#হঠাৎ_বৃষ্টি
জান্নাতুল নাঈমা
পর্বঃ২
মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মাঝে মাঝেই গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ হচ্ছে। হয়তো বৃষ্টি আসবে। প্রকৃতি খুব শান্ত হয়ে আছে। মাঝে মাঝে হালকা বাতাস বইছে। পরিবেশটা মোটামুটি খুবই সুন্দর৷ কিন্ত আপাদত কেউ এই মুগ্ধকর প্রকৃতিতে মনোনিবেশ করতে চাইছে না। কারণ তাদের সামনেই করিড়রের ফ্লোরে লুটোপুটি খাচ্ছে মেঘ নামক মানবটি। তাকে ঘিরেই সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ভাবখানা এমন যেনো সে অন্য গ্রহের প্রাণী। কারণ, এতো বড় একটা ছেলে হাটতে গিয়ে ফ্লোরে কিভাবে পড়ে সেটা কারো বোধগম্য হচ্ছে নাহ।
‘এই আপনি নিচে পড়লেন কি করে?’,,শুভ্রতার কথায় সবার ভাবনার ছেদ ঘটে। উৎসুক দৃষ্টিতে সবাই মেঘের দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। দু একজন ঠোঁট চেপে হাসছে। কারণ সিনিয়র ভাইয়ের সামনে এইভাবে হাসা ঠিক হবে না। মেঘ নিজের কাজের জন্য বেজায় লজ্জিত। মুখ পুরো টকটকে লাল হয়ে গেছে। অন্য কারো সামনে মানা গেলেও তার বৃষ্টিকণ্যার সামনে একদম মানা যাচ্ছে নাহ। কিছুতেই নাহ। মনের ভেতরে তীব্র প্রতিবাদের ধ্বনি বাজছে। কিন্ত কিছু করার নেই। যা কান্ড করার সে করেই ফেলেছে। মেঘ শুভ্রতাকে বেরিয়ে আসতে দেখেই তাড়াতাড়ি সরে যেতে নিলে খেয়াল না করেই পড়ে গেছে। কিন্ত কিভাবে সেটা এখনও তার কাছে স্পষ্ট নয়। খানিকটা রাগ লাগছে এও রকম বেয়াক্কেলে কিভাবে হলো। শুভ্রতার সামনে শুরুতেই তার ইমেজের বারোটা বেজে গেলো। মনে মনে তার আফসোসের শেষ নেই।
‘কি হলো কথা বলছেন না যে? আজকে কি পুরোদিন ফ্লোরে শুয়েই কাটাবেন নাকি?’ শুভ্রতার রসিকতার কন্ঠ শুনে মুহুর্তে মেঘের মুখ আঁধার হয়ে গেলো। তার বৃষ্টিকন্যাও তাকে নিয়ে মজা করছে? এটা ঘোর অন্যায়। সে অনসনে যাবে। কিছুতেই মানা যাবে নাহ। শাস্তিস্বরূপ তার বৃষ্টিকন্যাকে পুরো আধঘন্টা তার কাছে বসিয়ে রাখবে। কিন্ত কিভাবে? ভাবতে ভাবতেই মেঘের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। কাঁদো কাঁদো মুখ করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলে,,’আসলে আমি তাড়া হুড়ো করে হাটতে গিয়ে পড়ে গিয়েছি। তার চেয়েও বড় কথা কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছি। দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে।’
মেঘের কথায় শুভ্রতার মন খানিকটা নরম হলো। দুঃখ প্রকাশ করে বলে,,’আই এম সরি মিঃ মেঘ। আমার আগেই ভাবা উচিৎ ছিলো। কেউ এমনি এমনি ফ্লোরে পড়ে থাকে না। দাঁড়ান আমরা হেল্প করছি।’
শুভ্রতার কথায় মেঘ খুশি হয়ে গেলো। একটা হাত শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিবে কিন্ত তার আগেই শুভ্রতা বলে,,’হিমেল,নিশান উনাকে একটু সাহায্য করে রেস্ট রুমে নিয়ে যা তো।’
শুভ্রতার কথায় মেঘের মুখটা চুপসে যাওয়া লুচির মতো হয়ে গেলো। বিড়বিড়িয়ে বলে,,’ভাবলাম এক হলো আরেক। আমি তো কোনো ব্যাথাই পাই নি। এখন এটা বললে তো শুভ্রতার সামনে খারাপ হয়ে যাবো। আচ্ছে আমাকে ধরে নিয়ে যাক। একটু আরামই না হয় উপভোগ করি৷ কিন্ত বৃষ্টিকন্যাকে যখন একবার পেয়েছি আর হারাচ্ছি নাহ।’ মেঘের ভাবনার মাঝেই হিমেল,নিশান এসে মেঘকে নিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে মেঘ শুভ্রতার দিকে একপলক তাকালো। মেয়েটার মুখে খানিকটা দুঃশ্চিন্তা দেখে মেঘের মন ভালো হয়ে গেলো। এটাই তো চায় সে।
______________
‘কিরে মেঘ তোর এই অবস্থা কেন? জুনিয়রের সামনে এইভাবে মান খুইয়ে এলি? সেম অন ইউ!’
রেস্ট রুমে শুয়ে ছিলো মেঘ। তখনই তার পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল রুমে ডুকলো। সেখান থেকে তার বেস্টফেন্ড আভিয়ান কথাটা বলে।
‘কিচ্ছু করার নেই। ইমেজ নষ্টের বদলে আমি আরো বড় কিছু পেয়েছি আমার পড়ে যাওয়াটাও স্বার্থক।’ মেঘের কথা ওরা ঠিক বুঝতে পারলো নাহ৷ আশিক বললো,,’কি বললি বুঝলাম নাহ।’
‘কিছু নাহ৷ পরে বলবো।’ মেঘেদের কথার মাঝেই শুভ্রতা,মাহি আর নিশান রুমে আসলো। মেঘ শুভ্রতাকে দেখে হালকা নড়েচড়ে বসলো। শুভ্রতা এগিয়ে এসে বলে,,’আপনি ঠিক আছেন? এখন কেমন লাগছে?’
মেঘ মিষ্টি হেসে বলে,,”আই এম ফাইন নাউ।’
‘আচ্ছা।’ শুভ্রতা আর কোনো কথা খুঁজে ফেলো নাহ। মেঘের অনেক কথাই বলতে ইচ্ছে করছে কিন্ত কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। দুজনেই মৌন রইলো। শুভ্রতা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ‘ভালো থাকবেন।’ বলে চলে গেলো। মেঘ শুভ্রতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়লো।
_________________________
আজ আকাশটা একেবারে পরিষ্কার। বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। আকাশের আজ মন বেজায় ভালো। কিন্ত আকাশের নিচে বাস করা মেঘের মনে একদম ভালো নেই। কারণ আজ পুরো ক্যাম্পাসে চক্কর দিয়েও সে তার বৃষ্টিকন্যার দেখা পায় নি। দোষটা অবশ্য তারই। সে আজ খুব দেরি করে ফেলেছে। ইম্পোর্টেন্ট একটা ক্লাস ছিলো যেটা বাঙ্ক করতে পারে নি। তাই সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা বাদ দিয়ে রাস্তার ধার দিয়ে হাটা শুরু করলো। ভার্সিটির পুর্ব পাশ দিয়ে একটা রাস্তা যায় যেটা বেশ নিরব। কোলাহল নেই। মেঘ নিজের আপন মনেই সেদিকে অগ্রসর হয়। বেশ কিছুদূর যেতে কাউকে রাস্তার পাশে ঝুঁকে থাকতে দেখে এগিয়ে যায়। দূর থেকে মেয়ের মতোই লাগছে৷ এই টাইমে রাস্তায় কেউ নেই। একটা মেয়েকে দেখে অবাক হয়। কিছুদূর গিয়ে মেয়েটার সন্নিকটে দাঁড়াতে বুঝতে পারলো তার কাঙ্ক্ষিত মানুষ। তার বৃষ্টিকন্যা! মুহুর্তে খুশিতে চোখ চকচক করে উঠলো। নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেতে মাথা তুলে তাকায় শুভ্রতা। কিন্ত মেঘকে দেখে খানিকটা ভড়কে গেলো। তাও বাইরে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জিজ্ঞাস করে,,’আপনি এখানে?’
‘ওই এমনি হাটতে হাটতে। অবাক হন নি আমাকে দেখে?’ মেঘ পকেটে হাত গুজে বলে।
‘এটা একটা পাবলিক প্লেস। যে কেউ যখন তখন আসতে পারে। অবাকের কিছু নেই।’ শুভ্রতার প্রশ্নে মেঘ খানিক হাসে। অতঃপর শুভ্রতার হাতে মাটি লেগে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করে,,’হাতে মাটি যে?’
শুভ্রতা নিজের হাতের দিকে তাকায়। তারপর হাত ঝারতে ঝারতে বলে,,’ওই একটা জারুল গাছ লাগিয়েছি।’
শুভ্রতার কথায় মেঘ রাস্তার পাশে তাকালো। আসলেই সেখানে জারুল গাছের চারা। দু একটা ফুলও ফুটে আছে। মেঘ শুভ্রতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,’ফুল প্রেমী মানুষরা একটু বেশীই সুন্দর।’ মেঘের কথার ধরন শুভ্রতাকে হালকা নাড়িয়ে দিলো। মেঘের চোখের দিকে তাকালো। কিন্ত বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো নাহ। চোখ নামিয়ে নিলো।
#চলবে?
(ভূল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ)