#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৯ #বেচারা_অভি
#নবনী_নীলা
আমি অভিকে ডাকলাম,
” নওরীনের জামাই ও নওরীনের জামাই।”আমার ডাকে এবার অভী চমকালো না। সে বুঝতে পেরেছে এটা আমি।
অভী ফোন হাতে আমার দিকে এলো,” কি হয়েছে কিছু লাগবে?”প্রশ্ন করতেই আমি দরজার ওপাশ থেকে মুখ বের করে হা সূচক মাথা নেড়ে বললাম,” আমাকে আপনার একটা শার্ট আর ট্রাউজার দেন।”
অভী ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,” কেনো? আমার শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে তুমি কি করবে?”
এমনেই এনার উপর মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। আবার এতো প্রশ্ন, আমি বললাম,” আপনার শার্ট আর ট্রাউজার দিয়ে আমি বাংলাদেশের পতাকা বানিয়ে উড়াবো। এতো প্রশ্ন করবেন না তাড়াতাড়ি দিন।”
অভি মুখ ভার করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,” আগে বলবে না হলে আমি দিবো না।”
” দিবেন না মানে দিতেই হবে। আমাকে যে তুলে আনলেন এবার আমি কি পড়বো আমার জামা কাপড় কিছু এনেছেন?”, দরজার ওপাশ থেকে মুখ বের করে বলে আবার মুখ ঢুকিয়ে নিলাম।
” তার মানে কি তুমি তোমার সব জামা কাপড় নিয়ে চলে গেছো? তুমি জামা কাপড় নিয়ে গেছো, তোমার দোষ এখন জামা কাপড় ছাড়া থাকো। Stupid.”, বলে নিজের জামা কাপড় খুঁজতে লাগলো অভি।
” শুধু দুটো জামা চেয়েছি বলে এতো কথা শুনলেন।লাগবে না আপনার জামা আমি এই ভেজা জামা কাপড় পড়ে থাকতে পারবো।”, বলতে বলতে অভি জামা এনে আমার দরজার কাছে ধরে,” এই নেও।”
আমি বললাম,” না নিবো না। লাগবে না আমার।”
” নওরীন তুমি কি চাও আমি ভিতরে আসি? চুপ চাপ এইগুলো পরে বেরিয়ে এসো।”, অভির কথা আমি হাত বাড়িয়ে কাপড় নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
কিন্তু এটা কি! অভি আমাকে একটা কালো রঙের শার্ট আর একটা প্যান্ট দিয়েছে কিন্তু প্যান্টটা শর্ট ট্রাউজার মনে হচ্ছে। প্যান্টটা আমার হাঁটু আর গোড়ালির মাঝা মাঝি হয়েছে। শার্টের হাতা কোনো রকম ভাজ করে রাখলাম। নিজেকে আমার গোপাল ভাঁড়ের মতন লাগছে খালি ওনার মাথা বড়ো আর মোটা আমারটা স্বাভাবিক।
আমাকে দেখে অভি নিজের হাসি চাপানোর চেষ্টা করছে। ওনার জন্য আমার এমন অবস্থা উনি আবার হাসে। আমি রেগে বললাম,”একদম হাসবেন না। আপনার জন্য হয়েছে সব।”
” শিক্ষা হওয়া উচিত তোমার। Stupid”, বলে অভি নিজের ল্যাপটপ খুলে কাজ করছে।
আমি কিচেনে গেলাম,গিয়ে দেখি পোড়া ছাই গুলো। আমি সেগুলো পরিষ্কার করতে লাগলাম অথৈ নিজেও জানে না সে কি হারিয়েছে।আচ্ছা অথৈ যখন আগে থেকেই জানত নিজের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে এনগেজমেন্ট পর্যন্ত হয়েছিল অন্য ছেলের সাথে, তারপরও অভির সাথে সম্পর্ক রাখলো কেনো? অথৈ মেয়েটা একসাথে দুইটা ছেলেকে চিট করেছে।
আম্মু বলেছিলো সব জানতে পেরে অথৈয়ের ফিয়ান্সে বিয়ে ভেঙে দেয় এবং অভিকে থ্রেড দিয়ে যায়। অথৈ যে অভিকে চীট করছিল সেদিন অথৈয়ের ফিয়েন্স থেকে অভি জানতে পারে।
ড্রয়ারে থাকা এই ছবি, অংটি এইগুলো দেখে তো আমি মনে করেছিলাম অভি এখনও অথৈকে ভালোবাসে তাই এগুলো রেখে দিয়েছে। তাই ওদের মাঝে ফিরতে চাইনি।
ডাইনিটা এতো শয়তান আমার জানা ছিলো না। আমি এতো বলদ কেনো? ছাই গুলো তুলে ডাস্টবিনে ফেলতেই দেখি অভি এসে দাঁড়িয়ে আছে।
” কি করছো তুমি?”
” আপনি যে অকাজ করে ঘর নষ্ট করেছেন সেটাই পরিষ্কার করছি।”, সিঙ্কে হাত ধুতে ধুতে বললাম।
” Don’t you think এটা তোমার করা উচিৎ ছিলো?”, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল অভি।
” আপনি এতো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন দেখে কিছু করিনি।’,একটু খোঁচা মেরে বললাম।
” এইগুলো যে আমার কাছে ছিলো আমার নিজেরই জানা ছিলো না।Now just end the topic here।”, বলে গ্লাসে পানি ঢাললো অভি।
” আচ্ছা আমি এইগুলো পরে কতক্ষণ থাকবো?”
–” কেনো খারাপ না তো ছোটখাটো একটা অপুষ্টিতে ভোগা পান্ডা লাগছে।”, বলে অভি ঠোঁট চেপে হাসলো।
আমি তীক্ষ্ণচোখে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে খাবার ওভেনে গরম করতে দিলাম।আমার কিছু রান্না করতে হয়নি অভি বাহির থেকে খাবার অর্ডার করেছে।
আমাকে পান্ডা বললো কেনো?আমি কি মোটা হয়ে গেছি! নাকি মজা করে বললো। আমি ভাবতে লাগলাম আমার হুশ ফিরল আমার ঘাড়ে অভির ঠোঁটের স্পর্শে। এর জন্য দেখি খোপা করেও শান্তি নেই।
আমি পিছনে ফিরে অভির বুকে একটা ঘুষি মেরে বললাম,” কি করছেন আপনি ? সরুন গিয়ে চুপ চাপ খাবার টেবিলে বসুন।”
অভি মাথা কাত করে বললো,” ওকে ম্যাডাম।”
বাহ্ কি উন্নতি। একবার বলায় কাজ হয়েছে। কি সুন্দর গিয়ে চুপ চাপ বসে পড়লো।আমি খাবার অভির সামনে বেড়ে দিয়ে পাশের চেয়ারটায় বসলাম অভি খাচ্ছে না বসে আছে।
” কি ব্যাপার আপনি খাচ্ছেন না কেনো?”, আমি প্রশ্ন করলাম।
অভি আমাকে নিজের হাত দেখিয়ে বললো,”খাইয়ে দেও।”
“খাইয়ে দিবো মানে? দাড়ান চামচ এনে দিচ্ছি,” বলে আমি উঠে যেতেই অভি হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললো,” স্বামীর সেবা করলে সাওয়াব হয়। আর আমার হাতের এ অবস্থা তোমার জন্য হয়েছে , আমি কেনো চামচ দিয়ে খাবো?”
আমি যেনো বলেছি ওনাকে দেওয়ালে ঘুষি মেরে হাত ছিলতে।আমি আর কিছু বললাম না। আমাকে খাইয়ে দিতে হচ্ছে। অভি এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, আমি তাকাতেও পারছি না। এতো মনযোগ দিয়ে কি দেখছে।
” আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”, বললাম আমি।
” আমার ইচ্ছে।”,অভির উত্তরে আমি বললাম,” আপনি হয় চোখ বন্ধ করুন নইলে অন্য দিকে তাকান। আমি নয়তো আপনাকে খাইয়ে দিবো না।” বলে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
অভি মুখ কাত করে আমার দিকে ঘুরিয়ে বলে,” কেনো তোমার কি লজ্জা লাগছে? কান দেখি লাল হয়ে আছে।”
আমি কিছু বললাম না, না সূচক মাথা নাড়লাম। আরে লজ্জা পেলে আমার কান লাল হয় উনি এটাও যানে।
অভি মাথা সোজা করে বললো,” বউ বিয়ে করেছি নাকি লজ্জাবতী গাছ। কিস করতে পারিনা চোখ বন্ধ করে বসে থাকে, তাকিয়ে থাকতে পারিনা কান লাল হয়ে যায়। এতো মহা মুশকিল।” বলে ঠোঁট টিপে হাসছে।
অভির কথায় আমি উঠে চলে যেতে নেই। অভী আমাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বললো,” এতো লজ্জা পেলে আমি বাবা হবো কি করে?শেষমেশ ফুফুর হুজুরের ওষুধ নিতে হবে, তাই না।”
অভির কোথায় আমি লজ্জায় হাসি ঠোঁট কামড়ে আটকে অভির কাধে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। অভি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজেও হাসছে।
—-
খাওয়া শেষে অভি নিজের রুমে কি জানি করছে এখন রাত সাড়ে বারোটা আমি সোফায় বসে মুভি দেখছিলাম। অভি কাজ শেষে ড্রইং রুমে এসে বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” তোমার আবার শুরু হয়ে গেছে?”
আমি অভিকে বললাম,” বসুন না। এই মুভিটা অনেক সুন্দর।”
অভি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে আমার হাত ধরে আমাকে উঠতে বললো,” নওরীন উঠো। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবে এসো।”
” না, না প্লীজ আরেকটু বাকি আছে। একটু পর শেষ। শেষ পর্যন্ত না দেখলে আমার রাতে ঘুম আসবে না।”, রিকোয়েস্ট করে অভিকে আমার পাশে বসলাম। অভি বিরক্তির চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
” তোমার ঐ আগের ড্রামা দেখা শেষ? এটা আবার কি?”,বলে অভি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।
” আরে টার্কিশ ড্রামা ঐটা তো অনেক জোস। কিন্তু ভালো জিনিস অল্প অল্প করে দেখতে হয়। একসাথে সব দেখলে শেষ হয়ে যাবে তাই মাঝে মাঝে দেখি। এইটার নাম “our time” এটাও অনেক সুন্দর”, বললাম আমি।
আমার কর্ম কাণ্ডে অভি বিরক্ত নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।ছবি শেষ হলো কিছুক্ষণ পর অভি নওরীনের দিকে তাকিয়ে দেখে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে।
অভি অবাক হয়ে নওরীনের কাছে এলো,” হ্যাপি এন্ডিং হয়েছে তুমি আবার কান্না করছো কেনো?”
নওরীন ফুফাতে ফুফাতে বললো,” আপনি কি করে বুঝবেন প্রথম থেকে আপনি কি দেখেছেন?”
অসহায়ের মতো অভি না সূচক মাথা নাড়ল।
নওরীন বললো,” জানেন ছেলেটা অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিল কিন্তু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড পানিতে ডুবে মারা যায় ওর সামনে আর ও চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারে না তাই নিজেকে দোষীভাবে।তাই ছেলেটা পড়া লেখা ছেরে গুন্ডা টাইপ হয়ে যায়। ছেলেটা একদিন একটা লেটার পায় একটা মেয়ে থেকে তারপর ছেলেটার অ্যাকসিডেন্ট হয়।
তাই যেই মেয়েটা লেটার দিয়েছে ওই মেয়েকে খুজে বের করে। মেয়েটা ছিলো খুব বোকা। মেয়েটাকে বুলি করতে করতে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ছেলেটাও ভালো হয়ে উঠে।
ওরা ভালোবেসে ফেলে কিন্তু বলে না।
মেয়েটার জন্মদিনের দিন ওর প্রিয় সিঙ্গার এর ফটোস্টান্ড নিয়ে ওকে সারপ্রাইজ দিতে যায় গুন্ডারা ওকে মারে কিন্তু মেয়েটাকে প্রমিজ করায় ছেলেটা মার সহ্য করে তারপর জানেন কি হয়?”বলে নওরীন কাদতেঁ লাগলো।
অভি ভ্রু কুঁচকে বললো,” ছেলেটা মরে যায়?”
” না…., তারপর ছেলেটার ব্রেইনে একটা সমস্যা হয়।”,নওরীনের কথার মাঝে অভি মজা করে বললো,” আচ্ছা সব ভুলে যায় মাথায় বাড়ি খেয়ে? টেম্পোরারি মেমোরি লস?”
” না…, আপনি শুনুন তারপর ছেলেটাকে বিদেশে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে হয় যাওয়ার আগে ছেলেটা একটা টেপে নিজের কিছু কথা রেকর্ড করে রেখে যায়। সেখানে ছেলেটা বলে (মেয়েটার নাম ট্রুলী থাকে) ট্রুলি তুমি যদি আমাকে মিস করো তাহলে ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো কারণ আমিও ওই একি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।”,বলে নিজের চোখের পানি মুছতে লাগলো।
” What! ছেড়ে চলে গিয়ে বলছে মিস করলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকো কারণ আমিও তাকিয়ে আছি। How lame!”, বলেই বুঝতে পারলো এইটা বলা ঠিক হয়নি।
নওরীন বিস্ময় নিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে আছে।অভী নওরীনকে তুলে দারকরে টিভি বন্ধ করে বললো,”I mean technically lame but the line has emotion.” নিজের মুখে কোনোদিন এইগুলো বলবে অভি নিজেও ভাবেনি।
নওরীন কান্না করছে না এখন কিন্তু বললো,” জানেন পরে ওদের দেখা হয়।”
অভি হাই তুলতে তুলতে বললো,”চলো ঘুমাতে যাই ঘুমাতে ঘুমাতে শুনবো।”
অভির কথায় নওরীন হেসে বললো আচ্ছা। যাক মেয়েটা হেসেছে এইটাই অনেক অভির জন্য।
[ চলবে ]
#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ২০ #মেরুন_রঙের_শাড়ি
#নবনী_নীলা
কয়েকদিন হলো কিছুই খেতে পারছি না।খেলেই বমি করে দেই। অর্পা আপু কিছুদিন ছিলেন আমাদের সাথে এদিকে একটা কাজে কিছুদিন থাকতে হয়েছিলো আজ আপু চলে যাবেন। আমার এমন অবস্থার কথা আমি অভিকে বলিনি তবে আপু জানে।
যাওয়ার আগে আপু আমাকে বললেন,” নওরীন শুনো,তুমি টেস্ট করিয়ে ফেলো। I hope good news are coming।”
আপুর কথায় আমার মনেও সন্দেহ হচ্ছে। তাই আমি সত্যি সত্যি টেস্ট করিয়ে নিলাম। প্রথমে দোকান থেকে প্রেগনেন্সি কিট আনলাম সেগুলোয় পজিটিভ এসেছে। কিন্তু এইগুলো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এখন কাউকে বলা যাবে না অভিকেও না। কালকে একবার ডক্টরের কাছে যেতে হবে।
আমি স্বাভাবিক ভাবে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম কিন্তু মুখের হাসি লুকাতে পারছি। যদি আমি এখনও বিশ্বাস করিনি তবুও ভাবতে ভালো লাগছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি বলে বোঝাতে পারবো না। আমি অনেক আদর নিয়ে নিজের পেটে হাত রাখলাম।
“তোমার কি পেট ব্যাথা করছে?”, অভির কথায় চমকে আমি হাত নামিয়ে না সূচক মাথা
নাড়লাম।
” তোমার চোখে মুখে এতো উচ্ছাস কিসের? “, খাটে বসে এক হাতে ফোন ধরে বললো।
আমি অভির পাশে গিয়ে বসলাম আর বললাম,”আজ একটা কান্ড ঘটেছে।”
অভি ল্যাপটপ অন করতে করতে বলল,” কি হয়েছে?”
মায়ের বাসা থেকে আমি আমার পুরনো সব বই নিয়ে এসেছিলাম। আজ সকালে সেগুলো ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে একটা বই চোখে পড়ে বইটা ইমনের দেওয়া 1st ইয়ার এ আমার জন্মদিনে দিয়েছিলো হুমায়ূন আহমেদের লেখা বইটার নাম,” মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই।” এই বই আমার পড়া হয়নি।
এনে যে কোথায় রেখেছিলাম মনেও ছিল না। আমি আগ্রহ নিয়ে বইটা খুললাম। খুলতে গিয়ে বই থেকে একটা কাগজ পড়লো কাগজ খুলে দেখি একটা চিঠি। চিঠি বললে ভুল হবে প্রেমপত্র। ইমন যে আমাকে ভালোবাসতো ওর আচরণে সেটা কখনোই বুঝতে দেয় নি। চিঠি পরে আমি নিজেও কিছুক্ষণ অবাক ছিলাম। ভালই হয়েছে আগে দেখিনি তাহলে হয়তো অভি আমার জীবনে আসতো না। হয়তো আমার সাথে অভির ভাগ্য জুড়ে ছিলো বলেও চিঠিটা আমি পাইনি।
খুব সুন্দর করে লেখা চিঠি যে মেয়ে পড়বে সে না দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে। অভিকে সেটার কথাই বলবো।
” জানেন আজকে আমি আমার জীবনের প্রথম প্রেম পত্র পেয়েছি।”, আমার কথা শুনে অভি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।এটাই তো দেখতে চাই।
অভি বিস্ময় কাটিয়ে বললো,” মানে?”যদিও এখনও অভির চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ।
আমি বললাম,” পুরনো বই খাতা ঘটতে গিয়ে পেয়েছি।”
” তা কে লিখেছে?”, গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো অভি।
” ইমন।”,আমার কথায় অভি তাকিয়ে আছে।আমি বললাম,” অবাক হয়েছেন না? আমিও হয়েছি।”
অভি গম্ভীর গলায় বললো,” কোথায় সেই চিঠি?”
আমি বললাম,” যত্ন করে রেখে দিয়েছি। তবে আপনি চাইলে শেষ লেখাটা বলতে পারি।বলবো?”
অভী মুখ ভার করে আছে বুঝতে চাচ্ছে এইসবে অভির কিছু যায় আসে না কিন্তু আমি ঠিক বুঝেছি অভি আমার যেই ডাইরি পড়েছিল সেখানে এক পাতায় আমি লিখেছিলাম;
“ভালোবাসি কথাটা সবাই মুখে বলে, আজকাল তার ও প্রয়োজন নেই সোসায়াল মিডিয়া আছে আরো আধুনিক। আমার বন্ধুরা বলে আমি প্রেম করিনা কেনো? আমি বলেছি যদি কেউ আমাকে চিঠি লিখে ভালবাসা প্রকাশ করে সেদিন প্রেম করবো।”
অভি সেটা পরেছে তাই তার মুখ আরো শুকিয়ে গেছে।অভিকে আরেকটু রাগিয়ে দেই। আমি অভিকে চিঠির শেষের কিছু লাইন বলতে চাইলাম অভি শুনতে চাইল না সে রেগে আছে।
” নওরীন আমাকে কাজ করতে দেও। এইগুলো পরে শুনা যাবে।”,বলে ল্যাপটপে কি করছে। হাতের কাছে পেলে হয়তো চিঠি কুচি কুচি করে রাগ কমতো।
আমি বললাম,” ল্যাপটপ সরান কোল থেকে।”
গম্ভীর মুখে বললো,” কেনো?”
” আপনি সারাদিন ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে থাকেন কেনো? ওটা আমার জায়গা, আমি বসবো। ল্যাপটপ কেও দেখি আমার সতীন বনিয়ে ফেলেছেন।”
বলে আমি ল্যাপটপ নিয়ে দূরে রেখে এসে অভির কোলে বসে পড়লাম। অভি হাত ভাজ করে বসে আছে। বেচারার রাগ হচ্ছে কিন্তু রাগ দেখাতেও পারছে না।
শেষে আর রাগ ধরে না রাখতে পেরে বললো,” যাও যত্ন করে রাখা প্রথম প্রেমপত্র পরো। আমাকে কি দরকার? আমাকে কাজ করতে দেও।”
আমি অভির হাতের ভাজ খোলার চেষ্টা আছি। শক্ত করে বসে আছে। প্রচন্ড রেগে গেছে মনে হয়।” আপনাকেই আমার দরকার। হাত খুলুন না। এতো জেলাস হলে কি করে হবে?”বললাম।
” আমি যেনো ইমনের সঙ্গে তোমাকে আর না দেখি। ওর সাথে তুমি কথা বলবে না ফোনেও না।”,দেখে মনে হচ্ছে রেগে এক্কেবারে শেষ।
আমি কিছু বললাম না। রাগ ভাঙ্গাবো কিভাবে সেটাই বুঝতে পারছি না।” আরে জামাই রাগ করেন কেনো? এতো রাগ স্বাস্থের জন্য ভালো না।”
” নওরীন আমি কিন্তু মজার মুডে নেই।”,বলে অন্যদিকে তাকালো অভী।
আমি অনেক কষ্টে হাতের ভাজ খুলে অভির বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।কিন্তু অভির রাগ কমেছে বলে মনে হয় না।আমাকে জড়িয়ে ধরলো না। আমি মুখ তুলে অভির দিকে তাকালাম। রাগ করে আছে কেনো ভাল্লাগছে না। যদিও আমি নিজেই রাগিয়েছি। আমি অভির দিকে তাকিয়ে আছি। হাত দিয়ে অভির চোখ থেকে চশমা খুলে পাশের টেবিলে রাখলাম। অভি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
অভিকে চমকে দিয়ে আমি অভির গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম। পুরো ঘটনাটা ঘটলো একটা ঘোরের মাঝে।আমি বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে ফেলি।কিছু বুঝতে না পেরে উঠে যেতেই অভি আমার কোমর জড়িয়ে আমাকে কাছে নিয়ে এলো। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছি কি আর করার? অভি একহাত দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করে আমাকে গভীরভাবে কিস করল।অন্য হাতে আমার জামার পিঠের চেইন খুলে দিতেই আমার শরীর বরফ হয়ে গেল।
___________________
আমি আজ ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেছি, চেকআপ করে তিনি বলেছেন আমি প্রেগনেন্ট। এ কেমন আনন্দ আমি জানি না। অভিকে সারপ্রাইজ দিবো।খবর শুনে নিশ্চই সে অনেক খুশি হবে। আমি বাসায় এসে খুব সুন্দর করে সব কিছু ঘুছিয়ে রাখলাম। অনেক সময় নিয়ে গোসল করলাম। বার বার শুধু আলট্রাসোগ্রামটা দেখছি কত ছোট, এক মাস হয়েছে মাত্র।
আমি কাউকে বলিনি সবার আগে অভিকে বলবো। কিন্তু সে কখন আসবে?
আমি ড্রয়ার খুলে সেই মেরুন রঙের শাড়িটা বের করে পড়লাম। অভির দেওয়া প্রথম শাড়ি অন্য সব শাড়ি পড়েছি কিন্তু এটা পড়িনি ইচ্ছে ছিলো খুব আনন্দের একটা দিনে এটা পড়বো।
আজকের চেয়ে আনন্দের দিন আমার জীবনে নেই।
অভি এলো রাত ৮টায় প্রতিদিন ৭টায় আসে কিন্তু আজ একটু দেরি হয়েছে।নওরীন সেজে বসে আছে। কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে নওরীন একটা কাপড়ের টুকরা এনে দরজা অল্প খুলে অভির দিকে কাপড়ের টুকরা বাড়িয়ে দিল। নওরীন মুখ বের করলো না। অভি নওরীনের কাণ্ডে এখন আর অবাক হয় না, সব স্বাভাবিক মনে হয়। উল্টা পাল্টা কাজ না করলে অস্বাভাবিক লাগে।
অভি ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি এটা?”
নওরীন ভিতর থেকে বললো,” এটা চোখে বাধুন।”
অভি কিছু বুঝতে না পেরে বললো,” কেনো? চোখে বাঁধবো কেনো?”
” আহা ! বাঁধতে বলেছি বাধুন।”, নওরীনের কথায় উপায় না পেয়ে অভি কাপড় দিয়ে নিজের চোখ বাধল নইলে হয়তো ভিতরেই যেতে দিবে না।
অভি চোখ বেধে বললো,” হুম , করেছি।”
নওরীন দরজা পুরো খুললো।তারপর প্রথমে অভি ঠিক করে চোখ বেধেছে কিনা দেখে অভিকে ভিতরে আনল।
“নওরীন কি শুরু করলে তুমি?”, ন্ওরিন অভিকে চুপ করে থাকতে বলে হাত ধরে টেনে করিডোরে নিয়ে গিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিল। অভী অবাক হয়েছে কারণ করিডর খুব সুন্দর করে সাজানো বিভিন্ন রঙের বাতি জ্বলছে তার মাঝে এক সারিতে কিছু মোমবাতি অপূর্ব লাগছে। অভি নওরীনের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ মেরুন রঙের শাড়িটাতে অসাধারণ লাগছে তাকে। অভি হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,” আজকে কি কিছু স্পেশাল?”
” শুধু স্পেশাল না অনেক স্পেশাল।”,বলে নওরীন একটা টেডি বিয়ার অভির কোলে দিলো।
অভি টেডি বিয়ারের দিকে তাঁকিয়ে বললো,” এটা কি?”
” বলবো না।”, নওরীন চলে যেতেই অভি নওরীনকে জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো।
” মনে হচ্ছে তুমি অনেক খুশি। কি হয়েছে ? বলো।”, অভির প্রশ্নে নওরীন বললো,”কেউ আসবে।”
অভি অবাক হয়ে বললো,” কে আসবে ? এখন আসবে?”
” না, নয় দশ মাস পর আসবে।”, নওরীনের কথায় অভি বুঝলো না সে বললো,” মানে।”
নওরীন টেডি বিয়ার কে দেখিয়ে হাসলো। অভি চোখ বড় করে ফেললো বিস্ময়,আনন্দ সব একসাথে তার চেহারায় ফুটে উঠেছে অভি বললো,” Are you pregnant?”
নওরীন হা সূচক মাথা নাড়ল। অভি খুশিতে নওরীনকে কোলে তুলে নিলো। কিছুক্ষণ পর বললো,” I’m going to be a dad! I can’t believe.”
অভির খুশী দেখে নওরীন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কতো সুন্দর একটা সময়ের মধ্যে দিয়েই না তারা যাচ্ছে।
[ চলবে ]