার কাছে বসে দুহাতে শুভ্রতার মুখ ধরে বলে,,’শুভ্র! তুমি ঠিক আছো শরীর খারাপ লাগছে?’
‘আমি ঠিক আছি। একেতো আমি বাইরের খাওয়া খেতে পারি না,তার উপর বেশী খেয়ে ফেলেছি তাই বদহজম হয়ে গেছে! আপনি চিন্তা করবেন না। বসুন, আমি আপনার খাবার দিচ্ছি। গরম করে দিলেই হবে।’

শুভ্রতার কথায় মেঘ ধমক দিয়ে বলে,,’চুপ! বেশী কথা বলো। চুপ’চাপ শুয়ে থাকো। আমি মেডিসিন দিচ্ছি। আর আমার খাবার আমি নিয়েই খেতে পারবো।’
শুভ্রতারও ভালো লাগছিলো না যার জন্য আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ শুয়ে রইলো।

#চলবে?

#হৃদমাঝারে
( ৮)
#নাঈমা_জান্নাত

অতিরিক্ত কোনো কিছুই শরীরের পক্ষে ভালো না। অতিরিক্ত খাওয়া হোক বা ব্যায়াম দু’টোই শরীরের ক্ষতি করে। যা শুভ্রতা কাল রাতে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কোনোদিন এইসব খাবে না,অতিরিক্ত তো দূর। ফিটফিট করে চোখ খুলে নিজের একেবারে কাছে কারো অনুপস্থিতি টের ফেলো। দপ করে চোখ খুলে ফেলে শুভ্রতা। কাল রাতে অনেকক্ষণ অবধি মেঘ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না। চোখ খুলে নিজের অবস্থান থেকে শুভ্রতা খানিক হকচকিয়ে গেলো। কারণ সে মেঘের বাহুডোরে আবদ্ধ। মেঘের একটা হাত শুভ্রতার মাথার উপর,আরেকটা হাত শুভ্রতার পিঠের নিচে। মেঘ হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। শুভ্রতা মেঘের বুকের উপরই শুয়ে ছিলো। কিন্ত এতো কাছে কখন এলো ও! আপাদত সেটা না ভেবে মেঘের কষ্টটা আগে চোখে পড়লো। ‘ইসস লোকটা কাল সারা’রাত এভাবে ঘুমিয়ে ছিলো? নিশ্চয়ই ভালো’ভাবে ঘুমাতে পারে নি। শুভ্রতা তুই একেকটা কাজ এমন করিস না!’ নিজের মনে নিজেকে শ’খানেক গালি দিয়ে আলতো’ভাবে মেঘের হাত সরিয়ে দিলো,যেনো মেঘের ঘুম না ভাঙ্গে! কিন্ত শুভ্রতার এতো সাবধান হওয়া কোনো কাজে দিলো না। মেঘের ঘুম ভেঙ্গেই গেলো।

মেঘ চোখ মেলে বলে উঠে,,’শুভ্র! কোনো সমস্যা? শরীর খারাপ লাগছে?’
মেঘের অস্থিরতা দেখে শুভ্রতা মেঘকে শান্ত করার জন্য বলে,,’আমি ঠিক আছি। উত্তেজিত হবেন না। আপনার ঘুম যাতে না ভাঙ্গে তাই কতো সাবধানে ছিলাম তাও আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সরি! আর রাতেও নিশ্চয়ই আপনার অনেক সমস্যা হয়েছে?’
শুভ্রতার কথায় মেঘ আস্তে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,,’আমরা দু’জনে স্বামী-স্ত্রী! স্বামী অসুস্থ হলে যেমন স্ত্রী সেবা করে,তেমনি স্ত্রী অসুস্থ হলে তার সেবা করাটাও কর্তব্য। তাই সমস্যা হয়েছে কি হয় নি এসব ভেবে লাভ নেই। তোমার নাস্তা বানানোর প্রয়োজন নেই।বাসায় হালকা যা আছে সেটা দিয়েই চলে যাবে। আমার রেডি হতে হবে অফিসে যাওয়ার জন্য। তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে এসো তারপর আমি যাচ্ছি!’
মেঘের কথায় শুভ্রতার অশান্ত মন কিছুটা স্বস্তি খুঁজে ফেলো। কিন্ত মেঘের বলা ‘স্বামী-স্ত্রী’ কথাটা মনে গেঁথে রইলো। হয়তো আবারও সে অতীত এসে হানা দিলো। শুভ্রতা আর ভাবতে চাইলো না!

রেডি হয়ে টেবিলে এলো মেঘ। শুভ্রতা মেঘের বারণ স্বত্তেও হালকা নাস্তা বানিয়ে ফেললো। মেঘ তা দেখে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে,,’তোমাকে বারণ করেছিলাম না আজ নাস্তা না বানানোর জন্য। আমি বাইরে খেয়ে নিতাম।’
শুভ্রতা চায়ের মগ দু’টো টেবিলে রেখে বসতে বসতে বলে,,’আপনি কতো খাবেন আমি বুঝি না? কাজের সময় খাওয়া হুঁশ থাকবে। আমি বাসায় থাকতে দেখতাম আম্মু সবসময় আব্বুকে সকালে ভারী নাস্তা দিতো। নইলে দুপুর ছাড়া আব্বুর আর খাওয়ার সময় হতো না। আর শুনুন,আমার আহামরি কোনো শরীর খারাপ হয় নি। আ’ম ওকে! এবার খেয়ে অফিস যান!’
শুভ্রতার কথায় মেঘ আর কোনো শব্দ উচ্চারণ করলো না। ভদ্র ছেলের মতো খেয়ে নিলো। তারপর বেরিয়ে দরজা অবধি যায়। শুভ্রতা সেদিকে এক’দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো কিছু আশা করে আছে। কিন্ত মেঘকে পেছন ফিরতে না দেখে নিজেই উল্টো দিকে ফিরে গেলো। কিন্ত কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছন ফিরে তাকানোর সাথে সাথে মেঘ তার ওষ্ঠদ্বয় শুভ্রতার কপালে ছুঁইয়ে বাইরের দিকে চলে গেলো। যেনো মুহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেলো। শুভ্রতা তা দেখে লজ্জার সাথে সাথে হেসে উঠলো। লোকটা এই কয়দিন এইরকম বিহেভ করছে! হঠ্যাৎ ফোনে একটা মেসেজের নোটিফিকেশন আসলো। শুভ্রতা চেক করে দেখে মেঘের মেসেজ,,’সাবধানে থেকো। আমি জলদি ফেরার চেষ্টা করবো!’ শুভ্রতা আলতো হেসে নিজের কাজে চলে গেলো।
_____________________
অনবরত কলিংবেলের আওয়াজে অতিষ্ঠ শুভ্রতা। রান্নার সময় বিরক্তি একদম কাম্য নয়। তাও চুলার আঁচটা কমিয়ে দরজার দিকে গেলো। এইসময় বাসায় কেউ আসে না। মিতালী আসলেও সে বিকেল বেলায় আসে। কারণ এইসময়ে সবাই নিজেদের কাজে ব্যাস্ত থাকে। আবারও কলিংবেল বাজার শব্দ এলো। শুভ্রতা খানিক চিল্লিয়ে বলে,,’আসছি!’
অতঃপর দরজার ওপাশের মানুষটিকে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। শুভ্রতা হা করে তাকিয়ে আছে। তা দেখে মানুষটি বলে উঠে,,’আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে থাকবি না বাসায় ডুকতে দিবি!’
রুহির কথায় শুভ্রতা মুখ বন্ধ করে ফেলে। তারপর বলে,,’তুই কেমন আসলি? আর আমাকে আগে বলিস নি কেনো?’
‘কেনো রে বললে কি ফুলের তোড়া নিয়া দরজায় দাঁড়াই থাকতি? উফফ আল্লাহ কি গরম। ভেতরে ডুকতে দে না!’ রুহির কথায় শুভ্রতা মাথা নেড়ে বলে,,’হ্যাঁ হ্যাঁ ভেতরে আয়!’ তারপর দুজন মিলে ভেতরে ডুকে। রুহির অবস্থা দেখে শুভ্রতা পাশের রুম দেখিয়ে বলে,,’ওই রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর কথা বলছি!’ গরমে রুহির বেহাল দশা হয়ে গেছে। তাই আর দেরি না করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। শুভ্রতাও রান্নাটা শেষ করে নেয়!
_______________
‘এবার বল। সবাই কেমন আছে? আর তুই হঠ্যাৎ?’ শুভ্রতার কথায় রুহি মুখ বাঁকিয়ে বলে,,’কেনো খুশি হস নি?’ শুভ্রতা রুহির বাহুতে থাপ্পড় মেরে বলে,,’আন্দাজি কথা রাখ!’
রুহি স্বশব্দে হেসে বলে,,’তোর জামাই আসতে বলছে। তুই তো আর দাওয়াত দিবি না!’
‘উনি আসতে বলেছেন? কেনো?’ শুভ্রতা কথাটা বলে নড়েচড়ে বসলো।
‘আসলে মেঘ ভাই আমাকে তোর বই,খাতা,নোটস সব আনতে বলেছে!’
‘আমার বই খাতা দিয়ে উনি কি করবেন?’
‘ওমা তুই পড়বি না? তার চেয়েও বড় কথা তোর এতোদিনের পাবলিকে পড়ার ইচ্ছে?’ রুহির কথায় শুভ্রতা খানিক চমকালেও বলে,,’আমি আর পড়বো না!’
শুভ্রতার কথায় রুহি খানিক জোরে বলে,,’হেভ ইউ গোন মেড শুভ্রা? পড়বি না মানে কি?’
‘পড়বো না মানে পড়বো না। নিজেকে প্রমাণ করার আর কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। যাদের কাছে আমার ইচ্ছের আমার কোনো মূল্য নেই,তারা শুধুমাত্র আমার কাছে থেকে মুক্তি চায়। তাদের কাছে নিজেকে কি প্রমাণ করবো? আমার কোনো ইচ্ছেই নেই!’ শুভ্রতা কথাগুলো বলে থামলো। শুভ্রতার কথার বিপরীতে রুহি চুপ করে রইলো। কারণ মেয়েটা বড্ড জেদী! কি করে রাজি করাবে সে! রুহির ভাবনার মাঝেই মেঘের গলা শুনা গেলো,,
‘তুমি ওদের কাছে কেনো নিজেকে প্রমাণ করবে? তুমি নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করবে। যারা তোমাকে অবজ্ঞা করেছে তাদের দেখিয়ে দেবে জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। তুমি ভালো আছো। কারো অপমান আঁকড়ে তুমি বেঁচে থাকবে কেনো? জীবনটা তোমার সেটা সুন্দর ভাবে বাঁচার অধিকারও তোমার আছে। আমি কি তোমাকে কোনো কিছুর জন্য জোর করেছি? তোমার কাছে স্বামীর অধিকারের দাবী জানিয়েছি? তোমাকে সংসারের বেড়া জালে আটকে দিয়েছি?’

মেঘের কথার উত্তরে শুভ্রতা মাথা নেড়ে না বুঝায়। মেঘ আবার বলে,,’তবে তুমি কেনো অন্যের জন্য নিজের স্বপ্ন নষ্ট করবে? তুমি যদি এক সপ্তাহ না খেয়ে পড়ে থাকো তবে কেউ এসে তোমার জিজ্ঞাস করবে না খেয়েছো কিনা। তাহলে তুমি অন্যদের কথাকে এতো প্রায়োরিটি দাও কেনো?’
শুভ্রতা এবার চুপ করে রইলো। রুহি শুভ্রতার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,,’ভাইয়া ঠিক বলেছে শুভ্রা! তুই নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যায়। ভাইয়ার মতো এমন একটা সাপোর্ট থাকতে কেনো পিছ’পা হচ্ছিস। প্লিজ বোন!’
‘কিন্ত এই দু’মাসের মাঝে আমি প্রিপারেশন কিভাবে নেবো?’
শুভ্রতার কথায় রুহি,মেঘ দু’জনের মুখেই হাসি ফুটে উঠে। মেঘ এগিয়ে এসে বলে,,’মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে। তুমি তো স্ট্রং গার্ল। তুমিও পারবে!’
শুভ্রতা এবার মেঘের দিকে তাকালো। লোকটা ঘামে পুরো ভিজে গেছে। মেঘ মাঝে মাঝে লাঞ্চ করতে বাসায় আসে। মিটিং থাকলে আসতে পারে না। তাই শুভ্রতা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,,’ফ্রেশ হয়ে আসুন। খাবার দিচ্ছি! আপনাকে তো আবার যেতে হবে!’
মেঘ মাথা নেড়ে বলে,,’আজকে হাফ ডে নিয়েছি!’
‘বস দিলো?’ শুভ্রতার কথায় মেঘ বলে,,’বিয়ের সময় যে ছুটি তিনদিন দিয়েছে তাই আরকি!’
‘এখন তো বউয়ের সাথে একা থাকা চলবে না। আমি আছি কিন্ত ব্যাঘ্রা দেওয়ার জন্য!’ রুহির কথায় শুভ্রতা খানিক লজ্জা ফেলো। ‘তোমরা থাকো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আর এই নাও (শুভ্রতার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে) এটা রুহি আর তোমার জন্য। তুমি অল্প খাবা। নইলে আবার কালকের অবস্থা হবে!’ কথাটা বলে মেঘ রুমে চলে যায়। শুভ্রতা আরো একবার মুগ্ধ হয়!

