স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
প্রিয় তমা মামণি,,
কেমন আছিস?আশা করি তোর মামণিকে নিয়ে ভালোই আছিস।হয়ত এই ভালো থাকাটা আরো ভালো হত যদি তোর মামণি,আমি আর তুই মিলে একটা সুন্দর ফ্যামিলির মতন থাকতাম।কিন্তু আমার একটা বড় ভুলের কারণে তা হয়ে ওঠেনি।সেজন্য তোরা দুইজন আজ আমার থেকে এত দূরে।এতক্ষণে হয়ত বুঝে গেছিস আমি কে?হুম ঠিকইই ধরেছিস আমি তোর সেই বাবা যার আদর,ভালোবাসা ছাড়াই তুই এতটা বছর কাটয়েছিস।বাবা হয়ে আমি তোর প্রতি কোন দায়িত্বই ঠিকমতন পালন করতে পারিনি।বাবা হিসেবে সত্যিই আমি ব্যর্থ।জানিস মা,,তোকে সামনে থেকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।কিন্তু আমি জানি তুই আমাকে মনে মনে অনেক ঘৃণা করিস কিন্তু তোকে দেখার লোভটা কিছুতেই সরাতে পারিনা তাইতো বারবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে আসি দূর থেকে শুধু তোকে একপলক দেখার জন্য।তোর আর তোর মামণির সামনে যেতে পারব না বলে দূর থেকেই তোদের খোঁজ নিতাম।কিন্তু ইদানীং নিজ থেকে তোদের কোন খোঁজখবর নিতে পারিনা আমার লোকের কাছ থেকে সব খবর নিই তোদের।কয়েকবছর ধরেই শরীরটা বড্ড অকেজো হয়ে গেছে।সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকতে হয়।নিজ হাতে কিচ্ছু করতে পারিনা।অন্যের সেবার উপর এখন আমি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।এতটাই অসহায় অবস্থায় এখন আমি জীবন কাটাচ্ছি।
আজকের সকালটা কেন জানি আমার কাছে অন্যরকম লাগছে।মনে হচ্ছে আজকের দিনটাই আমার জন্য শেষ দিন।পুরো শরীর জুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা লাগছে।খুব কষ্ট হচ্ছে।এই অবস্থায় তোকে আর তোর মামণিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তোর মামণির সামনে মুখ দেখানোর মতন সাহস আমার নেই।তাই খুব করে চাইছি তুই আমার কাছে আজকে চলে আয়।তোকে আমার অনেক কিছু বলার আছে।মামণি তোর কাছে এই মৃত্যু পথযাত্রীর এইটাই শেষ ইচ্ছা।আমার কাছে তাড়াতাড়ি চলে আয় মা।বেশি দেরি করিস না।কারণ বেশি করলে তোকে হয়ত আর সামনে থেকে দেখা হবে না আর আমি আমার অব্যক্ত কথাগুলোও তোকে বলতে পারব না।
ইতি
তোর বাবা
চিঠিটা হাত থেকে পড়ে গেল।যে ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হচ্ছে।হয়ত আজকে আরেকটা মৃ…….।আর পারছি না নিজেকে সামলাতে।
.
.
তমার রুমে এসে,,
মেঘ- “তমা,,তোর বাবার লোক বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।তাড়াতাড়ি ঢাকায় চলে যা”
তমা- “মামণি তুমি এই কথা বলছ!”( অবাক হয়ে)
মেঘ- “হ্যা,, একজন মৃত্যু পথযাত্রীর এই শেষ ইচ্ছাটা তোর পূরণ করা উচিত।”
তমা- “ঠিক আছে তাহলে তুমিও চল সেখানে।”
মেঘ- “না, আমি যেতে পারব না।কারণ তোর বাবা আমাকে যেতে বলেনি,শুধু তোকে যেতে বলেছে।সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি যা।”
মামণির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।সেখানে অনেক ভয় আর হতাশার চিহ্ন দেখতে পারছি।বুঝতে পারছি কিসের মধ্যে দিয়ে আমার মামণিকে কাটাতে হচ্ছে।মামণিকে একা ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবেনা তাই আমার শাশুড়িমাকে কল দিতে গেলেই মামণি বলল,,কাউকে কিছু জানানোর দরকার নেই।আমার এখন একা থাকতে ইচ্ছ করেছে।একটু একা থাকতে চাই আমি।
তমা- “কিন্তু এই অবস্থায় তুমি…..”
মেঘ- “আমি ঠিক আছি।”
তমা- “আচ্ছা যাচ্ছি তাহলে।মামণির হাত দুটো ধরে,, নিজের খেয়াল রেখ মামণি।”
এরপর তাড়াতাড়ি করে বাবার পাঠিয়ে দেওয়া গাড়িতে করে ঢাকায় রওনা দিলাম।
.
.
মেঘ- “মেয়েটা যাওয়ার সাথে সাথে অনেক কষ্টে আটকে রাখা চোখের পানিগুলো গাল গড়িয়ে পড়তে লাগল।
তন্ময় এতদিন আবির সেজে আমার সাথে কথা বলেছে অথচ আমি তা বুঝতেই পারিনি।ও এই কয়েক বছরে আমার সাথে যোগাযোগ রেখে আমার কষ্টগুলো দূর করার চেষ্টা করেছিল সেটাও আমি বুঝতে পারিনি।ও যে আমার সাথে ভুল করেছে সেটা ও মেনে নিয়েছে যে কিনা সামান্য কিংবা বড় ভুল করলেও তা সহজে মানতে চায় না।ওর ভুল কাজের জন্য সেদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমার কাছেই ক্ষমা চাইছিল আর আমি!আমি সেটা বুঝতে পারিনি। কি কপাল আমার।আমার স্বামী আজ জীবনের শেষ মূহুর্তের কাটগড়ায় এসে পৌছে দাঁড়াল অথচ তাকে আমি একটাবারো সামনে থেকে দেখতে পাব না।ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারব না কারণ আমি ওকে এই অবস্থায় লজ্জায় ফেলতে চাই না।আল্লাহ আর কত তুমি আমার কষ্টের পরীক্ষা নিবে।আর পারছি না আমি।এই কষ্ট থেকে আমাকে তাড়াতাড়ি মুক্তি দাও।”