#হৃদমাঝারে [০২+০৩]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।
সূর্যিমামা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। চারদিকে লাল আভা ছড়িয়ে আছে। ধূসর কালো ছায়া নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে সন্ধা নেমে আসছে। বেলকনিতে বসে চোখ বন্ধকরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মুন। চোখদুটো ভিষন জ্বালা করছে। ফারহানের বলা কথাগুলো বারবার কানের কাছে ভেজে উঠছে। মুন মনে মনে বলে উঠলো,
– তুমি এই শহরের ছেলে সেটা জানতাম কিন্তু তাইবলে এতটা কাছে থাকবে সেটা জানতাম না। পৃথীবি গোল এটা জানতাম তাই বলে ঘুরেফিরে আবার তোমার সম্মুখীন হতে হলো। আমি তো ভেবেছিলাম আর কোন দিন তোমার সাথে দেখা হবে না ফারহান। ফারহান আর মেহরিমার কোন দিন দেখা হবে না। কিন্তু এটা কি হয়ে গেলো। এতগুলা বছর পর আবার কেন তোমার সম্মুখীন হতে হলো আমাকে। বিশ্বাস করো ফারহান যদি জানতাম দেশে ফিরে তোমার সম্মুখীন হতে হবে তাহলে আমি কখনোই দেশে ফিরতাম না।
চোখ মেলে তাকায় মুন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস নেয়। তখনি ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। স্কিনে ভেসে থাকা নামটা দেখে পরপর কয়েকবার শ্বাস নিয়ে গলার ভয়েজ ঠিক করে নিয়ে কল রিসিভ করে সে। ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
– তাহলে কাল থেকে নার্সিংহোমে জয়েন করছো।
– জ্বি আংকেল। আমি জয়েনিং লেটার পেয়ে গেছি। কাল থেকেই জয়েন করবো।
– সাবধানে থেকো মা।
– জ্বি আংকেল। তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর কল রেখে আবারো চোখ বন্ধকরে বসে থাকে মুন। আর তখনি ওর কাছে আসে অর্ণা আর ওর নানুভাই। অর্ণা এসে মুনের কাঁধে হাত রাখতেই চোখ মেলে তাকায় সে। নানুভাই প্রশ্ন করে,
– এই কি সেই ফারহান! যার কারনে তুই,,,,,
– হ্যাঁ। এই সেই ফারহান। মুন অর্ণার গালে হাত রেখে বলে, আমার কারনে তোর বিয়ে ভেঙেছে তো তাহলে আমিই সব ঠিক করে দিবো। কথা বলবো আমি ফারহানের সাথে।
– তার কোন দরকার নেই মুন। যে বা যারা আমার মুনের নামে মন্দ কথা বলে যেখানে তোর কোন সম্মান নেই সেই বাড়িতে আমি বিয়ে করবো না। মুন তুই আমার খালাতো বোন হলেও তোকে আমি আমার নিজের ছোট বোন মানি। তুই তো আমার সোনা বোন রে মুন। তোর অস্মান আমি কি করে মেনে নেই বলতো।
– ফারহান তো ভুল কিছু বলে নি। ও যেটা দেখেছে সেটাই বলেছে। সত্যিই তো আমি,,,
– চুপ, একদম চুপ।
মুনকে থামিয়ে বলে অর্ণা। তুই কেমন সেটা আমরা সবাই জানি। মুন মৃদু হেসে অর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি কথা বলবো ফারহানের সাথে। তখন মুনের নানুভাই বলে উঠে,
– কথা বলে দেখ কি হয়। তুই তো ওকে ভালো চিনিস।
নানুভাইয়ের কথা শুনে স্মিত হাসে মুন। তারপর তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,
– চিনতে আর পারলাম কই নানুভাই। সেই তো নতুন প্রেমের অনুভূতি তারপর প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুন। তারপর ওদের সকলের সাথে নিচে চলে যায়।
২,
এদিকে অফিসে বসে পেপার ওয়েটটা হাতে নিয়ে সেটা পর্যবেক্ষন করছে আর মিটমিট করে হাসছে ফারহান। ওর থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে পলাশ। সে ফারহানে এমন রহস্যজনক হাসির কারন খুঁজায় ব্যাস্ত। তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে সে ফারহানের দিকে। মনে মনে বলে,
– স্যার এভাবে হাসছে কেন? রহসের গন্ধ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে রহস্যটা ভিতর থেকে আসছে। পলাশ নাকটা খোলা রাখ।
ফারহান পেপার ওয়েটটা রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো। হাতে থাকা মোবাইলটা এপিট ওপিঠ ঘুড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
– ডঃ মেহরিমা খান তোমাকে তো আমার কাছে আসতেই হবে। আমি জানি তুমি কল করবে। আমিও যে তোমার কলের অপেক্ষাতেই আছি। তোমাকে তো এত সহজে ছাড়বো না আমি।
নিজের মনে কথাগুলো বলছিলো ফারহান। আর তখনি ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। স্কিনে ভেসে থাকা আননোন নাম্বার দেখে পৈশাচিক হাসি হাসে ফারহান। তারপর কল রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে,
– ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিক বলছেন?
– ডঃ মেহরিমা খান। আমি জানতাম তুমি কল করবে কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি সেটা জানতাম না। তা বলো কি জন্যে কল করেছো।
– বিকাল ঠিক চারটায় সামনের ওই তিন রাস্তার মোরে আমি অপেক্ষা করবো। আপনি আসবেন।
– এই শুনো তুমি কি আমাকে অর্ডার করছো। ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো। আমি যাবো না।
ফারহানের গলার স্বর কিছুটা মোটা। এতে ওপাশে থাকা লোকটার ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে বলে উঠলো,
– আমি শুধু টাইমটা জানিয়ে রাখলাম।
– এই শোন ডন্ট ট্রাই টু বি ওভার স্মার্ট।
– ও আমার জন্ম থেকেই ছিলো। আপনি আসবেন কি আসবেনা সেটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছে। আমি অপেক্ষা করবো। কথাগুলো বলেই কল কেটে দেয় মুন। ফারহান কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না। রাগে মোবাইলটা টেবিলের উপর ছুড়ে মারে। বড় বড় করে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। রাগে ফুসছে আর কেবিনের ভিতরে পাইচারি করছে। কি ভাবেটাকি নিকেজে। আমার মুখের উপর কল কেটে দিলো। ছাড়বো না আমি তোমাকে ডঃ মেহরিমা খান ওরফে মুন।
দূর থেকে ফারহানের এই ছটফটানি লক্ষ করছে পলাশ। সে এতক্ষণ ভ্রু কুচকে কপালে চিন্তার কয়েকটা ভাজ ফেলে তাকিয়ে ছিলো ফারহানের দিকে। এবার সে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে ফারহানের কেবিনে ডুকে পরে।
– স্যার কেসটা কি?
– ওটা তুমি বুঝবে না। যাও নিজের কাজ করো।
– আচ্ছা স্যার এই মেহরিমাটা কে? কই আগে তো এর নাম শুনিনি। গার্লফেন্ড নাকি?
পলাশের কথা শুনে হচকচিয়ে উঠে ফারহান। শীতল দৃষ্টিতে পলাশের দিকে তাকালেও পরক্ষনে তার দৃষ্টি কঠিন হয়ে উঠে। পলাশ। ধকম দিয়ে উঠে ফারহান। তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার সিনিয়র।
– তাতে কি স্যার, আমি তো আপনার ভাইয়ের মতো তাইনা স্যার। স্যার একটা প্রশ্ন করি,
– হুম বলো।ফারহান তার মাথায় হাত রেখে চেয়ারে বসে পরে। ও জানে পলাশ এখন বকবক শুরু করবে। তবে তার এই প্রশ্নের ভান্ডার কখন শেষ হবে সেটা জানা নেই তার।
পলাশ নিজেই বকবক করে যাচ্ছে আর ফারহান পুরনো কিছু ফাইল দেখছে। কথা বলার মাঝে পলাশ ডাকলে ফারহান ফাইলে মাথা রেখে শুধু বলে যাচ্ছে তুমি বলো আমি শুনছি।
চারটা বাজার কয়েক মিনিট আগে ফারহান অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লো। পলাশ সাথে আসতে চাইলে ওকে বারণ করে ফারহান। পলাশ হা করে তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে। এটা কোন ফারহান? একবছর ধরে সে ফারহানের সাথে কাজ করছে। ফারহানের সব কাজের সঙ্গী পলাশ, আর আজ ফারহান পলাশকে তার সাথে নিচ্ছে না। ফারহান বেড়িয়ে গেলে পলাশ গালে হাত দিয়ে বসে মনে মনে বলে,
– মনে হচ্ছে রহস্যটা বেশ গভীর। পলাশ নাক কান চোখ সবটাই খোলা রাখতে হবে তোকে। বাই দ্যা ওয়ে মেয়েটা কে?
গন্তব্যে পৌঁছাতেই ফারহান দেখতে পেলো মুন একটা ছেলের সাথে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ফারহান গাড়ি থেকে নেমে ওদের কাছে আসতেই ছেলেটা চলে যায়। মুন তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। আর তখনি তার চোখ আটকে যায় ফারহানের উপর। ইউনিফর্ম পড়ে বেশ স্মার্ট লাগছে ওকে। কয়েক সেকেন্ডের জন্যে হলেও মুন স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়। ফারহান তার হাত দুটো বুকের উপর ভাজ করে মুনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো অতঃপর বলল,
– ছেলেটা কে ছিলো? নিউ বয়ফেন্ড।
– আমি কাউকে কইফিয়ত দিতে বাদ্য নই।
– এই তুমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে পারো না। তা কি এমন দরকার পড়লো হুম। ডঃ মেহরিমা খান নিজে আমাকে ডাকলো।
ফারহানের চোখ-মুখে বেশ কৌতুহল। মুন ফারহানের দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। পরপর কয়েকবার শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
– আমাদের মাঝে যা হয়েছে তার জন্যে অর্ণা আর আপনার ভাইয়ের বিয়ে বন্ধ করাটা কি খুব জরুরি। মানছি আমি খারাপ খুব খারাপ। কিন্তু অর্ণা, ও সত্যিই অনেক ভালো। আমার ভুলের জন্যে আপনি পরিবারের এতগুলা মানুষের সিদ্ধান্ত নাকচ করতে পারেন না।
– কি বলতে চাইছো তুমি?
– আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিবেন না। প্রথমবার কোন ছেলেকে অর্ণার পছন্দ হয়েছে। হ্যা মানছি এটা এরেঞ্জ মেরেঞ্জ ছিলো। অর্ণা কোন দিনও সং সেজে পাত্র পক্ষের সামনে বসতে চাইতো না। আর বিয়েতো দূরের কথা। ও বিয়েতে রাজি হয়েছে কারন রওনাককে দেখে ওর পছন্দ হয়েছে তাই। তাছাড়া পরিবারের সকলে যেখানে রাজি সেখানে আপনার আর সমস্যার জন্যে এই বিয়েটা ভাঙা ঠিক হবে না। আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিবেন না প্লিজ।
মুন ফারহানের সামনে হাত জোর করে নিলো। ফারহান তার আঙ্গুলের সাহায্যে কপালের কিছু অংশ স্লাইড করে নিলো। ওর মুখে এক অদ্ভুত হাসি, যেটা মুন দেখতে পেলো না। অতঃপর সে পকেটে হাত গুজে বলল,
– ডঃ খান, আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারি তবে আমার শর্ত আছে। তুমি যদি আমার শর্ত মেনে নাও তবেই হবে এই বিয়ে।
– বলুন আপনার কি শর্ত?
– প্রথম শর্ত, তুমি আমার বাড়ি যেতে পারবে না। আর দ্বিতীয়ত্ব, কখনো আমার সংস্পর্শে আসার চেষ্টাও করবে না। সুযোগ পেলেও না।
ফারহানের কন্ডিশন শুনে মৃদু হাসে মুন। অতঃপর বলে,
– আজকে ছয় বছর পর দাঁড়িয়ে আমার জিবনে নিজেকে এত ইম্পরট্যান্ট দেওয়ার কিছু নেই। বাড়িতে যাওয়ার কথা দিতে পারছি না যেহেতু আপনার বাড়িতে আমার বোনের বিয়ে হচ্ছে তাই ও বাড়ি যাবনা তার গ্যারান্টি দিতে পারবো না। তবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আমি কখনোই আপনার সংস্পর্শে আসবো না। সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি ছয় বছর আগে ওটা বয়সের ইনফিসিয়ন ছাড়া আর কিছুই ছিলো। এখন এটা বুঝতে পারি। তাই খুব হাসি পায়। এতে যদি কেউ মনে করে আমি চরিত্রহীন থার্ডক্লাস তাতে আই ডোন্ট কেয়ার।আমার সিদ্ধান্তটা আমি জানিয়ে দিলাম। বাকিটা আমি আমার বাড়ির লোকদের থেকে জেনে নিবো।
কথাগুলো বলে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না মুন। লম্বা পা ফেলে চলে যায়। মুনের চলে যাওয়ার পর ফারহান বলে উঠে,
-ইনফিসিয়েশন। তারপরের হেসে উঠে।
৩,
বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে চার বছরের একটা কন্যাসন্তান। ওর পাশেই দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে এক অর্ধবয়স্ক মহিলা। দরজার ওপাশে কি চলছে সেটা সে ভালোই আন্ধাজ করতে পারছে। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে বেড়িয়ে এল একটা যুবক। বয়স তার আটাইশ ঊনত্রিশ হবে। শার্টের বাটনগুলো লাগাতে লাগাতে মেয়েটার সামনে এসে হাটুগেরে বসে তার চোখের জল মুছে দিয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো।
– কি হয়েছে মামনি? এই তো পাপা এসে গেছে। আর কাঁদে না। সোনা মা আমার। যুবকটা মেয়েটার কপালে চুমু একে দেয়ে। সাথে সাথে মেয়েটা তার নাক চেপে ধরে। আর বলে,
-পাপা তুমি আবারও ওই পচা গন্ধ পানি খেয়েছো। তুমি জানোনা পাপা এতে আমার কষ্ট।
যুবকটা তার মাথা নিচু করে নিয়ে বলে,
-সরি মামনি। দেখো সোনা পাপা খুব তাড়াতাড়ি এসব খাওয়া ছেড়ে দিবে। এখন নিচে চলো।মেয়েটা আবার বলে, মাম্মাম কোথায়? আমি মাম্মামের কাছে যাবো।
যুবকটা শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে। এই মেয়েটা তার মা বলতে পাগল। অথচ তার মা তার দিকে ঘুরেও তাকায় না। পৃথীবিতে এমন সার্থপর মা-ও আছে। যুবকটা মেয়েটাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে ছুটলো। এই মুহূর্তে সে কিছুতেই মেয়েটাকে তার মায়ের কাছে যেতে দিবে না। পিছন থেকে অর্ধবয়স্ক মহিলাটি ডেকে বলল,
– রনি, মিষ্টি কিন্তু এখনো কিছু খায়নি?
হ্যাঁ এই যুবকটি নাম রনি। এই বিশাল সম্রাজ্যের মালিক, মালিক বললে ভুল হবে। মালিকের বাবা। কারন তার এই সম্রাজ্যের মালিক তার চার বছরের মেয়ে মিষ্টি।আর রনি এক অন্ধকারে নিমজ্জিত মানব। মদ আর নারী যার একমাত্র নেশা। তবে মেয়েকে খুব ভালোবাসে। একদিকে তার পৃথীবি আর অন্যদিকে তার মেয়ে। অর্ধবয়স্ক এই মহিলাটির কথা শুনে এবার রনির রাগ হয়। প্রচুর রাগ হয়। পিছনের দিকে ফিরে শক্ত গলায় বলে উঠে,
– বাড়িতে এতগুলা লোক থাকতেও কেন আমার মেয়ের ঠিকমত খাওয়া হয়না। তোমরা সবাই আছো কি করতে?
– ভদ্রভাবে কথা বলো রনি। ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো?
– আওয়াজ নিচে। তুমি ভুলে যেওনা যে তোমার মাথার মাথার উপর যে ছাদটা আছে না সেটাও আমার। শুধু মাত্র কাকার কারনে তোমাকে সহ্য করছি। না হলে তোমার মতো মহিলাদের আমি,, আর কিছু বলল না রনি। কারন দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়েগেছে অথচ তার মেয়েটা এখনো কিছু খায়নি। হসপিটাল থেকে ফেরার সময় নেশা করে বাড়ি ফিরেছে তাই আর মেয়ের খবর নেওয়া হয়নি। তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে যায়। তারপরেই বেড়িয়ে আসে রনিও ওয়াইফ। সে তার অধোরে তাচ্ছিল্যের হাসির রেখা টেনে অর্ধবয়স্ক মহিলাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
মুন আজ বাড়িতে ফিরতেই দেখে সকলে বেশ হাসিখুশি। তবে এর কারনটা ওর অজানা নয়। ফারহানদের বাড়ি থেকে হয়তো বিয়ের কথা বলেছে তাই। অর্ণাও আজ অনেক খুশি। এদিকে ফারহান বাড়ি ফিরতেই রওনাক আসে ওর কাছে। আর ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুই হঠাৎ বিয়েতে রাজি কেন হলি?
– আমার আর মেহরিমার মাঝের ঝামেলা আমরা মিটিয়ে নিয়েছি তাই।
– তুই মুনকে কি করে চিনিস? আর ওকে বারবার মেহরিমা কেন বলছিস?
ফারহান কিছু বলতে যাবে তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে কমিশনড স্যারের কল।ফারহান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,
– তোমার সাথে আমার জরুলি কিছু কথা আছে।এখনি আমার বাংলোতে চলে এসো।
-ইয়েস স্যার।
ফারহান ফরমাল ড্রেস পরেই বেড়িয়ে পরে। যাওয়ার আগে পলাশকে কল করে। কারন ফারহান সেখানে পলাশকেও নিয়ে যাবে।
কমিশনড স্যারের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান ও পলাশ। আর কমিশনড স্যার সুফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ওদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছু সময় পর তিনি নিজেই ফারহানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
-তুমি তোমার টিম মেম্বারদের কতটা ভরসা করো?
– যতটা আমি নিজেকে করি। আমার টিমের সবাই দেশের জন্যে কাজ করে। দেশের অগ্রগতির জন্যে তারা তাদের জিবন বাজি রাখতে পারে। তাই আমাদের সকলকে আপনি ভরসা করতে পারেন স্যার।
– তাহলে তুমি তেমার ব্রাঞ্চের হয়ে কাজ করবে?
– সেটাইতো করি স্যার। আমি নামমাত্র সৈনিক। ক্রাইম ব্রাঞ্চ আমাদের ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান হলেও এটা থেকে আমরা অনেক কেইসের প্রবলেম সলভ করেছি। এমনকি পুলিশ সিআইডি এরাও মাঝে মাঝে আমাদের হেল্প নেয়।
– ঠিক আছে। তারপর কমিশনড স্যার একটা কার্ড বের করে ফারহানের হাতে দিয়ে বলে,
– এই হলো আরএন নার্সিংহোম। আমাদের কাছে খবর আছে এখানে বেআইনি কাজ কারবার হয়। তুমি তোমার টিম নিয়ে কাজে লেগে পরো। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হবে।
ফারহান কাটটা হাতে নিয়ে সেটা এপিঠ-ওপিঠ করে দেখে নিলো। অতঃপর বলল,
– স্যার, যেহেতু এটা এত বড় একটা হসপিটালের ব্যপার তাই আমাদের আইনি সাহায্য লাগতে পারে।
– তোমরা সবরকম সাহায্য পাবে তাছাড়া ওখানে আগে থেকেই একজন পুলিশ রয়েছে।
– স্যার একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন আপনি? না মানে বলছিলাম কি আপনি তো কেইসের দায়িত্বটা পুলিশের উপর দিতে পারতেন। অপরাধীদের ধরা ইনভেস্টিগেশন করা এসব তো পুলিশের কাজ।
– যেখানে ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়ে এসিসট্যান্ট পুলিশ কমিশনার প্রাণ হারিয়েছে সেখানে অন্য কোন পুলিশ সাহস পায় না। আর তাছাড়া থানার সমস্ত পুলিশই ওদের কেনা গোলাম।
– ওকে স্যার। তাহলে এবার আমরা আসি।
ফারহান ও পলাশ চলে যায়। তবে ওরা কেউই বাড়ি ফিরে না। ওরা সোজা চলে যায় ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসে আর সেখানে গিয়ে সকলকে যার যার কাজে বুজিয়ে দেয়।
চলবে,,,,,,