#হঠাৎ_বৃষ্টি
জান্নাতুল নাঈমা
পর্বঃ৫
নতুন একটা সকাল নতুন করে বার্তা নিয়ে আসে। কখনো সুখের কখনও দুঃখের। হাসি-কান্না নিয়েই আমাদের জীবন। সকাল সকাল শুভ্রতা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নিলো। আজ সকাল থেকেই মনটা ফুড়ফুড়ে লাগছে। হঠ্যাৎ করেই মন ভালো লাগছে। কারণটা অবশ্য জানা নেই। হয়তো জানাই আছে বুঝতে পারছে নাহ।
‘কিরে আজকে তোকে একটু বেশীই খুশি লাগছে। ঘটনা কি?’ শুভ্রতার রুমমেট তানিয়ে বলে। তানিয়া শুভ্রতার সিনিয়র। একটা বেসরকারি কোম্পানিতে জব করে। শুভ্রতার সাথে মোটামুটি ভালোই সক্ষ্যাৎ।
‘না আপু তেমন কিছু নাহ।’ শুভ্রতা হালকা হেসে বলে।
‘ইসস। বলবি না সেটা বল! আচ্ছা যাই হোক। শুন আজ আমার আসতে দেরি হবে। মিটিং আছে। আমি যাচ্ছি। তুই দরজায় তালা দিয়ে যাস।’ তানিয়া ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে।
‘আচ্ছা সাবধানে যেও।’ শুভ্রতা জোরে বলে। তানিয়া হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। শুভ্রতাও ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নেয়। বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই চোখ যায় টবে লাগানো কাঠগোলাপ গাছটার দিকে। গাছটা আপাদত টবেই লাগিয়েছে। পরে খোলা জায়গা পেলে সেখানে লাগিয়ে দেবে। শুভ্রতা আলতোভাবে গাছে হাত বুলায়। তারপর তালা মেরে বাইরে চলে যায়।
শুভ্রতার বাসাটা ভার্সিটি থেকে দূরেই বটে। রিকশায় যাওয়া লাগে। মাঝে মাঝে হেটেও যায়। আজকে তার মন ভালো। তাই হেটে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলো। শুভ্রতা পা চালিয়ে কিছুদূর আসার পরই একটা বাইক তার গা ঘেঁষে গেলো। শুভ্রতা বেশ ভয় পেয়ে গেলো। বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিলো। নিজেকে ধাতস্থ করে পেছনে ফিরে রাগি গলায় বলে,,’আসুন কোলে উঠিয়ে দেন বাইকটা। যত্তসব বাইক চালাতে না জানলে রাস্তায় উঠবেন না। বাইক ছেড়ে সাইকেল চালান। তাও জণজীবন রক্ষা পাবে।’
বাইকটা একটা সামনে গিয়ে থামলো। শুভ্রতা এখনও খাইয়ালামু মুখ নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। বাইকে থাকা মানুষটি মাথা থেকে হেলমেট খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। বাইকে মেঘকে দেখে শুভ্রতার রাগ তরতর করে বেড়ে গেলো। ধুপধাপ পা ফেলে মেঘের সামনে গেলো। রাগে গজগজ করে আঙ্গুল তাক করে বলে,,’আপনি! আপনি আবার এইরকম বাইক চালাচ্ছেন! আপনার বাইকটাকে আমি ভেঙ্গেই গুঁড়িয়ে দিবো। বাইক চালান না প্লেন চালান। পারলে তো মানুষের গায়েই উঠিয়ে দেন। এই আপনাকে গাড়ির লাইসেন্স কে দিয়েছে বলুন তো? আদৌ গাড়ির লাইসেন্স আছে তো? আপনাকে ট্রাফিক পুলিশ ধরে না কেনো? কি হলো মুখে কি করলা দিয়ে বসে আছেন নাকি। কথা বলছেন না কেনো?’
মেঘ নিজের গালে হাত দিয়ে বাইকে ভর দিয়ে বসে আছে। শুভ্রতার কথা শেষ হলে মেঘ বাইকে থাকা পানির বোতল এগিয়ে দেয়। শুভ্রতা এক নিঃশ্বাসে কথা বলে কিছুটা হাপাচ্ছে। মেঘ পানির বোতল এগিয়ে দিলে শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মেঘ তা দেখে বলে,,’অনেকক্ষণ বকলে তো। নিশ্চয়ই হাপিয়ে গেছো। নাও পানি খাও।’
‘আপনাকে তো আমি..!’ শুভ্রতা আবার তেড়ে এগিয়ে যেতে নিলে মেঘ মাঝখানে পানির বোতল দিয়ে ইশারায় খেতে বলে। শুভ্রতা রেগে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে হাফ খেয়ে নেয়। মেঘ তা দেখে হাসে। শুভ্রতা পানি খেয়ে একটু ঠান্ডা হলে মেঘ বলে,,’এবার ঠিক আছো?’
শুভ্রতা মাথা নাড়িয়ে বুঝালো ঠিক আছে। মেঘ তা দেখে বলে,,’চল। বাইকে উঠো। ভার্সিটি পৌঁছে দেই।’
শুভ্রতা তা শুনে ছিটকে সরে গিয়ে বলে,,’না। আমি আপনার ওই প্লেনে উঠবো না। অকালে নিজের জীবন দিতে পারবো না।’
মেঘ তা শুনে উচ্চস্বরে হাসে। আসলে মেঘ ঠিক ভাবেই চালায়। শুধু শুভ্রতা থাকলে এই রকম করে। একটু আগেও শুভ্রতাকে দেখে এইরকম করেছিলো। শুভ্রতা বকা শুনতে তার বেশ ভালো লাগে!
‘আচ্ছা আমি ঠিকভাবেই চালাবো। তুমি আসো।’ কথাটা বলে মেঘ শুভ্রতাকে হেলমেট এগিয়ে দিলো। তারপর দুজন মিলে রওনা হয়। ‘শুভ্র তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো’ মেঘ বাইক চালাতে চালাতে বলে।
‘বলুন।’
‘ভার্সিটি শেষে তুমি একাই চলে যেও। আমি আসতে পারবো না। খালাতো ভাইয়ের মেয়ে দেখতে যাবো।’
‘তো আমাকে বলছেন কেনো?’
‘জানিয়ে রাখলাম। ওয়েট যেনো না করো।’
‘ইসস আমি কেনো আপনার জন্য ওয়েট করতে যাবো শুনি?’ শুভ্রতা মুখ বাঁকা করে বলে।
‘ওই যে প্রশ্নের মাঝেই উত্তর থাকে।’ মেঘের কথায় শুভ্রতা মুখ টিপে হাসলো।
‘সামনে তাকিয়ে বাইক চালান।’ তারপর আর কোনো কথা হলো না। দুজনে দুজনকে অনুভব করে সময়টা কাটাতে লাগলো।
___________________
ভার্সিটি শেষে শুভ্রতা গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। মেঘকে না দেখে খানিক ভ্রু কুঁচকালো। পরক্ষণেই মনে পড়লো মেঘ আসবে না। শুভ্রতার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তারপর টিউশনির দিকে অগ্রসর হয়। কিছুদূর যেতেই ফোন বেজে উঠলো। শুভ্রতা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। আননোন নাম্বার দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো। শুভ্রতা ফোন ধরে সালাম দিলো। ওপাশের কথা শুনে শুভ্রতার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বিনয়ী হয়ে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে কল কাটলো। তারপর মায়ের নাম্বারে ডায়েল করলো।
‘হ্যালো মা।’
‘কিরে মা। কোনো বিপদ হলো নাকি। এইসময়ে ফোন করেছিস।’
‘মা মা। আমার চাকরি হয়ে গেছে মা। তুমি শুনছো আমি রেডিও স্টেশনে জকির জব পেয়ে গেছি।’ শুভ্রতা উচ্ছাসিত হয়ে বলে।
‘কি বলছিস মা। সত্যি?’ শুভ্রতার মা আনন্দে চোখের জল মুছে বলে।
‘হ্যা মা। স্টার্টিং স্যালারী ১৪০০০ দিবে। পরে যদি শো ভালোভাবে চলে বাড়াবে বলেছে।’
‘আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। আমি তোর বাবাকে বলে আসছি।’
‘আচ্ছা মা রাখছি।’ কথাটা বলে শুভ্রতা ফোন রেখে দিলো। একটু আগে রেডিও স্টেশন থেকেই কল এসেছিলো। শুভ্রতা ওইদিন সেখানেও ইন্টারভিউ দিয়েছিলো। ‘ইসস এই সময়ে মেঘ নেই। নিশ্চয়ই খুব খুশি হতো।’ শুভ্রতা আপন মনে কথাগুলো বলে টিউশনিতে চলে গেলো।
_______________
খালাতো ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছে মেঘ। কিন্ত তার সেদিকে কোনো মন নেই। সে শুভ্রতাকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর। পাশেই তার মা বসে আছে। এমন ভাব ধরছে যেনো তার জন্যই মেয়ে দেখতে এসেছে। মেয়ের ছোট বোনের সাথে মেঘের মায়ের খুব ভাব হয়ে গেছে। উনার যে মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখছে না। মেয়েটাও কেমন একটু পরপর লজ্জা মুখ করে মেঘের দিকে তাকাচ্ছে। মেঘ এতে খুব বেশীই বিরক্ত।
‘মা! আর কতোক্ষণ থাকবে?’ মেঘ তার মায়ের কানে কানে বলে।
‘উফফ বস তো। দেখছিস মেয়েটার সাথে কথা বলছি।’
‘তুমি তো আহনাফ ভাইয়ের বউয়ের সাথে বলছো না। তুমি তো ওর বোনের সাথেই কথা বলছো!’ মেঘ বিরক্ত হয়ে বলে।
‘তোর কি সমস্যা?’ মেঘের মা রেগে বলে।
‘তোমরা থাকো আমি গেলাম।’ মেঘ কথাটা বলে উঠতে নেয়।
‘এই একদম না। বস। সুমাইয়া (মেয়ের বোন) সাথে কথা বল।’ কথাটা বলে মেঘের মা উঠে বোনের কাছে গেলো।
‘আজব আমি কি কথা বলবো। দূর শুভ্রর নাম্বারটা নেই। নইলে এখন ওর সাথে কথা বলতাম। কি করছে টা কি মেয়েটা। কে জানে? ভাল লাগে না।’ নিজের মনে কথাগুলো বলে মেঘ পাশে তাকালো। সুমাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে। যেনো এক্ষুণি গিলে খাবে। মেঘ সেটা দেখে মেকি হাসি দিয়ে উঠে বেরিয়ে গেলো। মায়ের ফোনে ‘যাচ্ছি।’ বলে ছোট্ট মেসেজ দিয়ে চলে গেলো। এখন তার মন ভালোর মেডিসিন ‘শুভ্রতাকে’ প্রয়োজন।
#চলবে?