হার্টলেস পর্ব-১০

0
1633

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_10
,,
,,
,,
,,

সবার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ, চারপাশের পরিবেশ থমথমে। পুরো বাড়ি যেনো প্রাণহীন হয়ে পড়েছে।সেলিনা বিছানায় শুয়ে আছে ইতুর খবর পাওয়ার পর যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, নিজের উপর রাগ হচ্ছে ভিশন মেয়েটাকে সাথে নিয়ে গেলে হয় তো এমন হতো না। বৃষ্টি সেলিনার সামনে বসে বলল,

– খালা মণি কিছু খেয়ে নেও তোমার শরীর খারাপ করবে

– কি হয়ে গেলো এইসব মেয়েটা কোথায় আছে কোন হালে আছে আল্লাহ ভালো জানে।

– তুমি চিন্তা কর না নীড় ভাইয়া দ্রুত খুঁজে বের করবে ইতুকে

– আমার ছেলেটা একদম ভেঙে পড়েছে কাল থেকে কিছু খায় নিই,মেয়েটাকে আমাদের সাথে নিয়ে গেলে আর এমন কিছু হতো না।

– খালা মণি প্লিজ দুশ্চিন্তা কর না ইতু ঠিক আছে

________________________________________

ইতুর চোখ খোলার পর নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করলো, চারপাশে আরো অনেক মেয়ে,ইতু এক ঢোক গিলে চারপাশ ভালো মতো তাকালো।নিজের হাত নাড়াতে গিয়ে দেখলো হাত পা বাধা,সব গুলোর মেয়ের এক অবস্থা। ইতু পাশের একটা মেয়েকে বলল,

– আপু এটা কোন জায়গা আর আপনাদের এই অবস্থা কেন?

– তোমাকে আজকে নিয়ে এসেছে

– মানে

– আমাদের অনেক দিন ধরে আটকে রেখেছে, আমাদের বাহিরে পাচার করে দেবে

– কি?????

– হুম এই জীবন থেকে কি কখনো বের হতে পারব না

ইতু বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো, এসব কি শুনছে কান যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না।ইতু মনে মনে বলতে লাগল, নীড় ভাইয়া তুমি কোথায়। ভেবেই ইতু কান্না করে দিলো।হঠাৎ রুমের দরজা খুলে কয়েকটা ছেলে ভিতরে ঢুকলো সবার হাতে ইনজেকশন, এক একটা মেয়ের কাছে এসে ইনজেকশন পুশ করছে মেয়ে গুলো চিৎকার করে কান্না করছে, আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে মেয়ে গুলো। ইতু শুকনো একটা ঢোক গিলে সামনে তাকালো।আস্তে আস্তে ছেলে গুলো যত ইতুর কাছে আসছে ইতুর যেনো ভয়ে জান বেড়িয়ে যাচ্ছে। একটা ছেলে ইতুর কাছে এগিয়ে এসে ইতুর হাতের বাহুতে ইনজেকশন পুশ করলো,যন্রণায় ইতু চোখ খিচে ফেলল।আস্তে আস্তে ইতুর শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। ইতুর চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।ইতু হালকা কন্ঠে বলে উঠলো, নীড় ভাইয়া কোথায় তুমি।

______________________________________________

পুরো রুম ছেলেটার আর্তনাদে কেপে উঠছে, কিন্তু এতে নীড়ের বিন্দু মাএ ও মায়া হচ্ছে না। ছেলে টা গোঙাতে লাগল,নীড় ছেলেটার মাথার চুল ধরে মুখ তুললো,নীড় অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তেজি কন্ঠে বলল,

– মেয়ে গুলোকে কোথায় আটকিয়ে রেখেছে উওর দে

বলেই নীড় হুঙ্কার দিয়ে আবার এলোপাথাড়ি আঘাত করতে লাগল।মেঘ এসে নীড়ের হাত আটকে বলল,নীড় ছেলেটা মারা যাবে শান্ত হো তুই।নীড় মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল, কিভাবে শান্ত হবো আমার ইতু কষ্টে আছে এই রাসকেল গুলোকে তো আমি শেষ করে ফেলল।বলেই নীড় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,রনি ওর হাতের নখ উঠিয়ে ফেলো একটা একটা করে।
রনি নীড়ের কথা মতো একটা হাতের আঙ্গুলের নখ উঠিয়ে ফেলল,ছেলেটা আর্তনাদ করে উঠলো।

নীড় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,,, এখনো চুপ থাকবি এত অনুগত তুই, হয় তো মামুন তোকে অনেক টাকা দিয়েছে কিন্তু তুই তো আর বাচবি না এত টাকা দিয়ে কি করবি যদি বলে দিস তাহলে বাচবি।ছেলেটাকে কিছু বলতে না শুনে নীড় রনিকে বলল,রনি তোমার কাজ কর।রনি ছেলেটার আরেকটা হাতের আঙ্গুল ধরতেই ছেলেটা অস্থির অবস্থায় বলল,

– বলছি স্যার ববব,বলছি

– শুরু কর

– ওখানে মোট চারশের বেশি মেয়ে বন্দি আজই বিকেলের দিকে তাদের পাচার করা হবে,জাহাজে করে সমুদ্র দিয়ে পার হবে।

– দ্রুত লোকেশন বল।

____________________________________________

আকাশের অবস্থা ভিশন খারাপ, হালকা ঝড়ো বাতাস বইছে। সমুদ্রের পানি এলোমেলো ভাবে স্রোত তুলছে এই পানির উপর ভাসছে এক জাহাজ।জাহাজের কয়েকটা রুমে অনেক মেয়ে বন্দি সবার চোখে পানি চকচক করছে কারো বুঝতে বাকি নেই তাদের জীবনের কালো অধ্যায়ের সূত্র পাত শুরু হয়ে গেছে।

ইতু হালকা চোখ খুললো অনেক মেয়েই এখনো অজ্ঞান, ইতু চারপাশে চোখ বুলালো,হঠাৎ দরজা খুলে একটা লোক প্রবেশ করলো। লোকটা সবার দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল, বাহ আসমানের পরী তো সব আমার কোবলে অনেক আয় হবে তোমাদের দিয়ে পরীরা।
ছেলেটা ইতুর দিকে তাকিয়ে ধির পায়ে ইতুর কাছে এসে এক হাটু ভেঙে বসলো তারপর এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল,

– মিসেস নীড়, একজন সম্মানিতো অফিসারের ওয়াইফ আপনি এটাই আপনার দোষ।আপনার হাসব্যান্ড প্রচন্ড ঝামেলা করেছে আমার সাথে অনেক লোস করিয়ে দিয়েছে, আমারও তো প্রতিশোধ নেওয়ার ছিলো।উনারও লস করিয়ে দিলাম আপনাকে নিয়ে এসে। আপনার হাসব্যান্ড নীড় আপনাকে প্রচুর ভালোবাসে তাই তো উনার দূর্বল জায়গায় আঘাত করলাম বেচারার হাল একদম বেহাল।কিন্তু আমি কল্পনা ও করতে পারি নিই আপনি এতটা মোহনীয় দেখতে বাহ অপরুপ। আপনাকে বিক্রি করলে অনেক আয় হবে। আপনার হাসব্যান্ড আর আপনাকে বাচাতে পারবে না বেচারা এত মেয়েকে বাচালো কিন্তু আফসোস নিজের ওয়াইফের রক্ষা করতে পারলো না।

বলেই লোকটা হাসতে হাসতে বেড়িয়ে পড়লো। ইতুর প্রচুর ঘৃণা হচ্ছে মানুষ এতটাও জঘন্য হয়।
ইতু চোখ বন্ধ করে নীড়কে ভাবতে লাগলো হয় তো আর কোনো দিনই দেখা হবে না, কোনো দিনই নীড়কে ভালোবাসতে পারবে না।হঠাৎ জাহাজ খুব জোরে ধাক্কা খেলো সব গুলো মেয়ে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।বাহিরে হয় তো কিছু হচ্ছে। হঠাৎ দরজা খুলে কয়েক জন লোক গান হাতে ঢুকে পড়লো,তারপর নীড় ঢুকলো। ইতু মনে হয় জান ফিরে পেলো।নীড় সবার দিকে তাকিয়ে ডান দিকে তাকাতেই ইতুকে দেখলো।নীড় দ্রুত গিয়ে হাত পায়ের বাঁধন খুলে পাগলের মতো পুরো মুখে চুমু খেতে লাগলো নীড়ের জান যেনো ফিরে পেলো।আশেপাশে মানুষ আছে তা যেনো ভুলেই গেছে নীড়। ইতু নীড়কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।নীড় হেসে বলল, কাদছিস কেন পাগলি আমি চলে এসেছি তো আমি থাকতে তোর কিছু হতে দেবো না।

মেঘ ও মনে শান্তি পেলো মুচকি হেসে সবার উদ্দেশ্যে বলল, তোমরা সবাই এখন বিপদ মুক্ত আমরা তোমাদের উদ্ধার করতে এসেছি,তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরতে পারবে।সব গুলোর মেয়ের মুখে হাসি ফুটলো।

____________________________

নীড় গম্ভীর কণ্ঠে বলল, মামুন মেয়েটাকে ছেড়ে দে নয় তো তোর জন্য ভালো হবে না।মামুন পাগলের মতো হেসে বলল, আমি জানি আমার আর রক্ষে নেই কিন্তু অফিসার অনেক ক্ষতি করেছেন আমার আপনার ক্ষতি না করে শান্তি পাবো না।নীড় রেগে বলল, এখনো এইসব ভাবছিস কোন সাহসে মেয়েটাকে ছেড়ে দে সমুদ্রের মাঝে তোর পালাবার কোনো পথ নেই।
বা দিকে কয়েকটা মেয়ের সাথে ইতু দাড়িয়ে ছিলো।মামুন হঠাৎ পৈশাচিক হেসে বিদুতের মতো ইতুর কাছে গিয়ে ওর হাত টান দিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিলো।সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো নীড় যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।নীড় পাগলের মতো কোনারে গিয়ে সমুদ্রের স্রোতের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, সেখানে ইতুকে দেখা যাচ্ছে না।সেখানে শুধু উথালপাথাল ঢেউ।মামুনকে এর মাঝে কয়েক জন ধরে ফেলেছে, নীড়ের হাবভাব বেশি ভালো দেখাচ্ছে না। নীড় পানিতে লাফ দেওয়ার আগে মেঘ নীড়কে ধরে ফেলল।নীড় মেঘের দিকে ভেজা চোখে তাকালো অস্থির হয়ে বলল,মেঘ আআ,আমার ইতু সমুদ্রে পড়ে গেছে ও সাতার জানে না অনেক ভয় পায় পানি, আমাকে ছাড় ওকে নিয়ে আসতে হবে তো।মেঘ চোখ বন্ধ করে ফেলল আর সহ্য হচ্ছে না নীড়ের মতো শক্ত একটা ছেলের এই অবস্থা।

আলো ডুবে গেছে আধারের মাঝে, পাখিরা যেন মুধুর সুরে গান গাওয়া ভুলে গেছে।নীড় নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সমুদ্রের দিকে। এই সমুদ্রে নিজের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলল নীড়।হঠাৎ নীড় ডান দিকে তাকাতে দেখলো শাহিন সাহেব দাড়িয়ে আছে। নীড় উঠে দাড়ালো ধির পায়ে শাহিন সাহেবের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ালো।শাহিন সাহেব হঠাৎ নীড়কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো, আর বলতে লাগল,, নীড় আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে আন আমার মেয়েটা একা থাকতে খুব ভয় পায়।বলে শাহিন সাহেব কান্নায় ভেঙে পড়লো।

_________________________________________

এলোমেলো ভাবে পা ফেলে রুমে ঢুকলো নীড়, নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে,এতো টা অসহায় নিজেকে কখনোই মনে হয় নিই নীড়ের। প্রকৃতি বড্ড নিষ্ঠুর।রুমের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতুর সৃতি। এই বুঝি কানের কাছে এসে বলল,নীড় ভাইয়া।নীড়ের চোখ বারান্দায় পড়তে দেখলো ইতু দাড়িয়ে আছে, নীড়ের ঠোটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো, ইতুর পিছনে গিয়ে হেঁসে বলল,ইতু তুই এসেছিস। বলে চোখের পানি মুছে ঠোটে হাসি নিয়ে বলল,আমি জানতাম তুই আসবি।নীড় ইতুর কাধে হাত রাখতেই ইতু হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।নীড় হাটু ভেঙে বসে পড়লো আর্তনাদ করে উঠলো, নীড়ের আর্তনাদে যেনো বাড়ির প্রতিটি জায়গা কেপে উঠলো।

#চলবে…………🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে