হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
1432

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৬ #ভালোবাসায়_দূরত্ব
#নবনী_নীলা
“উঠো এবার নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নেও।”অভির কথায় আমি বিস্ময় নিয়ে তাকালাম।”আমি কেনো ব্যাগ গোছাবো? ব্যাগ গুছিয়ে আমি করবোটা কি? ওদের দিকে তাকিয়ে থাকবো?”,ভ্রু কুঁচকে বললাম আমি।

“তোমাকে তোমার মার কাছে রেখে আসবো। আমি না আসা পর্যন্ত তুমি সেখানেই থাকবে।”

একটুর জন্য ভেবেছিলাম আমাকে সঙ্গে নিয়ে
যাবে তাই ব্যাগ গুছাতে বললো কিন্তু না আমাকে নাকি মার কাছে রেখে আসবে।
আমি কেনো মার কাছে থাকতে যাবো?আমি কি বাচ্চা একা একা থাকতে পারবো না।

” না আমি মার কাছে যাবো না। “, হাত ছাড়িয়ে বললাম।

” ঠিক আছে তাহলে আমি মাকে বলে দিচ্ছি মা এসে এ কয়েকদিন তোমার সাথে থাকবে।”,বলে অভি নিজের সুটকেসের দিকে গেলো।

” আম্মুকে কেনো বলবেন ? উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন জার্নি করলে। আমি একা থাকতে পারবো আপনার এতো ভাবতে হবে না।”, অভি কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

আমি দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলে দেখি ইমন এসে হাজির। এখন সকাল ১১ বাজে এমন সময় ইমনের এখানে আসার কারণ কি? আমি ইমনকে ভিতরে আসতে বললাম। ইমন এসে সোফায় বসলো। কে এসেছে সেটা দেখতে রুমের বাহিরে এসে ইমনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।

আমি অভির দিকে তাকিয়ে বললাম,” আমার ফ্রেন্ড ইমন।”

অভির মুখ গম্ভীর হয়ে গেছে, এখানে গোমড়া মুখ বানানোর কারণ ঠিক বুঝলাম না। ইমন উঠে গিয়ে অভির সাথে হ্যান্ডশেক করলো।অভি থমথমে গলায় কথা বলে রুমে চলে গেল। আমার ফ্রেন্ড কোথায় ভালো করে কথা বলবে তা না উনি ঢং করছেন। আমি ইমনের সামনের সোফায় বসলাম।

” তুই আমার বাসার ঠিকানা পেলি কোথায়?”, আমি বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলাম।

– “অবাক হয়েছিস তাই না? তোকে আমি অনেকবার ফোন করলাম কিন্তু তুই তো মঙ্গল গ্রহে ফোন ফেলে রাখিস।”

-” আমি জানি না! ফোনের কথা মাঝে মাঝে ভুলেই যাই।”

–” আচ্ছা যে কারণে আসা। আজকে কতো তারিখ আজকে অ্যাসাইনমেন্টের ডেট। আজকেও নিশ্চয় তোর মনে নেই। ”

–” আয় হায় ! আমার কি হবে ?আমি এবার কি করবো? আমি কিচ্ছু লিখি নাই। একটা পেজ লিখেছিলাম শুধু। এবার কি হবে আমার ইমন?”

–” তুই এটা করবি আমার জানা ছিলো তাই রচনার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে এসেছি। দেরি করিস না যতোটুকু লিখেছিস আমাকে দিয়ে দে।”

-” ওই টুকু দিয়ে তুই কি করবি?”

-” আমি বাকিটা কমপ্লিট করে জমা দিবো।”

-” কিন্তু হাতের লেখা?”

-” তোর হাতের লেখা আমার চেনা আমি পারবো। তাড়াতাড়ি কর যা।”

-” তুই এত ভালো কেনো?”

-” নওরীন যা নিয়ে আয় আমার আবার ভার্সিটিতে গিয়ে এইগুলো লিখে জমা দিতে হবে। টাইম waste করিস না।”

আমি দৌড়ে রুমে গিয়ে সব নিয়ে আসলাম। আসার সময় অভির রুমের সামনে ছায়া দেখতে পাই অভি কি আড়ালে দাড়িয়ে কথা শুনছে আমাদের? ধুরো শুনক, আমি গিয়ে ইমনকে লেখাগুলো দিয়েই সে উঠে চলে যেতে চাইলো। আমি জোর করলাম কিন্তু তার ক্লাস আছে অন্যদিন এসে গল্প করবে বলে চলে গেলো।আমি দরজা লাগিয়ে পিছনে ফিরে দেখি অভি হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে।

মুখ গম্ভীর করে বললো,” নওরীন তোমাকে না আমি বললাম ব্যাগ গুছিয়ে নিতে।”

” আমি না বললাম, আমি যাবো না। যন্ত্রণা করবেন না।”, বিরক্ত হয়ে বললাম।

” তোমার কি মনে হয় এরপরও আমি তোমাকে একা এ ফ্ল্যাটে রেখে যাবো। তুমি তোমার মায়ের কাছে যাবে এটাই ফাইনাল।”

” আমি যাবো না, মা খালি পতিসেবা মুকুল বাণী দেয় আমার ভালো লাগে না। আমি যাবো না।”,বলে চুপ করে সোফায় বসে পড়লাম।

অভি ভ্রু কুচকে বললো,” কি সেবা?”

” পতিসেবা, স্বামীকে কিভাবে যত্ন করতে হয়, হেন তেন হাবি জাবি কথা।”ঠোঁট উল্টে বললাম।

” ঐগুলা শেখার জন্য আরো আগে সেখানে যাওয়া উচিৎ। “,বলে নিজেই আমার ব্যাগ গুছাতে লাগলেন।

আমার মা কি যে বলে উফফ। সেইগুলো শুনলে ইচ্ছে করে কান দুইটা খুলে হাতে নিয়ে বসে থাকি। এই লোকটাকে আমাকে নিয়েই যাবে বলে মনে হচ্ছে।

আমি গোসল করে বের হয়ে দেখি অভি আমার ব্যাগ পুরো গুছিয়ে ফেলেছে। নিজে যাচ্ছে যাবে আমাকে পাঠানোর কি দরকার। আমি অভির সামনে গিয়ে চুলের পানি ঝরাচ্চি ইচ্ছে করে তার গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলাম। অভি আড় চোখে তাকিয়ে গায়ের পানি মুছে শাওয়ার এ চলে গেলো। দুপুরে খাবার সময়ে আমাকে একগাদা উপদেশ দিয়ে দিলেন। বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না, উল্টা পাল্টা কিছু করবে না।

অবশেষে বিরক্তিকর ভাষণ শেষ হয়েছে। এখন বিকেল আমি বারান্দায় বসে আছি একটুপর আমাকে মায়ের বাসায় রেখে আসবে অভি। মন খারাপ লাগছে।

আমি গাড়ীতে এসে বসেছি, অভি ব্যাগগুলো গাড়ীতে ভরে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। সবসময়ের মতন আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো।

তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল,” আমি ড্রাইভারকে বলে দিবো সে তোমায় ভার্সিটিতে আনা নেওয়া করবে, রিক্সা করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই তোমার।”

” ড্রাইভার এই নামক পদে চাকরিপ্রাপ্ত কাউকে আমি তো দেখলাম না। গাড়িতো আপনি চালান।”, বিস্ময় নিয়ে বললাম।

” তা বাকি গাড়িগুলো কে দেখে?”

” ও আচ্ছা।”,বলে আমি জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাল্লাগছে না কিছুই না। ওনার সাথে এই ব্যাপারে ঝগড়া করা দরকার কিন্তু করতে ইচ্ছে করছে না কিছুক্ষণ পরই চলে যাবে।

আমাকে নামিয়ে দিয়েই অভি এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হবে। অফিসের গাড়িকে আসতে না করেছে অভি। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। গাড়ী গ্যারেজে ঢুকিয়ে অভি আমার দিকে তাকালো। আমি সাবলীল ভাবে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।

অভি গাড়ী থেকে নেমে আমার ব্যাগ দারওয়ানের কাছে দিলো। দারোয়ান ওপরে নিয়ে গেলো ব্যাগ। আমি অভির দিকে তাকিয়ে আছি কি বলবো বুঝতে পারছি না অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।

আমি বললাম,” মায়ের সাথে দেখা করবেন না?”

অভি আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,” না, আমার ৮টার ভিতরে পৌঁছাতে হবে। এখন না গেলে দেরি হয়ে যাবে।”

আমি কিছু বললাম না তাকিয়ে রইলাম কিছক্ষন তারপর চোখ নামিয়ে নিলাম।
অভি আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে একটু ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,
” take care, হুম? আমি কল করবো গিয়ে।”

আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গাড়ীতে উঠলেন।আমি ঠোঁট কামড়ে চোখের পানি আটকালাম।

[চলবে]

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৭ #জমে_থাকা_অভিমান
#নবনী_নীলা
“আমি যাবো না।”, বলে নওরীন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বিষণ্ণতায় তার চেহারার ভরে গেছে।
অভি প্রচন্ড রেগে বললো,” যাবে না মানে কি? আমি এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছি আর তুমি বলছো যাবে না।”
ঘরে নওরীনের মা আর রচনা দুজনেই সেখানে উপস্থিত ছিলো।
নওরীনের মা নিচু স্বরে বললো,”থাক বাবা ও যখন যেতে চাইছে না থাকুক কিছুদিন। এমনেই মেয়েটার শরীর ভালো না।”

” শরীর ভালো না মানে? কি হয়েছে ওর? আবার জ্বর বাধিয়েছো?”,অভি তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন করে নওরীনের দিকে গেলো।
নওরীন অভির দিকে তাকালো না।
নওরীন একটু দূরে সরে গেলো। নওরীনের আচরণের এমন পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না অভি।

রচনা নওরীনকে ধরে ওর বিছনায় বসিয়ে দিয়ে অভিকে বললো,” অভিদা তুমি একটু আমার সাথে এসো।”বলে রচনা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

অভি কিছুক্ষণ নওরীনের দিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

রচনা অভিকে নওরীনদের বারান্দায় বসতে বললো। অভি হতাশভাবে বসে। রচনা অভির সামনের চেয়ারে বসে।

— কথাগুলো কিভাবে বলবো আমি বুঝতে পারছি না। বিষয়টা তোমাদের ব্যাক্তিগত বাপার। কিন্তু আমার মনে হলো তোমাকে এইগুলো জানানো দরকার নওরীন হয়ত কখনো বলবেনা।

— আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ও আমার দিকে তাকাচ্ছে পর্যন্ত না। কি করেছি আমি?

— আচ্ছা তোমাকে বলছি। তোমার যাওয়ার দুদিন পর নওরীন ফ্ল্যাটে ফিরে যায়। ওর ভালো লাগছিলো না এখানে।

— ফ্ল্যাটে ফিরে যায়!

— হুম সেদিন বেলী ফুল কিনতে নওরীন ফুলের দোকানে যায়। সেখানে অথৈর সাথে নওরীনের দেখা হয়। As always অথৈ ওকে কথা শুনায়।

— এই কারণে ও আমার উপর রাগ করেছে?আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
[ অভি একটা নিশ্বাস ফেলে।]

— নাহ্ সামান্য কারণে রাগ করার মেয়ে নওরীন না। তোমার খাটের পাশের টেবিল ল্যাম্পে রাখার টেবিলের ৩নম্বর ড্রয়ার। সেখানে কি আছে তোমার মনে পড়ে?

অভি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একহাত দিয়ে মাথা ধরে বসলো। রচনা অভির উত্তরের আশায় অভির দিকে তাকিয়ে রইল।

— নওরীন সেগুলো দেখেছে?[বলে অভি একটা নিশ্বাস ফেলে]

— নিজে থেকে দেখেনি। অথৈ মেয়েটা নওরীনকে বলেছে নওরীন চেষ্টা করলেও তোমার জীবনে অথৈয়ের জায়গা নিতে পারবেনা। তোমার জীবনে নাকি অথৈয়ের জায়গাটা অনেক special কতটা special তার প্রমাণ স্বরূপ সে নওরীনকে তোমার টেবিল ল্যাম্পের ৩নম্বর ড্রয়ার চেক করতে বলেছে। শুধু তাই না ড্রয়ারের চাবি যে তোমার গাড়ির চাবির সাথে থাকে সেটাও সে বলেছে।

কথাগুলো শুনার পর অভি নিজেও চমকে গেছে। কি বলবে সে নিজেও যানে না।

— সেখানে কি ছিলো আমি জানি না। তোমার আর অথৈয়ের মেমোরি ছিলো হয়তো। তুমি আমাকে বলো একটা মেয়ে যাকে বিয়ের আগে তুমি বলেছ তুমি মেয়েটার বন্ধুর থেকে বেশি কিছু হতে পারবে না। তুমি তোমার অতীতকে ভুলতে পারোনি।
এবার বিয়ের পর ধীরে ধীরে তোমার ভালোবাসো পেয়ে মেয়েটা যদি তোমার সাথে সারাজীবন থাকতে চায় তখন তাকে যদি তাকে প্রতিমুহূর্তে বুঝানো হয় সে তোমার আর তোমার এক্স এর জীবনে থার্ড পারসন। কে সহ্য করতে পারবে বলো।
If I was in this situation I would never tolerate this. নওরীন এইসব বিষয়ে কাউকে কিছু বলেনি, এসবের পর বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি এসেছে। জ্বর বাধিয়েছে, দুইদিন ১০২ এর উপর জ্বর ছিলো। কিছুই খাচ্ছিল না অনেক কষ্টে পেট থেকে কথা বের করেছি।

অভি এখনও চুপ করে আছে।

— “তোমার যে কোনো ভুল নেই তানা। নিজের ভুলটা খুজে বের করো। সব বললাম বাকিটা তুমি কি করবে বুঝে নেও।” বলে রচনা উঠে চলে গেলো।

অভি বারান্দায় চুপ করে বসে রইল। অভি নিজের ভুল খুজে পেয়েছে। অভি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে উঠে নওরীনের রুমে গেলো নওরীন পা তুলে হাঁটুতে মাথা নামিয়ে বসে আছে। অভি রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। নওরীন মাথা উচু করে দেখে অবাক হয়ে বিছনা থেকে নেমে আসে।

“আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেনো?, বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো।
অভি কিছু না বলে কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে নওরীনের দিকে এগিয়ে আসছে। নওরীন একটা ঢোক গিলে পিছনে তাকালো,পিছনে দেওয়াল।
অভি নওরীনের সামনে এসে দাড়ালো।

অভি কোমল গলায় বললো,” আমার সাথে চলো।” নওরীন অন্য দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ল।

” কিন্ত কেনো? এতদিন দূরে ছিলাম তোমার থেকে দূরে থাকাটা যে এতটা কঠিন কাজ সেটা আগে জানা ছিল না। তুমি ফোন ধরাও বন্ধ করে দিয়েছিলে।”, বলে দেওয়ালে একটা হাত রেখে ঝুঁকে আসতেই নওরীন নিজের মুখের সামনে দুই হাত ধরে মুখ আড়াল করে।

” হাত সড়াও।”,বলে মুখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলো হালকা জ্বর আছে।

অভি বিরক্ত স্বরে বলল,” মন খারাপ হলে বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস তোমার কবে বলদলাবে?।”

অভির কথায় নওরীন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।

” আমি তো কথা বন্ধ করার মতো কিছুই এখনও করিনি! কথা বন্ধ কেনো তোমার?”,বলে আরেকটা হাত দেওয়ালে রেখে নওরীনের চোখের দিকে তাকালো। অভির ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি দেখে নওরীন ঠোঁট চেপে মুখের ভিতরে নিয়ে গেলো।

অভি নওরীনের কানের পাশের চুল সরিয়ে বললো,” এবার বলো তুমি আমার সাথে যাবে কি যাবে না?”

নওরীন না সূচক মাথা নাড়ল।

” তোমার কাছে দুটো অপশন আছে হয় তুমি নিজে নিজে আমার সাথে আসবে নইলে তোমাকে জোড় করে নিয়ে যাবো।”

নওরীন রাগী স্বরে বলল,” বললাম তো যাবো না।”

” যাবো না কথাটা তো তোমার অপশনে নেই। তোমাকে এই অপশন আমি দেই নি। এবার বলো আমার হাত ধরে যাবে নাকি কোলে করে নিয়ে যাবো?”,বলে শার্টের হাত ভাজ করতে লাগলো।

” আরে কি আজব! বললাম না যাবো না। একদম জোর করবেন না।”বলে চলে যেতে নিলো।

” হুম বুঝেছি তোমার আমার কোলে উঠার শখ হয়েছে।”,বলে নওরীনের হাত ধরে কাছে নিয়ে এলো।

[ চলবে ]

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৮ #You_are_the_source_of_my_happiness
#নবনী_নীলা
” হুম বুঝেছি তোমার আমার কোলে উঠার শখ হয়েছে।”,বলে অভি আমার টেনে হাত ধরে কাছে নিয়ে এলো। আমাকে কি সত্যি জোর করে নিয়ে যাবে?

ওই ফ্ল্যাটে আমার যেতেই ইচ্ছে করছে না। আরো কোথায় কোথায় কি লুকানো আছে কে জানে। অভি কি একটা চিন্তা করে আমার হাত ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এখন কি মত বদলালো নাকি!

অভি কিছুক্ষণ পরেই রুমে এসে বললো,” বেবস্থা করে এসেছি।”

” বেবস্থা করে এসেছেন মানে কি?”, ভ্রু কুঁচকে বললাম।অভি নিজের জামার হাতা ভাজ করা আছে কিনা দেখে বললো,” আমার শাশুরির বেবস্থা করলাম।”

” কি বলেন এইগুলা। আমার মা কোথায়?”,বলে মা মা বলে ডাকতে লাগলাম।

অভি আমার কাছে আসে আমার মুখের সামনে হাত দিয়ে আমার চিৎকার বন্ধ করে বললো,”কিছু করিনি, চুপ করো। রচনা তোমার মাকে ছাদে নিয়ে গেলে তোমাকে নিয়ে যাবো। শাশুড়ির সামনে কোলে নিয়ে যাওয়াটা ভালো দেখাবে না।”

” আপনি কি আমাকে কিডন্যাপ করবেন!আমি তো একবার বলেই দিয়েছি আমি যাবো না। আপনি চলে যান।”, আমার কথা শেষ না হতেই রচনা রুমে ঢুকে পড়ল।

” অভিদা আমি আন্টিকে নিয়ে ছাদে গেলাম।”,বলে রচনা চলে গেলো।

” চলো “,বলে অভি সত্যি সত্যি আমাকে কোলে নিলো। আমি আমার মাকে ডাকলাম কিন্তু মাকে রচনা ছাদে নিয়ে গেছে আমি চিৎকার করতে গেলাম কিন্তু চিৎকার করলে পাড়া প্রতিবেশী এভাবে জামাইয়ের কোলে দেখলে লজ্জা। এনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

এমনেই দারোয়ান আংকেল এভাবে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। এইগুলার কোনো মানে হয়? অভি আমাকে গাড়ীতে বসিয়ে নিজেও বসলো। আমি ঠোঁট উল্টে বসে আছি।আমি সারা রাস্তায় কথা বললাম না।

আমি গাড়ী থেকে নামতে চাইলাম না অভি আমার হাত ধরে টেনে বের করলো। আমাকে বাধ্য হয়ে আসতে হয় নইলে আবার কোলে নিয়ে বসবে। অ্যাপার্টমেন্ট এর লোকেরা দেখলে সেটা মোটেও ভালো হবে না।

ফ্ল্যাটে ঢুকতেই আমার ড্রয়ারে থাকা জিনিসগুলোর কথা মনে পড়লো।আমি থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার থাকতে ইচ্ছে হলো না।

” কি হয়েছে তোমার?”,বলে আমার হাত ধরতে এলে আমি আমার হাত সরিয়ে নিলাম।

অভি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার হাত শক্ত করে ধরে আমাকে রুম নিয়ে এলো। রুমে এসে ড্রয়ার থেকে সেগুলো বের করে আমার কাছে এলো। এইগুলো নিয়ে আমার কাছে আসছে কেনো? আমার কান্না পাচ্ছে।

অভি আমার সামনে সেগুলো ধরে বললো,” তোমার আমাকে একবার প্রশ্ন করা উচিৎ ছিলো, রাইট? এইগুলার জন্য তুমি আমার সাথে আসতে চাইছিলে না? একটু বিশ্বাস করতে আমাকে।”

আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি কিছু বললাম না। আমার কিছু না বলায় অভি রেগে গেছে,” নওরীন তুমি কথা বলছো না কেনো? আমার দিকে তাকাও।” আমি তাকালাম না।

“I can’t tolerate this ignorance. নওরীন stop this. Don’t make me angry. I need to end this.”, বলে অভি আমার একপাশের দেওয়ালে হাত দিয়ে আমার দিকে ঝুকে এলো। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার এইগুলো ভালো লাগছে না।

হটাৎ অভি নিজের আরেক হাত দিয়ে দেওয়ালে জোড়ে ঘুষি মারলো।
শব্দে আমি চমকে উঠে অভির হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি হাত ছিলে গেছে। অভি চোখ মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না আমি রেগে বললাম,” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি করলেন এটা।”,বলে অভির হাত ধরতে নেই অভি নিজের হাত সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

আমি অভির পিছনে গেলাম অভি কিচেনে গিয়ে ম্যাচের কাঠি দিয়ে ড্রয়ারে থাকা সমস্ত জিনিস পুড়িয়ে দিলো। আমি বাধা দিতে গেলাম কিন্তু লাভ হলো না। মুহূর্তে আগুন লেগে সব কিছু ছাই হয়ে গেলো। আমি আগুন নিভাতে গেলাম অভি আমার হাত ধরে আমাকে আটকালো। চোখের সামনে সব কিছু ছাই হতে লাগলো।

” আপনি কি করছেন ? ঘরে আগুন লাগে যাবে, ছাড়ুন আগুন নিভাতে হবে।”, বলে আমি হাত ছাড়াতে চাইলাম অভি ছাড়লো না। কিছুক্ষণ পর সব পুড়িয়ে দিয়ে আগুন নিজে নিজে নিভে গেলো।

এই কিছুক্ষনের মধ্যে কি হলো আমি কিছুই বুঝতে পরলাম না। আগুন নিভার সাথে সাথে অভি আমার হাত ছেরে দিলো। আমি রেগে বললাম,” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি করলেন এইটা।”

“এই কাজটা আমার আরো আগে করা উচিত ছিলো। আমার জীবনে অথৈ আর অথৈ সংক্রান্ত কোনোকিছুর অস্তিত্ব থাকবে না। অথৈ আমার অতীত, আমার জীবনে এখন শুধু তোমার অধিকার আছে। You’re the source of my happiness কিন্তু তুমি সেটা কোনোদিন বুঝতেও চাও নি। আর কিভাবে বললে তুমি বুঝবে?”, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভি কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলো।

আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। আমি কেনো এমন না বুঝে অভিকে কষ্ট দিলাম। আমার জন্য নিজের হাতের কি অবস্থা করলেন।সব হয়েছে ওই ডাইনিটার জন্য একবার যদি সামনে পাই আমি মেরেই ফেলবো। আমি এখণ অভির মুখোমুখি হবো কি করে? আমার উপর রেগে আছে।

আমি হাতে তুলা আর ব্যান্ডেজ নিয়ে অভিকে খুঁজতে রুমে এলাম সে রুমে নেই। কোথায় গেলো? আমি করিডোরে গেলাম অভি ফ্লোরে ডানপা হাঁটু ভাজ করে তার উপর ডানহাত রেখে বসে আছে। কাছে গিয়ে কি বলবো? আমি এতো ভয় পাচ্ছি কেনো? আমার জামাই আমি কাছে যাবো না তো কে যাবে ?

আমি গিয়ে অভির পাশে বসলাম। অভি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আমাকে ইগনোর করছে কতো বড় সাহস! আমিও দেখি কিভাবে ইগনোর করে। আমি তুলাতে ওষুধ নিয়ে অভির হাত ধরতেই সে বললো,” এসবের প্রয়োজন নেই।” হাত সড়িয়ে নিলো।

উনি আমাকে দূরে সরাতে চায়? এখন অধিকার বোধ বেড়ে দশগুণ হয়েছে আমার।
আমি অভির কোলে উঠে বসে পড়লাম। গন্ডগোল আমি করেছি ঠিক আমাকেই করতে হবে। আমি এমন কাণ্ড করবো অভি বুঝেনি, সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অভির চোখে ক্লান্তির ছাপ আজকে আমার জন্য বেচারার উপর দিয়ে কতো কিছু না গেলো।

আমি অভির গলার পিছনে দুই হাত রেখে নিচু স্বরে বললাম,” সরি আমি আর কোনোদিন এমন করবো না।”

অভি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে, মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। এটা কি হলো ? এতো সুন্দর করে রোমান্টিক ভাবে সরি বললাম উনি উল্টে ভাব নিচ্ছেন। কোথায় আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে it’s ok। এমন বেরসিক আমি আমার জীবনেও দেখি নি।

আমি রেগে বললাম,”আমি এতো সুন্দর করে রোমান্টিক ভাবে সরি বললাম আপনি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন কেনো?” অভি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।

এভাবে মান ইজ্জত ডুবিয়ে কারো কোলে বসে থাকার কোনো মানে আছে?কোনো মানে নেই। ধুরো উঠে গিয়ে ফ্লোরে বসি আর জীবনেও এনার কোলে উঠবো না।

উঠে যেতেই অভি আমার আমার কোমড় আর এক হাত ধরে কাছে টেনে নেয়। কোমড়ের পাশের কাপড় সরে যাওয়ায় আমার শরীর কেপে উঠলো। অভি বললো,”ওটা বুঝি রোমান্টিক ভাবে সরি বলা ছিলো?”

” আমি জানি না।আপনার হাত দিন, ওষুধ লাগবো”, গাল ফুলিয়ে বললাম।

” হাত দিবো না তুমি আমাকে অনেক suffar করিয়েছো। আমি এতো সহজে ভুলবো না। আমি এতটুকুতে মানছি না।”, বলে অভি অন্য দিকে তাকালো।

” মানে! কি করতে হবে?”, না বুঝে বললাম।

অভি ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। এনার মতলব ভালো না। কি করতে চাচ্ছে? কোলে বসে মস্ত বড় ভুল করেছি। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,” কি করতে চাচ্ছেন আপনি!”

” করলেই বুঝতে পারবে।”,বলেই আমার ঠোটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। আমি নড়াচড়া করতে পারলাম না আমার শরীর বরফ হয়ে গেছে।আমি আর পারছি না অভিকে সরিয়ে দিয়ে আমি সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম।

“আর কতক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকবে?অভি ওর হাতটা আমার সামনে রেখে বললো,” আমার হাতে কি করবে,শেষ করো।”

আমি চোখ খুলে অভির হাতে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলাম। হাতের দিকে তাকিয়েও লজ্জা লাগছে কি অদ্ভুত ব্যাপার!

আমার সাথে কোনো কাপড় নেই এই লোকটা আমাকে এভাবে নিয়ে আসছে কোনো কাপড় অনে নাই এবার আমি কি পড়বো? রাগ করে সব কিছু নিয়ে গেছিলাম এখানে কিছুই নেই আমার। এদিকে আমি গোসল করে বসে আছি কাপড় আনার প্রয়োজনবোধ করিনি। কাপড় না নিয়ে আমি এলাম কেনো লজ্জায় মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।

আমি এমন কেনো? এবার আমি করবো কি? অভিকে ডাকবো ধুরো ওনাকে ডেকে কি হবে? উল্টে আরো বিপদ হয়। কিন্তু ভেজা জামা কাপড় নিয়ে কি করবো?

আমি দরজা খুলে দেখার চেষ্টা করলাম অভি রুমে আছে কিনা? উনি ফোনে কথা বলছেন।আমি কথা শেষ হবার অপেক্ষা করলাম। এইতো শেষ হয়েছে।

আমি অভিকে ডাকলাম,” নওরীনের জামাই, ও নওরীনের জামাই।”

[ চলবে ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে