হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১২
#আরিশা অনু
–তারপর সব ভাবনা বাদ দিয়ে কাজে মন দিলাম যা আছে কপালে তাই হবে।অবশ্য নতুন করে অঘটন হওয়ার আর কি বাকি আছে।আমার রোহান কে তো আগেই কেড়ে নিয়েছে আমার থেকে ও।নতুন করে আর কিছু হারানোর মত নেই আমার…..
–কাজ করছিলাম তখন ই কে যেন দরজায় নক করলো ভিতরে আসতে বললাম দেখি নিপা আর রিসব এসছে। তারপর ওদেরকে বসতে বললাম…!!!
–এখন শরীর কেমন তোমার বললো রিসব…
–ঠিক আছি এখন আমি…
–ঠিকমত খাওনা নাকি হুম বললো নিপা…
–হুম নিপা ঠিক বলেছে এখন থেকে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবা অনন্যা বললো রিসব…!!!
–আচ্ছা অনন্যা একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল তোমাকে বলবো কি..?
–আরে নিপা বলে ফেল এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে….!!!
–আসলে তখন তৃধা ম্যাম বলছিল তুমি স্যারের লাইফটা নষ্ট করে দিয়েছো এটা বলার মানেটা ঠিক কি বুঝলাম না কথাটা বলেই থামলো নিপা….?
–নিপার কথার কি উওর দিব আমি। ওকে কি করো বুঝায় যে রোহান আমার কে।আর তৃধা নামক শকুন টা কেন এগুলো বললো সেটা ই বা কি করে বোঝাবো এদের।কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা আমি কি উত্তর দিব এখন।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। রোহান ওর কেবিনে যেতে বললো এখনি তাই নিপা আর রিসব কে বলে আমার কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম।আজ তো রোহানের ফোন বাঁচিয়ে দিল কিন্ত আবার যখন ওরা প্রশ্ন করবে তখন কি উত্তর দেব আমি ওদের….?
.
.
.
.
.
–অনন্যা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে আমার।তখন ও রাগ করে ঐ ভাবে চলে আসল খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।আমার একদম উচিৎ হয়নি ওকে ওইভাবে অপমান করা।কাজের বাহানায় একবার ওর কেবিয়ে যেয়ে দেখে আসবো ওকে।যাব বলে যখনি ওর কেবিনের দিকে তাকালাম আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার।আজ আবার ঐ রিসবের বাচ্চা অনন্যার কেবিনে গেছে ইচ্ছা করছে এখন যেয়ে খুন করে ফেলি ঐটা কে।বাট না তাড়াহুড়া করা যাবেনা একদম।এমন কিছু করতে হবে যাতে সাপ ও মরবে আবার লাঠি ও ভাংবেনা।
–অনেক ভেবে একটা উপায় খুঁজে পেলাম তারপর অনন্যা কে ফোন করে আমার রুমে আসতে বললাম।একটু পর নক করার শব্দ হল বুঝলাম অনন্যা চলে এসেছে তাই ভেতরে আসতে বললাম ওকে…..!!!
–স্যার কিছু বলবেন বলে দাঁড়িয়ে রইলো অনন্যা….!!
–বলার জন্যই তো ডেকেছি মিসেস অনন্যা।এখন দাঁড়িয়ে না থেকে বসুন।আর আপনার শরীর কেমন আছে। এখন কি আর প্রবলেম হচ্ছে বললো রোহান….!!
–ইচ্ছা না থাকার সত্যেও বললাম ঠিক আছি আমি।তৃধা ম্যাডাম কোথায় ওনাকে দেখছিনা যে…?
–তৃধা চলে গেছে বললো রোহান….!!
–ওহ্ তো আপনারা বিয়ে কবে করছেন রোহানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো অনন্যা..?
–প্রতিউত্তর এ রোহার ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বললো আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন মিসেস অনন্যা।তারপর ফাইল দেখায় মন দিল রোহান…!!
–অনেকখন ধরে বসে আছি চুপচাপ রোহান কিছু বলছে ও না আর আমি ও যেতে পারছি না এখান থেকে।এবার সত্যি বিরক্ত লাগছে আমার তাই ওকে বরলাম স্যার আমায় ডাকলেন অথচ কিছু বলছেন ও না যে…..!!!
–ফাইল দেখার বাহানায় এতখন অনুকে দেখছিলাম আমি। হঠাৎ ওর কথায় হুস ফিরলো আমার তাই বললাম হ্যা মিসেস অনন্যা আপনাকে কিছু বলার আছে…..!!!
–কি বলবে রোহান বুকের ভেতরটা অজানা শঙ্কায় কাঁপছে আমার তারপর ও বললাম জ্বী স্যার বলুন….!!!
–কাল থেকে আপনার আর অফিসে আসা লাগবেনা মিসেস অনন্যা কথাটা বলে থামলো রোহান আর অপেক্ষা করতে লাগলো অনন্যার রিএকশন টা দেখার জন্য….!!!
–রোহানের কথাটা শোনার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।কি বলছে ও এসব কেন বলছে।আবার কি তাহলে ওর থেকে দূরে করে দিতে চাইছে আমায় অবশ্য ওর কাছে ই বা ছিলাম কবে আমি।এতদিন কাছে না যেতে পারলে ও সামনে থেকে ওকে দেখতে পেতাম এখন কি সেটুকু ও আমার ভাগ্যে নেই?আমার সাথে কেন সবসময় এমনটা হয় আল্লাহ।বুকের ভেতরটাই আবার প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়েছে। তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম সত্যিই কি আমি আর কাল থেকে অফিসে আসবো না….??
–নাহ্ আসবা না কথাটা বলে ঠৌঁট চেপে হাসতে লাগলো রোহান……!!!
–ঠিক আছে আসবোনা আর বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই রোহান ডেকে উঠল….!!
–একি কোথায় যাচ্ছ তুমি আমার কথা এখনো শেষ হয়নি বসো বলছি কথাটা বলে থামলো রোহান…..!!!
–এখন আর বসে কি হবে কাল থেকে তো আর অফিসেই আসা লাগবে না মন খারাপ করে বললো অনন্যা…..!!
–রোহান আবারো হেসে বললো তুমি সবসময় এত বেশি কেন বুঝো?একটু কম বুঝলে কি হয় হুম….??
–কি বলবেন বলুন আমি বাসায় যাব….!!
–বাসায় যাওয়ার অনেক তাড়া দেখছি আপনার আজ।ব্যাপার কি আপনার সো কল্ড হাসবেন্ড এর সাথে ঘুরতে যাওয়ার প্লান আছে নাকি আজ আবার কথাটা অনেক ক্ষোব নিয়ে বললো রোহান……!!!
–এমনিতেই বিনা নোটিশে চাকরিটা নিয়ে নিল তারপর আবার উল্টা পাল্টা কথা বলছে। মেজাজ এবার চরম আকারে খারাপ হয়ে গেল আমার তাই বললাম মি.রোহান খান আমি কার সাথে ঘুরবো ফিরবো সেটা ভাবা বাদ দিয়ে নিজের চরকায় তেল ঢালুন আর দয়া করে আমাকে আমার মত থাকতে দিন কথাটা বলে থামলো অনন্যা…..!!!
–ওকে মিসেস অনু আমার ও অনেক কাজ পড়ে আছে আপনার মত একটা স্টুপিড কে নিয়ে ভাবার সখ নেই আমার বললো রোহান….!!!
–ভদ্র ভাষায় কথা বলুন মিস্টার রোহান আমি আপনার বিয়ে করা বউ না যে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করবেন আমার সাথে কথাটা বলেই জিব্বাই কামড় দিল অনন্যা…..!!!
–কি বললেন মিসেস অনন্যা আপনি আমার বিয়ে করা বউ নন—? ও হ্যাঁ আমি তো এটা ভুলে ই গিয়েছিলাম যে পতিতাদের আবার বিয়ে টিয়ে তে কিছু আসে যাই না।তাদের কাছে যখন যে যাবে তখন তাকে নিয়ে খুশি থাকে এরা।অবশ্য আপনি পতিতাদের কে ও হার মানান মিসেস অনন্যা আপনি তো আরো দশ কদম এগিয়ে। নয়তো কি আর ঘরে স্বামী রেখে বাইরে অন্য পুরুষের সাথে ফুর্তি করে বেড়ান রাগে রাগে কথাগুলো বলে থামলো রোহান….!!!
–রোহানের বলা প্রতিটা শব্দ কলিজায় যেয়ে তীরের মত আঘাত করলো আমার তারপর ও চুপ থাকলাম।সত্যি এবার আর একবিন্দু বাঁচার ইচ্ছা নাই আমার। শুধু মাএ আমার মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে বেঁচে আছি আমি নয়তো আজ ই সুইসাইড করতাম আমি।চিৎকার করে গলা ছেড়ে কাঁদতে মন চাইছে এখন আমার। যাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসলাম সে কিনা আজ এই প্রতিদান দিল।এর থেকে হয়তো আমার মারা যাওয়ায় ভালো ছিল।না চাইতে ও দুচোখ দিয়ে টপটপ করে লোনাজল গড়িয়ে পড়তে লাগলো আমার…..!!!
–অনন্যা কিছু বলছেনা দেখে আমি প্রসজ্ঞ পাল্টাতে বললাম কাল থেকে তুমি অফিসে নয় বরং আমার বাসায় যেয়ে আমার সব কাজ করে দিবা।আমার যখন যেটা লাগবে এগিয়ে দিবা। দুপুরে এখন থেকে বাসায় খাব আমি সো আমার জন্য রান্না ও করবা। আর আমি যখন যেটা করতে বলবো তখন সেটা করবে।এর বাইরে কোনো কাজ করলে খারাপ কিছু হলে তার জন্য আমি দায়ি থাকবো না কথাটা বলে থামলো রোহান…….!!!
–একটা ঝামেলা যেতে না যেতে আর একটা শুরু।আমি ওর বাসায় যেয়ে কি তৃধা আর ওর প্রেম লিলা দেখবো নাকি।অনেক কিছু বলার থাকলে ও এই মুহুর্তে ওর সাথে কোনো কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই।আর হাজার বলেও কোনো কাজ যে হবেনা এটা ও খুব ভালো করে যানি আমি তাই আগের মত চুপচাপ বসে থাকলাম……!!!
–অনন্যা কোনো কথা বলছেনা দেখে আমি আবার কথাবলা শুরু করলাম।আমি আগের বাসাতেই থাকি তাই কাল ঠিক সময় যেন বাসায় আসা হয়। এখন আপনি বাসায় যেতে পারেন বলে থামলো রোহান…!!
–কোনো কথা না বলে উঠে চলে আসলাম। ভাবছি আমার ফেলে আসা সংসার টা কি এখনো আগের মত গোছানো আছে নাকি সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে…..??
.
.
.
.
.
Continue…