হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া পর্ব:2

0
10616

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুঁজে পাওয়া পর্ব:2

লেখা –সুলতানা ইতি

 

আমি লাফ দিয়ে উঠে মামি কে জড়িয়ে ধরে বললাম, মামি সব শেষ হয়ে গেছে
মামি আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বল্লো, কি হয়েছে বল?
মামির চিৎকারে মা,আর মামা উঠে আসে, মা তো আমাকে দেখেই অবাক, দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্লো কি হয়েছে রে মা, আমাকে বল,বল আমাকে,আমি মাকে সব কথা খুলে বলি,মামি তো কথা টা শুনেই রেগে আগুন

মামি: মুখ পুড়ি এতো কষ্ট করে টাকা যোগাড় করে বিয়ে দিলাম,ওতো গুলো টাকা খরচ করলাম,আর উনি কি না তার পরদিন এসে বলছে সব শেষ হয়ে গেছে,
অলক্ষুণে মেয়ে বের হো আমার বাড়ি থেকে, তোকে এই বাসায় রাখলে আমার মেয়েকে ভালো জায়গাতে বিয়ে দিতে পারবো না,

মামা: তুমি এমন বলছো কেনো কপালে যা ছিলো তা ই তো হয়েছে

মামি: তুমি চুপ করো সব কাজেই তোমার একটু বেশি বেশি

আমি: মামি এখন আমি কোথায় যাবো

মা: ভাবি আমার মেয়েটা কে একটু ঠায় দাও

মামি: এই মেয়ে তুই তোর মাকে নিয়ে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি

জানি মামিকে এখন কোন কিছু বুঝিয়ে লাব হবে না তাই নিশ্চুপ মাকে নিয়ে বেরিয়ে যাই বাড়ি থেকে, কোথায় যাবো মা মেয়ে কেউই জানি না দুজনই কাদছি

মা: আনু এখন আমি তোকে নিয়ে কোথায় যাবো

আনুশা: মা তুমি বড় আপু না হয় ছোট আপুদের বাসায় গিয়ে থাকো, আমার জন্য ভেবো না

মা: নারে তা হয় না, আমি মেয়েদের বাসায় গিয়ে থাকলে শশুর বাড়িতে তাদের মুখ ছোট হয়ে যাবে, আর তা ছাড়া শিলার স্বামি টা ও তো তেমন ভালো না, আমার মেয়ে কে খোটা দিবে।আর সুমির জামাই কিছু বলবে না কিন্তু ওর শাশুড়ি এই টা ভালো চোখে দেখবে না
তার ছেয়ে বরং, আমাদের মা মেয়ের অনিশ্চিত জীবনে ওদের সাথে যোগা যোগ না রাখাই ভালো

মাকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বলসলাম
ভাবছি জীবন টাকে কি ভাবে সাঝাতে ছেয়ে ছিলাম, আর চোখের পলক এ এই জীবন টা এলো মেলো হয়ে গেলো, এই সব কিছু ভাবতে ভাবতেই চোখের সামনে সব কিছু ঝাপ্সা দেখতে পাচ্ছি হঠ্যাৎ সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলাম
মা: একি আনু তোর কি হলো আনু মা চোখ খোল কেউ একটু সাহায্য। করবেন আমার মেয়েটা কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে,

কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এলো না, আল্লাহ আমি এখন কি করবো আমার মেয়েটা কি এই ভাবে শেষ হয়ে যাবে আনুশার মায়ের কান্নাতে প্রকৃতি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে আর একটু পর ই আকাশ এর বুক ছিরে কান্না বেরিয়ে আসবে,ঝুম বৃস্টি শুরু হয়ে গেলো, বৃস্টির পানি চোখে পড়ে আনুশার জ্ঞান ফিরে আসে

আনুশা: মা তুমি কাঁদছ কেনো দেখো আমার কিচ্ছু হয়নি আমি ঠিক আছি,

মা: তুই সত্যি ঠিক আছিস তো?

আনুশা: হুম একদম
আচ্ছা মা এই ভাবে তো পথে বসে দিন কাটানো যাবে না আমরা কোথায় যাবো বলো তো

মা: শুনেছি তোর হোসেন মামা ঢাকাতে থাকে অনেক বড় লোক, উনার কাছে যেয়ে দেখি আমাদের মা মেয়ের কোন থাকার যায়গা হয় কি না(হোসেন মামা মায়ের দূর সমর্পকের চাচাতো ভাই)

আনুশা: যখন আপন মানুষ গুলো মুখ ফিরিয়ে নিলো তখন উনি কি আমাদের থাকতে দিবে ( মনে মনে বললাম) মুখে মাকে বললাম চলো তা হলে গিয়ে দেখি, এইখান থেকে একটু হাটলে তার পর ট্রেন পাওয়া যাবে

মা: কিন্তু আমাদের কাছে তো টাকা নেই টিকেট কাটবো কি করে

আনুশা: মা শুনেছি ট্রেন এর শেষ ডিকিতে করে গেলে টাকা লাগে না,
মা মেয়ে হাটতে শুরু করলাম কতো জনের লোলুপ দৃস্টি দিয়ে আমাকে যে গিলে খাচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই

অবশেষ এ ট্রেন এর শেষ ডিকিতে আমাদের যাওয়ার যায়গা হলো লম্বা সময়ের পর কমলা পুর গিয়ে পৌছলাম, সেখান থেকে রাত দিন একা কার করে ডাকার সিটি তে আসলাম, এখন হোসেন মামা কে খুজে পাওয়া বড় দায়, অনেক ঘেটে ঘুটে তার পর মামার ঠিকানা পাওয়া গেলো হোসেন চৌধুরী,

এই দিকে খুব খিদে পেয়েছে,মায়ের ও এক ই অবস্তা মা যে মুখ পুঁটে বলছে না, সেটা আমি ঠিক ই বুঝেছি, কতো বার কতো মানুষ এর মুখে শুনেছি ডাস্টবিন এ নাকি বড় লোকে দের বাশি খাবার পাওয়া যায় তাই মাকে নিয়ে আগে ডাস্টবিন খুজতে লাগলাম,অবশেষ এ কিছু খাবার পেয়ে আমি আর মা খেয়ে নিলাম

তার পর ঠিকানা মতে হোসেন মামার বাসায় গেলাম দারওয়ান ভিতরে ডুকতে দিচ্ছে না অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর মামা এলো ইয়া বড় একটা গাড়ি হাকিয়ে মা ভাইজান ভাইজান বলে ডাকতে ডাকতে গাড়ির পিছন পিছন ভিতরে গেলো সব ছেয়ে বেশি অবাক তো আমি তোখন হলাম যখন মামা বল্লো মাকে নাকি উনি চিনেই না,
আমি মাকে বললাম মা চলো এখান থেকে ইট পাথরে গড়া মানুষ এর মাঝে তুমি মনুষ্যত্ব খুজে পাবে না মাকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম
কোথায় যাবো ভাবছি,হঠ্যাৎ মনে হলো এখানে কম দামে বস্তির ঘর পাওয়া যাবে লোক জন কে জিজ্ঞেস করে করে মির পুর একটা বস্তিতে গিয়ে উঠলাম,বস্তির মালিক কিছুতেই ঘর বাড়া দিতে ছাইছে না,বাড়া পরিশোধ করতে পারবো না এই ভয়ে,
মা উনার হাতে পায়ে ধরে,উনার দয়া হলো অবশেষ এ একটা ঘর দিলেন উনি আমাদের কে,ঠিক ঘর কি না বুঝতে পারছি না বৃস্টি হলে ঘরটাতে পানি পড়বে সে দিকে আমি একশো ভাগ সিয়ুর,তবুও থাকার মতো একটু জায়গা তো হলো আমি মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি,কি করবো ভাবছি,আমাকে ভেংগে পড়লে চলবে না, কারো জন্য জীবন থেমে থাকতে পারে না,আমি তো পারবো না থামিয়ে রাখতে, আমাকে রুখে দাড়াতেই হবে,
মা: কিরে আনু কি ভাবছিস এতো
আনুশা: কিছু না মা
মা: আমি কিন্তু অনেক কিছু ভেবেছি,
আমি: কি ভাবলে মা,
মা: বড় লোকেদের বাসায় গিয়ে কাজ চাইবো
আমি কিছু বললাম না,বলার মতো কোন ভাষা আমার নেই,এই ভাবে ৩-৪ দিন পার হয়ে গেলো কোন কাজ এখন ও পাইনি

to be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে