#হঠাৎ_বৃষ্টি
জান্নাতুল নাঈমা
পর্বঃ৪
যেকোনো কাজ করার আগে সবসময় ভেবে চিন্তে করা উচিৎ। আন্দাজে কিছু করতে গেলে সেটা ভূল হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। উল্টো ঝামেলা পোহাতে হয়। কবি বলেছিলেন,,’ভাবিয়া করিও কাজ,করিয়া ভাবিও না।’ উক্তিটি যে কেনো বলেছে সেটা এখন মেঘ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। আন্দাজের উপর এই বাসায় আসা তার জন্য মহা ঝামেলা বয়ে এনেছে। বর্তমানে সে একজন পুলিশ অফিসারের বাসার ড্রয়িংরুমে এক অবলা, বোলা ভালা মুখ করে বসে আছে। যেনো তার মতো সাধু পুরুষ হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। কিন্ত সে যে কি মাইনকার চিপায় পড়ছে সেটা একমাত্র সেই জানে। মেঘ একটু আগের কথাগুলো ভাবতে লাগলো।
আল্লাহ আল্লাহ করে বাসার কলিংবেল বাজালো মেঘ।
মেঘ জানে শুভ্রতা মেসে থাকে। কিন্ত সে মেসের ঠিকানা জানে নাহ। শুভ্রতা ওইদিন এই বাসায় এসেছিলো বলে সে আন্দাজে এসেছে। শুভ্রতা বলেছিলো সে গ্রামে থাকে, হয়তো কোনো আত্মীয়র বাসা এটা। এখান থেকে তাদের পটিয়ে শুভ্রতার ঠিকানা নিয়ে নিবে। আজ যে করেই হোক বৃষ্টিকণ্যার দেখা তার চাই। বুকে ফু দিয়ে মেঘ দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো। বুকের ভেতরটা কেমন ঢিপঢিপ করছে। হার্ট মনে হয় এক লাফে যে দরজা খুলবে তার কোলে চলে যাবে। আগে কোনো এইভাবে কারো বাসায় যায় নি। মেঘ ‘ইয়া নাফসি’ জব শুরু করে দিয়েছে। দরজা খুলে একটা পিচ্চি মেয়ে বেরিয়ে এলো। পিচ্চি মেয়েটা খুব মিষ্টি। মেঘের ইচ্ছে করছে গাল দুটো টেনে দিতে। কিন্ত নাহ এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় নি। হলে যাওয়ার আগে হলেও সে গাল টেনে দিয়ে যাবে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
‘কাকে চাই?’ মেয়েটা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে। মেঘ মিষ্টি হেসে বলে,,’শুভ্রতা আছে?’
মেঘের কথা মেয়েটা কি বুঝলো কে জানে। দরজা থেকে ছুটে ভেতরের রুমে চলে গেলো। মেঘ আহাম্মকের মতো মেয়েটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
‘কি রে বাবা! আমি কি ভিনগ্রহের এলিয়েন নাকি? আমার কন্ঠ কি কুম্ভকর্ণর নাক ডাকার থেকেও ভয়ঙ্কর? মেয়েটা এমন পালিয়ে গেলো কেনো? এখন আমি কি করি? ভেতরে যাবো? না দাঁড়াব? ধুর বাবা। ভাল লাগে না।’ মেঘের বিড়বিড়ানির মাঝে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বেরিয়ে এলো। মেঘ তাদের দেখে বিনয়ী হয়ে সালাম দিলো। মহিলাটি সালাম নিলেন। কিন্ত ভদ্রলোকের মনোভাব বুঝা গেলো না। কেমন গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভদ্রমহিলা মেঘকে বলে,,’ভেতরে এসো।’ মেঘ কিছু বুঝতে পারলো নাহ। বাধ্য ছেলের মতো গিয়ে বসে পড়লো। কিন্ত বসার আগে বাসায় লাগানো ফটো ফ্রেমের মধ্যে গায়ে ইউনিফর্ম সহ ভদ্রলোকের ছবি দেখেছে।
‘তোমার নাম কি?’ ভদ্রলোকের গম্ভীর কন্ঠে মেঘের ভাবনার ছেদ ঘটে। হালকা নড়েচড়ে বসে। তারপর নিম্নস্বরে বলে,,’জ্বি?’
ভদ্রলোক আবার ভরাট কন্ঠে বলে,,’তোমার নাম!’
‘আবরার আওসিফ মেঘ।’
‘কি করো তুমি?’
‘মাষ্টার্স এ পড়ছি।’
‘কোনো চাকরি বাকরি করো না নাকি?’
‘জ্বি নাহ। এমনিতে ফ্রিল্যান্সিং করি।’
‘আচ্ছা।’ ওদের কথার মাঝে মহিলা এসে চা বিস্কিট দিয়ে নিজেও বসে পড়লো।
‘শুভ্রতার সাথে তোমার কিভাবে পরিচয়?’ ভদ্রলোকের প্রশ্নে মেঘ উনার দিকে তাকিয়ে বলে,,’হঠ্যাৎ বৃষ্টিতে!’
‘আচ্ছা তোমার মা-বাবাকে আমার সাথে কথা বলতে বলো।’ ভদ্রলোকের এই কথাটা মেঘ বুঝতে পারলো নাহ। মেঘ জিজ্ঞাস করলো,,’কেনো?’
ভদ্রলোক কিছু বলার আগে মহিলা বলে উঠে,,’কেনো মানে? বিয়ের কথার জন্য! তোমাকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। শুভ্রতা যখন তোমার কথা বলেছিলো তখন ওর বাবা শুধু শুধু রাগ করেছিলো। এখন তো দেখি ছেলে মাশাল্লাহ। এখন না হয় কাবিন করিয়ে রাখবো। তোমার জব হলে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।’
মহিলার কথা শুনে মেঘ অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলো। সে এখনও প্রেমেই যায় নি। উনারা বিয়ে বলছেন। তার চেয়েও বড় কথা সে তো শুভ্রতাকে কিছু বলেই নি উনারা কি বলে এসব। মেঘ নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,,’আপনারা কি বলছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি নাহ।’
মেঘের কথায় ভদ্রলোক হঠ্যাৎ রেগে বলে,,’দেখলে তো? এইজন্য আমি এইসব প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করি নাহ। মেলামেশার সময় সব ঠিক ছিলো যেই না বাবা-মাকে বলে বিয়ের জন্য বলেছি তখনই আমি কিছি বুঝতে পারছি নাহ।’
‘আহা তুমি উত্তেজিত হচ্ছো কেনো? শান্ত হও।’ ভদ্রমহিলা উনাকে শান্ত করার জন্য বলছেন। ড্রয়িংরুমের কোলাহলের শব্দে ভেতর থেকে পিচ্চি মেয়েটা এবং আরেকটি মেয়ে বেরিয়ে এলো।
‘তোমরা এই রকম চেঁচামেচি করছো কেনো?’ বড় মেয়েটা বলে। মেয়েটির কথায় ভদ্রলোক মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,’তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে বিয়ে করবে সেটার মানে উনি বুঝতে পারছেন না? এই ভালোবাসা নিয়ে তুমি আমার সাথে গলাবাজি করো?’
মেয়েটা কিছু বুঝতে না পেরে বলে,,’কি বলছো কি? তুমি আবরারকে কই পেলে? আর আবরারের সাথে কথাই বা বললে কখন?’
এবার ভদ্রমহিলা মুখ খুলে বলেন,,’কি বলছি মানে কি শুভ্রতা! এই তো আবরার। আবরার আওসিফ মেঘ!’
এই কথাতেই মেঘের যা বুঝার বুঝা হয়ে গেছে। এখানেও আরেকজন শুভ্রতা থাকে। তার বিএফ আবরার। সেখানেই গোলমাল। হায়রে কপাল! মেঘের এখন নিজের মাথা নিজে বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছে।
‘আম্মু আবরার আওসিফ মেঘ নাহ! আবরার শাহরিয়ার!’ শুভ্রতার কথায় উনারা চমকে উঠলেন। ভদ্রলোক ভুল জায়গায় ইন্টারগেট করে লজ্জিত হলেন।
‘তুমি যে বলেছিলে শুভ্রতা?’
‘আসলে আংকেল কাল বিকেলে যে শুভ্রতা আপনার বাসায় এসেছিলো সেই শুভ্রতা!’ মেঘের কথায় পিচ্চিটা লাফিয়ে উঠে বলে,,’ও তুমি মিসের কাছে এসেছো? শুভা মিস?’
মেঘ বুঝলো শুভ্রতা এখানে টিউশনি করায়। মাথায় দুলিয়ে বলে,,’হ্যা। শুভ্রতা মিস!’ মেঘের কথায় সবার মাথায় হাত। এরপর সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে মেঘ বেরিয়ে এলো। ঠিকানা তো ফেলো নাহ,উল্টো লম্বা এক ঝামেলায় পড়ে গেলো। বেরিয়ে এসে নিজের বাইকে এক লাথি দিলো কিন্ত বাইক নড়লো নাহ নিজেই পা ধরে লাফাতে লাগলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আর কারো বাসায় এইরকম যাবে নাহ। তবে সবকিছুর মাঝে পিচ্চির গাল টানতে পেরে আলাদা শান্তি লাগছে।
___________________
ভিক্টোরীয়া পার্ক সবসময় মানুষে ভরপুর থাকে। এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবার দেখা পাওয়া যায়। বাদাম,আইসক্রিম বিক্রেতার হাট বলে। আর একটু দূরে ভার্সিটি হওয়ায় ছাত্র ছাত্রীদের কোলাহলে আরো মুখরিত হয় রাস্তা। সেই রাস্তারই কোণঘেঁষে হেটে যাচ্ছে শুভ্রতা। মোটামুটি তিনটে জায়গায় যোগাযোগ করেছে সে। এর মাঝে এক জায়গায় লোকের প্রয়োজন নেই সেটি বাদ। বাকি দু জায়গা থেকে জানাবে বলেছে। একটা হলো রেস্টুরেন্ট আরেকটা এনজিও। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে মেসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো শুভ্রতা। আজ তার টিউশনি আছে কিন্ত যেতে একদম ইচ্ছে করছে নাহ। সিদ্ধান্ত নিলো আজ পড়াবে না। শুক্রবারে পড়িয়ে দিবে। দুপুর হয়ে এসেছে। শুভ্রতা পা চালিয়ে মেসে ফিরে গেলো।
_______________
‘নদীর এ পাড় কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
ওই পাড়েতে সকল সুখ আমার বিশ্বাস।’
হঠ্যাৎ লাইন দুটো শুনে চমকে উঠে শুভ্রতা। পেছন ফিরে মেঘকে নিজের কাছাকাছি আবিষ্কার করে চমকে উঠে। কিন্ত এখানে এলো কখন মেঘ!। সন্ধ্যায় বাসায় দুহাজার টাকা পাঠানোর জন্য বিকাশের দোকানে গিয়েছিলো শুভ্রতা। মাসে টিউশনি করে যা পায় তা দিয়ে নিজের চলে যায়। কিন্ত মাঝে মাঝে দু তিন মাস এক করলে কিছু টাকা হলে তা বাসায় পাঠায়। এই টাকা দিয়ে কিছু হয় না জেনেও নিজের শান্তির জন্য পাঠায়। টাকা পাঠিয়ে হাটতে হাটতে ব্রিজের কাছে এসে দাঁড়ায় সে। উল্টো দিকে তাকিয়ে রয়। ল্যাম্পপোস্ট আর গাড়ির আলোতে জায়গাটা হালকা আলোকিত।
‘কখন এলেন? আর আপনি এখানেই বা কেনো?’ শুভ্রতার প্রশ্নের মেঘ মুচকি হেসে বলে,,’কোনটার উত্তর আগে দিবো?’
‘দুটোই।’
‘আপনি যখন গভীর ভাবনায় মত্ত তখন আমি এসেছিলাম। আর খেয়াল করে দেখুন এখান থেকে একটু গেলেই আমাদের হাউজিং।’ মেঘের কথায় শুভ্রতার চারদিকে তাকালো। আসলেই তোহ। রাতের অন্ধকারে সে বুঝতেই পারে নি। নিজের বোকামোতে শুভ্রতা হালকা হাসলো। আলতোভাবে নিজের মাথায় চাটি মেরে বলে,,’বুঝতেই পারি নি।’
‘ইটস ওকে। মন খারাপ?’ মেঘ শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে। শুভ্রতা আকাশের দিকে উদাস চোখে তাকিয়ে বলে,,’হ্যাঁ। আবার না!’ মেঘ বুঝতে না পেরে বলে,,’মানে?’
‘কিছু একটা তো হবেই।’
‘হেয়ালি করছেন কেনো?’ শুভ্রতা কিছু বললো না। হাসলো শুধু।
‘বলতে না চাইলে সমস্যা নেই। কিন্ত মন ভালো করার দায়িত্বটা এখন না হয় দিন।’
‘মানে?’
‘কিছু তো একটা হবেই।’
‘আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন?’
‘বলতে পারেন। এখন চলুন।’
‘কোথায়?” শুভ্রতা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাস করে।
‘বিশ্বাস করেন তো?’ মেঘ কোমল কন্ঠে বলে। শুভ্রতা হালকা হেসে বলে,,’নইলে ঝড় বৃষ্টির রাতে এক আপনার ফ্ল্যাটে থাকতাম?’
মেঘ আলতো হেসে বলে,,’চলুন তবে!’ তারপর দুজনে বাইকে উঠে পাড়ি জমায় অজানায়।
#চলবে?
#হঠাৎ_বৃষ্টি
জান্নাতুল নাঈমা
বোনাস পার্ট
ঢাকার শহর মানেই আলাদা সৌন্দর্য। দিনে যারা উপভোগ করতে পারে নাহ তারা রাতের শহরে বের হয়। রাতের শহরের যে মাধুর্যতা তা দিনে পাওয়া যায় না। চারদিকে ল্যাম্পপোস্ট এর আবছা আলো। মাঝে মাঝে দু একটা গাড়ি শা শা করে যাচ্ছে। হালকা বাতাসে আকাশে টিমটিম করে জ্বলা তারা সবটা মিলিয়ে আলাদা প্রশান্তি। এর মাঝে হাইওয়ে ধরে বাইক নিয়ে ছুটছে মেঘ-শুভ্রতা। মেঘের ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি। তার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটি তার বৃষ্টিকণ্যা যে তার সাথেই আছে। মেঘ আড়চোখে বাইকের লুকিং গ্লাসের দিকে তাকালো। শুভ্র রংয়ের সুতোর কাজ করা একটা জামা গায়ে। অন্যসময় হিজাব থাকলেও এখন এমনি ওড়না মাথা দেওয়া। অগোছালো কিছু চুল ওড়না বেধ করে হাওয়ার তালে উড়ছে। একটা হাত মেঘের কাঁধে। মেঘ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
‘এই মেঘ সাবধানে।’ হঠ্যাৎ শুভ্রতার গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠে মেঘ। শুভ্রতার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে দিকে তাকায়। কিন্ত ব্রেক কষার আগেই সামনের অটোর সাথে ধাক্কা খায়।
‘মেঘঘঘ…’ শুভ্রতা হালকা চিৎকার করে উঠে। কিছুক্ষণ পর কোনো আওয়াজ না পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে শুভ্রতা। সামনে মেঘ দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে দেখে মেজাজ সপ্তম আকাশে উঠে গেলো। দাঁত কিড়মিড় করে শুভ্রতা মেঘের দিকে তাকালো। সামনের অটো নেই। মেঘ সামলে নিয়েছে কারো কোনো ক্ষতিই হয় নি।
‘বাইক চালাতে না জানলে বাইক নিয়ে বের হন কেনো? গাড়ি দেখলেই দুড়ুম দুড়ুম মেরে দিতে ইচ্ছে হয় নাকি?’
শুভ্রতার রাগান্বিত কন্ঠস্বর মেঘের কাছে ভালোবাসাময় ঠেকছে। ভালোবাসলে বুঝি তার সবটাই ভালো লাগে!
মেঘ মৃদু হাসলো। তা শুভ্রতার কাছে গা জ্বলানো হাসি ঠেকলো। শুভ্রতার কি হলো কে জানে ধুম করে মেঘের পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলো। নিজের কাজে শুভ্রতা পুরো আহাম্মক বনে গেলো। এই কি করে দিলো সে! মেঘ এবার কি রিয়েক্ট করে? শুভ্রতা মুহুর্তে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে শুভ্রতার পাণে চেয়ে আছে।
‘আ’আম স সরি ম মেঘ..!’ শুভ্রতা ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে। মেঘ ফিক করে হেসে উঠে। যেনো শুভ্রতাকে ভয় পেতে দেখে সে ভীষণ মজা পেয়েছে। মেঘের হাসিতে শুভ্রতার ভয় হালকা কাটলেও জড়তা কাটে নি। তাই আবারও নিম্নস্বরে বলে,,’আসলে আমার একটা ব্যাড হ্যাভিট আছে। আমার হাত পা একটু দ্রুত চলে। আপনি তখন হাসছিলেন বলে আমার রাগ হয়েছে। তাই আরকি ওই..!’
মেঘ এবার হালকা হেসে বলে,,’ইটস ওকে পিচ্চি। আমি কিছু মাইন্ড করি নি। চাইলে আরো দু একটা দিতে পারো।’ শুভ্রতা বেশ লজ্জা ফেলো। তাই মাথা নিচু করে রইলো। মেঘ এবার শুভ্রতার দিকে হেলমেট এগিয়ে দিয়ে বলে,,’এটা প্রটেকশনের জন্য পরে নাও। নেক্সট টাইম খারাপ কিছু হতে পারে।’
‘তার মানে আপনি আবার অন্যমনস্ক ভাবে বাইক রাইড করবেন? উঠবো না আপনার বাইকে! আপনিও চালাবেন না!’ শুভ্রতা হেলমেট না নিয়ে বলে।
মেঘ একহাত গালে দিয়ে বলে,,’ওমা তাই? তা বাসায় ফিরবো কি করে শুনি?’
