হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
১৬.
‘দোষ আমার মায়েরও ছিলো না। উনি ভুল বুঝেই কথাগুলো বলে ফেলেছিলেন। তাই ওনার হয়ে ক্ষমা চাইছি। কেউ ক্ষমা চাইছে তাকে ক্ষমা করে দিতে হয়।’
‘আমি মহান নই ডাক্তার। সবাইকে ক্ষমা করতে পারি না। তবে আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম। কারন সেদিনকার সব কথা খেয়াল নেই আমার।’
হিমির কথায় তাহির ভ্রু কুঁচকালো। হিমি একমনে চাঁদকে দেখছে। পাশেই যে কেউ একজন দাঁড়িয়ে তার চেহারায় চোখ দুটো নিরন্তর ছুটিয়ে চলছে সেসবের হুশ নেই হিমির। বেশ অনেকক্ষন নিরবতায় কাটানোর পর তাহির সোহিনীর কথা জিজ্ঞেস করলো। হিমি শান্ত গলায় বললো,
‘ও ভালো আছে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার দুদিনের মাথাতেই ফিট একদম!’
তাহির মাথা ঝাঁকালো। কৌতুহলী গলায় বললো,
‘এতো রাতে এখানে কি করছেন? কোনো সমস্যা?’
হিমি চাঁদের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে জবাব দিলো,
‘সমস্যা তো সবখানেই। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি?’
‘বুঝলাম না।’
‘কিছু না। আপনি বাড়ি যান ডাক্তার।’
তাহির অস্বস্তি নিয়ে বললো,
‘আমার নাম তাহির মাহমুদ। ডাকতে হলে নাম ধরে ডাকুন। আর নাহলে ডাক্তার তাহির। শুধু ডাক্তার শুনতে অকওয়ার্ড লাগছে।’
হিমি এবার চোখ ফেরালো তাহিরের দিকে। তাহিরকে আগাগোড়া দেখে নিয়ে বললো,
‘সবাই আপনাকে কি বলে ডাকে?’
‘কোন সবাই?’
‘পেশেন্ট!’
‘ডাক্তার সাহেব, ডাক্তার বাবু, ডক্টর। এসবই। কেনো?’
‘ইংরেজিতে ডক্টর ডাক শুনলে অসুবিধা হয় না আর বাংলায় ডাক্তার শুনতে অকওয়ার্ড লাগে?’
কথাটা বলে বাঁকা হেসে নিচে নদীর দিকে তাকালো হিমি। অন্যমনস্ক গলায় বললো,
‘কিসের ডাক্তার আপনি?’
‘চাইল্ড সাইকিয়াট্রীস্ট!’
হিমি মৃদু হেসে বললো,
‘ডান। আপনাকে আমি বাচ্চা ডাক্তার বলে ডাকবো।’
তাহির থমকে গেলো। গুরু গম্ভীর গলায় বললো,
‘কিহ! কেনো?’
‘ইচ্ছে হলো তাই ডাকবো ব্যাস। এখানে কেনো ফেনোর কোনো স্থান নেই।’
হিমি ঝুলানো পা দুটোই রেলিঙের উপর তুলে নিলো। পা ভাজ করে বসে তাহিরের মুখোমুখি হলো। তাহির আঁত্কে উঠা গলায় বললো,
‘করছেন কি? পরে যাবেন তো!’
‘পরবো না। পরলেও কিছু হবে না। রিলেক্স!’
কয়েক সেকেন্ড থেমে বললো,
‘আপনার চশমায় পাওয়ার আছে?’
তাহির মাথা উপর নিচ করলো। হিমি এক হাত বারিয়ে দিয়ে বললো,
‘আমি একটু পরবো দিবেন?’
তাহির চমকালো। অচেনা অপরিচিত একজনের সাথে কি অদ্ভুত ভাবে কথা বলছে মেয়েটি। কোনো সংকোচ নেই বাধা নেই যেনো। তাহিরকে ভাবতে দেখে ঠোঁট উল্টালো হিমি। অভিমানী গলায় বললো,
‘চশমা পরবো শুধু নিয়ে তো যাচ্ছি না। দিন না!’
তাহির চশমা খোলে এগিয়ে দিলো। হিমি চশমার কাচে ফু দিয়ে টি শার্টে মুছে চোখে দিলো। তাহিরের উদ্দেশ্যে বললো,
‘কি ঝাপসা! আপনি দেখেন কি করে?’
তাহির হাসলো। বললো,
‘আমার চোখে চশমা না থাকলে ঝাপসা লাগে। চশমা পরলে সব পরিষ্কার।’
হিমি তৎক্ষণাৎ চশমা খোলে তাহিরের চোখে লাগিয়ে দিয়ে বললো,
‘তাহলে চশমা খুলবেন না কখনো। ঝাপসা লাগলে খুব অস্বস্তি হয়। উফ!’
তাহির সন্দিহান চোখে তাকালো হিমির দিকে। হিমি দু হাতে ভাজ করা পায়ে চাপ দিয়ে বললো,
‘একটা গল্প বলবো। শুনবেন?’
তাহির জবাব দিলো না। হিমি তাহিরের জবাবের অপেক্ষা না করেই বলতে লাগলো,
‘গল্পের সূচনা হয় তেইশ বছর আগে। পারিবারিক ব্যবসা করা এক যুবক ভার্সিটি পড়ুয়া এক অসম্ভব সুন্দরী তরুণীর প্রেমে পরে। প্রেমে পাগল প্রায় যুবকের কাছে ঘেষতো না তরুণী। মাথা নুইয়ে চলাচল করতো সর্বদা। যুবক কথা বলতে চাইলেও তরুণী এড়িয়ে যেতো তাকে। রাগি গলায় কথা বলতো। তরুণীর মন গলাতে অনেক পরিশ্রম করেছিলো যুবক। শেষমেষ সে সফল হয়। তরুণীয় ভালোবেসে ফেলে তাকে। কিন্তু প্রেমের শত্রুদের জন্য তারা এক হতে চেয়েও পারে না। তরুণীর বাবা, ভাই কিছুতেই প্রেম ভালোবাসা মেনে নিবেন না। যুবকের বাবা মায়েরও একই রায়। যদিও তরুণীর পরিবার টাকা ওয়ালা ছিলো তবুও যুবকের পরিবার মানতে নারাজ। তরুণীর দিকটাও একই রকম। এক সময় তরুণীকে ঘরে বন্দী করে রাখা হলো। যুবকের বাবা মাও যুবকের সাথে অন্য মেয়ের বিয়ে ঠিক করলেন। কিন্তু যুবক তখন প্রেমিকাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারে না। বাধ্য হয়েই এক রাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় সে। প্রেমিকাকে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করতে সহযোগীতা করে তাদেরই দুই বন্ধু। মাঝরাতে কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে ভাড়া করা গাড়িতেই জেগে রয়। পরদিন কাজি অফিস খোলতেই রেজিস্ট্রি করে ফেলে প্রেমিক প্রেমিকা। সুন্দরী প্রেমিকার ইচ্ছে ছিলো লাল টকটকে বেনারসী পরে বিয়ে হবে তার অথচ সেই মুহুর্তে সে পরে ছিলো ফ্যাকাসে রঙচটা শাড়ি। দিনের আলোয় মালা গলায় ঝুলিয়ে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো তারা। ততক্ষনে দু বাড়িতে হৈ হৈ রৈ রৈ পরে গেছে। ছেলে মেয়ে দুজনই নিখোঁজ! যা বুঝার বুঝে গেছেন সবাই। সবার মধ্যে তখন আগুনের লাভা ফুটছে। লজ্জায় মিশে যাচ্ছে তাদের ইজ্জত। এমন সময় প্রেমিকার বাড়িতে উপস্থিত হন সদ্য বিবাহিত স্বামী স্ত্রী। তরুণী তথা নতুন বউয়ের বাবা ভণিতা না করেই চড় বসান মেয়ের গালে। মেয়ের জন্য বাড়ির দরজা বন্ধ বলে ঘোষনাও দেন। ক্রন্দন রত স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে বেরিয়ে আসেন স্বামী। চলেন নিজের বাহির দিকে। সেখান থেকেও অপমান করে বের করে দেয়া হয় তাদের। তেজ্য পুত্র হতে হয় ভালোবাসে বিয়ে করায়।’
হিমির কথাগুলো শুনতে শুনতে ঘোরে চলে যাচ্ছিলো তাহির। হিমি থামতেই সে সচেতন চোখে তাকালো। হিমির কথা ফুরায় নি যদিও, কিছুটা সময় থেমে আবারও বললো,
‘ঝোঁকের বসে পালিয়ে যাওয়ায় সাথে কিছুই ছিলো না তাদের। তবুও প্যান্টের পকেট হাতড়ে সামান্য কিছু টাকা পেয়েছিলেন স্বামী। স্ত্রীকে নিয়ে সুরক্ষিত কোনো জায়গায় থাকতে হবে তাকে। তেজ্য পুত্র হওয়ায় এখন আর সে অফিসে গিয়ে নিজের কাজ করতে পারবে না। ছোটখাট কোনো কাজ করতে হবে। কাজ না পাওয়া অব্দি হাতের টাকাতেই চলতে হতো তাদের। বাধ্য হয়েই একটা ছোট্ট ঘরে ভাড়া থাকতে রাজি হন। সে ঘরটা ভীষন ছিপছিপে, একটা মাত্র ছোট্ট জানালা আর একটি দরজা। খাট ছিলো না সে ঘরে। মেঝেতে কাপড় বিছিয়ে শুতে হতো তাদের। কি সেই দুর্বিষহ জীবন! তবুও তারা একে অপরকে বুঝতে দেয় নি কষ্ট। এক বছরের মাথায় যখন স্ত্রী সন্তানসম্ভবা তখনও একাই সব সামলেছেন স্বামী। দু পরিবারকেই খবর দেয়া হয়েছিলো। কারো মন গলে নি। প্রায় ছয় মাস পর সে স্বামীর বাবা ছেলে আর ছেলের বউকে দেখতে আসেন। ছোট্ট ঘরটায় তাদের থাকা খাওয়ার অবস্থা দেখে কষ্ট পান তিনি। মন গলে যায়। নাতী নাতনী আসবে, তাদের জীবন সুখের হওয়া চাই। এই ভেবেই ছেলে আর পুত্রবধুর ঘরে প্রবেশের অনুষ্ঠান করলেন। সাজানো ঘর, সংসার সবই পেলো তারা পেলো না শুধু সুখ।’
তাহিরের মোবাইলের রিংটোন বাজায় থেমে যায় হিমি। বিরক্ত চোখে তার দিকে। তাহির স্ক্রিনে মায়ের নাম্বার দেখেও ফোন উঠায় না। ফোন সাইলেন্ট করে আবারও পকেটে রেখে দেয়। গলা কেশে বলে,
‘তারপর?’
‘প্রেগন্যান্সির সাত মাসের শেষের দিকে হঠাৎই লেভার পেইন শুরু হয় স্ত্রীর। স্বামী আর তার পুরো পরিবারে ভয়ে জড়সড়। এতো তাড়াতাড়ি কি করে সম্ভব? হাসপাতালে গেলে জানা যায় এক্ষুনি অপারেশন করতে হবে। বাচ্চা প্রি ম্যাচিওর হবে! সবাই রাজি। শর্ত শুধু একটা, দুজনকেই বাঁচাতে হবে। ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে যান। ফিরেন কোলে ফুটফুটে এক মেয়েকে নিয়ে। উদ্বিগ্ন স্বামীর দিকে তাকিয়ে মুখ ছোট করে ডাক্তার জানান স্ত্রী বেঁচে নেই। বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। মুহুর্তেই থমকে যায় সব। যাকে পাওয়ার জন্য বাড়ি ঘর ছাড়লেন আজ সেই তাকে ছেড়ে পরপারে? হাউমাউ করে কাঁদা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না তার। পরিবারে ছেয়ে গেলো শোকের ছায়া। নবজাতককে তার বড়মা কোলে নেন। বাচ্চার বাবা বাচ্চার মুখটাও দেখেন নি তখন। কোলে নেয়া দূরে থাক। স্ত্রীর মৃত্যুর শোক সহ করতে না পেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পারেন। নিজেকে সামলানোর আশায় পারি জমান বিদেশে। ওই সময়টায় বাচ্চার মায়ের পরিবারের দয়া হয়। বাচ্চার নানা মারা যাওয়ায় মামুরা বোনের মেয়েকে নিজেদের ভালোবাসাও দিতে চায়। তবুও দু পরিবারের দ্বন্দ থামে না। বাচ্চা মেয়েটা কখনো এ বাড়ি কখনো ওবাড়ি ছুটোছুটি করে। নিজ ইচ্ছায় নয় বড়দের টানা হেচরায়! এদিকে ছয় বছর পর বাচ্চার বাবা ফিরে এসে নিজের মেয়েকে চিনতে পারেন না। বিদেশ গিয়েও কখনো দেশের কারো সাথে কোনো যোগাযোগ করেন নি। তার যে এক মেয়ে আছে সেটাও হয়তো ভুলে গেছিলেন। মেয়ে তার বাবার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আজও উশখুশ করে। বাবা আজও তার দিকে মায়া ভরা চোখে তাকায় না।’
তাহির কৌতুহল দমন করতে না পেরে বললো,
‘এরপর কি হলো?’
‘কি আর হবে? মেয়েটা তার বাবার ভালোবাসার পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে ঘৃণিত হয়ে উঠলো অনেকের কাছে। তার সব চেষ্টাই অসফল। বাজে মেয়ে, বেয়াদব মেয়ে, পঁচা মেয়ে, অলুক্ষণে মেয়ে এসব খেতাব আজ তার জন্যই ব্যবহৃত হয়। দু পরিবারের এতো এতো মানুষদের মধ্যে হাতেগুনা দু তিনজন তাকে ভালোবাসে খুব। মন থেকে তার ভালো চায়। তার একটু অসুখে বুক কাঁপে তাদের। কাঁপে না শুধু বাবার। আচ্ছা বাচ্চা ডাক্তার এমন কোনো ইনজেকশন আছে যা পুশ করলেই মেয়ে থেকে দুম করে ছেলে হয়া যায়?’
তাহির ভড়কে যাওয়া চোখে তাকালো। হিমি বললো,
‘আসলে, মেয়ে বলেই বাবা তাকে ভালোবাসে না। সবাই বকে। ছেলে হলে খুব ভালোবাসতো! আছে না কি?’
তাহির হিমির দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বললো,
‘না নেই। কিন্তু আপনি এই গল্পটা কোথায় শুনলেন?’
‘বড়মা বলেছে। এটা না কি আমার জীবনের গল্প। আমিই সেই বাচ্চা মেয়ে যে চোখ খোলার সাথে সাথেই মায়ের চোখ বন্ধ হয়েছিলো!’
তাহির স্তব্ধ চোখে তাকায়। হিমির চোখে মুখে প্রতিক্রিয়া নেই কোনো। তাহিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘বিরক্ত হয়েছেন?’
তাহির মাথা নাড়লো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,
‘আমাকে এসব বলার কারন কি হিমি?’
‘ইচ্ছে হলো। আমার যখন যা ইচ্ছা হয় আমি করি। নিঃসংকোচে করি। কথা গুলো বলতে ইচ্ছে করছিলো খুব। আপনি আছেন তাই আপনাকেই বললাম।’
‘আমার জায়গায় আর কেউ থাকলে বলতেন তাকে?’
‘সে যদি অপরিচিত হতো তবে বলতাম!’
‘পরিচিতদের বলতেন না?’
‘না। অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। তারা অচেনা থাকে বলেই ভয় নেই, সংকোচ নেই, বাঁধা নেই। মন খোলে কথা বলা যায়। আপনি বলবেন কিছু?’
তাহির কপালে ভাজ ফেলে বললো,
‘কি বলবো?’
‘এমন কিছু যা আপনার বলতে ইচ্ছে করছে পারছেন না। ভয় হচ্ছে বা সংকোচ। বলে ফেলুন আমি কাউকে বলবো না।’
হিমির কন্ঠ আড়ষ্ট হতে লাগলো। গলা থেকে শব্দগুলো টেনে বের করছে বলেই বোধ হলো। তাহির ডান হাত উঠিয়ে হিমির কপালে ছুঁয়ালো। যা ভাবছিলো ঠিক তাই। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে হিমির। চোখ দুটোও বুজে আসছে। তাহির লম্বা শ্বাস টেনে হিমিকে নিচে নামতে বললো। হিমি বামে ডানে মাথা নাড়লো। ঠোঁট উল্টে অন্যদিকে তাকাতেই মুঠোফোন বেজে উঠলো তার। পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ঠেকালো সে। ওপাশের আওয়াজ না শুনলেও এপাশের হিমির কথা শুনলো তাহির,
‘ফিরবো না আমি। ঘুমিয়ে পরো। টাটা।’
কথাটা বলেই হাত সামনের দিকে লম্বা করে ফোনটা ছেড়ে দিলো। তাহির লুফে নিলো সেটা। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে ‘হ্যালো’ শব্দটি। তাহির ফোন কানে লাগিয়ে স্মিত গলায় বললো,
‘ওর এড্ড্রেস টা? আসলে, ওর খুব জ্বর! ওকে দেখে মনে হচ্ছে না ঠিকানা বলতে পারবে। একা ছাড়া সেইফও হবে না। আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।’
আমিনা বেগম স্বাভাবিক গলায় ঠিকানা দিলেন তাহিরকে। কথা শেষ হলে ফোন নিজের পকেটে নিয়ে হিমিকে টেনে নিচে নামালো তাহির। দু বাহু ধরে তাকে গাড়ির দিকে আনতে লাগলো। হিমি টালমাটাল পায়ে এগুলো। বিরবির করে কিছু বলছিলোও। তাহির তার কথা কানে না নিয়েই ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটটায় বসালো হিমিকে। সিট বেল্ট পরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতেই হিমির কথার ঝুলি খোলে গেলো। আবোল তাবোল কথা বলতেই থাকলো সে। তাহির মাঝে মাঝে হা হু করে হিমির বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়ি ছুটিয়ে চললো।
চলবে,,,,,,,,,,
হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
১৭.
