হঠাৎ_হাওয়া (৫)
হিমালয় আর আবির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, হিমালয় সবসময় আবিরকে সাপোর্ট করেছে সবটা ক্ষেত্রে হিমালয় কে কিছু না বলতে দেখে আবির একটা সিগারেট জ্বালালো,লম্বা একটা টান দিয়ে আকাশে ধোয়া ছেড়ে বলল,
—কিছু বলবি?
—বুঝতে পারছি না, মানে তুই বিয়ে করে ফেলেছিস তুই!
—বিশ্বাস হচ্ছে না তাইনা?অথচ আমার পক্ষের সাক্ষী তুই।
—হচ্ছে,
তারপর কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ থাকার পর হিমালয় বলল,
—তুই সবটা মানিয়ে নিতে পারবি,সবটা ভুলে নতুন করে শুরু করতে?
—সিগারেট খাবি?
—কথা চেঞ্জ করিস না, তুই জানিস আমি এসব খাই না।
—তুই তো আমাকে আমার চেয়ে বেশি চিনিস তুই বল পারব কি না?
হিমালয় চুপ করে থেকে বলে উঠলো
—আমি জানি তুই পারবি।চল মিষ্টির কাছে যাবি।
প্রায় মাঝরাত দিহান ওদের রিসোর্টের সামনে একটা বেঞ্চে বসে আছে। পাশে মিষ্টি নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে দিহানের খুবই কষ্ট হচ্ছে মিষ্টির কষ্ট ও কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।কিছুক্ষণ বাদে মায়া,হিমালয় আর ওর বন্ধুরা সবাই ওদের কাছে এলো আবির মিষ্টির কাছে গিয়ে ওর সামনে আবিরের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
—আমার আব্বু তোমার সাথে কথা বলতে চায় তুমি কি একটু কথা বলবে?
মিষ্টি হাত বাড়িয়ে ফোন টা নিয়ে কানের কাছে ধরলো কান্না সামলে বলল,
—হ্যালো
ওপাশ থেকে আবিরের আব্বু বলল,
—কি কারণে কি হয়েছে আমি কোনোদিন জানতে চাইবো না, আমার একটাই ছেলে ওর জীবনেও দূর্ঘটনা ছিল, আমার মা বেচে নেই এতই হতভাগ্য ভেবেছিলাম একটা মেয়ে হলে তাকে মা ডাকবো তা বাদ দিয়ে ওই গাধার বাচ্চাটা জন্ম নিলো,
মিষ্টি হেসে ফেললো সাহস নিয়ে বলল,
—গাধা টা তবে কে?
এপাশ থেকে সবাই মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,আবিরের বাবা বলল,
—আমার মা তো খুব কথা জানে,তুই হবি আমার মা?
মিষ্টি এবার কেদে ফেললো
—উহু কান্নাকাটি করা যাবে না চোখ মুছে ফেলো সময় নাও তারপর তোমার বাড়ি ফিরে এসো আমি আমার মায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবো।
কল কেটে মিষ্টি মাথা নিচু করে রইলো,ধ্রুব একটু রসিকতা করতে বলল,
—পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এত মানুষের কার্বন ডাই অক্সাইডে তোমরা সবাই একটু জায়গা টা খালি করে দাও আবির আর মিষ্টি একটু অক্সিজেন নিক।
দিহান কিছু না বলে আস্তে উঠে দাড়ালো সবকিছু এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছে যে আসলেই বিব্রতকর।দিহান আবিরের সামনে দাড়িয়ে বলল,
—আমি জানি না ঠিক করেছি না ভুল প্লিজ আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিও না, ছোট থেকে ওকে কক্ষনো কোনো কষ্ট দেই নি ওর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না।
হিমালয় এবার এগিয়ে দিহানের কাধে এক হাত রেখে বলল,
—ও জীবনে এত বড় কষ্ট পেয়েছে যে আর কাউকে কষ্ট দেওয়ার ক্ষমতা ওর নেই।
কথা এগিয়ে গিয়ে বলল,
—চলো আমরা বরং ভেতরের দিকে গিয়ে কথা বলি।
দিহানের সাথে এতক্ষণ সবাই ভাব জমিয়ে ফেলেছে, কথায় কথায় জানা গেলো পুষ্প আর দিহান দুজনেই উত্তরা ৯ নং সেক্টরে থাকে অথচ পরিচিত হলো এখানে এসে। নিরব আড়চোখে দেখছে পুষ্প ওর দিকে একবারো তাকাচ্ছে না মেয়েটা খুব জেদী।সবাই কথা বলছে শুধু মায়া চুপচাপ, একফাকে মায়া উঠে পাহাড়ের কিনারে গিয়ে দাড়ালো ওর দৃষ্টি বহুদূরে ভাবনা এলোমেলো, ওর খুবই কান্না পাচ্ছে।হিমালয় মায়ার পাশে গিয়ে দাড়ালো, মায়ার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে, হিমালয় আশেপাশে থাকলেই ওর এরকম লাগে কেমন জানি হিমালয়ের সামনে ওর কষ্টগুলো ঝেড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
—এখানে কি করো
—দাঁড়িয়ে আছি
—ও আচ্ছা আমি তো দেখতেই পাই নি দাড়িয়ে আছো।
মায়া চুপ করে রইলো, হিমালয় মায়ার দিকে তাকালো,তারপর বলল,
—তোমার হাতটা দাও তো
মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে হিমালয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো,
হিমালয় মায়ার হাত ওর হাতের মধ্যে নিয়ে দেখলো খুবই ঠান্ডা, হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
—কোনো সমস্যা?টেনশন করছ কেন?
মায়া জোড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—টেনশন করছি না, ভাবছি।
—ও আচ্ছা, টেনশন করছ না ভাবছো খুবই ভালো।
—আপনি কি ডাক্তার?
—কেন বলো তো?
—না তখন দেখলাম মিষ্টির ভাইকে কি যেন সাজেস্ট করছিলেন মিষ্টি সেন্সলেস হয়ে গেছে বলে, যদিও তখন স্পষ্ট শুনিনি।
হিমালয় হালকা হেসে বললো,
—আমরা ছয় জনই ডাক্তার একই মেডিকেল কলেজ থেকে গতবছর পাশ করেছি।
মায়া অবাক হয়ে হিমালয়ের দিকে তাকালো, তারপর বিস্ময় নিয়ে পেছনে ঘুরে আড্ডায় মশগুল হিমালয়ের বন্ধুদের দিকে তাকালো
হিমালয় হাসিমুখে বলল,
—এত অবাক হচ্ছ কেন! কোনোদিন ডাক্তার দেখো নি?
মায়া আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
—আমি কাল থেকে এতগুলো ডাক্তারের সাথে আছি!
—তুমি এমন ভাবে বলছ যেন তুমি খুনীদের সাথে আছো!
মায়া মুখ ফিরিয়ে খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললো
—যাক সারাজীবনে আর চিকিৎসার জন্য কোনো খরচ করতে হবে না।
হিমালয় অদ্ভুত ভাবে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো এই মেয়েটার কণ্ঠে অদ্ভুত মাদকতা আছে, হিমালয় প্রতিবার চুম্বকের মত মেয়েটার দিকে আকর্ষিত হয়, এই মেয়েটার সঙ্গ পেতে ওর ভালোলাগে মেয়েটার বাচ্চা স্বভাব মেয়েটার গুরুগম্ভীর কথা সব হিমালয়ের ভালো লাগে!
মিষ্টি কাচা হলুদ রঙের জামদানী পড়েছিল চিকন সবুজ পার, ম্যাচিং ব্লাউজ, হাত ভর্তি সোনার চুড়ি,কানে ছোট্ট সোনার দুল ব্যাস এটুকুই ওর বিয়ের সাজ! কত্ত দামী শাড়ি কত ভারী গহনা কত্ত সরঞ্জাম বিয়ের জন্য কত্ত প্লান অথচ ওর বিয়েটা নাকি এভাবে হলো! নিজের জন্যেই ওর মুখে এক টুকরো তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো, শাড়ির আচল ঘাড়ের উপর তুলল একটু কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। আবির পাশে বসা মেয়েটাকে এবার চেয়ে দেখলো,
—তোমার কি ঠান্ডা লাগছে?
মিষ্টি মাথা নিচু করে বসে রইলো, এমনিতে আবির রগচটা খুব অথচ একটা মেয়ে সমানে ওকে ইগনোর করছে আর ওর রাগ হচ্ছে না অদ্ভুত!
—মিষ্টি আমি তোমার সাথে কথা বলছি
—বলুন, আমি শুনছি
—তোমার কি ঠান্ডা লাগছে?
মিষ্টি খুব কান্না পেয়ে গেলো গলায় কান্না আটকে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
—না।
—ঘরে যেতে চাও?
—আমি আপনার বাসায় যেতে চাই
—তুমি আমার বাসায়ই যাবে, আমরা এখানে ৪ দিনের প্লান করে এসেছিলাম আজ সকালেই এলাম, আমি যদি কাল চলে যেতে চাই ওদেরও ফিরে যেতে হবে।
—বেশ তাহলে চারদিন পরই যাবো।
—ধন্যবাদ
মিষ্টি শব্দ করে হেসেই কেদে ফেললো তারপর বললো
—আপনাকে ধন্যবাদ আমার পরিবারের সম্মান বাচানোর জন্য আমাকে দয়া করার জন্য।
আবির মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল
—আমি কাউকে দয়া করি নি
—তাহলে কি করেছেন? একপলক দেখেই নিশ্চয়ই আপনি আমাকে ভালোবেসে ফেলেন নি।
—না।এমনকি আমি আর কোনোদিন কাউকে ভালোবাসতেও পারব না।
—তাহলে?
—আমি জানিনা।
—বেশ কোনোদিন জানলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন।
—আমি জানি অল্প কিছু সময়ে তোমার পুরো পৃথিবীটাই পালটে গেছে স্পব মেনে নিতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে
—অদ্ভুত! আপনার সব মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে না!
—না আমার আর কষ্ট হয় না।
মিষ্টি এবার আবিরের দিকে তাকালো ওর পাশে বসে থাকা লোকটি এখন ওর স্বামী দেখতে নিঃসন্দেহে সুপুরুষ,ব্যাক্তিত্বও অসাধারণ লোকটির! অথচ তার চারপাশে অদৃশ্য দেয়াল সে তুলে রেখেছে যা কেউ অতিক্রম করতে পারে না!আবির পরিবেশ হালকা করতে রসিকতার সুরে বললো
—এভাবে তাকিয়ে থেকো না প্রেমে পড়ে যাবে।
মিষ্টি চোখ ফিরিয়ে নিলো না দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে তাকিয়ে রইলো।
চলবে….
সামিয়া খান মায়া