হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৪৮.
সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে শোবার ঘরের দরজা খোলা পেলো তাহির। স্বস্তির নিঃশ্বাস টেনে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেলো সে। হিমি ততক্ষনে জেগে গেছে। ঘরে এসে ঢোকলো হৃদি। হাতে তার গোলাপী রঙের জর্জেট শাড়ি। হিমি ভ্রু কুঁচকালো। হৃদি খাটের উপর শাড়িটা রেখে বললো,
‘ভাবি? ফ্রেশ হয়ে এই শাড়ি পরেই নিচে এসো। ফুপি পাঠিয়েছে।’
হিমি হাই তুলতে তুলতে বললো,
‘আমি শাড়ি পরতে পারি না হৃদি।’
‘এ বাবা! আমিও তো পারি না। এবার কি হবে?’
‘এতো স্ট্রেস নেয়ার কিছু নেই। যা পরতে পারি না তা না পরলেই বা কি?’
‘ফুপি তো বললো তোমায় শাড়ি পরিয়ে আনতে। হেই, ইউ টিউব! ওয়েট, আমি এক্ষুনি শাড়ি পরার প্রসেস টা দেখে নিচ্ছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমিই পরিয়ে দেবো নাহয়।’
‘তার দরকার নেই। আমি শাড়ি পরবো না।’
‘কেনো পরবে না?’
‘কখনো পরি নি। এসবে অভ্যাস নেই। তুমি বরং তোমার কোনো শার্ট, জিন্স এসব দাও।’
চোখ গোল গোল করে তাকালো হৃদি। বিস্মিত গলায় বললো,
‘তুমি শার্ট পরবে?’
‘হুম। আমি ওসবই পরি।’
‘কিন্তু ভাবি আমি তো শার্ট পরি না। আগে পরতাম। ফুপি বারণ করে দিয়েছে। ওয়েস্টার্ন সব জামা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। এখানে তো থ্রি পিস, কুর্তি এসবই পরি আমি। তুমি নাহয় আমার নতুন কুর্তি পরে নিচে চলো!’
হিমি বিরোধীতা করলো না। হৃদি ঝড়ের বেগে নিজের ঘর থেকে নতুন কেনা লাল রঙা কুর্তি আর ম্যাচিং পায়জামা ওড়না নিয়ে এলো। হিমি মৃদু হেসে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকলো। কিছুক্ষন পর নিজের জামা গায়ে বের হতে দেখা গেলো তাকে। হৃদি কৌতুহলী গলায় বললো,
‘আবার তোমার জামা পরলে কেনো?’
‘তুমি অতিরিক্ত শুকনা হৃদি। তোমার ওই কুর্তি আমার গায়ে আঠার মতো লেগে যাচ্ছে। হাত নাড়াতেও কষ্ট হবে। পায়জামাও একরকম। আমি তোমার জামা পরে শ্বাস নিতে পারব না।’
‘তাহলে এখন কি করবো?’
কাতর গলায় প্রশ্ন করলো হৃদি। হিমি কিছু একটা ভেবে বললো,
‘তোমার ভাই তো আমার মতো আই মিন শার্ট প্যান্ট পরে। আমি নাহয় তার জামাই পরি আজ।’
‘ভাইয়ার কাপড়? তোমার হবে?’
হিমিও ভাবলো। তাহির বলিষ্ঠ, সুঠাম দেহী পুরুষ। তার গায়ের পোশাক হিমির গায়ে হ্যাঙারে থাকা কাপড়ের মতো ঝুলবে বোধ হয়। তবুও উপায় নেই। বাধ্য হয়েই তাহিরের পারমিশন ব্যতীত তার আলমারি ঘেটে খয়েরি রঙের শার্ট আর জিন্স বের করলো হিমি। গায়ে শার্ট লাগিয়ে দেখলো মোটামোটি ঠিকঠাক লাগছে। কিন্তু জিন্স কোমরে ঠেকাতেই বুঝতে পারলো তাহির দৈত্যের মতো লম্বা। জিন্স পেটের উপরে পরলেও গোড়ালি ছাড়িয়ে যাবে। হিমি অসহায় মুখে তাকালো হৃদির দিকে। হৃদি আবারও ছুট লাগালো নিজের ঘরে। লুকিয়ে রাখা জিন্স নিয়ে ছুটে এলো হিমির কাছে। এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘এটা বোধ হয় তোমার হবে। ফ্রি সাইজ।’
হিমি জিন্স আর শার্ট নিয়ে আবারও ওয়াশরুমে ঢোকলো। এবার এই পোশাকগুলো পারফেক্ট হয়েছে তার গায়ে। যদিও শার্ট বেশ ঢোলা। হাতা কনুইয়ের কাছে গুটিয়ে রাখলো হিমি। চুলে চিরুনি চালিয়ে হৃদির সাথেই নিচে চললো সে। হৃদির চেহারায় ভয় স্পষ্ট। সে খুব ভালো করেই জানে মায়মুনা জামানের এসব পছন্দ নয়। বিশেষ করে মেয়েরা যখন ছেলেদের মতো পোশাক পরে তখন তিনি রেগে যান। আর এতো বাড়ির বউ হয়ে বিয়ের পরের দিন সকাল বেলাতেই অঘটন ঘটিয়ে দিলো!
খাবার টেবিলে সামনে চায়ের পেয়ালা নিয়ে বসে আছেন মায়মুনা। আত্মীয়দের মধ্যে কয়েকজন নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। বাকিরা ব্রেকফাস্ট করছে। এমন সময় হিমিকে নিচে নামতে দেখে চোখ গরম করে তাকালেন মায়মুনা। নিকট আত্মীয়দের মুখ হা হয়ে আছে। হিমির তাতে কোনো ভাবোদয় হলো না। দিব্বি নিচে নেমে খাবার ঘরের পাশে এসে দাঁড়ালো। মায়মুনা রেগে মেগে কিছু বলবেন তার আগেই হৃদি দৌড়ে গেলো ওনার কাছে। কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিস কন্ঠে বললো,
‘ফুপি? ভাবি শাড়ি পরতে জানে না। আমিও পারি না। তাই বাধ্য হয়েই ভাইয়ার জামা পরতে হয়েছে। আমার জামাগুলো ফিট হচ্ছে না।’
মায়মুনা জামান শান্ত হলেন কিছুটা। পাশ থেকে কটমটে গলায় হৃদির মা বলে উঠলেন,
‘হবে কি করে? শরীরে তো খালি হাড্ডি তোমার। বাঁশের মতো শরীরে যা তুমি পরবে তা কি অন্য কেউ পরতে পারবে? তোমার ডায়েটের আমি গোষ্ঠী উদ্ধার করবো দেখো!’
…………………………
‘আপনাদের কি মনে হয় না এভাবে মেয়ের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছেন?’
মায়মুনা জামানের কথার বিপরীতে হিমির পরিবারের লোকজন থতমত খেয়ে গেলেও মোজাম্মেল সাহেব হাসলেন। ঠোঁট চওড়া করে বললেন,
‘আপনার ঘরে মেয়ে দিয়েছি এতে ভুল হবে কেনো? বরং ভালো হয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য!’
‘এমনটা মনে হওয়ার কারন?’
‘বেয়ান সাহেবা আপনি বোধ হয় আমাদের চিনতে পারেন নি। অবশ্য চেনার কথাও নয়। বেয়াই সাহেবের সাথে আপনাকে কখনো আমাদের বাড়ি আসতে দেখি নি।’
মায়মুনা জামান ভাবুক গলায় বললেন,
‘বেয়াই সাহেব কে?’
‘আপনার স্বামী। তৌসিফ।’
মায়মুনা জামানের চোখে বিস্ময়। তৌসিফ মাহমুদ ওবাড়িতে গেছে? কেনো গেছে? উনিই চাল চেলে উচ্ছৃঙ্খল, উচ্ছন্নে যাওয়া মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন? এতোদিন তবে আড়ালে ছিলেন? কথাগুলো আপন মনেই ভাবলেন মায়মুনা। কপালে জমলো বিন্দু বিন্দু ঘাম। ধাতস্থ হয়ে বললেন,
‘তাহিরের বাবার সাথে আপনাদের কি করে আলাপ হলো?’
‘সে তো অনেক কাহিনী। ছোট করে বলি?’
মায়মুনা মাথা দুলালেন। মোজাম্মেল সাহেব আঙুলের ইশারায় মুহিব রহমানকে দেখিয়ে বললেন,
‘কনের বাবার সাথে বরের বাবার গলায় গলায় ভাব ছিলো একসময়। তৌসিফ যে অফিসে কাজ করতো সে অফিসের সাথে আমাদের ফ্যামিলি বিজন্যাসের পার্টনারশীপ ছিলো। মুহিব আর তৌসিফ বরাবরই একসাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো বলে ওদেরকে একই প্রজেক্টে কাজ করতে দেয়া হতো। তৌসিফ তো ছেলেকে নিয়ে প্রায়সই বাড়ি আসতো। তখন মুহিবের বিয়ে হয় নি। ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যবসার আলাপ শেষে পারিপার্শ্বিক কতো গল্প যে করতো তৌসিফ!’
মায়মুনা জামান সন্দিহান গলায় বলেন,
‘তাহিরের বাবা রিসেন্টলি আপনাদের বাড়ি গেছিলেন?’
‘না। ও তো সেই বাইশ তেইশ বছর আগে যেতো। অনেক বছর যোগাযোগ নেই। হিমি না বললে জানতামও না তাহির যে তৌসিফের ছেলে। এখন তো আবার তৌসিফ বলা যাবে না। বেয়াই সাহেব বলতে হবে!’
কথাটা বলে হাসলেন মোজাম্মেল সাহেব। বললেন,
‘তা বেয়াই সাহেব কোথায়? ডাকুন। কথা টথা বলি। নতুন সম্পর্কে মানিয়ে নিতে হবে তো!’
মায়মুনা জামান গাঢ় নিঃশ্বাস ফেললেন। মুহিব রহমান ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বললেন,
‘মেয়ের বিয়ে এভাবে হোক চাই নি বেয়ান। আমাদের অগোচরেই হয়ে গেছে। অনেক স্বপ্ন ছিলো, ইচ্ছে ছিলো সব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। প্রথমে ভয় এবং রাগ দুটো অনুভব হলেও এখন হচ্ছে না। কোনো এক অজানা কারনে মনে হচ্ছে আমার মেয়ের জন্য এই পরিবারই শ্রেষ্ঠ। আমার মা সব সময় একটা কথা বলতেন, আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্য করেন। আমিও তাই বিশ্বাস করি। আশা রাখছি এই বিয়েতে আপনার ছেলে এবং আমার মেয়েরও ভালো নিহিত। ওরা সুখী হলেই আমরা সুখী।’
মায়মুনা জামান প্রত্যুত্তর করলেন না। মোজাম্মেল সাহেব এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন,
‘হিমিকে দেখছি না যে! ঘরে?’
আমিনা বেগম যেনো এ প্রশ্নটার অপেক্ষাতেই ছিলেন। স্বামী প্রশ্ন করতেই চোখ উজ্জ্বল করে তাকালেন তিনি। মায়মুনা জামান ইশারায় পিউকে ডাকলেন। বললেন,
‘তাহিরের ঘরটা দেখিয়ে দাও।’
আমিনা বেগম উঠে দাঁড়ালেন। মুহিব রহমান জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললেন,
‘হিমিকে এখানে ডাকা যায় না?’
‘ডাকা যায়। তবে আমি ডাকতে চাইছি না। নতুন বউ। ঘরে থাক। যারা দেখা করতে চাইবে তারা দেখে আসবে। বউ ও আর সবার মতো শানত শিষ্ট নয়। প্রচন্ড বেয়াদব। বড়দের মুখের উপর কথা বলতে দুবার ভাবে না। কখন কাকে কি বলে বসে কে জানে! তার উপর মেয়ে হয়েও মেয়েলী স্বভাব নেই। এ কেমন শিক্ষা দিয়েছেন আপনারা? শাড়ি পরতে জানে না, সালোয়ার কামিজ পরে না, কিসব ছেলেদের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়। চুলগুলোও সোজা না। আপনাদের খারাপ লাগলে দুঃখিত তবে এমন ধারা মেয়ে আমি আমার ছেলের জন্য চাই নি।’
মুহিব রহমান যদি জানতেন ওনার একটা প্রশ্নে মায়মুনা জামান এতো কথা বলবেন তবে উনি প্রশ্নটা করতেন না। মায়মুনার কথা শোনে এবং মুখ দেখে মনে হচ্ছে এতক্ষন ধরে এসব কথা জমিয়ে রেখেছিলেন তিনি। হিমির বাবা প্রশ্নে উগরে দিলেন শুধু। আমিনা বেগম তটস্থ হয়ে স্বামীর দিকে তাকালেন। তিনি হাসি হাসি মুখ করে বললেন,
‘যাও যাও মেয়েকে দেখে এসো। আমরা পরে আসছি।’
আমিনা বেগম মাথার আঁচল ঠিক করে পিউয়ের সাথে চললেন। মোজাম্মেল সাহেব চায়ের পেয়ালা হাতে উঠালেন। এক চুমুক চা খেয়ে নিয়েই বললেন,
‘বললেন না তো, তৌসিফ কোথায়? বাইরে গেছে?’
‘বাইরে গেছিলেন। ফিরেন নি।’
‘ওহ। কোথায় গেছে? মানে, কখন ফিরবে? যাওয়ার আগে দেখা হয়ে গেলে ভালো হতো।’
‘উনি আর ফিরবেন না। চলে গেছেন।’
চমকালেন মুহিব রহমান। ফিরবেন না মানে কি? তৌসিফ কি মারা গেছে? কবে হলো এমন? মোজাম্মেল সাহেব চায়ের কাপ টেবিলে নামিয়ে রেখে বললেন,
‘সরি টু হিয়ার দিছ নিউজ।’
‘আপনারা ভুল ভাবছেন। মা বলতে চেয়েছেন বাবা আমাদের সাথে থাকেন না। অনেক আগেই চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে।’
তাহিরের কথা শোনে ঘাড় ঘুরালেন সবাই। সে এগিয়ে এসে মায়মুনা জামানের সোফার পাশে দাঁড়ালো। রাদিবা ভ্রু উচিয়ে বললেন,
‘কেনো চলে গেছেন?’
তাহির পকেটে হাত গুজে রেখে বললো,
‘পারিবারিক কিছু সমস্যার কারনে।’
‘কোথায় গেছে জানো না?’
‘না। বাবা আমাদের থেকে দূরে থাকতেই চলে গেছিলেন। তাই বলে যান নি কোথায় যাচ্ছেন। আমরাও জানতে পারি নি। এনিওয়ে, হিমির সাথে দেখা হয়েছে? উনি আপনাদের সবাইকে খুব মিস করছেন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। বসুন আপনারা।’
মুহিব রহমান ভড়কে যাওয়া চোখ জোড়া মেলে তাকালেন। এমন একটা ভাঙা সংসারে মেয়ের বিয়ে হলো! ব্রোকেন ফ্যামিলিতে বড় হওয়া ছেলে কি আদৌ হিমির জন্য যথাযথ? ভেবে পান না তিনি। তাহিরের মায়ের কথাবার্তায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ওনার ধ্যান ধারনা কেমন। বুঝা যাচ্ছে হিমির উপর ভীষন অসন্তোষ তিনি। এই অসন্তুষ্ট মহিলা কি কখনো মেনে নিবেন হিমিকে? বাবা হয়ে তিনি জানেন ওনার মেয়ে কখনোই বদলাবে না। জেদীরা তাদের আশেপাশের কারো কথা কানে তুলে না। যেমন থাকতে চায়, যা করতে চায় তাই করে, তেমনই থাকে। হিমিও তেমনটা থাকবে। তৌসিফের মতো একজন মানুষ যে কিনা ছেলের জন্য পাগল ছিলো সেই কিনা ছেলে, স্ত্রীকে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো! কেনো হলো? নিরুদ্দেশ হওয়ার পেছনে উদ্দেশ্যটা কি তার? আজীবন ছন্নছাড়া, হাসিখুশি থাকা মানুষটা নিজের পরিবার থেকে দূরে থাকছেই বা কেনো? কোথায় আছে তৌসিফ? বেঁচে আছে? জানতে হবে মুহিব রহমানকে। মেয়ের কথা ভেবে হলেও সবটা জানতে হবে।
চলবে,,,,,,,,,
হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৪৯.
ব্যালকনির দরজার পাল্লায় মাথা ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে আছে হিমি। পা দুটো ভাজ করে দু হাতে আকড়ে আছে। ব্যালকনিতে ছাদ নেই। মাথার উপর মেঘে ঢাকা আকাশ। চাঁদ নেই, তারা নেই। প্রকৃতিতে গুমোট ভাব। তাহির সারাদিনে আর বাইরে যায় নি। ঘরেই ছিলো। কখনো রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করেছে, কখনো বসার ঘরে সোফায় বসে টেলিভিশন দেখেছে। আত্মীয়ারা সবাই বাড়ি ফিরেছেন সন্ধ্যার আগে। মায়মুনা জামান এখন কিছুতেই রিসেপশন করছেন না। সুতরাং থেকেও লাভ নেই। হিমি ঘর থেকে বের হয় নি। সারাদিন ঘোরার মতো ছুটতে থাকা মেয়ে আজ ঘরকুনোদের মতো বসে থেকেছে। হিমির পরিবারের সবার মধ্যে শুধু আমিনা বেগম আর মোজাম্মেল সাহেব তার সাথে দেখা করেছেন। আর কেউ উপরে আসে নি। হিমির কিছুটা মন খারাপ হয়েছে এতে। বাবা কেনো দেখতে এলো না তাকে? এতোটাই অপছন্দ করে যে বাসায় এসেও একবার চেহারা দেখলো না! একটাবার কথা বলতে ইচ্ছে করলো না? এদিকে মামু না এসেও ঠিক ফোন করে খোঁজ নিয়েছে। বাবা জানতেও চাইলো না হিমি কেমন আছে? ভাবনার সুতো ছিড়ে যায় তাহিরের ডাকে। হিমি পেছন ফিরে তাকায়। তাহির ভ্রু নাচিয়ে বলে,
‘ওখানে বসে আছেন কেনো? ঠান্ডার মধ্যে আরো ঠান্ডা লাগবে। ভেতরে আসুন।’
হিমি জবাব না দিয়ে আবারও আগের মতো মাথা ঠেকালো দরজার পাল্লায়। মাথা উঁচিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘বাচ্চা ডাক্তার? আপনার বাবা পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন?’
চমকে উঠে তাহির। হিমি কি করে জানলো এসব? ভেবে পায় না সে। চমকে উঠা গলাতেই প্রশ্ন করে,
‘আপনাকে কে বললো?’
‘কেউ বলে নি।’
‘তবে জানলেন কি করে?’
‘মনে হলো।’
‘হঠাৎ করে মনে হলো?’
‘না। আগে থেকেই সন্দেহ করেছিলাম। এমনি এমনি তো সংসার ভাঙেনা! কিছু একটা ছিলো নিশ্চয়।’
‘সন্দেহ পাকাপোক্ত হলো কখন?’
কথা বলতে বলতে হিমির পাশে এসে বসলো তাহির। তার দৃষ্টি সম্মুখে স্থির। হিমি বাঁকা হেসে বললো,
‘যখন হওয়ার তখন। এখন বলুন তো, যে মানুষটা পরকীয়া করতো তাকে আপনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবার উপাধি দেন কেনো? ভালোবাসেন কেনো?’
তাহির শুকনো হাসলো। বললো,
‘পরকীয়া করার পরেও তিনি পিতৃ স্নেহ ভুলে যান নি হিমি। আমায় আমার প্রাপ্য ভালোবাসার থেকে আরো কয়েকগুন বেশি ভালোবেসেছেন। আমার প্রতি থাকা সব দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করেছেন। বাবাকে আমি ভালোবাসি শুধু এই একটি কারনে। তিনি আমায় প্রচন্ড ভালোবাসতেন। কখনোই আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলেন নি। ধমকান নি। ওনার প্রতি আমার অন্য এক টান ছিলো। এই টানের কারনেই বাবাকে ঘৃণা করতে পারি না। ভুলতে পারি না। আরেকটা কথা কি জানেন? যাকে ভালোবাসা যায় তাকে একই সাথে ঘৃণা করা যায় না। ঘৃণা করতে হলে ভালোবাসা ভুলতে হয়। আমি ভালোবাসা ভুলতে পারছি না। উনি তো আমার প্রতি কোনো অন্যায় করেন নি।’
‘করেন নি? আপনার মাকে রেখে অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন তিনি। আর আপনি বলছেন!’
‘সেটাই তো বলছি। মায়ের প্রতি অন্যায় হয়েছে। আমার প্রতি নয়।’
হিমি ভ্রু কুঁচকে মাথা তুলে তাহিরের দিকে তাকালো। তাহির এখনো সম্মুখে দৃষ্টি রেখে আছে। বেশ কিছুক্ষন পর মৃদু নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
‘বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া মানুষের বৈশিষ্ট। যদিও জীবনে একজনকে রেখে অন্য জনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া অন্যায়, পাপ। তবে বাবা সেটাই করেছিলেন। আসলে মা কখনোই বাবাকে ভালোবাসতে চান নি। তাই ভালোও বাসেন নি। বাবার ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছিলো বলে জেদ ধরে ভালোবাসেন নি।’
‘জেদ ধরে ভালোবাসা থেকে বিরত থাকা যায়?’