#চলবে?

#হৃদমাঝারে
বোনাস
#নাঈমা_জান্নাত

‘স্বপ্ন সবাই দেখে। কারোটা বাস্তবে রুপ নেয়,কারোটা সময়,পরিস্থিতির চাপে বা চেষ্টা না করার জন্য থেমে যায়। কিন্ত আমাদের উচিৎ নিজেদের সবটা দিয়ে চেষ্টা করে যাওয়া। মানুষ চেষ্টা করলে সব সম্ভব। এক্ষেত্রে হয়তো মেন্টালি সাপোর্ট প্রয়োজন। তবে তার চেয়েও বেশী নিজের মধ্যে থাকা জেদ। যদি একবার সংকল্প করো তবে জয়ী হবেই হবে!’ একবারে কথাগুলো বলে থামলো মেঘ। শুভ্রতা মাথা নিচু করে টেবিলে রাখা বই পত্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেঘ এডমিশন টেস্টের অনেকগুলো বই এনে জড়ো করেছে। মডেল কোশ্চেন,প্রশ্নব্যাংক ইত্যাদি! কিন্ত সবকিছুর মাঝে শুভ্রতার মনে সংশয় রয়ে যায় সে কি আদৌ পারবে! সব ভাবনা নিজের মাথায় রেখেই শুভ্রতা মেঘের মুখের দিকে তাকালো। মুখটা খুব উজ্জ্বল হয়ে আছে,দেখে মনে হচ্ছে অনেক বড় কিছু পেয়ে গিয়েছে যার জন্য মুখ তৃপ্ত। শুভ্রতা কি পারবে মেঘের মুখের এই উজ্জ্বলতাটা বজায় রাখতে। পারবে না কেনো? নিশ্চয়ই পারবে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নেয় শুভ্রতা।
‘তুমি এই চ্যাপ্টারটা কমপ্লিট করো আমি চা নিয়ে আসছি!’ মেঘের কথায় বাধ সাধে শুভ্রতা।
‘আপনি কেনো যাবেন? আমি আনছি বসুন!’
‘লাগবে না। তুমি মন দিয়ে পড়ো। এখন থেকে প্রতিটা সেকেন্ড কাজে লাগাতে হবে!’ মেঘ আর কিছু বলতে না দিয়ে উঠে চলে গেলো।

সন্ধ্যে নেমেছে অনেকক্ষণ। রুহি সে বিকেলেই তার খালামণির বাসায় গিয়েছে। শুভ্রতা অনেকবার বলেছে কিন্ত থাকতে রাজি হয় নি। থাকলে নাকি শুভ্রতা আড্ডা দিবে পড়া হবে না। মেঘ আজ সারাদিন বাসায় থেকে শুভ্রতার পিছনে বই নিয়ে পড়েছে। মাঝে একবার লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে। দু’জনেই এক গ্রুপের হওয়ায় মেঘ শুভ্রতাকে নানান ইনফরমেশন দিচ্ছে। গাইড লাইন দেখাচ্ছে। কাল কোচিংএ এডমিশন করাবে। দেরী হলেও যতটুকু পাওয়া যায় ততোটুক উপকারী। শুভ্রতা কলম কামড়ে কথাগুলো ভাবছিলো। এর মাঝেই মাথায় গাট্টা পড়তে ‘উফফ’ করে উঠে। মাথা ঢলে পেছন ফিরে দেখে মেঘ রাগি চোখে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতা কেবলা মার্কা হাসি দিলো। মেঘ তা দেখে চোখ গরম করে বলে,,’এটা তোমার পড়ার নমুনা? আগামী ৩০ মিনিটের মাঝে তুমি এই চ্যাপ্টার পড়ে শেষ করবে। আমি কোশ্চেন করবো!’ কথাটা বলে মেঘ ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে বসে পড়ে।
‘ইসস বললেই হলো আরকি? কি প্যারা। ও আল্লাহ হেল্প মি! এই লোকটা টিচার হলে নিশ্চয়ই ছেলে মেয়েদের লাইফ তেজপাতা করে ছাড়তো!’ নিজের মনে বিড়বিড় করে শুভ্রতা।
‘শুভ্র!’ পেছন থেকে মেঘ আবারও ধমকে উঠে। শুভ্রতা খানিক কেঁপে উঠে বলে,,’পড়ছি তো। চেঁচাচ্ছেন কেনো?’ কথাটা বলে শুভ্রতা নিজের পড়ায় মন দিলো।
পাক্কা ত্রিশ মিনিট কাটায় কাটায় মেঘ খাট থেকে নেমে শুভ্রতার টেবিলের পাশে এসে দাঁড়াল। শুভ্রতা খাতার পাতায় ফুল,লতা আঁকছে। মেঘের উপস্থিতি পেয়ে চোর ধরা খাওয়ার মতো করে ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। মেঘ শান্ত চোখে শুভ্রতার দিকে তাকায়,যেটা শুভ্রতার ভয় আরো দশগুণ বাড়িয়ে দেয়। মেঘ গম্ভীর কন্ঠে বলে,,’আসলে কি তোমার পাবলিকের এপ্লাইয়ের জন্য কোনো ইচ্ছে বা মাথাব্যথা আছে? তোমাকে আমি পড়তে বলেছিলাম তুমি ফুল আঁকছ! আমি এবার তোমার পড়া ধরব যদি না পারো শুভ্রতা! তোমার খবর আছে!’ মেঘ বেশ ধমক ধমকে কথাগুলো বলে। কিন্ত কথার মাঝে ‘শুভ্রতা’ উচ্চারণটা শুভ্রতার কাছে খারাপ লাগলো। মেঘ তো সবসময় শুভ্র বলে সম্বোধন করে। তবে কেনো শুভ্রতা ডাকবে? উঁহু শুভ্রতার প্রতিবাদি মন তা মানতে নারাজ! তীব্র বিদ্রোহ শুরু হলো মনের মাঝে। তাও মনের কথা মনেই চেপে রাখলো।
মেঘ টেবিলের উপর থেকে বইটা হাতে নিয়ে একে একে প্রশ্ন করতে লাগলো। শুভ্রতা সরলভাবেই সব প্রশ্নের উত্তর দিলো। এতে মেঘ বেশ অবাক হলো! কিন্ত শুভ্রতাকে কিছু বললো না।
শুভ্রতা নিজেই বলে,,’একমাস আগেই আমার এক্সাম শেষ হয়েছিলো। খুব বেশী গ্যাপ যায় নি। আর আমি এডমিশন টেস্ট দেবো বলে ইন্টারের প্রথম থেকেই সবটা ভালো ভাবে আয়ত্ব করার চেষ্টা করেছি। এখন ঝালাই করছি। বাট আমি জেনারেল লাইনে উইক আর মেথ এ। ওইটা ভালো’ভাবে ট্রাই করা লাগবে!’
মেঘ শুভ্রতার প্রতিটা কথাই খুব মন দিয়ে শুনলো। তারপর বইটা টেবিলে রেখে বলে,,’আই নো দ্যাট। তাই আলাদা বই এনেছি। ওগুলো পড়বা। ম্যাথ ভালোভাবে করবা। তুমি শুধুই ভয় পাচ্ছিলে। এখন খাবে চলো। খেয়ে আবার পড়বে!’ মেঘ কথাটা বলে শুভ্রতার হাত ধরে টেবিলে নিয়ে যায়। পুরো খাবার সময়টাই মেঘ শুভ্রতা জ্ঞান দিয়েছে,আর শুভ্রতার খাওয়ার সাথে সাথে জ্ঞানটাও হজম করেছে।
________________
গভীর রজনী। সবাই তন্দ্রাচ্ছন্ন। কিন্ত সবার মাঝে শুভ্রতার দু’চোখে ঘুম নেই। অজানা কারণে খুব কষ্ট হচ্ছে মনের ভিতর। পাশেই মেঘ শুয়ে আছে। হয়তো সেও ঘুমে! কিন্ত শুভ্রতার কেমন যেনো অশান্ত লাগছে। তাই বিছানা ছেড়ে বেলকনির দিকে পা বাড়াল। বাইরে কৃত্রিম আলো। আকাশে চাঁদ নেই। হয়তো অমাবস্যা চলছে। শুভ্রতার খুব একটা ভয় করছে না। আকাশের পাণে তাকিয়ে রয়। তার মনে কি চলছে সেটা একমাত্র সেই জানে। হঠ্যাৎ দমকা বাতাস বয়ে গেলো। শুভ্রতার আধখোপা করে বাধা চুল’গুলো খুলে গেলো। এর মাঝেই কাঁধে ছোঁয়া অনুভব করলো। না চাইতেও শুভ্রতা বেশ ভয় পেয়ে গেলো। দুরুদুরু বুকে পেছন ফিরে চাইলো মেঘ দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতা একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলে,,’আপনি এখানে? ঘুমান নি?’
‘সেম প্রশ্নটা আমার তোমাকে করার কথা! না ঘুমিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?’

‘আচ্ছা মেঘ আপনি সবটা জেনেও আমাকে কেনো বিয়ে করলেন?’ আকস্মিক শুভ্রতার প্রশ্নে মেঘ বিচলিত হলো না। যেনো সে জানতো শুভ্রতা এরকম প্রশ্নই করবে! তাই স্বভাব সুলভ হাসি বজায় রেখে বলে,,’আমি তোমাকে প্রথমদিন কি বলেছিলাম?’
‘কি?’ শুভ্রতার প্রশ্নে মেঘ দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকে দু’হাত গুঁজে বলে,,’There are less to every wine! অর্থটা কি বলো?’
‘চাঁদের গায়েও কলঙ্ক আছে!’ শুভ্রতার উত্তরে মেঘ ক্ষীণ হেসে বলে,,’রাইট! তাই বলে কি আমরা চাঁদ ভালোবাসি না? চাঁদের উজ্জ্বলতার কাছে ওই দাগটা নিতান্তই তুচ্ছ! তেমনি তুমি এমন ভাবে একদিন নিজের উজ্জ্বলতা ছড়াবে যাতে ওই দাগটা দেখা না যায়। কেউ যেনো সেটাকে তোমার উজ্জ্বলতার চেয়েও বড় করে না দেখে!’
মেঘের কথায় শুভ্রতার ঠোঁটে কেমন যেনো তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো। না সে এবার ভূল মানুষকে ভরসা করে নি। শুভ্রতা বলে,,’আপনি জানতে চাইবেন না আমার অতীত?’
‘যে অতীত কষ্ট বাড়ায় সে অতীত না শুনাই মঙ্গল!’ মেঘের কথার বিপরীতে শুভ্রতা বলে,,’কিন্ত আমি যে আজ সবটা আপনাকে বলতে চাই!’
মেঘ তা শুনে কিছু বললো না। হয়তো চাইছে শুভ্রতা বলে হালকা হোক! চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ ভেবে শুভ্রতা নিজের অতীত বলতে শুরু করে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে