#হঠাৎ_বৃষ্টি
জান্নাতুল নাঈমা
পর্বঃ৮
সময় বহমান। সময় নদীর স্রোতের মতো হারিয়ে যায়। কারো জন্য থেমে থাকে না। ফিরেও আসে না। যাওয়ার সময় শুধু স্মৃতি টুকু রেখে যায় আমাদের জন্য। কেটে গেলো পুরো একটি মাস। কিছুই পাল্টায় নি সবটা আগের মতোই আছে। শুভ্রতা আর মেঘের সম্পর্কটা আগের মতোই আছে। দুজনেই উপলব্ধি করতে পারে একে অপরের ভালোবাসা। কিন্ত কেউ মুখে শিকার করে নি। প্রতিদিন নিয়ম করে দেখা হওয়া, কথা বলা, হুটহাট করে ঘুরতে বেরিয়ে যাওয়া। তার মধ্যে শুভ্রতার জবটা বেশ ভালো ভাবেই চলছে। শুভ্রতা অবশ্য একদিন মেঘকেও জবের জন্য ট্রায় করার কথা বলেছে।
‘মেঘ আপনি জবের জন্য ট্রায় করবেন না?’ দুজন মিলে নদীর পাড়ে বসে ছিলো। শুভ্রতা কথাটা বললো। মেঘ পাশ থেকে একটা ঢিল নিয়ে ছুটে ফেলে বললো,,
‘করবো কিন্ত আরো পরে। বিয়ের ঠিক একমাস আগে!’
মেঘের কথায় শুভ্রতা বুঝতে না পেরে বলে,,’এটা কেমন কথা! বিয়ের একমাস আগে? তা বেকার ছেলের কাছে কোন বাবা বিয়ে দেবে শুনি?’
‘বাবা শুভ্র! তুমি তো দেখি বিয়ের জন্য পাগল হয়ে উঠেছো!’ মেঘের কথায় শুভ্রতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মেঘ তা দেখে স্ব-শব্দে হেসে উঠলো। তারপর বলে,,’সমস্যা নেই! আমি আমার বউয়ের টাকায় খাবো!’ শুভ্রতা সেদিন কিছু না বলে ধুম করে দুটো কিল দিয়ে উঠে গিয়েছিলো।
পরশু আহনাফের বিয়ে! মেঘের উপর অনেকটা দায়িত্ব পড়েছে। সবকিছু করে শুভ্রতাকে টাইম দিতে মেঘের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপরে মেঘের মা আবার সব প্রয়োজনে সুমাইয়াদের বাসা তাকে পাঠায়। বিয়ের শপিংয়েও সুমাইয়ার সাথে পাঠায়। মেয়েটাও কেমন চিপকে থাকে। মেঘের বিরক্ত লাগলেও ভদ্রতার খাতিরে আর মায়ের চাপে কিছু বলে উঠতে পারে না। এইতো সেদিন বিয়ের শপিং এ আহনাফের সাথে মেঘকেও পাঠিয়েছে। মেঘ গিয়ে দেখে সুমাইয়া আর সুরাইয়া (যার সাথে আহনাফের বিয়ে) দুজনে দাঁড়িয়ে আছে। হুট করেই মেঘের মাথায় রাগ উঠে গেলো। আহনাফ আর সুরাইয়া ভেতরে চলে গেলে সুমাইয়া মেঘের কাছে এসে বলে,,’চলুন যাওয়া যাক!’
‘আপনি যান! আমার একটা কল করার আছে!’ কথাটা বলে মেঘ এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে শুভ্রতার নাম্বারে ডায়াল করতে করতে চলে গেলো।
‘শুভ্র!’ মেঘ হাটতে হাটতে বলে। শুভ্রতা মেঘের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে বলে,,’কিছু বলবেন?’
‘আমি আজ রাত থেকে হয়তো একটু বিজি থাকবো। আজ রাতে গায়ে হলুদ,কাল বিয়ে!’
‘আচ্ছা। সমস্যা নেই!’ শুভ্রতার কথায় মেঘ মুখ বাকিয়ে বলে,,’আর কিছু বলবে না?’
শুভ্রতা মাথা দুলিয়ে বলে,,’আর কি বলবো?’
‘বলবে,,মেয়েদের থেকে দূরে থাকবেন। একদম ওদের কাছে ঘেঁষবেন না! বেশি ঢং করে স্মার্ট সাজবেন না। প্রয়োজনে ক্ষ্যাত হয়ে যাবেন। বিয়ে বাড়ির কাজ শেষ হলে বাসায় চলে আসবেন। প্যান্ডালের কাছে ঘুরঘুর করবেন না!’
মেঘের কথায় শুভ্রতার মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেলো। এই ছেলে এসব কি বলছে? এগুলোর একটাও তার মাথায় আসে নি। কিন্ত মেঘের সিরিয়াস মুখের কথায় শুভ্রতা না চাইতেও ফিক করে হেসে দিলো। মেঘ তা দেখে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,’এই! এই তুমি হাসছো কেনো? আমি যা বলতে বলেছি সেটা বলো আগে।’
‘পারবো না!’ শুভ্রতার কথায় মেঘ শুভ্রতার কয়েকটা চুল টেনে দিয়ে বলে,,’বলো বলছি!’
‘আহ মেঘ। ছাড়ুন। লাগছে। আচ্ছা বলছি।’
‘ওকে বলো।’ তারপর শুভ্রতা কথাগুলো বললে মেঘ বলে,,’ঠিক আছে। মনে থাকবে!’
শুভ্রতা হেসে বলে,’পাগল একটা!’ পরক্ষণে আবার বলে,,’যে সত্যি কারের পাশে থাকার মানুষ হয় তাকে এইসব বলে সাবধান করার প্রয়োজন হয় না! কারণ সে হাজারো মানুষের ভিড়ে কাঙখিত মানুষটাকে নিয়েই থাকে!’ মেঘ শুভ্রতার কথায় মুচকি হাসলো।
____________________
মাঝরাস্তায় শুভ্রতা প্রাণপণ ভাবে দৌঁড়ে যাচ্ছে। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্ত ভয়ে,উত্তেজনায় পা যেনো এগোতে চাইছে না। হাতে থাকা ফোন দিয়ে অনবরত কল দিয়ে যাচ্ছে মেঘের নাম্বারে।
বিয়ে বাড়িতে লাউড স্পিকারে গান চলছে। ছেলে মেয়েরা ছোটাছুটি করছে। মেঘ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাজানো লোকদের সাথে কোনো ব্যাপারে কথা বলছে। বিভিন্ন লিস্ট দেখছে। সে ফোন কাজের সময় ভাইব্রেশনে রাখলেও আজ পুরো সাইলেন্ট। একটু পরপর আলো জ্বলছে নিভছে। তার কোনো খবর নেই।
‘প্লিজ মেঘ! পিক আফ দা ফোন! আমি আর পারছি না। প্লিজ মেঘ ফোনটা ধুরুন।’ শুভ্রতা একটা গলির কোণায় ঘাপটি মেরে বসে বসে কল দিচ্ছে। সম্পূর্ণ অপরিচিত জায়গা কোনদিকে যাবে বুঝতে পারছে না। যে পথে এসেছে সে পথে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে উল্টো পথে দৌড়াতে শুরু করে।
একটু আগেই টিউশন ছেড়ে বাসায় ফিরছিলো শুভ্রতা। জবের জন্য সে সব টিউশন ছেড়ে দেয় শুধু একটা কন্টিনিউ করে। সন্ধ্যা বেলায়। মেঘ সবসময় সাথে থাকে বলে প্রবলেম হয় না। কিন্ত আজ মেঘ ব্যস্ত থাকায় আসতে পারে নি। কিন্ত কিছুদূর আসার পরই দেখতে পায় তাদের গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। যাকে বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে এসেছে। শুভ্রতা ভেতর ভেতর খুব ভয় পায়। একটু দূরে ছিলো বলে ওড়না দিয়ে মুখ ভালোভাবে ঢেকে নেয়। সে ভেবেছিলো আসিফ তাকে দেখতে পায় নি। তাই তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হাটা শুরু করে। কিছুদূর যেতেই আসিফ আর সাথে তিনটে ছেলে পিছু নেওয়া শুরু করে। শুভ্রতা নিশ্চিত হয়ে যায় আসিফ ওকে চিনতে পেরেছে! তাই দৌঁড়ানো শুরু করে!
শুভ্রতা দৌঁড়ানোর কারণে অনেকটা হাঁপিয়ে গিয়েছে। হাটুতে ভর দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এখন পানির প্রয়োজন। হঠ্যাৎ কেউ পানির বোতল এগিয়ে দিলে শুভ্রতা মাথা তুলে দেখে আসিফ বিচ্ছিরী ভাবে হেসে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতার আত্মা শুকিয়ে যায়। তবে কি এবার আর কোনো রক্ষা নেই? শুভ্রতা কিছু বলার বা ছুটার আগেই ঠাসস করে একটা চ*ড় পড়ে তার গালে। মাথাটা ভন ভন করে উঠে শুভ্রতা। পড়ে যেতে নিলে আসিফ ধরে ফেলে। শুভ্রতার গা গুলিয়ে আসে। আসিফের ছোঁয়ায় নিজেকে অপবিত্র লাগছে।
‘মেঘ কোথায় আপনি? আপনার শুভ্র যে বড় বিপদে মেঘ! আসবেন না? বাঁচাবেন না আমায়। মেঘ!’ আর কিছু ভাবার আগেই চোখ অন্ধকার হয়ে এলো।
____________
‘কিরে কি ভেবেছিলি বিয়ের আসর থেকে পালালে তোকে খুঁজে পাবো না? আমার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যাবি? তোর নিজের চেহারা নিয়ে অনেক অহংকার না? আজ সব অহংকার নষ্ট করে দিবো তোর! এতোদিন প্র*তি*শো*ধের জন্য তোকে খুঁজে বেড়িয়েছি। আজ প্র*তি*শো*ধ নিয়েই ছাড়বো।’ দু আঙ্গুল দিয়ে শুভ্রতার গাল টিপে কথাগুলো বলে আসিফ। শুভ্রতার শরীর ভেঙ্গে আসছে যেনো। ব্যাথায় শব্দ করবার শক্তিও পাচ্ছে না। আসিফ আবারও একটা চ*ড় বসিয়ে দিলো। শুভ্রতার দুনিয়া আধার হয়ে আসছে।
‘ভাই কাজ শুরু করে দিন!’ পাশে থাকা একটা ছেলে বলে।
‘না এখন না। আগে জ্ঞান ফিরুক। স্বজ্ঞানে কষ্ট দেওয়ার মজাই আলাদা। ছটফট করবে কিছু করতে পারবে না।’ আসিফের কথায় সবাই হেসে উঠলো।
#চলবে?
(ভূল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ)