#হৃদমাঝারে
#নাঈমা_জান্নাত
পর্ব-০৩+০৪
নতুন একটা দিন এক নতুন সূচনা। কারো জীবনে নিয়ে আসে সুখের বার্তা,আবার কারো জীবনে দুঃখের কালো ছায়া। আকাশের বুকে উদীয়মান সূ্র্যের দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্রতা। একটু আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। নতুন জায়গায় তার ঘুমাতে খুব অসুবিধে হয়। একদমই ঘুম আসতে চায় না। কাল সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছে সকালে হালকা চোখ লেগে এসেছিলো কিন্ত আবার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ঘুম থেকে উঠে মেঘকে পাশে না পেয়ে খানিক অবাক হয়। এতো সকালে কোথায় গিয়েছে। সারারুম খুঁজে ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ পেয়ে বুঝলো মেঘ ওয়াশরুমে। মেঘের কান্ড কারখানা শুভ্রতার কাছে কেমন যেনো ঠেকছে। লোকটা খাপছাড়া মনে হচ্ছে। লোকটা সব জেনে শুনে বিয়ে করলো,এখন আবার কেমন যেনো এভোয়েড করছে। লোকটা কি শুভ্রতাকে দয়া করছে? কিন্ত সে তো দয়া চায় নি। সে চেয়েছিলো একটু ভালোবাসার আশ্রয়। কিন্ত সেটা মেঘের কাছ থেকে চায় নি। কারো কাছ থেকে আশাও করে নি। তাও কি হচ্ছে,কেনো হচ্ছে! শুভ্রতা আকাশের দিকে চেয়ে রইলো।
‘উঠে পড়েছো? যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। একটু পরেই নিচ থেকে ডাক পড়বে।’ হঠ্যাৎ করে মেঘের কন্ঠ পেয়ে শুভ্রতা খানিক চমকালো। হয়তো গভীর ভাবনায় মত্ত ছিলো বলে। শুভ্রতার মনে মনে ইচ্ছে করছিলো মেঘকে অনেক কথা বলতে। কিন্ত কেনো জানি বলতে পারছে না। তবে কি সে তার ভাগ্য মেনে নিয়েছে? হয়তো তাই।
‘কি হলো কি ভাবছো?’ আবারও মেঘের কন্ঠ শুনে শুভ্রতার ভাবনার অবসান হলো। কিন্ত এবার চমকালো না। মাথা নেড়ে আলমারির দিকে চলে গেলো। কাল রাতেই কিছু জামা কাপড় আলমারিতে রেখে দিয়েছিলো। সেখান থেকে একটা শাড়ি নিতে গেলে পেছন থেকে একটা মোলায়েম কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
‘শাড়ি পড়ার প্রয়োজন নেই। জামা পরো।’ শুভ্রতা কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে,,’কিন্ত আমি তো নতুন বউ। আমি যতটুক জানি নতুন বউদের শাড়ি পড়া লাগে। নইলে সবাই কি বলবে!’
মেঘ এগিয়ে এসে আলমারি থেকে একটা গোলাপি থ্রি-পিছ বের করে শুভ্রতার হাতে দিয়ে বলে,,’কে কি বললো এতো শুনে কাজ নেই তোমার। মানুষের কাজই হচ্ছে অন্যকে কথা শুনানো। আর কেউ কিছু বললে বলবা আমার স্বামী বলেছে পড়তে। ওকে? নাউ গো!’
মেঘ কিছুটা আদেশের সুরে কথাটা বলে। কিন্ত শুভ্রতার মনে ওই দুটো শব্দ ‘আমার স্বামী’ তে আটকে গেছে। ঠোঁট কামড়ে মনে মনে বলে,,’হ্যাঁ আমার স্বামী! তবে কিছু মাস আগেও এখানে অন্য একজনের থাকার কথা ছিলো।’ শুভ্রতা আর কিছু বললো না। ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হলো।
_____________________
মেঘদের বাসা ভর্তি মেহমানে গিজগিজ করছে। এর মাঝেই কাজিনদের মধ্যমণি হয়ে বসে আছে শুভ্রতা। পাশে অবশ্য রুহি আছে। তাও অস্বস্থি জেনো কাটছে। অবশ্য মাঝখান দিয়ে অনেকে জামা পড়া নিয়ে কথা বলে গেছে। গ্রামের বাড়ি তার উপর নতুন বউ কথা তো হবেই। কথা শুনতে শুনতে শুভ্রতা যেনো হাপিয়ে উঠেছে।
‘কি দিনকাল এলো রে বাবা। বিয়ের পরেরদিন এতো মেহমানের সামনে নতুন বউ থ্রি-পিছ পড়ে ড্যাং ঢ্যাং করে ঘুরছে। বলি ও মোহনা (মেঘের মা) নতুন বউকে কিছু বলো।’
একজন মাঝবয়সী মহিলা কথাটা বলে উঠে। শুভ্রতা মাথা নিচু করে ফেলে। ইচ্ছে করছে জবাব দিতে কিন্ত নতুন হিসেবে নিজের ভদ্রতার খাতিরে চুপ করে আছে। মেঘের মা কিছু বলতে নিবে তার আগেই পেছন থেকে মেঘের কন্ঠস্বর ভেসে আসে,,
‘আরেহ ফুফি যে! তা আমার বউকে নিয়ে তোমার এতো সমস্যা কেনো? আমার বউ শাড়ি পড়ুক,জামা পড়ুক আমার বউয়ের ইচ্ছে। তাছাড়া তোমার ছেলের বউয়ের মতো শাড়ি পড়ে শরীর দেখানোর চেয়েও জামা পড়াই উত্তম।’
মেঘের কথায় মহিলাটি চুপসে গেলো। কথায় আছে না,,’আকাশের দিকে থু থু ফেললে,সেটা নিজের গায়েই এসে পড়ে।’
মেঘের কথায় শুভ্রতার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। মেঘ যতবার ‘আমার বউ’ বলেছে সারা শরীরে আলাদা এক কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। মেঘ এবার শুভ্রতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,,’তোমাকে না বলেছিলাম কেউ কিছু বললে বলবে ‘আমার বর আমাকে পড়তে বলেছে!’ কথা কি কানে যায় না নাকি?’
‘আহ মেঘ। মেয়েটাকে বকছিস কেনো। নতুন মানুষ বুঝে নি সবটা। আর আপা শাড়ি নিয়ে এতো মাতামাতি করার কিছু নেই। যে যেটা কম্পোর্টেবল ফিল করে। বাচ্চা মেয়ে শাড়ি সামলাতে পারবে নাকি। আর একটু পরে এমনিতেই পরা লাগবে। শুভ্রা আসো নাস্তা খেয়ে নেবে। এই তোরাও আয় (কাজিনদের উদ্দেশ্য করে)’
শুভ্রতা মেঘের দিকে আড়চোখে তাকালো। লোকটা কেমন গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতার মাথায় নতুন চিন্তা এলো,,’আচ্ছা লোকটা কি খেয়েছে? নাকি না খেয়েই এভাবে দাঁড়িয়ে আছে।’ শুভ্রতার নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো। দুদিনের চেনা একজন লোকের জন্য এতো চিন্তা? তবে কি এটাও পবিত্র সম্পর্কের জোর!
____________________
মেঘ আর শুভ্রতা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকটা ছবি তোলা হচ্ছে। মেঘ শুভ্র রংয়ের একটা পাঞ্জাবী পড়ে আছে যার মাঝে রঙিন সুতোর কাজ। শুভ্রতা একটা গোলাপি রাঙা শাড়ি পড়ে আছে। দুজনকেই বেশ মানাচ্ছে। ছবি তোলার মাঝেই শুভ্রতার কানে ভেসে আসে একটি কথা,,’এই মেয়ে পক্ষ চলে এসেছে।’ অন্য মেয়ে হলে হয়তো এখন দৌড়ে চলে যেতো। কিন্ত শুভ্রতা তা করবে না। মেঘ এগিয়ে সেদিকে গেলো। একে একে শুভ্রতার মা,বাবা,জেঠু,জেম্মা,বাকি সবাই এলো। শুভ্রতাকে দেখে তার মা,জেম্মা জড়িয়ে হাল জিজ্ঞাস করলো। শুভ্রতা ছোট্ট করে শুধু ‘ভালো।’ বললো। এতে শুভ্রতার পরিবার আশাহত হলো। বিশেষ করে শুভ্রতার মা-বাবা। মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। মেয়ের জীবনে একটা খারাপ ঘটনা ঘটে গিয়েছে যার কয়েকমাস না যেতেই মেয়েটা সামলে উঠার আগেই আরেকটা সম্পর্কে জুড়ে দিয়েছে। কিন্ত এখন যে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে।
‘বেয়ান আমরা শুভ্রতা আর জামাই কে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে চাই। আপনারা অনুমতি দিন।’ বিদায়ের সময় শুভ্রতার বাবা কথাটা বলে। শুভ্রতার যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই। কিন্ত মুখ ফুটে বলতে পারছে না। চুপ করে রুহির পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
‘আসলে আমাদের এখানে লোক কম। মা-বাবা একা সামলাতে পারবে না। আজকে এদিকটা সামলে আমরা কাল যাবো।’ মেঘের কথায় শুভ্রতার মুখে হাসি ফুটে উঠে। কিন্ত শুভ্রতার বাবা,জেঠু আবারও বললেন। কিন্ত কাজ হলো না। অবশেষে ঠিক হলো কাল যাওয়া হবে। সবাই চলে গেলো।
____________________
সারাদিনের ক্লান্তিতে শুভ্রতার শরীর খানিকটা কাহিল হয়ে পড়েছে। মেঘের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। কিন্ত মেঘ না আসাতে খাটে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে সুন্দরভাবে খাটে শুয়ে থাকতে দেখে খানিক অবাক হয়। খাটের একপাশে তার ব্যাগ গুছানো। মেঘ এখন নিজের দুটো জামা নিচ্ছে। শুভ্রতা কিছুই বুঝতে পারছে না ব্যাগ ফ্যাক করছে কেনো। বোকার মতো জিজ্ঞাস করে ফেলে,,’ব্যাগ ফ্যাক করছেন যা?’
শুভ্রতার কথায় মেঘ হাত থামিয়ে বলে,,’আজ না তোমার বাসায় যাওয়ার কথা!’
শুভ্রতার মনে পড়লো। তারপর মিনমিন কন্ঠে বলে,,’আমি গুছিয়ে নিতাম। আপনার কষ্ট করা লাগতো না।’ মেঘ কিছু বললো না। নিজের কাজে মন দিলো।
ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা। সকালবেলায় বাসা এসেছে। এখন বিকেল। সবাই খেয়ে ভাত ঘুম দিচ্ছে হয়তো। মেঘও রুমে ঘুমাচ্ছে। শুভ্রতা তাই ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
‘আপু!’ পেছন থেকে ভাইয়ের কন্ঠ শুনে শুভ্রতা তাকালো। হাতে একটা বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভাইয়ের বয়স নয়। বেশ ছোট। শুভ্রতা হাটু গেড়ে বসে বলে,,’কিছু বলবি?’
স্নিগ্ধ হাতের বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলে,,’এটা তোর। আমার সব ম্যাজিক বল এখানে। তুই তো চলে যাবি। তাই এটা তোকে দিলাম।’
ভাইয়ের কথায় শুভ্রতা খানিক হাসলো। ছোট ভাইটাও বুঝলো সে চলে যাবে। শুভ্রতা ভাইকে আদর করে বোতলটা নিয়ে বলে,,’থ্যাংস ভাই। শুন আমার রুমের ড্রয়ারে একটা চকলেটের বক্স আছে। পুরোটা তোর। নিয়ে নে।’
‘ইয়ে থ্যাংকিউ আপু। আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।’ কথাটা বলে স্নিগ্ধ চলে যায়।
‘তুমি তো খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পারো।’ শুভ্রতার পাশে এসে দাঁড়ায় মেঘ। শুভ্রতা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,,’আপনাকে কে বললো?’
‘আসলে স্নিগ্ধ রুমে গিয়ে ড্রয়ার থেকে চকলেট নিচ্ছিলো। তখন একটা পেপারে দেখলাম। জিজ্ঞাস করার পর বললো তুমি এঁকেছো।’
মেঘের কথায় শুভ্রতা আলতো হেসে বলে,,’ওহ আচ্ছা। আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। ‘
‘সব শুনবো। আপাদত আমার কিছু বলার আছে। আমি পরশু ঢাকার টিকেট কেটেছি। একটু পরে আমরা বাসায় ফিরে যাবো। যা গোছগাছ আছে করে নাও।’ কথাটা বলে মেঘ হাটা দিলো। পেছন থেকে শুভ্রতা ডাকলো মেঘের কানে গেলো না,নাকি পাত্তা দিলো না কে যানে।
#চলবে?
#হৃদমাঝারে
#নাঈমা_জান্নাত
(৪)
আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘের ছড়াছড়ি। যেকোনো সময় আকাশের বুক ছিঁড়ে বৃষ্টি নামবে। বাইরে জোরে বাতাস বইছে। বাতাসের তালে গা ভাসিয়ে দু একটা পাতা উড়ে বেড়াচ্ছে। এতে যেনো তারা খুব আনন্দ পাচ্ছে। খুব সুক্ষ্মভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে শুভ্রতা। মনে মনে চাইছে সেও যদি এভাবে গা ভাসিয়ে উড়ে যেতে পারতো! কিন্ত নাহ সেসব কিছুই সম্ভব না। একটু আগেই নিজের বাসা থেকে চলে এসেছে। আসলে সেটা কি নিজের বাসা ছিলো? উঁহু সে আঠারো বছরের অতিথি ছিলো। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর আরেক গন্তব্যে পা দিয়েছে। এখানেও সে অতিথি কারণ মেয়েদের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। বিয়ের আগে বলা হয় ‘বাপের বাড়ি’ বিয়ের পর ‘শ্বশুর বাড়ি!’
দরজা খোলার আওয়াজে ভাবনার ছেদ ঘটে শুভ্রতার। ও বাসা থেকে এসে শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করে রুমে এসেছিলো। মেঘ এসেই কোনো একটা কাজ আছে বলে বেরিয়েছে। হয়তো মেঘ এসেছে। শুভ্রতার পেছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে হলো না। লোকটার ব্যবহার খুব অদ্ভুত লাগে। যত কম দেখবে ততো কম কৌতুহল হবে। আকাশ পাতাল ভাবার মাঝে কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া ফেলো। পেছন ফিরে দেখে মেঘের মা দাঁড়িয়ে আছে।
শুভ্রতা কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে বলে,,’আপনি? আমাকে ডাকতে পারতেন। আমিই যেতাম!’
শুভ্রতার কথায় মেঘের মা মন ভুলানো হাসি দিয়ে বলে,,
‘আমি এমনি এসেছি। আমার মেয়েটা কি করছে তা দেখার জন্য!’
‘আসুন। বসুন না।’ শুভ্রতা উনাকে নিয়ে খাটে বসতে বসতে বলে।
“এই আসুন বসুন না বলে মাও তো ডাকতে পারো।’
শুভ্রতা মেঘের মায়ের কথায় মাথা দুলিয়ে বলে,,’আচ্ছা। আসলে প্রথম প্রথম তো একটু আনইজি লাগছে।’
‘হ্যাঁ। আমি বুঝতেই পারছি। বাসার জন্য মন খারাপ করছে নিশ্চয়ই। আমিও যখন বিয়ে করে এই বাসায় প্রথম এসেছি। আমারও খুব কষ্ট হতো। ছটফট করতাম কখন নিজের বাসায় যাবো। কিন্ত সময়ের সাথে সাথে এখন সব মানিয়ে গেছে। কতোগুলো দিন হয়ে গেলো নিজের বাপের বাড়ি দেখি না। সংসারের চাপে আর যাওয়া হয়ে উঠে না।’
মেঘের মায়ের কথার বিপরীতে শুভ্রতা আর কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। উনি বলছেন বলুক,হয়তো অনেকদিনের জমানো কথা আজ বলতে চাইছেন। এরপর শুভ্রতার মা মেঘের ছোট বেলার কাহিনী বললেন,শুভ্রতা খুব মন দিয়ে শুনলো সবটা। একমাত্র ছেলে অনেক আদরেই বড় হয়েছে।
‘মা!মা! কই তুমি?’ মেঘ তার মাকে ডাকতে ডাকতে বাড়িতে প্রবেশ করে। তা শুনে মেঘের মা হেসে বলে,,
‘দেখেছ ছেলের কান্ড। ও সবসময় এইরকম দরজা থেকে হাক ছাড়তে ছাড়তে ডুকে। আচ্ছা চলো দেখে আসি।’ কথা বলে মেঘের মা বাইরের দিকে গেলো। শুভ্রতাও পিছু পিছু গেলো।
‘কি বলছিস কি? কাল সকালেই ঢাকা যাবি মানে?’
‘মা আমার অফিসের কাজ পড়ে গেছে। বুঝো না প্রাইভেট কোম্পানি যখন বলবে গাধার মতো ছুটে যেতে হবে!’ মেঘের কথায় মেঘের মা-বাবার মন খারাপ হয়ে গেলো। ছেলের বিয়ের দুদিন না যেতেই চলে যাবে। মেঘ অনেক পরিশ্রমের পর মা-বাবাকে মানালো। রাতে কারো ঠিক মতো খাওয়াই হলো না।।
‘আপনি কিসের চাকরি করেন?’ শুভ্রতার কথায় মেঘ ওর দিকে ফিরে বলে,,’সেকি নিজের বর কি করে সেটাও জানো না?’
‘জানলে নিশ্চয়ই জিজ্ঞাস করতাম না!’
‘আমি প্রাইভেট অফিসে জব করি। ম্যানেজার পদে। আমার আন্ডারে ১৫ জন আছে।’
‘আচ্ছা।’ সেরাতে দুজনের মাঝে আর কোনো কথাই হলো না। ঘুমিয়ে গেলো দুজনে।
________________
বাস ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। কিন্ত ভোর ৪:০০ টায় কেনো টিকেট কাটলো এটাতেই শুভ্রতার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। তাই সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে মেঘের বাহুডোরে আবিষ্কার করে হকচকিয়ে গেলো শুভ্রতা। ঘুমের ঘোরে মেঘের এতো কাছে এসেছে ভাবতেই শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এভাবে কি প্রতিদিন রাতেই হয়? কই ঘুম থেকে উঠে তো নিজেকে ঠিক ভাবেই পায়। তবে কি আজ বাসের সিটের কারণ? উত্তর মিলে না শুভ্রতার। মেঘের কাছ থেকে সরে এসে বাইরে মনোনিবেশ করে। পুরোটা সময় শুভ্রতার সকল কান্ড শান্তভাবে দেখলো মেঘ। কিছুই বললো না।
সাততলা একটা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে সিএনজি থামলো। শুভ্রতা পুরো বিল্ডিংয়ে চোখ বুলিয়ে নিলো।
‘এসো।’ মেঘ একহাতে ব্যাগ অন্যহাতে শুভ্রতার হাত মুঠোয় নিয়ে ভেতরের দিকে অগ্রসর হলো। লিফট দিয়ে চতুর্থ তলায় গিয়ে ফ্ল্যাটের ভেতর ডুকলো দুজনে। দুটো বেডরুম,একটা ড্রয়িংরুম আর কিচেন নিয়ে বাসাটা।
‘পছন্দ হয়েছে বাসা?’
মেঘের কথায় শুভ্রতা মাথা দুলিয়ে বলে,,’বেশ ভালোই।’
‘আচ্ছা ওদিকে ওয়াশরুম তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি এদিকটা গুছাচ্ছি। আর আলমারিতে তোমার ড্রেস আছে।’ মেঘের কথায় শুভ্রতা দেখিয়ে দেওয়া রুমে চলে গেলো।
বেরিয়ে এসে দেখে মেঘ খাবার নিয়ে বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বাইরে থেকে আনিয়েছে। নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। ‘এসো খেয়ে নিবে!’ কথাটা বলে মেঘ খাবার বেড়ে শুভ্রতাকে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।
‘শুনো বুয়া এসে টুকিটাকি কাজ করে দিয়ে যাবে,তুমি শুধু রান্নাটা করবে। আর তোমার যেভাবে ভালো লাগে ঘর সাজিয়ে নিয়ো। কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে আমি এনে দেবো। বাসায় কিছু নেই। আমি একটু বাজারে যাচ্ছি। দরজা আটকে দিয়ে রেস্ট নাও।’
মেঘের কথায় শুভ্রতা না চাইতেও বলে ফেলে,,’কখন আসবেন?’
‘বাজার শেষ করেই চলে আসবো। সাবধানে থেকো। প্রয়োজন পড়লে কল দিও। আসছি।’ মেঘ বিদায় নিয়ে চলে গেলে শুভ্রতা দরজা লাগিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। ক্লান্তিতে ঘুম এসে ভীড় করলো।
#চলবে?