হলুদ খাম ৪.
অনুজ ঠান্ডা স্বরেই বললো
– স্যার, আপনি ম্যারিড না?
অরিত্র হা হা করে হাসতে লাগলো। হাসি থামিয়ে বললো
– মিস্টার অনুজ আপনি ভয় পাবেননা। আমি দ্বিতীয় বিবাহ করছিনা। আমাদের সমাজে মেয়েরা স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে কোনোভাবেই এলাও করবেনা।
– বাট আমাদের সমাজে অনেকেই গোপনে দ্বিতীয় কেনো তৃতীয় বিয়েও করেন।
– মিস্টার অনুজ এটা জাস্ট ফান। আপনি সিরিয়াসলি কেনো নিচ্ছেন?
– আই আম সরি স্যার। আসলে বিয়ের মতো সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে যে আপনি জাস্ট ফান করতে পারেন আমি ভাবিনি।
পরিবেশটা কেমন ভারী মনে হচ্ছে। অরিত্র যে বেশ লজ্জা পেয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। সে যে ফান করেছে তার বলাতে বোঝা যাচ্ছিলো না। অনুজের লজিকটা ঠিক ছিলো কিন্তু ও রেগে গেলো কেনো?
যদিও ছেলেটা সবসময় সিরিয়াস মুডেই থাকে। ওকে হাসতে খুব কম দেখা যায়।
সবসময় মুখে মুরব্বি টাইপের ভাব ঝুলে থাকে। নীলুফারের মাঝেমধ্যে স্বাদ জাগে একটু মজা করার কিন্তু সিনিয়র স্টাফ হওয়াতে জুনিয়রের সাথে মজা করতে তার একটু বাঁধে। আরেকটা কারণ হচ্ছে ওর গুরুগম্ভীর টাইপ মুড।
অফিসের কেউই তেমন ওকে ঘাটায় না।
নিজের মতো করে থাকতে হয়তোবা পছন্দ করে।
অনুজকে ফাইলটা চেক করে দিলাম। অনুজ চলে যাবার অরিত্র উঠে দাঁড়িয়ে বললো
– আজকে উঠি অনেক কাজ হাতে। আপনার বাসায় একদিন যাবো ভেবেছি।
– আচ্ছা আসবেন তবে আসার আগে জানাবেন।
– হুট করে এসে হাজির হবো।
কথাটা নীলুফারের মাথায় টং করে বাঁধলো। লোকটা এভাবে কথা বলে কেনো? সে কি তাকে……
নীলুফার নিজেকেই কড়া শাসন করে বলল
– অরিত্র বিবাহিত নীলু।
লাঞ্চ টাইমে ক্যান্টিনে ঢুকতে গিয়ে নীলু খেয়াল করলো অনুজ আরো বেশি গম্ভীর চেহারা নিয়ে বসে আছে। সামনে খাবার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। ক্যান্টিনে অনুজ সবচেয়ে কম সময় নিয়ে লাঞ্চ করেন। সেই আজকে এভাবে সময় নষ্ট করে বসে আছে।
নীলু একবার ভাবলো অনুজকে জিজ্ঞেস করবে, কিছু হয়েছে নাকি?
জিজ্ঞেস করবে কি করবেনা স্থির করতে পারছেনা। অনুজ সাহেবের সাথে তার নিজেরও কথা বলতে ভয় লাগে। এমন গম্ভীর মানুষের সাথে কথা বলার সাহস যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনই উপস্থিত বুদ্ধিরও প্রয়োজন। কারণ এরা অল্পতেই মাইন্ড করে বসে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নীলু অনুজের টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনুজ, নীলুর উপস্থিতি বুঝতে পেরে বলল
– কিছু বলবেন ম্যাম?
নীলু আমতা আমতা করে বলল
– কোনো কারণে আপনি খুব চিন্তিত?
অনুজ কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল
– না তো, কেন?
– আ আসলেএএ আপনার তো লাঞ্চ করতে এতো সময় লাগে না। তাই জিজ্ঞেস করলাম। সামনে খাবার এভাবেও ফেলে রাখেননা।
অনুজ হেসে বলল
– আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন ম্যাম?
– আপনাকে আমার বেশ ভয় লাগে।
মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বলে দেয়ার পরপর নীলু মাথা নিচু করে আফসোস করতে লাগলো।
অনুজ আর একটু জোরে হেসে বলল
– ম্যাম, ভয় তো আপনাকে পাবার কথা। আপনি আমার উপরের পোস্টে আছেন।
নীলু মাথা নিচু করেই বলল
– আপনার গম্ভীরতার কারণে অফিসের প্রায় সবাই আপনাকে ভয় পায়।
– হ্যাঁ জানি কিন্তু আপনিও যে পান এটা জানতাম না।
– মন খারাপের কারণটা বলা যাবে যদি কোনো প্রাইভেসি না থাকে।
অনুজ কিছু একটা ভেবে বলল
– অন্য একদিন বলবো।
– আচ্ছা।
নীলু চলে যাবার জন্য পা বাড়ানোর সাথে সাথে পেছন থেকে অনুজ বলল
– ম্যাম, একসাথে লাঞ্চ করা যাবে? মানে ভালো লাগছেনা একা খেতে, তাই বলছিলাম আরকি। আপনার আপত্তি থাকলে দরকার নেই।
নীলু বলল
– আচ্ছা আমাকে তো কিছু একটা বলতে দিবেন। এভাবে এক নাগাড়ে কথা বললে চলবে?
অনুজ টেবিলের উপর হাত দিয়ে কিছু একটা লিখতে লিখতে বলল
– সরি ম্যাম।
– আমি আসছি আমার খাবার নিয়ে। একটু অপেক্ষা করুন।
অনুজ প্রশস্ত হাসি মুখে এনে বলল
– একটু তাড়াতাড়ি, খুব খিদে পেয়েছে।
চলবে……
~ Maria Kabir