#হূর
#Roja_islam
#part 1
এক আছাড়ে আদনান তার ফোন ভেঙে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বললো, ” আমার ডিনার কই? ”
হূর প্রায় দৌড়ে এসে বললো, ” একটু সময় লাগবে আসলে পাশে ফ্ল্যাটে আন্টি অ…. ”
আর বলতে পারেনি হূর! গালে পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ে যায়! আদনান ভয়ংকর কিছু কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় ওয়ালেট নিয়ে! হূর নিরব হয়ে সবটা দেখে কিচেনে ঢুকে গ্যাসটা অফ করে দেয়! রুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো হূর! আয়নার সাথেই কথা বলতে লাগে হূর, ” আমি দেখতে কালো? না সুন্দর? কোনটা প্রবলেম আদনান এর আমি কালো এটা না সুন্দর এটা? দেখলেই কথায় কথায় গালে থাপ্পড় খেতে খেতে আমি ক্লান্ত! ”
রাত ১২ টা,
আদনান বাসায় এসে দেখে শুয়ে আছে হূর বেডে! আদনান শুতে শুতে ভাবে কেনো এই মেয়ের জন্য তার মায়াও হয় না? শুধু শুধু মন চায় থাপড়াতে থাপড়াতে বিদায় করে দেই বাসা থেকে! জীবনটা হেল করে রেখে দিয়েছে…. আমার!
বরকে পাশে শুতে দেখে একবার চোখ খুলে তাকালো হূর আদনানের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে! কেনো এই লোক হূরের সাথে মিস বিহেভিয়ার করে কারণ খুজে পায় না হূর!
সকালে উঠে আদনান হূরকে ডেকে খুজেও কোথাও পায় না! আদনানের মাথায় রক্ত উঠে যায়৷ ভাবতেই হূর আবার পাশের ফ্ল্যাটে গেলো না তো?? হূরের এই কাজ টা আদনানের মোটেও পছন্দ না। হূর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাশের ফ্ল্যাটে গিয়ে আড্ডা দেয়৷ যা খুবি ইরেটেট করে আদনানকে! কিন্তু এই মেয়ে এটা বুঝেইনা।আদনানের কথা হচ্ছে! সে মেরে কেটে ফেলে দিবে হূরকে তাও সে এই ফ্ল্যাটের বাইরে যেতে পারবেনা! এটা বলেও দিয়েছে সে হূরকে কিন্তু না এইমেয়ে কথাই শুনে না তার আড়ালে হূর পাশের ফ্ল্যাটে যাবেই যাবে। এমনিতেই এই মেয়েকে বাবা মার ইচ্ছেতে বিয়ে করেছে আদনান তার তেমন পছন্দনা হূরকে। এমন না যে হূর কালো সুন্দর নয় যে পছন্দ হবেনা। তাও আদনানের পছন্দ নয় এই মেয়েকে। তার উপর এই মেয়ে তার কথা শুনে না! কিছু বললে করে না। খায়না। অসুখ বাধাতে উস্তাদ। রান্না করতে পারেনা। পুড়া আধ সীদ্ধ খেতে হয় আদনানকে। সে রেগে মাসে ২০ দিন বাইরে খায়! যেদিন বাসায় খায় সেদিন হূর থাপ্পড় খাবে গেরান্টি সেটা। কিন্তু এতো মারধর করার পড়েও একটা সাউন্ড এই মেয়ের মুখদিয়ে বের হয় না। এটা কি ধরনের বিহেভিয়ার আদনান বুঝে না। হূর ব্যাথা পেলে কাদেও না। যা আরো রাগ মাথায় উঠিয়ে দেয় আদনানের! কিন্তু সে বের করে দিতে পারেনা হূরকে মা বাবা পছন্দ করে বলে হূরকে! মা বাবা কষ্ট পাবে ভেবে এই যন্ত্রণাকে সহ্য করছে আদনান আজ ৫ মাস ধরে!
শুধু জানে না আর কতদিন সহ্য করতে পারবে সে? আদনান একজন স্কুল টিচার ২ বছর হবে সে চাকরি করছে। ৯ টা বাজে স্কুলের জন্য বেরুতে হবে তাকে! আর হূরের খবর নেই। আদনান রেডি হয়ে না খেয়ে চলে গেলো স্কুলে! স্কুলে ঢুকতেই ফোন এলো শ্বশুর এর নাম্বার থেকে রিসিভ করে কানে রাখলো ফোন আদনান৷
ঐপাশ থেকে হূর এর গলা শুনতে পেলো আদনান হূর সালাম দিয়ে বললো, ” আমি চলে এসেছি বাসায় টেনশন নিও না! তোমার আমাকে প্রয়োজন নেই! যাকে প্রয়োজন যেমনটি প্রয়োজন পছন্দ করে নিও! রাখছি আল্লাহ হাফেজ! ”
এই টুকু বলেই রেখে দিলো হূর৷ আদনান পাত্তা দিলোনা হূর এর কথা বরং ভালো লাগলো আপদ আপাদমস্তক নিজেই তার ঘাড় থেকে নেমেছে।
সে দিব্বি কিছুদিন ভালো পার করলো। শুধু কাপড় টা তার ধুতে হয় যা খুব কষ্ট বাকি সবে কোনও প্রবলেম হয়না! সে আগেও হোটেলে বেশী খেতো এখনো খায়৷ টাকা বেশী যায় তাতেকি মজার খাবার খেতে একটু বেশী টাকা তো লাগবেই। স্কুল শেষে ভার্সিটি ফ্রেন্ড দের সাথে আড্ডা দিয়ে রাতে ফিরে ঘুম নিয়ম করে গ্রামে মা বাবার সাথে কথা। সে ভুলেই গেলো তার বৌ নামক একটা কেউ আছে!
এভাবে ১ মাস যাওয়ার পর একদিন হঠাৎ! তার শ্বশুর আসে হূরকে নিয়ে। হূরের বাবা সাধাসিধে গ্রামের মানুষ। তিনি মাফ চান আদনান এর কাছে হূর যদি কোন ভুল করে থাকে তো যেনো আদনান তাকে ক্ষমা করে দেয়। তিনি মাফ চেয়ে রেখে যায় হূরকে। বাবা যাওয়ার পর হূর হেচকি তুলে কাদছিলো। আদনান এভাবে তাকিয়েছিলো হূরের দিকে জেনো আবার এসেছে হূর এখানে। তাই চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে হূরকে! আদনান আর কিছু না বলে চলে যায় বাসা থেকে বেরিয়ে!
হূরের একটু ভয় কমে সে পুরো ফ্ল্যাট কোমরে শাড়ীর আঁচল গুজে পরিস্কার করে। ১ মাসে ফ্ল্যাটকে জঙ্গলে পরিনত করেছে আদনান৷ সব পরিস্কার করে হাফিয়ে উঠে হূর। ফর্সা মুখ লাল হয়ে গিয়েছে! সে শাওয়ারে ঢুকে দ্রুত! তারপর খুজে বিস্কিট খেয়ে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার আজ তিন দিন ধরেই জ্বর ছিলো সেটারি ঔষধ নিলো হূর।
বরাবরের মতো ১২ টার দিকে আদনান খেয়ে বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে দেখে হূর নেই। রুমের বাইরেও না দেখে অন্য রুমে উঁকি দিতেই দেখে ঘুমিয়ে আছে হূর। আদনান খেয়াল করে ফ্ল্যাট চকচক করছে। সে খুশী মনে ঘুমুতে যায় তার রুমে । আজ কতদিন পড় শান্তিতে ঘুমাবে পরিস্কার বিছানায়। কিন্তু নিজের রুমে এসে সব নোংরাই দেখতে পায় আদনান। সে রেগে হূরের রুমে যায় গিয়ে ধপাশ করে হূরের পাশে শুয়ে পড়ে! হূর সাথে সাথে ঘুরে ঘুমের মধ্যে আদনানকে জরিয়ে ধরে! সাথে সাথে আদনান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় হূরকে! হূরের শরীর এতো গরম যে মনে হয়েছে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা খেয়েছে আদনান। দ্রুত আদনান হূরের কপালে হাত রেখে রেগে বলে উঠে, ” শুরু হয়ে গেছে! এসেই আমায় জ্বালানো! আমি পারবো না ডক্টর এর কাছে যেতে যা খুশী হোক স্টুপিড গার্ল! ”
বলেই আদনান নিজের রুমে চলে যায় রাগে গজগজ করতে করতে!