‘যায়। আর যায় বলেই বাবা মায়ের বদলে অন্য একজনকে ভালোবেসেছিলেন। এসব কিছুই মায়ের থেকে লুকনো ছিলো না। মা সব জানতেন। জেনে শুনেই খারাপ ব্যবহার করতেন বাবার সাথে। বাবাও কম যান না! ঝগড়া লেগে যেতেন। সারাদিন বাইরে কাটিয়ে রাতে ঘরে ফিরেই তুমুল ঝগড়া বাঁধতো ঘরে। আমি চুপ করে এক কোনে বসে থাকতাম। বাবা হঠাৎই আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে যেতেন। তারপর বেরিয়ে যেতেন। কোনোদিন বাড়ি ফিরতেন কোনোদিন ফিরতেন না। মায়ের তাতে কোনো সমস্যা ছিলো না। মায়ের সমস্যা ছিলো বাবা কেনো অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়ালেন।’
‘তারমানে তো আন্টি আঙ্কেলকে ভালোবাসতেন।’
‘না। মায়ের অপমান বোধ হতো। ওনার মতে, ওনাকে রেখে অন্যকারো প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বাবার ভুল। মায়ের মতে বাবা আজীবন মায়ের স্বামী হয়েই থাকবেন, তবে একে অপরকে ভালোবাসবেন না।’
তাহিরের কথা হিমির মাথার উপর দিয়ে গেলো। সে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে হাটু ভাজ করে মেঝেতে রাখলো। সোজা হয়ে বসে বললো,
‘আপনি জানতেন আঙ্কেলের পরকীয়ার ব্যাপারে?’
‘জানতাম। আমি তো বাবার সেই প্রেমিকার বাড়িতেও গিয়েছিলাম।’
হিমি গোল গোল চোখ করে তাকালো। তাহির হিমির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,
‘তখন অবশ্য আমি জানতাম না উনার আর বাবার মধ্যে কি চলছে।’
‘কখন জেনেছিলেন?’
‘যখন মিতা আন্টিকে বাবা বিয়ে করেন তখন। বিয়ে করে সোজা বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। দাদু, দিদা, জ্যাঠু সবাই খুব বকেছিলেন বাবাকে। সন্ধ্যের দিকে বাবা বাড়ি থেকে চলে যান। আমি ভেবেছিলাম বাবা আর সবদিনের মতোই গেছেন। কিন্তু না। বাবা আর সবদিনের মতো যান নি। একেবারেই চলে গেছিলেন। আর ফিরেন নি তারপর।’
‘আন্টি রিয়েক্ট করেন নি?’
‘উহুম। মা খুব স্বাভাবিক ছিলেন। বাবা যখন মিতা আন্টিকে নিয়ে বাড়ি আসেন তখন সবাই অবাক হয়েছিলো, রাগ ঝাড়ছিলো, দিদা কাঁদছিলেন। মা চুপচাপ দেখছিলেন। সেদিন মা কাঁদেন নি, রাগ করেন নি। ঝগড়াও করেন নি। কিছুক্ষনের মধ্যেই মিতা আন্টি নিজের বাড়ি চলে যান। তারপর দাদুদের চেঁচামেচি আরো বাড়ে। বাবা কোনো কথার জবাব দেন নি। মাও চুপচাপ। যেনো কিছুই হয় নি। রাতে বাবা না ফিরলেও কারো কোনো চিন্তা হয় নি। কারন মাঝে মাঝেই বাবা এমন করতেন। কিন্তু পরদিনও বাবাকে ফিরতে দেখা গেলো না। ফোন বন্ধ। দিদা কান্নাকাটি শুরু করেন। দাদু আর জ্যাঠু বেরিয়ে পরেন বাবাকে খুঁজতে। মা তখন রান্নাঘরে তরকারি বানাচ্ছেন। আমি মায়ের কাছ ঘেষে দাঁড়াতেই মা বলেছিলেন, “বাবাই! সেমাই করেছি। বাটি টা আনতো। খেয়ে দেখ কেমন হয়েছে।” আমি মায়ের কথা মতো বাটি আনলাম। মা বাটি ভর্তি করে সেমাই দিলেন। আমি খেলাম। সেমাইয়ে চিনি ছিলো না। একটুও না। খুব পানসে লাগছিলো খেতে। মা স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করছিলেন। আমার মনে হচ্ছিলো বাবার চলে যাওয়াতে মা খুশি হয়েছেন। সেমাই রান্না করে খুশি জাহির করছেন। খুশি উদযাপন করছেন।’
হিমি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো,
‘আঙ্কেল হয়তো ওই মহিলার বাড়িতেই ছিলেন?’
‘আমিও তাই ভেবেছিলাম প্রথমে। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বাবা ওখানে যান নি। আপনি যে ঠিকানা দিয়েছিলেন, ওটাই মিতা আন্টির বাড়ি ছিলো। বাবার নিখোঁজ হওয়ার অনেকদিন পর আমি একদিন স্কুল পালিয়ে আন্টির বাড়ি গেছিলাম। দেখলাম বিছানায় একটা ছোট্ট পুতুলের মতো বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। মিতা আন্টি আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরেছিলেন। খুব কাঁদছিলেন। বার বার জানতে চাইছিলেন বাবাকে পাওয়া গেছে কি না? বাবা ফিরলে যেনো ওনাকে একবার জানানো হয় সেকথাও বলছিলেন। সেই প্রথম আমার মায়েয় উপর রাগ হয়েছিলো। মা কেনো আন্টির মতো বাবাকে ভালোবাসে না? আন্টির মতো কেনো বাবার জন্য কাঁদে না? চিন্তা করে না? সাথে সাথে বাবার জন্য মায়া হয়েছিলো। বাবার নিশ্চয় মায়ের সাথে থাকতে বিরক্ত লাগতো!’
এটুকুতে থামলো তাহির। প্রাণ হীন হাসি হেসে বললো,
‘আপনি জানেন কেনো আমি বাবাকে খুঁজছি?’
হিমি মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো, ‘না। সে জানে না’। তাহির ছোট্ট নিঃশ্বাস টেনে বললো,
‘কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে।’
‘কি প্রশ্ন?’
‘বাবা যাতে মিতা আন্টিকে বিয়ে করতে পারেন তার জন্য মা বাবাকে ডিভোর্স দিতে চাইছিলেন। কিন্তু বাবা ডিভোর্স পেপারে সাইন করেন নি। হুট করে বিয়ে করে ফেলেছিলেন। আমার প্রথম প্রশ্ন হলো, বাবা যদি মায়ের সাথে থাকতে নাই চাইতেন তবে ডিভোর্স দিলেন না কেনো? দ্বিতীয় প্রশ্ন, বিয়ে যদি করলেনই তবে আন্টিকে ফেলেই বা গেলেন কেনো? তৃতীয় প্রশ্ন, আমার প্রতি দায়িত্ব পালন করলেও মৃত্তিকার প্রতি অবহেলা করে চলে গেলেন কেনো?’
‘মৃত্তিকা কে?’
‘ওই যে বললাম না, স্কুল পালিয়ে আন্টির বাড়ি গিয়ে দেখেছিলাম খাটে ঘুমন্ত এক পুতুলকে? ওর নাম মৃত্তিকা। বাবা আর মিতা আন্টির মেয়ে। ওদের বিয়ের আগেই মিতা আন্টি প্রেগন্যান্ট ছিলেন। ইন ফ্যাক্ট, যখন ওনারা বিয়ে করেন তখন আন্টির ছয় বা সাত মাস চলছিলো।’
কথাটা শুনেই হিমির গা রি রি করে উঠলো। বিয়ের আগেই বাচ্চা! এই মুহুর্তে তাহিরের বাবাকে বিশ্রী মানসিকতার একজন মানুষ মনে হচ্ছে হিমির। তাহির সন্দিহান গলায় বললো,
‘আপনিও মায়ের মতো বাবাকে দোষারোপ করছেন?’
হিমি প্রত্যুত্তর করলো না। দু হাত মাথার পেছনে রেখে দরজায় ঠেস দিলো। তাহির বললো,
‘মা চাইলেই কিন্তু বাবাকে ভালোবাসতে পারতেন। বাবাকে আটকাতে পারেন। কিন্তু তিনি সেটা করেন নি। আমার ধারনা বাবা মাকে নিজের পরকীয়ার ব্যাপারে একারনেই বলেছিলেন যেনো মা বাবাকে আটকান। অথচ মা বাবাকে ঘৃণা করতে লাগলেন। মাকে ভালো না বাসার জন্য নয় বরং অন্যকে ভালোবাসার অপরাধে। বাবার কষ্ট হয়েছিলো। আর তাই,,,,’
‘তাই অন্য এক মহিলায় মত্ত হলেন?’
‘হয়তো বাধ্য হয়েছিলেন!’
‘তারমানে বলতে চাইছেন ঘরে ভালোবাসা না পেলে পরকীয়া করতেই পারেন?’
‘ঘরে খাবার না থাকলে ক্ষুধার্তরা চুরি করে। পেটের দায়ে চুরি করে। ঠিক তেমনি বাবাও ভালোবাসা পেতে করেছেন।’
‘পেটের দায়ে চুরি করলেও চুরি তো চুরিই!’
‘হুম তবে পরিস্থিতি লক্ষনীয়!’
‘আপনার বাবা চাইলে আন্টির দিকে ভালোবাসার হাত বাড়াতে পারতেন বাচ্চা ডাক্তার।’
‘হয়তো বাড়িয়েছিলেন। মা ধরেন নি। আমরা তো আর সবটা জানি না!’
‘আপনি না মা ভক্ত ছেলে! হঠাৎ মাকে দোষারোপ করে বাবার প্রতি উৎফুল্ল হচ্ছেন যে?’
তাহির নিঃশব্দে হাসলো। বললো,
‘মাকে আমি শ্রদ্ধা করি। কষ্ট দিতে চাই না। মায়ের চোখের পানি পরুক এমন কোনো কাজ আমি করি না। তবে বাবাকে মায়ের থেকেও বেশি ভালোবাসি আমি। মা ছোটবেলা থেকেই আমায় বাধা ধরা নিয়মের মধ্যে বড় করেছেন। উনার যা আমার জন্য ঠিক মনে হয়েছে তাই করেছেন। আমি কি চাই না চাই সেসব ভাবেন নি। আমাকেও ভাবতে দেন নি।’
হিমি তাচ্ছিল্য গলায় বললো,
‘আপনার মা আর আমার বাবা, একই প্রকৃতির।’
‘জানেন হিমি, বাবা সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। বিশেষ করে, বাশি, হারমোনিয়াম, পিয়ানো, ড্রাম, ভায়োলেন। এমনটি গানও গাইতেন। কিন্তু মা এসব পছন্দ করতেন না। কারন কি হতে পারে বলুন তো?’
‘আপনার বাবা এসব পছন্দ করতেন তাই!’
‘এক্সেক্টলি। জাস্ট বিকোউজ, বাবা গান ভালোবাসেন মা আমায় গান গাইতে দেন নি। বাবা বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন বলে মা আমায় বাজাতে দেন নি। এমনকি বাবার রেখে যাওয়া সব ইন্স্ট্রুমেন্টস মা ফেলে দিয়েছিলেন। বেঁচে গেছিলো ছোট্ট পিয়ানো।’
হিমি আড়চোখে তাহিরকে দেখে বললো,
‘আর ওই গিটার? সেটা কি করে বেঁচে গেলো?’
‘গিটার টা বাবার নয়। আমার। মায়ের বাধ্যগত সন্তান হয়েও কলেজ লাইফে গিটারের লোভে অবাধ্য হয়ে গেছিলাম। মায়ের বানিয়ে দেয়া সোনার ব্রেইসলেট বিক্রি করে, আরো কিছু জমানো টাকা মিলিয়ে গিটার কিনেছিলাম।’
‘বাজাতে পারেন?’
‘ছোটবেলায় বাবা শিখিয়েছিলেন। বাবা যাওয়া পর আর চর্চা করি নি।’
‘তাহলে ওতো টাকা নষ্ট করে কিনলেন কেনো?’
‘শখের বসে।’
‘এখন যদি বাজাতে বলি বাজাবেন?’
‘মায়ের কথা অমান্য করে গিটার কিনলেও বাজাই নি কখনো। তাই বলতে পারছি না পারবো কি না।’
হিমি হাসলো। বললো,
‘কম্প্লিকেটেড!’
ঘরের বাইরে থেকে ডেকে উঠে হৃদি,
‘ভাইয়া? ভাবি? খেতে এসো। ফুপি ডাকছে।’
তাহির উঠে দাঁড়ালো। হিমি তখনও নিচে বসে। তাহির টিশার্ট ঠিক করছ বললো,
‘চলুন। খাবেন না?’
হিমি অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,
‘খিদে নেই।’
‘রাতের খাবারের সাথে আপনার শত্রুতা আছে না কি? কাল রাতেও খেলেন না। আজও খেতে চাইছেন না!’
‘তা নয়। আসলে নতুন সব কিছু। কেমন যেনো দমবন্ধকর লাগছে।’
তাহির খেতে গেলো না। দরজা খোলে হৃদিকে মানা করে দিলো। ঘরের উজ্জ্বল আলো নিভিয়ে নীল রঙা ডিম লাইট জ্বালালো। শার্ট পাল্টে টিশার্ট পরে খাটে আধশোয়া হয়ে ব্যালকনিতে বসে থাকা হিমির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো। হিমির মনে হলো সে খেতে চাইছে না বলেই তাহির খেতে যাচ্ছে না। হিমির তো না খেয়েও অভ্যাস আছে। বাচ্চা ডাক্তারের হয়তো নেই। যার যা অভ্যাস নেই সে তা করতে পারে না। বাচ্চা ডাক্তারও রাতে না খেয়ে থাকতে পারবে না। পেট ব্যাথা করবে। অনিচ্ছা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো হিমি। তাহিরের দিকে তাকিয়ে দরজা খোলে বাইরে গেলো। তাহির মৃদু হেসে পিছু চললো তার।
চলবে,,,,,,,