নির্জন রাস্তায় বড়সড় সাদা রঙের গাড়ি এসে থামতেই গেইট পেরিয়ে উঁকি দিলেন আমিনা বেগম। এই গাড়িতে হিমি আছে? হিমি এসে গেছে? এসব ভাবনার মাঝে ড্রাইভিং সিটের দরজা খোলে বেরিয়ে এলো সুঠাম বলিষ্ঠ এক যুবক। পড়নে কালো রঙের ট্রাউজার, গায়ে বাদামী টিশার্ট। চোখে চশমা। চেহারায় উদ্বিগ্নতা স্পষ্ট। দ্রুত পায়ে অপর প্রান্তের দরজা খোলে কাউকে আলতো করে ডাকতে লাগলো সে সুদর্শন যুবক। আমিনা বেগম তাহিরকে পর্যবেক্ষন করতে করতেই পা টিপে টিপে এক দু পা এগুলেন। তাহিরের হাতে ভর দিয়ে হিমি বেরুলো গাড়ি থেকে। ল্যাম্প পোস্টের আলোয় দেখা গেলো তার শুকিয়ে যাওয়া ফর্সা মুখটা। জ্বরে কাতর হয়ে পরেছে সে। তাহির নিজের শরীরের উপর হিমির ভার নিয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরে এগিয়ে এলো গেটের কাছে। আমিনা বেগম দৌড়ে এলেন। হিমিকে এক হাতে জড়াতেই তাহির হিমিকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। আমিনা বেগম উত্তেজিত গলায় বললেন,
‘হিমি? তাকা না! ও তাকাচ্ছে না কেনো? আহা,,, গা কি গরম হয়ে আছে।’
তাহির আমিনা বেগমকে আশ্বস্ত করে বললো,
‘ঘুমে ঢুলছে। জ্বরের কারনে হুশও খুব একটা নেই। ওকে ঘরে নিয়ে কিছু খাইয়ে শুইয়ে দিন। রেস্টের প্রয়োজন।’
কথাটা বলে গাড়িতে ফিরে গেলো তাহির। পেছনের সিট থেকে ছোট একটা প্যাকেট এনে ধরিয়ে দিলো আমিনা বেগমের হাতে। তিনি কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালেন। তাহির বললো,
‘এতে মেডিসিন আছে। কখন খাওয়াতে হবে সেটাও লিখা আছে। সময় মতো খেলে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। খেয়াল রাখবেন ওর। আসি।’
আমিনা বেগম উজ্জল চোখে তাকিয়ে মাথা দুলালেন। তাহির ফিরে যেতে গিয়েও পিছু ফিরে তাকালো। নম্র গলায় বললো,
‘হিমি শারীরিক ভাবে যতোটা অসুস্থ মানসিক ভাবে তার চেয়েও অধিক অসুস্থ। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ওর খুব কাছের কেউ। আপনি হয়তো সবটা জানেন ওর ব্যাপারে। ওর সাথে কি করে থাকতে হবে, কি করে ওকে সামলাতে হবে কিছুই অজানা নয় আপনার। তবুও বলবো, আরো একটু বুঝুন ওকে। নিজেকে খুব একা ভাবে হিমি। ওর মতে ও সত্যিই একা। জ্বরের ঘোরে অনেক গোপন কথা বলে ফেলেছে আমায়। যা আমার জানা উচিত হয় নি। গাড়িতেও এক সেকেন্ডের জন্য মুখ বন্ধ করে নি। অনেক কথাই এখনো ভেতরে জমা আছে। সময় নিয়ে সেগুলো শুনুন। একজন সাইকিয়াট্রীস্ট হিসেবে আমার বিশ্বাস যেদিন মন খোলে সব কথা বিশ্বস্ত কাউকে বলতে পারবে, সেদিন ওর মনের অসুখ দূর হবে। ও ভালো থাকবে। সত্যিই ভালো থাকবে। আল্লাহ্ হাফেজ!’
আমিনা বেগম মুগ্ধ হয়ে শুনলেন ওর কথা। বুক ভরে নিঃশ্বাস টানলেন। এর আগে তো কেউ হিমিকে নিয়ে এসব ভাবে নি। এই ছেলে কেনো ভাবলো? কি করেই বা ভাবলো? সাইকিয়াট্রীস্ট বলে? সাইকিয়াট্রীস্টরা সব বুঝে যায়? তাহলে তো হিমিকে সাইকিয়াট্রীস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। হিমি কাউকে কিছু বুঝতে দিতে চায় না। ওরা ঠিক বুঝে যাবে। ওদের থেকেই সব জানবেন নাহয়। তারপর হিমিকে সামলে নেবেন। জন্ম না দিলেও বড় করেছেন। মা তো। কথাগুলো ভেবে মৃদু হেসে হিমির হাত কাধে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলেন। হিমি বিরবির করে কথা বলছে। আমিনা বেগম স্মিত গলায় বললেন,
‘শরীর বেশি খারাপ করছে মা? এক্ষুনি ঘরে চলে যাবো আমরা। মাথা ব্যাথা করছে? হিমি? জেগে আছিস?’
হিমি এসবের উত্তর দেয় না। একা একাই বকবক করে। বলতে থাকে কিছু কথা। আমিনা বেগম শুনতে পান না তার শব্দগুলো। শুনলেও বুঝতে পারেন না কথার তাৎপর্য। হিমির গলা জড়িয়ে যায়। কন্ঠ আড়ষ্ট হয়। সব কথাই গুলিয়ে ফেলে। হুট করেই ফুঁপিয়ে উঠে। আবার হাসে। হাত নাড়ায়। মাথা দুলানোর চেষ্টা করে। পা দুটো অবস হয়ে আসে। আমিনা বেগম টেনেই ঘরে নিয়ে যান তাকে। খাটে শুইয়ে আলমারি থেকে কম্বল বের করেন। গলা থেকে পা অব্দি মুড়িয়ে দেন। ডিম লাইট জ্বালিয়ে রান্নাঘরে ছুট লাগান। গরম গরম ভেজিটেবল স্যুপ করে নিয়ে আসেন। হিমির মাথা কিছুটা উচু করে কয়েক চামচ স্যুপ খাওয়ান তাকে। হিমি বাঁধা দেয় এবার। মুখ সরিয়ে নেয়। আমিনা বেগম বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে যান। একটা বাটিতে জাউভাত নিয়ে হাজির হন। এবারও দু এক চামচের বেশি খায় না সে। আমিনা বেগম হাল ছেড়ে দেন। তাহিরের দেয়া ঔষধ দেখে ট্যাবলেট খোলে জোর করে মুখে ঢোকান। ছোট থেকেই ঔষধ খেতে চায় না। ছুড়ে ফেলে দেয়। নাহয় মুখ থেকে বের করে দেয়। বড়মাই তার জোর জবরদস্তি করে মুখ টিপে খাওয়ান। এবারও তাই। হিমিকে পানি খাইয়ে মুখ আঁচলে মুছিয়ে দিয়ে খাটে আগের মতোই শুয়ান তিনি। ঠান্ডা পানি আর ছোট্ট তোয়ালে এনে কপালে জলপট্টি দিতে শুরু করেন। হিমির জ্বর কমছে না। বাড়ছে। শরীরের তাপ বেড়ে আগুনের মতো হচ্ছে। হিমির বকবকানি বাড়ে। আমিনা বেগমের হঠাৎই ভয় হয়। হিমি কপালে উষ্ণ পরশ দিয়ে চোখের জ্বল ফেলেন তিনি। মুহিব রহমানকে ডাকবেন কি না ভেবে পান না। নিজেকে অসহায় মনে হয় ওনার।
ভোরের আলো ফুটেছে কয়েক ঘন্টা হলো। হিমির মাথার কাছে এখনো বসে আছেন আমিনা বেগম। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ক্লান্ত চেহারায় উদ্বিগ্নতা ছেয়ে আছে। এখনো জ্বর ছাড়ে নি। চোখ খোলে নি হিমি। আমিনা বেগম এক মিনিটের জন্যও তাকে একা ছাড়েন নি। সকালের নাস্তাটাও তৈরি করেন নি। জেদি গলায় জা কে বলে দিয়েছেন যে যা খেতে চায় যেনো নিজে বানিয়ে নেয়। হিমিকে ছেড়ে এক চুলও নড়বেন না তিনি। রাদিবা দরজার কাছ থেকেই ফিরে গেছেন তৃতীয় বারের মতো। মতিউর রহমান ফজরের নামাজের পর হিমির জ্বরের খবর পেয়েছিলেন। ছোট বউমাই দিয়েছেন। কিন্তু দেখতে আসেন নি তিনি। যে মেয়ের কাছে পরিবারের সম্মানের কোনো দাম নেই তার অসুস্থতায় উতলা হয়ে কাজ নেই। জ্বর ঠিক হয়ে যাবে। বেশিদিনের ব্যাপার নয়। ঠিক হলেই আবার শুরু হবে তার লাফালাফি। মতিউর রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ছোটবেলায় মেয়েটাকে বেধে রাখলে এ দিন দেখতে হতো না ওনার। ভুল হয়ে গেছে। অনেক বড় ভুল।
__________________
ক্যাফেতে চেনা পরিচিত টেবিলে পাঁচজন বসে আড্ডায় মশগুল। তাদের আড্ডার টপিক হলো ‘টাকা’! টাকা ছাড়া পৃথিবীতে টিকে থাকা বৃথা এমন টাইপ নয় বরং টাকা অর্জনের সহজ উপায় টাইপ। বাবা মায়ের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করেই শহরে পড়তে এসেছিলো সোহিনী। প্রথম দু মাস বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে থাকতো সে। কিন্তু বোনের বাড়িই বা কদিন থাকা যায়? বাধ্য হয়েই হোস্টেলে রোম নিতে হলো তাকে। টাকার জোগার করতে কয়েকটা টিউশনি করাতো। নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হবে। যদিও বড় বোনের স্বামী মাসে কিছু টাকা তাকে পাঠাতো তাও বন্ধ হয়েছে বাচ্চা হওয়ার পর। এখন তাদের সংসারে একজন সদস্য বেশি। তার জন্যও কিছু খরচ করতে হয়। এসবের মধ্যে সোহিনী এক উটকো ঝামেলা। খুব কষ্ট করেই চলছিলো সে। ঠিক সেই সময়টায় সুইসাইডের মতো বিশ্রী কাজটা করে ফেললো। ফলাফল হোস্টেল কর্তৃপক্ষ সোহিনীকে ওখানে ফিরে যেতে মানা করলো। হোস্টেলের একটা মান সম্মান আছে! তাছাড়া ওকে দেখে যদি আরো মেয়েরা আত্মহত্যার প্ররোচনা পায়? তখন কি হবে? সোহিনী অকুল পাথারে পরেছিলো। দেবদূতের মতো দোহা এসে দাঁড়ালো। নিজের পরিবার ছেড়ে ছুড়ে ছোট্ট একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া নিলো। একসাথে দুই বান্ধবী থাকতে শুরু করলো। টাকার পরিমাণ বেশি হলেও দুজনে মিলেমিশে ভাড়া দিতে পারতো। হুট করেই দুইটা টিউশনি চলে গেলো সোহিনীর হাত থেকে। এক হাজার টাকার লস! কয়েক জায়গা থেকে মাসের শেষেও টাকা পাচ্ছে না। চাইতেও লজ্জা লাগছে।স্যামিস্টারের ফি দেয়ার টাকা নেই তার কাছে। বাসার টাকাটাও দিতে পারবে কি না জানে না সে। সামনে আরো দু একটা টিউশনি যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। বাচ্চাগুলো শয়তানের লিডার। রাগি গলায় কিছু বললেই শহুরে বাবা মা তেড়ে আসে!
‘টিউশনি খুঁজা লাগবো না কি?’
সূর্যের কথায় সোহিনী উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,
‘যা পারিস কর দোস্ত! আমারে বাঁচা!’
ইমন বাঁধা দিয়ে বললো,
‘আজাইরা কথা! আর কতো টিউশনি করাবি তুই? সময় পাবি এতো?’
‘সময় বের করে নেবো। দরকার পরলে ভোরের আলো ফোটার আগেই পড়াতে চলে যাবো। মাঝরাত হলেও চলবে।’
মেঘ সোহিনীর মাথা চাটি মারলো। বললো,
‘তুই পড়াতে গেলেই যে ওরা পড়তে বসবে এমন তো না। এতো ভোরে কেউ পড়ে? না কি মাঝরাতে পড়ে? আর তোদের বাড়ির মালিক নাকি স্ট্রিক্টলি বলে দিয়েছে রাত নয়টার পর বাইরে থাকা যাবে না!?’
‘হ্যা তো!’
‘যদি তাই হয় তবে তুই রাতে পড়াবি কি করে? গাধী!’
সোহিনীর মুখ ছোট হয়ে যায়। দোহা অসহায় গলায় বলে,
‘কতো করে বললাম এ মাসের টাকা আমি দিয়ে দেই পরে জোগার করে মিটিয়ে দিস। না চলবে না ওনার! ধারেও টাকা নেবে না। এসবের মানে কি বলতো?’
সোহিনী মুখ ফুলিয়ে বললো,
‘ইটস এবাউট মাই সেল্ফ রেস্পেক্ট!’
সূর্য হাই তোলে বললো,
‘তোর সেল্ফ রেস্পেক্টরে গুল্লি মার তো। বেশি ক্ষনের জন্যে না। একটু সময়ের জন্যে। পরে আবার অপারেশন করে গুলি বাইর করিছ।’
সোহিনী ভ্রু কুঁচকালো। সূর্য টেবিলে দু হাত রেখে সোহিনী আর মেঘকে দেখলো। হুট করেই বললো,
‘ওই মেঘ? তুই বিয়া কবে করবি?’
‘মেয়ে পাইলে!’
‘মাইয়া পাইয়া গেছি। কবুল বলার লাইগা তৈরি হো!’
মেঘসহ বাকিরাও গোল গোল চোখে তাকালো। সূর্য ভাবলেশহীন গলায় বললো,
‘বিষয়টা খুব সিম্পল। মেঘের নিজস্ব বাড়ি ঘর বাবা মা থুক্কু ভালো বাবা মা মানে পরিবার। ভবিষ্যতের এইমও ঠিক করে রাখছে ব্যাটা। খালি দরকার বউ। আমাগো সোহিনীর আবার থাকার জায়গার দরকার, একজন বিশ্বস্ত ভালা মানুষ ভালোবাসার জন্য দরকার। তো এই দুইজন এক হইলেই সমস্যা ডিসমিস। তোরা বিয়া কর। আমরা আছি।’
সোহিনী আর মেঘ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। দোহা আশ্চর্যান্বিত গলায় বললো,
‘তোদের মধ্যে কিছু চলে না কি? আমি দেখি কিছুই জানি না!’
‘জানবিও না বেক্কল। চুপ কর। এসব কিছুই না। সূর্য একদম মজা করবি না। মন ভালো নেই আমার।’
সোহিনীর বিরক্তি ভরা কথার জবাবে সূর্য টেবিলে আঙুল দিয়ে তবলার মতো বাজনা তুলে শব্দ মাথা দুলিয়ে বললো,
‘বিয়ে করে ফেল দোস্ত। বিয়ে করলে মন ভালো হয়। আমি দেখছি। আমার বোনেরও মন খারাপ থাকতো। যেইদিন বিয়া করছে বিশ্বাস কর আজ অব্দি মন খারাপ অবস্থায় দেখি নাই তারে। কইরা ফালা বিয়া। ইমন? কাজি ধইরা আন!’
ইমন হাসলো। মেঘ গর্জে উঠে বললো,
‘থাপ্ড়াইয়া দাঁত ফালাই দিবো। শালা চুপ কর!’
‘উফ, কইছি না আমার বইনরে তোর লগে বিয়া দিমু না। এরপরও শালা ডাকোছ ক্যারে? হারামী! আমার বইন ছোট। তোরে একটা ভালা মাইয়া দিলাম তাতেও হয় না? সোহিনী সামলা তোর হবু জামাইরে। সবার দিকে নজর ক্যান ওর?’
সোহিনী ব্যাগ উঠিয়ে দু তিনবার আঘাত করলো সূর্যকে। সূর্য বেসুরো গলায় গাইলো,
‘বুঝেনা সে বুঝেনা
সে তো আজও বুঝেনা
ভালো বুদ্ধিটারে
ছুড়ে ফেলে দিয়ে,,,,
সূর্যকে থামিয়ে দিয়ে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো দোহা আর ইমন। হাসতে হাসতেই ইমন বললো,
‘সূর্যের কথার পিছনে লজিক আছে। জানিস তো, ছেলে মেয়ে দুজন কখনোই শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে পারে না। এক না এক সময় ঠিকই ভালোবাসে একে অন্যরে!’
‘সোহিনী ছাড়াও হিমি, দোহা আমার বন্ধু। এবার বল! আমি কি ওদেরকেও ভালোবাসবো?’
‘অবশ্যই বাসবি! তবে ভালোবাসা টাইপ ভালোবাসা না বন্ধু টাইপ ভালোবাসা। সবার প্রতি ফিলিং আসে না মেঘ।’
‘তোরে কে বললো সোহিনীর প্রতি আমার কোনো ফিলিং আছে?’
‘তোর চোখের দৃষ্টি ফলো করে সেদিন দেখলাম ত্যারা চোখে সোহিনীরে দেখোস তুই! শাড়ি পইরা যেদিন আইলো, উফ, তোর তো চোখই সরে না। কাহিনী কি মামা?’
সূর্যের ঠেস মারা কথায় বিষম খেলো মেঘ। সোহিনী চোখ নামিয়ে নিজের অস্বস্তি কাটাচ্ছে। মেঘ কথা ঘুরাতে বললো,
‘হিমি কোথায় রে? এখনো এলো না কেনো?’
দোহা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ডায়াল করলো হিমির নাম্বারে। রিং হতে হতে কেটে গেলো। আরো দু একবার ট্রাই করার পর ফোন উঠালো কেউ। দোহা শুধু ‘হিমি’ নামটা উচ্চারণ করেছিলো। আর কিছু বলতে হয় নি। আমিনা বেগম হিমির অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলে দিয়েছেন কদিন আসবে না ওদের সাথে দেখা করতে। দোহার মুখটা কালো হয়ে গেলো। মুখ ফুলিয়ে বললো,
‘হিমি খুব অসুস্থ কাল থেকে। জ্বর। এখনো কমে নি। আন্টি বললেন কদিন আসবে না। ফোন করে যেনো না জ্বালাই।’
পাঁচটা চেহারায় খেলে গেলো তীব্র কষ্ট। হিমিকে দেখার আকুলতা। সোহিনী আবদার করেই বসলো,
‘হিমিকে দেখতে যাবো?’
ইমন থমথমে গলায় বললো,
‘না। আমরা নট এলাউড!’
দোহা ঠোঁট কামড়ে বললো,
‘তোরা নট এলাউড। আমরা না। আই মিন, আমি আর সোহিনী যেতেই পারি। উই আর গার্লস!’
‘মানে কি? তোরা যাবি আমরা যামু না? এইডা কোনো কথা?’
‘আর কি করা যাবে সূর্য? জানিসই তো, দাদু রাগ করবে!’
‘বুড়া মানুষের এতো রাগ কেনো বুঝি না। এই লোকের লাইগা কলিজার দোস্তটারে দেখতেও যাইতে পারুম না? ধুর শালা।’
সূর্যের রাগের সাথে তাল মিলিয়ে রাগ লাগলো মেঘ আর ইমনেরও। তবে সোহিনী আর দোহা কবে, কখন দেখতে যাবে সেটাও ঠিক করে ফেললো।
চলবে,,,,,,,