‘কেনো হেটে?’
‘তাই? তোমার মাথায় তো বেশ বুদ্ধি শুভ্র! আমরা প্রায় শহরের শেষ মাথায়। এখান থেকে বাসায় হেটে যেতে চাচ্ছো? আচ্ছা তাহলে যাও। কিন্ত আমাকে তো কোলে করে নিয়ে যেতে হবে। আমি বাবা হেটে যেতে পারবো নাহ।’ মেঘ শুভ্রতার মাথায় হেলমেট পড়াতে পড়াতে বলে।
শুভ্রতা ঠিকঠাক করে বসতে বসতে বলে,,’আমি এই বুইড়া দামড়া ছেলেকে কোলে নিয়ে অকালে বুড়ি হতে চাই নাহ বাবা! আমি বাইকেই যাবো। তবে হ্যাঁ সাবধানে।’
‘আচ্ছা তাহলে তুমি গান ধরো আমি সাবধানে বাইক চালাই।’ মেঘ বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলে।
‘গান গাইলে গান শুনবেন নাকি বাইক চালাবেন।’
‘মিস শুভ্রতা বাইক চালানোর জন্য কানের প্রয়োজন নেই।’
‘আছে কারণ কান দিয়ে আশেপাশে গাড়ির আওয়াজ শুনবেন।’
‘ওকে বাবা। তুমি ঠিক। আমি ভুল। এবার একটা গান গাও তো।’
‘তোকে একার দেখার লুকিয়ে কি মজা,
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না..
তোকে চাওয়ারা পাওয়ারা নয়রে সোজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না।’
______________
মেঘ বাইক এনে শুভ্রতার মেসের সামনে থামালো। এটলাস্ট মেঘ শুভ্রতার ঠিকানা পেয়েই গেলো। শুভ্রতা বাইক থেকে নেমে হেলমেট খুলে মেঘের হাতে দিলো। মেঘ সেটা নিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে,,’শুভ্র!’
‘বলুন।’ মেঘ শুভ্রতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,’তুমি আমার সাথে এতোক্ষণ ছিলে,আমার সাথে মেলামেশা করো। তুমি আমাকে কতোটুকু চিনো। আর এতো ফ্রি বা হচ্ছো কেনো?’
মেঘের এই রকম কথার জন্য হয়তো শুভ্রতা প্রস্তুত ছিলো। মুচকি হেসে বলে,,’কিছু প্রশ্নের উত্তর সেই প্রশ্নেই লুকিয়ে থাকে। খুঁজে বের করে নিন।’
শুভ্রতার উত্তরে মেঘ শুধু তার দিকে তাকিয়ে রইলো।
‘আসছি। সাবধানে যাবেন।’ কথাটা বলে শুভ্রতা ভেতরে ডুকে গেলো। মেঘ কি ভেবে হাসলো। তারপর নিজের মনের সুখে বাসার দিকে রওনা হলো।
__________________
‘আরে মা তুমি? কখন এলে?’
নিজের মাকে বাসায় দেখে খানিক অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মেঘ। মিসেস মাহমুদা নিজের চোখের চশমাটা আলতো হাতে ঠেলে বলেন,,’আমি তোমাকে অনেকবার কল দিয়েছি। তুমি ধরো নি।’
মায়ের কথায় মেঘ নিজের পকেট হাতড়ে ফোন বের করলো। ফোন সাইলেন্ট ছিলো। আসলে শুভ্রতাকে নিয়ে এতোবেশী মগ্ন হয়ে গিয়েছে মেঘের খেয়াল ছিলো নাহ। এগিয়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,’সরি মা। ফোন সাইলেন্ট ছিলো।’ মেঘের মা ছেলেকে জড়িয়ে বলে,,’ঠিক আছে।’
মেঘ মাকে ছেড়ে বলে,,’কিন্ত তুমি হঠ্যাৎ করে?’
‘তোর আহনাফ ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। তোর খালামণি কল দিয়ে বললো। মোটামুটি সব ফাইনাল। জাস্ট আমরা দেখবো। আর আমাদের সাথে তুইও যাবি। কাল বিকেলে রেডি হয়ে থাকিস।’
‘কিন্ত মা আমি কেনো?’
‘মেঘ। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। যাবে মানে যাবে।’
মেঘ আর কিছু বলতে পারলো না। সে কাল শুভ্রতার জন্য একটা সারপ্রাইজ ভেবেছিলো। কিন্ত সেটা আর সম্ভব নয়। মার কথাও ফেলতে পারবে নাহ। মেঘ মন খারাপ করে রুমে চলে গেলো।
#চলবে?
(ভূল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ)