হলদে পাখি পর্ব ০২
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার
“এই পাখির নাম হলদে পাখি।” মাহ্সিন উত্তর দিলো, “জানো এই পাখিকে কুটুম পাখি বলেও ডাকা হয়। আবার অনেকে এটাকে বেনে বউ ও বলে। আর এটা মোটেও কাকের মতো পঁচা না বাবা।”
কথাটি শেষ করতে না করতেই হলদে পাখির ছোট্ট ছানাটি গাছের ডাল থেকে মাটিতে পড়ে যায়। সাথে সাথে জুই ও যুথী তাদের বাবার কোল থেকে নেমে পাখিটির কাছে দৌড়ে ছুটে যায়। মাহ্সিন ও তাদের পিছু পিছু পাখিটার কাছে আসলে দেখতে পায় ছোট্ট ছানাটির পায়ে একটা ব্লেড এর টুকরো ঢুকে আছে। রক্ত বের হচ্ছে পা থেকে। পাখিটি ব্যাথায় নড়তে কিংবা উড়তেও পারছেনা।
“বাবা, পাখিটার পায়ে ব্যাথা পেয়েছে বাবা। চলো ওকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার ওষুধ দিলে ভালো হয় যাবে।”
জুঁই কথাটি বলছে আর তার বাবার বাহুতে হাত রেখে ঝাঁকি দিচ্ছে পাখিটাকে দ্রুত ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাবার জন্য।
“আম্মু, এখানে তো ডাক্তার নেই। আমি দেখি পাখিটার পা থেকে ব্লেড টা বের করতে পারি কিনা।”
মাহ্সিন আলতো করে ছানা টাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির বারান্দায় গিয়ে বসে এবং একহাতে ধরে রেখে ধীরে ধীরে পা থেকে ব্লেড এর টুকরোটি বের করে নিয়ে আসে। পাখিটি প্রথমে ছুটে যেতে চাইলেও যখন বুঝলো ব্লেড বের হয়ে পায়ের যন্ত্রণা একটু কমেছে তখন সে নিজ থেকেই চুপচাপ বসে থাকে। এদিকে জুঁই আর যুথী পুরোটাই অবলোকন করে। তারপর পাশে বসে ছানাটির সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। পাখিটি ও বোধ হয় আশ্বস্ত হয় যে কেউ ক্ষতি করবেনা তাই সেও আরামে চোখ বন্ধ করে আদর উপভোগ করতে থাকে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
ওরা যেখানে বসে আছে ঠিক তার কিছু দূরে উপরে দুই তিনটা কাক বার বার উড়ে বেড়াচ্ছে আর কর্কশ সুরে কা কা করে জানান দিচ্ছে সুযোগ পেলেই যেকোনো সময় হলদে পাখির ছানাটিকে এক ছোবলে নিয়ে উড়াল দিবে এবং ছিড়ে কুড়ে মহাভোজ করবে। মাহ্সিন কিছু আনমনে ভেবে বলল,
“জুঁই মা, তুমি তোমার আম্মুর কাছে গিয়ে একটা ছোট্ট পাতলা কাপড় নিয়ে আসতো। পাখিটার পায়ে যেখানে ব্যাথা পেয়েছে সেখানে বেঁধে দিবো।”
যুথী কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে উঠলো, “কাপড় বেধে দিবে কেন বাবা? পাখিটা ব্যাথা পাবেনা?”
“উফফ, যুথী তুমি কিছু বুঝনা। পা বেঁধে দিলে পাখিটার পা ভালো হবে তাইনা বাবা?”
“হুমম আমার আম্মু জানেরা, পাখিটার রক্ত পড়া কমবে এবং ঘা শুখায়ে যাবে। তখন ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উড়তে পারবে।”
দুইবোন খুশি হয়ে হাতে তালি দিয়ে উঠে এবং দৌড়ে তাদের মা মেহেরুন এর কাছে যায়। তাদের মাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে তারপর একটুকরো কাপড় নিতে সফল হয়। আবার ঝড়ের বেগে দৌড়ে বাবার কাছে এসে কাপড় টি দিলে তাদের বাবা ছানাটির পায়ের ক্ষতস্থানে বেঁধে দেয়। ছানাটি যেনো একটু ভালো অনুভব করা শুরু করলো এবং ধীরে ধীরে হাঁটতে চেষ্টা করলো। জুঁই ও যুথী ভীষণ খুশি হলদে পাখিটি একটু আধটু হাঁটতে পারছে দেখে।
জুঁই খুব উৎসুক হয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে,
“বাবা, পাখিটার ক্ষুদা পেয়েছে তাইনা বাবা? ওকে কি খাবার দিবো? ও কখন সুস্থ হবে? ও আবার কবে উড়তে পারবে?”
জুঁই এর প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই যুথী ও এসে তাদের বাবা কে প্রশ্ন করা শুরু করলো।
“বাবা বাবা, ওর আব্বু আম্মু কোথায়? ওরাও তো ওর জন্য কান্না করছে তাইনা বাবা?”
মাহ্সিন হলদে পাখি টাকে একহাতে নিয়ে অন্য হাত দিয়ে দুই মেয়ে কে কাছে টেনে আনে তার পাশে বসিয়ে বলে,
“আম্মু, শোনো আমরা পাখি টাকে কিছু খাইয়ে একটু পরেই যেই গাছে পেয়েছি সেখানে রেখে আসবো। ঠিক আছে?”
এ কথা শুনে দুইবোন-ই কান্না। জুঁই কান্না করে বলে উঠে,
“না না, ও আমাদের কাছে থাকবে। ও তো এখন অসুস্থ, উড়তে পারেনা। যদি কাক এসে নিয়ে যায়?”
যুথীও জুঁই এর সাথে সুর মিলিয়ে বলতে থাকে,
“না বাবা, পাখি কে দিবনা। আমাদের সাথে থাকুক না বাবা।”
মাহ্সিন আলতো হেসে বলে, “ঠিক আছে আম্মু। রাখবো। কিন্তু পাখির ছানা টা সুস্থ হয়ে গেলে তখন ওকে গাছে রেখে আসবো। নয়তো তার আব্বু আম্মু ও তো কান্না করবে ওদের বাবু পাখির জন্য। আবার পাখি টাও তার বাবা মাকে খুঁজবে। তখন সেও তো কান্না করবে তার আব্বু আম্মুর জন্য।”
জুঁই যুথী তাদের বাবার কথায় খুব খুশি হয় এবং খাওয়া দাওয়া ভুলে হলদে পাখির যত্নে লেগে যায়। পাখিটি কে গোসল করায়, গা মুছে দেয়, খাবার খাওয়ায়। পাখিটি ও যেনো খুব ভরসা করতে থাকে তাদের এবং আসতে আসতে বন্ধু হয়ে উঠে। তাদের বাবাকে দিয়ে পাখির জন্য ছোট্ট একটা ঘর বানায়, খড়কুটো দিয়ে একটা বিছানা তৈরি করে এবং পাখির খাবারের জন্য ছোট্ট দুটো পাত্রের ব্যাবস্থা করে যার একটিতে পানি আর অন্যটিতে রুটির টুকরো রাখা।
পাখিটিকে তারা রাতের বেলা নানুভাই এর ঘরের প্রথম তাকে রাখে, যাতে রাতের বেলাতেও তারা পাখিটির দেখাশোনা করতে পারে। এভাবে দুইদিন পেরিয়ে যায় এবং পাখির ক্ষতটাও আগের চেয়ে কমে যায়।
একদিন সকাল বেলা জুঁই ও যুথী পাখিটিকে ঘরে রেখে সকালের নাস্তা করতে রান্নাঘরে গেলে দেখতে পায় তাদের মামা এসেছে। আলতাফ রহমান, জুঁই ও যূথীর মামা যিনি কাজের কারণে উত্তরবঙ্গে থাকে। প্রতিমাসে একবার বাড়িতে আসে এবং কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে আবার চলে যায়। এবার বাড়িতে এসে বোন, বোন জামাই আর ভাগ্নীদের পেয়ে খুব খুশি। ভাগ্নীদের জন্য অনেক টফি, চকোলেট এবং জামা কাপড় সাথে করে নিয়ে এসেছে।
যুথী ও জুঁই মামার কোলে বসে আছে এবং টফি খাচ্ছে, তখন আলতাফ বলল,
“মামনিরা টফি কেমন হয়েছে। মজা?”
যুথী মাথা নেড়ে বলে, “অনেক মজা।”
“এই যে দেখছো প্যাকেট টা, এটা পুরোটাই তোমাদের। এটা নিয়ে ঘরে রেখে আসো।”
তাদের মামা চকলেট এর প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিলে সেটা নিয়ে দুবোন তাদের নানুভাই এর ঘরে দৌড় দেয়।
একটু পরেই ভয়ার্ত চিৎকার আর জোর কান্নার আওয়াজে পিলে চমকে উঠে আলতাফ এর । এক লাফে উঠে পরে আলতাফ, চিৎকার টা তো মনে হলো ঘরের ভিতর থেকে আসছে, যেখানে জুঁই-যুথী মাত্রই গেলো ! দৌড়ে ছুটতে থাকে আলতাফ ঘরের দিকে।
পর্ব ০৩ আসছে…
[ বিশেষ দ্রষ্টব্য: এটি লেখিকার প্রথম গল্প লিখার প্রচেষ্টা। শৈশবের ছোট ছোট স্মৃতি কে জড়ো করে গল্প লেখার প্রয়াস মাত্র। জানিনা কেমন হয়েছে। আশা করি এখানে সব ধরণের গল্পের পাঠক আছে। আপনারা গল্পটি পরে গঠন মূলক মন্তব্য করে লেখিকাকে অনুপ্রাণিত করবেন আশা করি। গল্পটি ৪ পর্বে শেষ হয়ে যাবে। ধন্যবাদ। ]