হার্টলেস পর্ব-০৭

0
1673

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_07
,,
,,
,,
,,
ইতু এই মুহুর্তে কি করবে বুঝে পাচ্ছে না, নীড়ের সাথে কি কথা বলা দরকার। ইতুর ভাবনার মাঝে নীড় কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলতে লাগল, আই এম সরি ইতু তোকে হার্ট করার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলো না, তুই বুঝবি না যখন তোকে অভাবে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখেছি আমার যেনো জান বেড়িয়ে গিয়ে ছিলো সরি আই এম রিয়েলি সরি।ইতু আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না, উল্টো দিকে ঘুরে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

– নীড় ভাইয়া আই এম সরি, আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দেই নিই।তুমি প্লিজ এমন কর না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোমাকে এভাবে দেখে।

– এই আবার কান্না শুরু করেছিস চুপ কর

– সরি

– থাম পাগলী, তোর কোনো দোষ নেই তুই সরি বলছিস কেন।এখন ঘুমা অনেক রাত হয়েছে। কাল ভার্সিটি যেতে হবে না।

– হুম আর তুমি

– আমি আবার কি?

– তুমি কাজে যাবে

– হুম তা তো যেতে হবে

– তুমি কাল ছুটি নেও

– সম্ভব না, অনেক কাজ আছে। এখন ঘুমা

বলেই ইতুকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। ইতুও আস্তে আস্তে হাত দিয়ে নীড়কে জরিয়ে ধরলো, নীড় বেশ অবাক হলো ইতু ওকে জরিয়ে ধরেছে নীড় যেন ভালো লাগার রাজ্যে ডুবে গেলো।নীড় হঠাৎ বলল,

– ইতু

– হুম

– আমি কি ঠিক দেখছি তুই কি সত্যি

ইতু হঠাৎ নীড়ের ঠোটে এক আঙ্গুল দিয়ে কথা আটকে দিলো,নীড় পুরো অবাক হয়ে গেলো।ইতু চোখ বন্ধ রেখেই বলল, ঘুমাও।নীড় মুচকি হেসে ঠোটে রাখা আঙ্গুলে চুমু খেতেই ইতু সাথে সাথে আঙ্গুল সরিয়ে নিলো।নীড় মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে নিলো।

______________________________

নীড় কেবিনে বসে আছে, নীড়ের মনটা আজ একটু হালকা কারণ ছাব্বিশ জন মেয়েকে উদ্ধার করতে পেরেছে তাদের আপন জনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে, কিন্তু তাদের মাঝে একটা মেয়েকে খুব নির্যাতন করা হয়েছে।মেঘ এসে নীড়ের সামনের চেয়ারে বসলো।নীড় মেঘকে বলল,

– ওই সিমা মেয়েটার কি অবস্থা

– হসপিটালে আছে ওর বাবা মাও আছে, এত দিন পর মেয়েকে পেয়ে যেমন খুশি হয়েছে, তেমনি মেয়ের এমন অবস্থা দেখে খুব ভেঙে পড়েছে।

– হুম, কিন্তু আমরা যাওয়ার আগেই পালিয়েছে অসভ্যটা ও এখনো আমাদের নাগালের বাহিরে।আরো অনেক মেয়ে আছে যাদের আটকিয়ে রাখা হয়েছে।

– হুম মামুন লোকটা ভিশন খারাপ, এমন কোনো ক্রাইম নেই যে করে নিই।ওকে দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।

এর মাঝে টেলিফোন বেজে উঠলো। নীড় ফোন ধরে বলল, হ্যালো।অপরের কথা শুনে স্পিকারে দিলো।নীড় আবার বলল, হ্যালো।ওপাশ থেকে একটা লোক ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে বলল,

– কি অফিসার নীড়, আপনি কি ভেবেছেন আমাকে ধরা এতো সহজ হাহাহা

– সেট-আপ

– আরে আরে আস্তে, আপনি আজ অনেক ক্ষতি কইরা দিলেন, অন্যের বউ বোনের জন্য এতো মায়া এতো চিন্তা, যদি আপনার বউ বোন হয় তাহলে কেমন হয়

– মুখ সামলে কথা বল, তোকে শেষ করে ফেলব

– হাহা টুটুটুটুটুটুটু

নীড় রেগে মেঘকে বলল, নম্বর ট্রেক কর ফাস্ট। নীড় চিন্তায় পড়ে গেলো।

__________________________________

ইতু ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে আয়নার সামনে ভেজা চুল ঝাড় ছিলো আর গুনগুন করছিলো,হঠাৎ পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরতেই আতকে উঠলো। পরক্ষনেই আবার শান্ত হয় গেলো।মৃদু হেসে বলল,

– তুমি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে

– হুম ভালো লাগছে না তাই তাড়াতাড়ি চলে আসলাম

– ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নেও, আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি

– হুম ওকে

ইতু রান্না ঘরে গিয়ে ভালো মতো চা বানিয়ে রুমে গিয়ে দেখে নীড় আগের শার্ট এতেই বিছানায় শুয়ে আছে। ইতু মুচকি হেসে নীড়ের কাছে গিয়ে বসলো।ইতু বলল,না ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়লে যে।নীড় চোখ না খুলেই ইতুর কোলে মাথা রেখে বলল,চুল গুলো নেড়ে দে না বউ।ইতু বউ কথা টা শুনে মুচকি হাসলো তারপর বলল, ফ্রেশ হয়ে নেও। নীড় বলল,না ইচ্ছে করছে না ঘুমাবো আর শোন মেঘ আসলে ডেকে দিস।ইতু নীড়ের চুল গুলো নেড়ে দিতে লাগল।

___________________________________

বৃষ্টি রান্না ঘরে জুস বানাচ্ছিলো,হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। বৃষ্টি গিয়ে দরজা খুললো।বৃষ্টি মেঘকে দেখে মিষ্টি হেসে বলল, কেমন আছেন? মেঘ আগের ন্যায় তাকিয়ে আছে ।বৃষ্টি আবার বলল, শুনতে পাচ্ছেন। মেঘের এতখনে ঘোর কাটলো নিজেকে সাভাবিক করে বলল,

– হুম কিছু বললে

– বললাম কেমন আছেন

– ওহ ভালো তুমি

– আমিও ভিতরে আসুন

– হুম

– জ্বি বলুন কি খাবেন চা নাকি কফি, নাকি ঠান্ডা কিছু

– তুমি যেটা খাওয়াবে

– মানে

– মা,মা,,মানে হলো কফি

– ওকে

– আর শোনা

– হুম বলুন

– নীড়কে ডেকে দেও

– ওকে

বৃষ্টি কফি বানিয়ে মেঘকে দিয়ে, উপরে গেলো নীড়কে ডাকতে গেলো।দরজায় নক করতেই ইতু এসে দরজা খুলে দিলো বৃষ্টিকে দেখে বলল, কিছু বলবা আপু।বৃষ্টি বলল,নীড় ভাইয়াকে বল মেঘ ভাইয়া এসেছে।ইতু বলল,ঠিক আছে।

বৃষ্টি চলে গেল। ইতু গিয়ে নীড়কে ডেকে তুললো,নীড় ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই। ইতু দৌড়ে সামনে গিয়ে বলল, নীড় ভাইয়া শোনো।নীড় বলল,

– বল

– আমি আমাদের বাড়িতে যাব কিছু দিনের জন্য বাবা মা তুতুল সবাইকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।

– এখন না তোকে একা যেতে দেবো না

– কেন তাহলে তুমিও আমার সাথে চলো

– এখন না

– কেন?? প্লিজ

– না ইতু এখন না জেদ করিস না

– না না যাব

– চুপ না করেছি না ( ধমকে বলল নীড় )

ইতু কেঁপে উঠলো ধমক শুনে, ফেস টা বাচ্চাদের মতো করে ফেলল এই বুঝি কেঁদে ফেলবে।নীড় নিজেকে শান্ত করে ইতুর হাত ধরে বলল,ইতু শোন।ইতু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো।

_______________________________________

অনেকটা রাত হয়ে এসেছে। আকাশে বাঁকা অর্ধ চাঁদ দেখা যাচ্ছে। সেই চাঁদের আলো গায়ে মেখে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে ইতু। শীতল পরিবেশ মাঝে মধ্যে ঝড়ো বাতাস এসে ছুঁইয়ে দিচ্ছে ইতুকে। কপালের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো নেড়ে উঠছে সে বাতাসের ঝাপটায়। ইতু এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কোমড়ে কারো শিতল স্পর্শ অনুভব করলো,সাথে সাথে কেপে উঠলো।ইতু কিছু বলল না।নীড় হালকা কন্ঠে বলল,

– রাগ করেছিস

-……………………….

– সরি ইতু আমি কিছু দিন ধরে খুব চাপে আছি তাই হুটহাট রেগে যাই,তোকে বুঝাতে পারব না তোদেরকে নিয়ে কতটা চিন্তায় আছি।

– আমাদের নিয়ে কিসের চিন্তা

– বাদ দে, আমার কাজের পেশার টা কমুক আমি তোকে নিয়ে যাব

– সত্যি

– তিন সত্যি

– আচ্ছা ওই লাল শাড়ি টা কার

– তোর জন্য এনে ছিলাম কিন্তু কত কি হয়ে গেলো খেয়ালই ছিলো না

– সত্যি খুব সুন্দর শাড়ি

– একটু শাড়িটা পড়ে সাজবি শুধু আমার জন্য।

নীড় ঘোর লাগা কন্ঠে বলল। ইতু শিউরে উঠলো,লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেলল।

#চলবে…….🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে