হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৬৩.
গভীর রাত। তুমুল বর্ষণ হচ্ছে। বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে মুখরিত সব। মায়মুনা জামান সেই দুপুর থেকেই শোবার ঘরে বসে আছেন। এক মুহুর্তের জন্যও বের হন নি। কেউ বার করতেও পারে নি। তাহির এসেছিলো সবকিছু বলতে, বুঝাতে। তিনি শুনেন নি। তাহিরকে দেখে চোখ বোজে উল্টো ঘুরে কাত হয়ে ঘুমানোর ভং ধরেছিলেন। মায়মুনার যখনই ভয়াবহ রাগ হয় তিনি চুপ করে যান। একদম শান্ত নদীর মতো থাকেন। তাহির হয়তো ওনার এই গুণটাই পেয়েছে। গুণ নয় যদিও, দোষ। তবে তাহির রেগে থাকলেও কথা বলে এমন ভাব করে যেনো কিছুই হয় নি। আর মায়মুনা কারো সাথে চোখও মেলান না। তিনি যে রেগে আছেন সেটা ওনার চুপ করে থাকা দেখেই বুঝে যায়। নিজেকে সবার আড়ালে রেখে মনে রাগ পুষতে থাকেন।
সারাটা বিকেল এভাবেই কেটে যায়। সবাই ভাবে রাগ ঠান্ডা হলে মায়মুনা নিজ ইচ্ছাতেই বাইরে আসবেন। কিন্তু আসেন নি। হয়তো রাগ ঠান্ডা হয় নি ওনার। সন্ধ্যার দিকে হৃদি, ফুল এসেছিলো তাদেকে গম্ভীর কন্ঠে বেরিয়ে যেতে বলেছেন। ওনার মুখের উপর কথা বলার সাহস কারো নেই বলেই ওরা বেরিয়ে গেছে। তাহির তখন হাসপাতালে ছিলো। রাতে বাড়ি ফিরে জেনেছে মা এখনো ঘর থেকে বের হন নি। ফর্মাল পোশাক না পাল্টেই সে মাকে ডাকতে গেছে। বিনিময়ে তিনি আবারও শুয়ে পরার অভিনয় করেছেন। দুপুর থেকেই কেউ কিছু খায় নি। মায়মুনা খাচ্ছেন না বলেই হয়তো কেউ খেতে পারছে না। মৃত্তিকাকেও খাওয়ানো যায় নি। বেচারি মায়মুনার এমন ব্যবহার দেখে চলে যেতে চেয়েছিলো। তাহির আটকে দিয়েছে। ডিনার টাইমে জোর করে একটা পাউরুটি খাওয়ানো হয়েছে তাকে। বাকিরা উপোস। হিমি এবার দায়ভার কাঁধে নিলো। সে জানে তার কথা মায়মুনা শুনবেন না। বরং রাগ বেড়ে যাবে ওনার। তবুও চেষ্টা করতে হবে তাকে। বহু ভেবে চিন্তেই হিমি ওনার ঘরে ঢোকে। মায়মুনার ঘর নিকষ অন্ধকারে নিমজ্জিত। হিমি হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে ঘর আলোকিত করে। মুহুর্তেই চোখ মুখ কুঁচকে হঠাৎ জ্বলে ওঠা বাল্বের দিকে তাকান। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে আলো আড়াল করার চেষ্টা করেন। চোখে আলো সয়ে যেতেই দরজার দিকে তীক্ষ্ণ নজর দেন তিনি। সাথে সাথেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠে। হিমি তার আগের পোশাকে আছে। গায়ে অফ হুয়াইট শার্ট আর পরনে কালো জিন্স। এইটুকুই যথেষ্ট মায়মুনার রাগ বেড়ে যাওয়ার। হিমি শিওর ছিলো ওকে এই বেশে দেখে মায়মুনা গর্জে উঠবেন। অথচ মায়মুনা টু শব্দও করলেন না। মুখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালেন। হিমি প্যান্টের পকেটে হাত গুজে ধীর পা ফেলে মায়মুনার খাটের পাশে এসে দাঁড়ালো। গলা পরিষ্কার করে বললো,
“শাশুড়ি মা? খুব রাত হয়ে গেছে তো। খাবেন কখন?”
মায়মুনা জামানের শান্ত গলার উত্তর,
“খাবো না আমি।”
“আচ্ছা। তাহলে ঘুমাবেন কখন?”
“যখন ঘুম পাবে তখন ঘুমাবো। যাও তুমি।”
হিমি নড়লো না। কৌতুহলী গলায় বললো,
“তারমানে আপনার ঘুম পায় নি?”
মায়মুনা জবাব দিলেন না। আড়চোখে হিমিকে দেখে মনে মনে গালমন্দ করলেন। হিমি হাত পা নাচিয়ে নাচিয়ে জানালা খোলে দিলো। বাতাসের সাথে সাথে বৃষ্টির পানির ঝাপটা ঘরে প্রবেশ করতে শুরু করে। মায়মুনা জামান উঠে দাঁড়ালেন। গর্জন করে বললেন,
“জানালা খুলেছো কেনো? দেখছো না বৃষ্টি হচ্ছে? বন্ধ করো জলদি।”
হিমি জানালা বন্ধ করলো না। বরঞ্চ পর্দা সরিয়ে জানালায় দাঁড়িয়ে খনিক সময় পার করলো। তারপর ফিরে এলো মায়মুনার কাছাকাছি। ওনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
“আপনার বৃষ্টি ভালো লাগে না?”
“না।”
“কেনো?”
“কেনোর কোনো উত্তর নেই। আমার মাথা গরম এখন। আর গরম করিও না। যাও এখান থেকে।”
হিমি মায়মুনার কথায় পাত্তা না দিয়ে খাটে এসে বসলো। হাত দুটো কোমরের দু পাশে রেখে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। বললো,
“শাশুড়ি মা? মৃত্তিকা সকাল থেকে কিছু খায় নি। পেট ব্যথা করছে তার।”
মৃত্তিকার নাম শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন মায়মুনা। কর্কশ গলায় বললেন,
“আমি বলেছি না খেয়ে থাকতে? খাচ্ছে না কেনো? ওর তাহির ভাই আছে না! ওর তাহির ভাইকে বলো খাওয়াতে। যাকে তাকে যখন ঘরে তুলতে পেরেছে তখন খাওয়াতে বাধা কিসের?”
হিমি মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বললো,
“বাচ্চা ডাক্তার ওতো খায় নি। আমিও খাই নি। হৃদিও খায় নি। ওহ হ্যা, ফুলও খায় নি।”
“না খেলে না খাবে। আমার এতো নাটক করার সময় নেই। এই মেয়ে? বেরোও তো। ঘুমাবো আমি। রাগ বাড়িও না বলে দিচ্ছি।”
হিমি উঠে দাঁড়ালো ঠিক তবে গেলো না। মুখ ফুলিয়ে বললো,
“শাশুড়ি মা বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। যাই?”
“শখের কমতি নেই দেখছি। একদিন খালি ঘরের বাইরে বেরোই নি আর তাতেই বেশ ভুষা পাল্টে ফেলেছো। এখন আবার মাঝরাতে বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছো। তুমি আমার মেয়ে হলে দেখতে। সেই কবেই ঠিক করে দিতাম। লাই পেয়ে পেয়ে মাথায় উঠেছো। কোনটা বাপের বাড়ি কোনটা শ্বশুরবাড়ি সেই জ্ঞানও নেই। অসহ্যকর।”
“আমার মা বেঁচে থাকলে আমি ঠিক থাকতাম। উনি নেই বলেই আজ আমার এই হাল। তাই না?”
মায়মুনা জামানের মুখটা ছোট হয়ে গেলো। রাগ কিছুটা পরলো বলে বোধ হলো। হিমি তাৎক্ষনিক বলে উঠলো,
“মৃত্তিকারও মা নেই।”
মায়মুনা শুনেও শুনলেন না। হিমি নিজ থেকেই বলতে লাগলো,
“বাচ্চা ডাক্তারের বাবা শুধু আপনাকে আর বাচ্চা ডাক্তারকে ফেলে যান নি। মৃত্তিকা আর তার মাকেও ফেলে গেছেন। আপনি যে কষ্টটা পাচ্ছেন সে কষ্টটা মৃত্তিকার মাও পেয়েছেন এক সময়। ওনার মেয়ের কি দোষ শাশুড়ি মা?”
“যা বুঝো না তা নিয়ে কথা বলো না হিমি।”
“আপনি তো বুঝেন। তাহলে কেনো কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন। মৃত্তিকার বাবা মায়ের দোষটা ওর ঘাড়ে না চাপালেই নয়?”
“ওরা যা করেছে তা দোষ নয়। পাপ। গুনাহ। ওদের পাপের ফল ওই মেয়ে। অবৈধ মেয়ে। যেখানে ওই মেয়ের সাথে কোনো সম্পর্কই আমি রাখতে চাই নি সেখানে তোমার স্বামী তাকে ঘরে নিয়ে এসেছে। তার সাথে এতগুলো বছর যোগাযোগ রেখেছে। সেটা কি দোষের নয়?”
“আমার তো তা মনে হয় না। এখানে দোষের কি? আঙ্কেল আন্টির দোষ বা আপনার কথায় পাপ ও কেনো বয়ে বেড়াবে? আঙ্কেল আন্টির সম্পর্ক অবৈধ ছিলো সন্তান নয়। সন্তান কখনো অবৈধ হয় না। আর তাছাড়া বাচ্চা হওয়ার আগেই ওনারা বিয়ে করেছেন। সেক্ষেত্রে বাচ্চা বৈধ হয়েছে। মৃত্তিকাকে অবৈধ বলে তাকে আর কষ্ট দেবেন না।”
“চুপ। আর কথা না। আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।”
“না বললে কি করে হবে? এভাবে রাগ পুষে রেখে তো কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং রাগ ঝেড়ে ফেলুন। যা যা মনে আসছে বলুন। চিৎকার করুন, ধমকান, বকা দিন। দরকার পরলে আপনার ছেলেকে দু চারটা থাপ্পড়ও দিন। দোষ তো উনিই করেছেন। একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়েকে দেখে বড়দের বিদ্বেষ, ভুল, পাপ ভুলে গেছেন। মেয়েটাকে আদর করেছেন, ভালোবেসেছেন। মেয়েটির মা মারা যাওয়ার পর তাকে দেখভাল করার জন্য যখন কেউ ছিলো না তখন মেয়েটিকে অনাথ আশ্রমে দেখতে যেতেন। লুকিয়ে লুকিয়ে তার জন্য চকোলেট কিনতেন, পুতুল কিনতেন। প্রতি মাসে মেয়েটির সাথে দেখা করতে যেতেন। ওই বাচ্চা মেয়েটাতো জানতো না বাচ্চা ডাক্তার তার কি লাগে। বাচ্চা ডাক্তারই তাকে বুঝিয়েছেন তিনি তার ভাই। বছরের পর বছর তাকে বোনের মতো স্নেহ করে গেছেন। আগলে রেখেছেন। সমস্ত দোষ তো ওনার। চলুন, ওনাকে থাপ্পড় মারবেন চলুন।”
কথাটা বলেই মায়মুনা জামানের এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চায় হিমি। মায়মুনা জামান হাত ছাড়িয়ে নেন। খাটে বসে গমগমে গলায় বলেন,
“এসবের দরকার নেই। আমি কে ওর? আমায় কিছু বলা, জানানো প্রয়োজন বোধ করে না কি? তার উপর বিয়ে হয়েছে বউ আছে। এখন তো তুমিই সব। ওই মেয়ের কথা আমি জানি না তুমি জানো। এর চেয়ে বড় অপমান আর কি আছে?”
“উনি আপনাকে সব বলে দিলে আপনি মেনে নিতেন? যোগাযোগ রাখতে দিতেন মৃত্তিকার সাথে?”
“দিতাম না। কিছুতেই না। যতোই ওর বাবা মা বিয়ে করুক ওদের সম্পর্ক বৈধ ছিলো না। পরকীয়ায় জন্ম ওই মেয়ের। ছি!”
হিমি ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললো,
“তাতে ওর কি দোষ শাশুড়ি মা? ওর জন্ম তো ওর হাতে ছিলো না। ওর বাবা মা চেয়েছেন বলেই জন্ম হয়েছে ওর। এখানে তার গায়ে অবৈধের ট্যাগ লাগানো কি যুক্তিযুক্ত? আচ্ছা, আঙ্কেল কেনো পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন?”
জবাব দিলেন না মায়মুনা। শ্বাস প্রশ্বাস তুমুল গতিতে উঠানামা করছে ওনার। হাত পা কাঁপছে মৃদু। কপালে ঘাম জমেছে।
“পরকীয়া পাপ। আঙ্কেল পাপ করেছেন। সেই পাপের দায়ভার আঙ্কেল আর মিতা আন্টির উপরই বর্তায়। কিন্তু আপনার কি মনে হয় না আপনিও কিছুটা অংশীদার এতে?”
মায়মুনা এবারও চুপ করে রইলেন। হিমি মায়মুনার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,
“মৃত্তিকা কিন্তু এখনো জানে না ওর বাবা কে। এটাও জানে না ওর মা আর বাচ্চা ডাক্তারের মা আলাদা।”
মায়মুনা গোল গোল চোখে তাকালেন। হিমি শীতল গলায় বললো,
“মৃত্তিকার বয়স এক বছর হতেই ওর মা মারা যান। তারপর থেকে অনাথ আশ্রমে থেকে বড় হয়েছে। বাচ্চা ডাক্তার ওকে বলেছেন পারিবারিক সমস্যার কারনে ওকে ওখানে থাকতে হবে।”
“এতো বছর যখন ওখানে থেকেছে তাহলে এখন কেনো থাকতে পারছে না?”
রাগান্বিত গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন মায়মুনা। হিমির শান্ত গলার জবাব,
“মৃত্তিকার বয়স আঠারো হয়েগেছে কয়েক মাস আগেই। আঠারো বছর হলে অনাথ আশ্রমে থাকা যায় না। অনেকে তো আগেই পরিবার পেয়ে যায়। যারা পায় না তারাই থাকে। মৃত্তিকা পেয়েছিলো বাচ্চা ডাক্তার তাকে অন্য কারো সাথে দিতে চান নি। অনাথ আশ্রমে মাসে মাসে একটা পর্যাপ্ত এমাউন্ট দান করতেন। তাই অথোরিটি ওনার কথা রাখতো। কয়েক মাস আগেই যখন মৃত্তিকা ওখান থেকে বের হয় তখন বাচ্চা ডাক্তার তাকে অন্যত্র থাকার জায়গা দিয়েছিলেন। এবাড়ির ঠিকানাও দিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন সমস্যা হলে যেনো সোজা বাড়ি এসে উঠে। আমার তখনই মৃত্তিকার আসে আলাপ হয়। আজ নিতান্তই বাধ্য হয়ে বাড়ি এসেছে মৃত্তিকা। আর সব থেকে বড় কথা ও জানে এই বাড়িটা ওর। বাচ্চা ডাক্তারের মা ওর মা। আপনি যখন কাউকে কিছু না বলে ঘরে চলে এসেছিলেন তখন থেকেই ঘাবড়ে আছে মৃত্তিকা। ও তখনই জেনেছিলো আপনি বাচ্চা ডাক্তারের মা। অর্থাৎ ওর মাও।”
কটমটে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হিমির দিকে তাকালেন মায়মুনা। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“আমি ওর মা নই।”
“সেটা আপনি জানেন। বাচ্চা ডাক্তারও জানেন। মৃত্তিকা জানে না।”
“তাহলে জানাও। ওকে বলো ওর মা আমার ছেলের বাবাকে ছিনিয়ে নিয়েছিলো। ওকে বলো ওর মায়ের জন্য আমার ছেলের মাথার উপর থেকে বাবার ছায়া সরে গেছে। জানিয়ে দাও সত্যিটা।”
“বাচ্চা ডাক্তার এগারো বছর অব্দি বাবার আদর, ভালোবাসা, স্নেহ পেয়েছেন। মৃত্তিকা এক সেকেন্ডের জন্যও পায় নি। আপনি আপনার ছেলেকে আজীবন কাছে রেখেছেন মৃত্তিকা সবে এক বছর মায়ের সংস্পর্শে ছিলো। আপনারা ছাড়া ওর কেউ নেই শাশুড়ি মা।”
কঠিন গলায় মায়মুনা প্রত্যুত্তর করলেন,
“আমরাও ওর কেউ না। না আমি আর না তাহির। আমি বুঝতে পারছি না তাহির কেনো ওই মেয়েকে এসব বলেছে। কেনো তাকে মিথ্যে বলে আশ্বাস দিচ্ছে। এখন তো মেয়েটা বাচ্চা নয়। বুঝতে শিখেছে। তাহিরকে বলো বুঝাতে। তাহিরের সব কথা মানতে পারলে এ কথাটাও অনায়াসে মানবে।”
হিমি বাঁকা হেসে উঠে দাঁড়ালো। বললো,
“আপনিই বলুন আপনার ছেলেকে। আমার কথা উনি শুনেন না। আপনি বললে ঠিক শুনবেন। পাঠাবো?”
মায়মুনা মুখ ভার করে চোখ সরালেন। হিমিকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তির সুর তুলে বললেন,
“ওকে বলো আসতে। আর তুমি পোশাক বদল করো। যাচ্ছে তাই পরে ঘুর ঘুর করবে না বলে দিচ্ছি। চুল আঁচড়ে বিনুনি করো যাও।”
চলবে,,,,,,,
হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৬৪.
হিমি ঘর থেকে বেরুতেই তাহির উদ্বেগ নিয়ে তাকালো। ইশারায় ঘরে যেতে বললো হিমি। তাহির মাথা দুলিয়ে মায়মুনার ঘরে ঢোকলো। দরজা হালকা ভেজিয়ে মায়ের কাছাকাছি বসে মাতা নুয়ালো। তাহির কিছু বলবে তার আগেই আবদারের স্বরে মায়মুনা বলে উঠলেন,
‘ওই মেয়েকে ওর নানার কাছে পাঠিয়ে দাও।’
তাহির মাথা তুললো। সম্মুখে দৃষ্টি রেখে বললো,
‘মৃত্তিকার নানা এখনো ওকে মেনে নিতে পারেন নি। মৃত্তিকাকে কিছুতেই নিজের কাছে রাখবেন না।’
‘আপন নানাই যেখানে নাতনিকে মানতে পারছে না আমি কি করে পারবো বলোতো?’
‘আমি জানি মা। তোমার জন্য এসব সহজ নয়। কিন্তু মৃত্তিকার কথাও তো ভাবো!’
‘কেনো ভাববো? ওর বাবা ওর কথা ভাবে নি। ওর নানা ওর কথা ভাবে নি। আমি কেনো ভাববো? আর তুমিই বা কেনো ভাবছো?’
‘বাবা নিজের কর্তব্য পালন করেন নি। আমি ওনার হয়ে কর্তব্য পালন করছি। আমার কাছে মৃত্তিকা নিষ্পাপ। ওর কোনো দোষ আমার চোখে পরে নি। ওকে আমি আমার বোনের মতোই ভালোবাসি। ছোটবেলা থেকেই ওকে বুঝিয়েছি আমি ওর ভাই। ভাই হয়ে বোনকে ফেলে দেবো?’
‘বেশ। তুমি তাহলে তোমার কর্তব্য পালন করো। তবে এবাড়ি থেকে নয়। তোমার বোনকে অন্যথায় রেখে দায়িত্ব কর্তব্য যা ইচ্ছা পালন করো। আমি ওকে সহ্য করতে পারছি না।’
তাহির ঘাড় ঘুরিয়ে মায়মুনার দিকে তাকালো। মায়মুনার এক হাত আকড়ে ধরে বললো,
‘আমি মৃত্তিকাকে নিজের কাছে রাখতে চাইছি।’
ছলছল চোখে তাকান মায়মুনা। ছেলের উপর অভিমান জাগছে ওনার। কি করে এমন কথা বলছে? ও বুঝতে পারছে না স্বামীর দ্বিতীয় পক্ষের মেয়েকে সহ্য করা সহজ নয়? মেনে নিতে গেলেও বুকে ছুরি বিঁধে? মুখ দেখলেও অতীত মনে পরে?
‘রাখো। আমি তাহলে তোমার মামার বাড়িতে যাই।’
‘মা প্লিজ। আমি তোমাদের দুজনকেই,,,,,,,’
‘আমরা দুজন এক ছাদের নিচে থাকতে পারি না তাহির। তোমার বাবা যে ভুলটা করেছেন তুমি সেই ভুল এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছো। আমি সেটা মানতে পারবো না।’
‘মা বাবার সেই ভুলটা তুমি আটকাতে পারতে।’
মায়মুনা রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলেন তাহিরের উপর। তাহির মায়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখে বললো,
‘আই অ্যাম সরি। এভাবে বলা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু এটাই সত্যি। তুমি চাইলে বাবাকে আটকাতে পারতে। আমার মনে আছে বাবা একদিন তোমার জন্য ফুল এনেছিলো। আমায় বলেছিলো ওইদিন তোমাদের জন্য বিশেষ এক দিন। আমি জানতাম না কি ছিলো সেদিন। তবে খুশি হয়েছিলাম। বাবা বাড়ি ফিরে তোমার সাথে ঝগড়া করেন নি। মুখে হাসি ফুটিয়ে তোমায় ফুল দিয়েছিলেন। তুমি তখন ফুলটা নিজের হাতেও নিয়েছিলে। বাবা আমায় বলেছিলেন, তাহির তৈরি হো বাবা। আমরা আজ ঘুরতে যাবো। বাবার কথা শুনে আমি তৈরিও হয়েছিলাম। কিন্তু তোমাদের ঘরে এসে দেখি বাবার দেয়া সেই ফুলটা ছিড়ে ফেলেছো তুমি। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছো নতুন শাড়ি। বাবা সেদিন কেঁদেছিলেন মা। কি হয়েছিলো সেদিন কেনো তুমি এমনটা করেছো আমি জানি না। তখনও জানতাম না। কিন্তু তোমার সেই ব্যবহারে বাবা কষ্ট পেয়েছেন সেটা বুঝেছি। তুমি চাইলেই বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারতে। তখন তো মিতা আন্টি নামক মানুষটা ছিলো না বাবার জীবনে! তবে কেনো নিষ্ঠুরতা করেছো?’
‘আমি করেছি নিষ্ঠুরতা? তোমার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ? উনি কিছু করেন নি? আমার স্বপ্ন, ইচ্ছা, সব ভেঙে দিয়েছে তোমার বাবা। কেনো করবো ভালো ব্যবহার? আমি কি পুতুল? উনি যখন চাইবেন তখন কথা বলতে হবে, উনি যখন চাইবেন তখন হাসতে হবে, উনি চাইলেই আবার রেগে যেতে হবে। কেনো? পারি নি। আমার যা ইচ্ছে হয়েছে আমি তাই করেছি। যা করে আমি শান্তি পেয়েছি বার বার আমি তাই করেছি। বেশ করেছি। তোমার বাবা পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানুষ। নিকৃষ্ট স্বামী, নিকৃষ্ট পুরুষ মানুষ।’
তাহির শান্ত চোখে তাকালো। এসব নতুন নয় তার কাছে। মায়মুনা মাঝে মাঝেই তৌসিফ মাহমুদকে যাচ্ছেতাই বলেন। তবে এসবের পেছনের কারনটা আজও ধোঁয়াশা তাহিরের কাছে। বাবা মা কেনো একে অপরকে ভালোবাসেন নি, কেনো আলাদা হয়ে যাওয়াতেও সুখ পান নি তা সে জানে না। বুঝতে পারে মায়ের সাথে কথা বলে লাভ নেই। তিনি বুঝবেন না। মৃত্তিকাকে এ বাড়িতে থাকার অনুমতিও দেবেন না। কিন্তু ভাই হয়ে কি করে বোনকে ছুড়ে ফেলবে? যাকে ছোট্টবেলা থেকে নিজের উপর নির্ভরশীল করে গেছে তাকে কি করে আজ একা করে দেবে? পারবে না। বাবাকে কথা দিয়েছিলো বাবার প্রিয় জিনিসগুলোর দেখভাল করবে। বাবা যা করতে পারেন নি তা সে করবে। বাবার অসমাপ্ত সব কাজ সেই শেষ করবে। বাবার দায়িত্ব কর্তব্য গুলো নিজের মনে করেই করবে। তখন বুঝেনি বাবা কেনো এতো কথা নিচ্ছেন তার থেকে। বাবার চলে যাওয়ার পর বুঝেছে। একটাবার যদি তৌসিফ মাহমুদ ফিরে আসতেন তবে তাহির স্বস্তি পেতো। বুকের বোঝা হালকা হতো। ওনার ফিরে আসার পথ এখনো খোলা আছে কি না তাও সবার অজানা। এভাবে কেউ হারিয়ে যেতে পারে? তাহিরের মন বলে, পারে। যে হারিয়ে যেতে চায় সে নিজেকে খোঁজার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েই হারায়। ফিরে আসতে চায় না বলেই হারায়। তার বাবার একারনে হারিয়েছেন। জগতের সুখ যখন তার ভাগ্যে জুটলো না তখন নিজে থেকে সুখ কুড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাতেও অক্ষম হয়ে আর বাসনা জাগে নি। সব এলোমেলো, অগোছালো রেখেই হারিয়ে গেছেন। এমনভাবে গেছেন যেনো কেউ কখনোই তাকে না পায়। তিনি জানতেন কেউ না কেউ তাকে খুঁজবে। হন্নে হয়ে খুঁজবে। কিন্তু তিনি ধরা দেবেন না। কে বলতে পারে হয়তো তিনি তাদের আশেপাশেই আছেন। শুধু মুখোমুখি এসে দাঁড়াচ্ছেন না। আপন মানুষগুলোকে আড়াল থেকেই বুক উজার করে দেখে যাচ্ছেন।
সকাল দশটা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে এখনো। পিচঢালা রাস্তা পানিতে পিচ্ছিল হয়ে আছে। ছাতা মাথায় পা টিপে টিপে গাড়িতে এসে উঠলো হিমি। ছাতাটা বন্ধ করে গাড়ির দরজা লাগালো। ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললো,
‘চলুন। আস্তে ধীরে চালাবেন। গতরাতে গাছ না কি ভেঙে পরেছে শুনলাম!’
ড্রাইভার মাথা দুলিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। হিমি পাশ ফিরে মৃত্তিকার দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বললো,
‘দাদা দাদুর সাথে দেখা করার এক্সাইটমেন্ট হচ্ছে না কি নার্ভাসন্যাস?’
মৃত্তিকা কম্পিত গলায় বললো,
‘ভয় হচ্ছে।’
‘কিসের ভয়?’
‘ওনারাও যদি আমায় রাখতে না চায়? যদি বলে আমি তাদের কেউ না? বা যদি ভাইয়ার মায়ের মতো আমাকে দেখে রাগ করে? তখন কোথায় যাবো ভাবি?’
হিমি ছোট্ট শ্বাস ফেললো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
‘তুমি তোমার ভাইয়াকে বিশ্বাস করো?’
শুকনো হাসলো মৃত্তিকা।
‘করি। ভাইয়াকে বিশ্বাস করি বলেই প্রত্যেকটা মিথ্যে কথা বিশ্বাস করেছি।’
‘মিথ্যেগুলো তোমার জন্যই বলেছিলেন।’
‘জানি। তাই তাকে দোষারোপ করছি না। শুধু বাবা মায়ের উপর রাগ হচ্ছে, ঘেন্না হচ্ছে। আর নিজের উপরই দয়া হচ্ছে।’
প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না হিমি। কিই বা বলবে সে? কি বলা যেতে পারে এই কথার বিপরীতে? মৃত্তিকার বাবা মা তো সত্যিই ভুল করেছেন। দোষ করেছেন। মৃত্তিকাকেও দয়ার পাত্রী করে রেখে গেছেন। কি হতো যদি এমনটা না করে সমাজ স্বীকৃত উপায়ে বিয়ে করতেন? কেনো এসবে জড়ালেন? শুধু মাত্র প্রাপ্য ভালোবাসা, সম্মান না পেয়ে সুখ খুঁজতে? ওনাদের সুখের তাড়নায় একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন ঠুনকো হয়ে পরেছে সমাজের কাছে। কেউ তাকে গ্রহণ করতে চায় না। কেউ তাকে ভালোবাসতে চায় না। তাকে দেখলেই মুখ কুঁচকায়, ঘৃণায় চোখ সরায়। অথচ সে এই ঘৃণার পাত্রী নয়। মূল্যহীন হয়ে বেঁচে থেকে আদৌ ভালো থাকা সম্ভব?
বিকেল গড়ানোর কিছু পরই তাহিরের দাদু বাড়িতে এসে পৌঁছেছে হিমি মৃত্তিকা। রাস্তা পেরিয়েই বড় উঠন। উঠনে পিচ্ছিল কাঁদা মাটি। গাড়ি থামতেই হিমি কাচের জানাল খোলে উঁকি দিলো। উঠনের দুই প্রান্তে দুই ঘর। ইটের দালান। রঙ নেই ঘরের দেয়ালে। আশেপাশে জনমানব না দেখে গাড়ি থেকে নামলো হিমি। তাহির যেমন বলেছিলো ঘরগুলো তেমন নয়। আগে টিনের চালা ছিলো। এখন সিমেন্টের ছাদ। ঘরগুলোও বড় বড়। ঘরের পাশে দু তিনটে গাছ। হিমি পা টিপে টিপে একটু এগুলো। পেছন থেকে ডেকে উঠলো মৃত্তিকা,
‘ভাবি?’
হিমি ফিরে তাকালো। ভ্রু নাচালো। মৃত্তিকা কাতর গলায় বললো,
‘আমি হোস্টেলে থাকবো। ভাইয়াকে বলো। কাউকে কিছু বলতে হবে না। ভাইয়াকেও আর বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে না। আমি নিজেই কিছু না কিছু করবো।’
হিমি মৃত্তিকার দিকে এগুলো। আশ্বস্ত গলায় বললো,
‘ওনার কাছে তুমি বোঝা নও মৃত্তিকা। বোন। আর তোমার ভাইয়া তার বোনের দায়বদ্ধতা থেকে সরবে না। তুমি কোথায় সেইফ থাকবে ভালো থাকবে সেটাই উনার চিন্তার বিষয়। তোমায় এসব ভাবতে হবে না।আগে তো দাদা দাদুর সাথে দেখা করো। আলাপ পরিচয় হোক। তারপর দেখা যাবে।’
ডানদিকের ঘরটার বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন বয়স্কা এক মহিলা। পরনে হালকা সবুজ রঙের শাড়ি। মাথায় কাপড়। গায়ের রঙ ময়লাটে। অনেকটাই কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। খালি পায়ে কয়েক কদম এগিয়ে ঘরের গেইটে ধরে দাঁড়ালেন তিনি। চামড়া কুঁচকে ঝুলে আছে। গাল দুটো থলথলে হয়ে মিশে আছে মুখের সাথে। চোখ দুটো ছোট ছোট করে তিনি বলে উঠলেন,
‘কারা গো তোমরা? কারে খুঁজো?’
হিমি বয়স্কাকে ভালো ভাবে নিরীক্ষণ করে বললো,
‘আপনি তাহির মাহমুদের দাদী?’
বয়স্কার চোখ উজ্জল হলো। যেনো বহু প্রতীক্ষিত কিছু পেলেন। গলার স্বর হাসি হাসি করে বললেন,
‘হো। আমি ওর দাদী। তুমি কে? চিনো আমার নাতিরে? আসছে মুন্না?’
কথাগুলো বলতে বলতে তিনি সিড়ি থেকে নিচে নামলেন। ওনার গলার স্বর শুনে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন মধ্যবয়স্ক এক মহিলা। সাথে আরো দু একজন মানুষ। একজন বৃদ্ধ লাঠিতে ভর দিয়ে বারান্দার গ্রিলে ধরে উঁচু গলায় স্ত্রীকে ডেকে বললেন,
‘ও রহিমের মা? কে আসছে? চিনো নি ওদের?’
বয়স্কা সেদিকে তোয়াক্কা করলেন না। হিমির দিকে জিজ্ঞাসাসূচক চাহনীতে তাকিয়ে আছেন। হিমি মৃদু হেসে বললো,
‘আমার নাম হিমি। তাহির মাহমুদের স্ত্রী।’
চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে হাসলেন বয়স্কা। অস্ফুট স্বরে বলেন,
‘মাশা আল্লাহ। আমার নাতির পছন্দ আছে!’
পেছন থেকে বৃদ্ধ লোক বললেন,
‘কার ইস্তিরি?’
বৃদ্ধর পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের জবাব,
‘তোমার মুন্নার বউ। তৌসিফের ছেলের বউ। মু্ন্না বলেছিলো না ফোনে? তার বউয়ের কথা বলেছিলো না? এই যে এই মেয়েই তার বউ। দেখতেছো মুখটা? ও মেয়ে মানে বউমা, এদিকে আসো। ঘরে আসো। মুন্না আসছে?’
‘জি না। উনি কাজে ব্যস্ত। তাই আমিই এসেছি।’
‘ভালা করছো। আসো ভিত্রে আসো। বাড়ি কেমনে চিনলা? মুন্না কইছে, না?’
হিমি মাথা দুলালো। বয়স্কা আর ঘরের বাকিরা তাদের ঘরে বসতে দিলো। কাঠের চেয়ারে বসতেই মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন,
‘এই মেয়ে কে? তোমার কেউ লাগে?’
মাথা নাড়লো হিমি। মৃত্তিকা হিমির হাত আকড়ে ধরে বললো,
‘ভাবি বলো না। দেখো ওরা কতো খুশি হয়েছে তোমায় দেখে। আমি কে জানলে সব খুশি মাটি হয়ে যাবে। সত্যিটা বলার দরকার নেই।’
হিমি ফিসফিস করে বললো,
‘সত্যি জানাতেই তো এসেছি। মিথ্যে বলে তোমার মতো তাদেরকেও আড়ালে রাখা উচিত নয়। পরে সত্যিটা জানলে তোমার মতোই কষ্ট পাবে সবাই।’
তারপর সামনে তাকিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো,
‘দাদী ওর নাম মৃত্তিকা। আপনাদের নাতনি।’
চোখ কপালে তুললেন বয়স্কা। বললেন,
‘কি কও? আমাদের নাতিন? মুন্না তো কুনুদিন ওরে নিয়া কিছু কয় নাই! ওর মায় জানাইলো না দেখি!’
হিমি বুক ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,
‘ও মিতা আন্টির মেয়ে। এতোদিন আমাদের সাথে ছিলো না। এখন আছে। তাই ভাবলাম পরিচয় করিয়ে দেই। উনি আসতে চাইছিলেন। হাসপাতালের কাজে আসা হয় নি। নাহলে সবটা উনিই বুঝিয়ে বলতে পারতেন।’
ঘরে বিস্ফোরণের মতো শুনালো কথাগুলো। ছেলের দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান। তার মাকে তো একবারই দেখেছিলেন সবাই। ছেলের চলে যাওয়ার পর যোগাযোগ রাখেন নি। বাড়ির বউ বলেও মানেন নি। তার মেয়েকে আজ এত বছর পর কেনো আসতে হবে পরিচয় করতে? অধিকার ফলাতে এসেছে নিশ্চয়? না কি সম্পত্তির ভাগীদার হতে? এই মেয়ে তাহিরের বোন হয় কি করে? সৎ বোনের সাথে তো সম্পর্কই রাখা উচিত নয়। আর এরা একে বাড়িতে রাখছে? মায়মুনা মেনে নিলেন? এমন হাজারও প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো সবার। তবে কেউ মুখ খোলে কিছু জানতে চাইলেন না। হিমি হয়তো তাদের প্রশ্নের পরিমাণ আন্দাজ করেছিলো। তাই নিজ থেকেই তাহিরের বলে দেয়া সমস্ত কথা উগরে দিলো। মৃত্তিকার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। সকলে স্তম্ভিত হয়ে আছেন হিমির কথা শুনে। এই মুহুর্তে তাদের কি বলা উচিত বা করা উচিত তা বুঝতে পারছেন না কেউই। সিদ্ধান্তই বা কি ভেবে নেবেন তাও মাথায় আসছে না। হিমি সেটাও সহজ করে দিলো। স্পষ্ট গলায় বললো,
‘আমার শ্বশুর মশাই কিন্তু মিতা আন্টিকে বিয়ে করেছিলেন। মৃত্তিকা আবার ওনাদেরই সন্তান। সুতরাং ও এই বংশের মেয়ে।’
চলবে,,,,,,,,,,,,