হার্টলেস পর্ব-০৯

0
1661

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_09
,,
,,
,,
,,
নীড়ের মাঝে থমকে গেল ইতু, নীড়ে অনুভূতি স্পষ্ট জানান দিচ্ছে ইতুকে যে নীড় কতটা ভালোবাসে। ইতুর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে নীড় আস্তে করে ছেড়ে দেয় ইতুকে।ইতুকে ছেড়ে দিয়ে নীড় ভিতরে চলে যায়। ইতু কিছু খন চুপ হয়ে রইলো হঠাৎ গাড়ি স্টার্ট এর আওয়াজ পেয়ে বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালো।দেখলো নীড় গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে।ইতু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো এত রাতে কোথায় যাচ্ছে। রাজ্যের দুশ্চিন্তা হানা দিলো ইতুর মস্তিষ্কে।

___________________________________

সারা দিন নীড় বাড়ি ফিরে নিই,ওই যে রাতে বের হলো তারপর থেকে কথাও হয় নিই।ইতু সারা দিন চিন্তায় ছিলো।ঘড়িতে এখন সময় রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই ইতু সোফায় বসে আছে। তখনি দরজা দিয়ে নীড় ভিতরে ঢুকলো। নীড়কে দেখে ইতু মনে হয় প্রাণ ফিরে পেলো।এক সেকেন্ড ও না ভেবে নীড়কে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিল।

নীড় অবাক হয়ে গেলো, নিজেকে সাভাবিক করে দু হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো ইতুকে, শান্তনা দিতে দিতে বলল,আরে কি হয়েছে কান্না করছিস কেন আরে বলবি তো। ইতু কাদু কাদু কন্ঠে বলল, কাল রাত থেকে কোথায় ছিলে একটা কল করলে কি হতো।নীড় বুঝতে পারলো ইতু খুব চিন্তায় ছিলো সারা দিন, নীড় বলল, আসলে অনেক ব্যস্ত ছিলাম তাই কল করতে পারি নিই।

ইতু নীড়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো, নীড়কে আসলেই খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ইতু নীড়কে বলল, ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও। বলেই ইতু বেড়িয়ে পড়লো নীড় ইতুর দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে উঠলো। ইতু নীড়ের জন্য কফি বানিয়ে রুমে গেল,তখনি নীড় ওয়াসরুম থেকে বের হলো।
নীড়কে স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে, ইতুর হ্রদয় জুড়িয়ে গেলো,এই মানুষটার জন্যই তো ইতু অস্থির হয়ে থাকে,এই মানুষটাকে দেখলেই তো ইতুর ঠোঁটে হাসি ফুটে।

ইতুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীড় ভ্রু কুচকে বলল, কিরে কি দেখছিস এতো।ইতু নীড়কে কফি এগিয়ে দিলো।নীড় কফি নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো,তারপর টাওয়াল ইতুকে দিয়ে বলল আমার চুল মুছে দে তো।ইতু বিছানায় বসে নীড়ের পিছনে গিয়ে যত্নসহকারে নীড়ের চুল মুছে দিতে লাগল। নীড় মুচকি হেসে কফি মুখে দিয়ে বলল,

– আজ পড়তে বসে ছিলি

– হুম

– ভালো

– তুমি খেয়েছো

– হুম বাহিরে গেয়েছি তুই

– হুম অল্প খেয়েছি

– অল্প কেন?

– তোমার দোষ , তোমার চিন্তায় সারা দিন আমার যা তা কেটেছে

– সরি অনেক চাপে ছিলাম

– একটা সত্য কথা বলবা

– হুম বল

– তুমি কি নিয়ে এতো চিন্তায় আছো, আমাকেও কোথাও যেতে দেও না।

– আসলে এই কেসটা নিয়ে চিন্তায় আছি এই আর কি কিন্তু আমার একটা কথা রাখবি

– বল না

– আমি না বলা পযন্ত বাড়ি থেকে বের হবি না

– কিন্তু কেন?

– প্লিজ প্রশ্ন করিস না পরে তোকে বলব

– ওকে

নীড় আবার কফিতে চুমুক দিলো।ইতু অনেকটা কাচুমাচু হয়ে বলল,নীড় ভাইয়া একটা কথা ছিলো। নীড় বলল,হুম বল। বলে আবার কফিতে চুমুক দিলো। ইতু ফট করে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। নীড়ের কাশি উঠে গেলো।নিজেকে সাভাবিক করে ইতুর দিকে অবাক চোখে তাকালো। ইতু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল তারপর বলল, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

নীড় ইতুকে হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসলো তারপর বলল, কি বললি আবার বল।ইতু মাথা নিচু করে বলল,আমি তোমাকে ভভ,,ভালোবাসি। নীড় যেনো অজানা পৃথিবীতে হারিয়ে গেলো,নিজের ভালোবাসার মানুষটার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে যে কি সুখের যা ভাষায় বুঝানো দায়।নীড় অবাক হয়ে বলল,ইতু তুই সত্যি।আর কিছু বলার আগে ইতু নীড়কে জরিয়ে ধরে বলল, হুম খুব খুব ভালোবাসি তোমাকে কথাটা অনেক বার বলতে গিয়েও বলতে পারি নিই কিন্তু আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।নীড়ও ভালোবাসার আবেশে ইতুকে জরিয়ে ধরে শান্তির শ্বাস ফেলল মুচকি হেসে ইতুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো।

_______________________________________

নীড়ের চোখে পানির ছোয়া পেতেই চোখ খুলে তাকালো, চোখের সামনে এক অতিসুন্দরী রমণীকে আবিষ্কার করলো,পড়নে লাল শাড়ি ভেজা চুল গুলো ঝাড়ছে। নীড় বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো ইতুকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল, আজ সকাল সকাল এত সাজগোজ যে সকাল বেলা পাগল করতে চাস আমাকে, আগে বল শাড়ি পড়লি কিভাবে? ইতু বলল,বৃষ্টি আপু পড়িয়ে দিয়েছে। নীড় বলল, ওহ।ইতু নীড়কে বলল,যাও ফ্রেশ হও।নীড় বলল,হুম যাচ্ছি।

ইতু মোবাইলে হিনার সাথে কথা বলছিলো।হঠাৎ ভিতর থেকে নীড় ডেকে উঠলো। ইতু কল কেটে ভিতরে গেলো তারপর বলল, কি হয়েছে। নীড় মুচকি হেসে ইতুর কাছে এসে, ইতুর চোখের সামনে বেবি হেয়ার গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলল, আমি আসি সাবধানে থাকিস আর পড়তে বসবি কিন্তু ভালোবাসি।বলে নীড় ইতুর কপালে ভালোবাসা দিয়ে ইতুর গাল টেনে চলে গেল। ইতুর মন দখল করে নিলো এক রাজ্য ভালোবাসা, লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেলল, ইতুর সবটুকু জুড়ে রয়েছে শুধু নীড় আর নীড়।

__________________________________________________

নীড় মেঘের সাথে কথা বলছিলো তখনি সেলিনার ফোন কল আসলো।নীড় বেশ অবাক হলো কারণ এই সময় তো কল করে না, আর দেরি না করে কল রিসিভ করলো।তারপর বলল,,,

– হ্যালো মা বল

– নীড় তুই আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিস

– কেন

– আমি আর বৃষ্টি তোর মামার বাড়ি এসেছি, বেশী চিন্তা করিস না কাজের লোকেরা তো আছেই।

– ঠিক আছে, তোমরা সাবধানে থেকো

– আচ্ছা তুইও।

_________________________________________

মেঘ মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে নীড়ের কেবিনে আসলো,এসে চেয়ার টেনে বসে বলল,

– নীড় আমরা সাকসেসফুল

– মানে

– মানে হলো মামুন মেয়ে গুলোকে কোথায় আটকিয়ে রেখেছে আমরা জায়গাটা চিনেছি

– সত্যি দ্যাটস গ্রেট সবাই রেডি এখনি বের হবো

– হুম আমরা রেডি

– ভেরি গুড ল্যাটস গো

__________________________________________

নীড় বাড়ির গেটের সামনে এসে কখন থেকে হোন দিচ্ছে কিন্তু মিজান গেট খুলছে না।নীড় বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেটের কাছে ছোট দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো,মিজানের বসার জায়গায় গিয়ে নীড়ে অবাক হয়ে গেল।মিজানের হাত পা মুখ বাধা, মিজানের কপাল দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। নীড় দ্রুত গিয়ে বাধন খুলে দিলো তারপর অস্থির হয়ে বলল,

– মিজান এই মিজান তোর এই অবস্থা কে করলো

– নীড় ভাইয়া আপু মণি

বলেই মিজান কান্না শুরু করে দিলো,নীড়ের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো,দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো, চারপাশের অবস্থা একদম এলোমেলো, বা দিকে চোখ পড়তেই দেখলো কাজের খালা সেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।

নীড় দৌড়ে রুমে গিয়ে চারপাশ খুজতে লাগল আর ডাকতে লাগলো,ইতু ইতু কোথায় তুই ইতু।রুমে কেউ নেই পুরো রুম এলোমেলো, ফ্লোরে চোখ পড়তেই দেখলো ইতুর হাতের কাচের চুড়ি ভেঙে ফ্লোরে পড়ে আছে। নীড় কাচের টুকরো গুলো হাতে নিলো, পরক্ষণেই দৌড়ে বেড়িয়ে পড়লো রুম থেকে, সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে নীড়ের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো।ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিছু লোক ইতুকে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর ইতু বার বার ছেড়ে দিতে বলছে আর কান্না করছে।

নীড়ের যেনো সারা শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো,ওর ভালোবাসার মানুষটাকে এভাবে টেনে হেচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, নীড়ের যেনো পুরো দুনিয়া কেপে উঠলো, রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ফুটেজের দিকে নীড়ের চোখ বেড়ে পড়ছে ক্রোধ।

#চলবে…….🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে