স্যার পর্ব-৮+৯

0
1809

#স্যার
#পর্ব_৮
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

রুশার নজর আটকে আছে সামনে বসা মানুষটার দিকে। আজ প্রায় ৫ দিন পর সে মানুষটাকে দেখছে। বেশ অবাক সে। অবাক হওয়ার কারণ আছে। তাদের কাছ থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নেওয়া হয়েছে। আজ তো সপ্তম দিন। তবে কি তিনি আজ বাসায় যাবেন। রুশার খুব ইচ্ছা হচ্ছে উঠে গিয়ে তার সাথে কথা বলতে।
ফায়াজকে নিজের সামনে দেখে নিজেকে আটকে রাখা খুব কষ্টের হচ্ছে রুশার। ফায়াজ বলে গিয়েছিল, সে এক সপ্তাহের জন্য কোনো একটা কাজে ঢাকার বাহিরে যাবে। তাহলে এখানে কী করছে সে? প্রশ্নটা মনে ঘুরঘুর করছে।
রুশা তার বন্ধুদের সাথে ফুড কোর্টে এসেছিল। এসেই সে ফায়াজকে দেখতে পায়। একা বসে থাকা ফায়াজকে দেখে লোভ সংবরণ করা খুব কষ্টের হচ্ছে। এমতাবস্থায় এখানে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বন্ধুদের কিছু একটা বলে রুশা সামনের দিকে অগ্রসর হয়।
“স্যার, আপনি এখানে?”
পাশ থেকে কারো কথা শুনে ফায়াজ দাঁড়িয়ে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে রুশাকে দেখে চরম আকারে অবাক হয় সে। রুশা, এখানে! কীভাবে কী? এইটুকুন মেয়ে বসুন্ধরায় করে কী? কার সাথে এসেছে? দেখে মনে হচ্ছে কলেজ থেকে এসেছে কারণ, শরীরে এখনো কলেজ ড্রেস। ফায়াজ উল্টো প্রশ্ন করে,
“কী ব্যাপার! তুমি কার সাথে এসেছো এখানে?”
“কেন, আমি আসতে পারি না?”
“এত দূরে একা একা এসেছো?”
“নাহ। আপনার মাথাটা পেছনে ঘুরান। দেখেন আমার সাথে আমার সাঙ্গ-পাঙ্গরাও এসেছে।”
ফায়াজ রুশার কথা শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে সত্যিই পেছনের টেবিলে কয়েকজন ছেলেমেয়ে বসে আছে। ফায়াজ মজা করেই বলে,
“এদের মধ্যে তোমার রাসিন কোনটা?”
ভ্রু জোড়া কুঁচকে রুশা প্রশ্ন করে,
“আমার রাসিন?”
ফায়াজ বাকা হাসি দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, রাসিন। তোমার রাসিন। তোমার দোস্ত রাসিন। এদের মধ্যে কোনজন?”
“আপনি এত কিছু কেমনে জানেন স্যার?”
“ছাত্রীর খোঁজ খবর রাখা লাগে।”
“তবে ছাত্রীর মনের খোঁজ খবরও রাখা উচিত। তাই নয় কি?”
রুশার কথা শুনে ফায়াজ চুপ হয়ে যায়। রুশার খুব অভিমান হচ্ছে। স্যার তাকে এইভাবে না বললেও পারতো। ইচ্ছে হচ্ছে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে। পেটের কথাগুলো মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। নয়তো সে টিকতে পারবে না। যেই ভাবা সেই কাজ।
“রাসিন তার গার্লফ্রেন্ড ইশাকে নিয়ে ব্যস্ত। আর হ্যাঁ, খোঁচা মারার প্রয়োজন নেই। রাসিন শুধুই আমার বন্ধু।”
“হ্যাঁ, শুধুই বন্ধু।”
“জি, শুধুই বন্ধু। আপনি জানেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
“আবারও সেই কথা?”
“চলুন বসি এখানে।”
“একদমই না।”
“কেন?”
“তুমি যাও। তাদের সময় দাও।”
“স্যার, ভালোবাসি আপনাকে আমি।”
“ভালোবাসার মতো বয়স তোমার হয়নি। আগে বড় হও এরপর না হয় বোলো।”
রুশা চুপ হয়ে যায়। এতটা অবহেলা হয়তো এই জীবনে কেউ তাকে করেনি। যতটা অবহেলা ফায়াজ তাকে করছে। তবুও সবটা চেপে যাচ্ছে সে, কারণ সে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সে ভালোবাসে তার স্যারকে। পরিসংখ্যানের সূত্র বোঝাতে গিয়ে স্যার তাকে মায়ায় জড়িয়ে দিয়েছে। সূত্র মাথায় নেই কিন্তু ভালোবাসা মাথায় রয়ে গেছে। রুশা আবারও বেহায়া হয়।
“স্যার, আমার ভালোবাসাটা চোখে পড়ে না আপনার?”
ফায়াজ বিরক্ত হচ্ছে।
“এতটা বেহায়া কীভাবে হও। নিজের স্যারকে প্রপোজ করো।”
“প্রপোজ করিনি তো। ভালোবাসি, এটা বলেছি।”
“আমি আগামীকাল তোমার বাসায় যাবো। তোমার মা’কে সবটা বলবো। এরপর দেখি তিনি কী বলেন।”
রুশার কলিজায় ধক করে এক কামড় পড়ে। রুশা ভয় পেয়ে যায়। মায়ের হাতে মা’র খাওয়ার ভয় না। ভয় পায় যদি স্যারকে সে হারিয়ে ফেলে। রুশা তখনই বলে,
“স্যরি স্যার। আর হবে না।”
“আর কতবার স্যরি শুনবো?”
“এবারই লাস্ট।”
“বাসায় যাও। পড়াগুলো সব শেষ করে রাখবে। নয়তো তোমার খবর আছে।”
রুশা চলে যায়। চোখে পানি তার। ব্যাগটা নিয়ে সোজা বের হয়ে যায় বসুন্ধরা থেকে। কাউকে ভালোবাসা হয়তো অপরাধ। নয়তো কাউকে ভালোবাসি বলার পরেও এইভাবে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যায়?

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………

#স্যার
#পর্ব_৯
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

দেখতে দেখতে অনেকগুলো মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। রুশার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ভালো রেজাল্ট হয়েছে তার। জিপিএ ফোর পয়েন্ট এইট জিরো পেয়ে কলেজ জীবনে ইতি টানে সে। খানিকটা বদলেছে। উহু, খানিকটা বলা চলে না, পুরোটাই বদলে গেছে। আগের মতো আর তেমন চঞ্চলতা নেই নিজের মাঝে। স্যার যে তার চলে গেছে।
প্রায় দুই বছর আগের সেইদিনটা কখনো ভুলতে পারবে না রুশা। তার কোমল হৃদয় যখন স্যারের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতো, স্যার তখন কঠিন কঠিন সূত্র আর থিওরি দিয়ে তার ভালোবাসাকে নুয়ে রাখতো। যেই পরিসংখ্যান তার কাছে এত কঠিন ছিলো সেই পরিসংখ্যান আজ তার কাছে পানির মতো সহজ। তবে পরিসংখ্যানের সূত্র শেখানো সেই মানুষটা আর তার আশেপাশে নেই। বলা যায় এক রকম গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে তাকে সেই মানুষটা।
আর সেই রাতটা হয়তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবে না যেদিন স্যার নিজের মুখে তার মা’কে কিছু কথা বলেছিলো।
“আন্টি, আপনি কি জানেন আপনার মেয়ে আমায় প্রায় প্রতিদিনই ভালোবাসি এই শব্দটা বলে। আমি এতদিন বলিনি, ভেবেছিলাম ও শুধরে যাবে। কিন্তু নাহ, ও শুধরানোর মতো মেয়ে না। আমি তার স্যার হয়ে এখানে এসেছি। তার সাথে প্রেম করার জন্য নয়।”
কথাটা শুনে নাসরিন সেদিন স্যারের সামনেই কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয় রুশাকে।
“বেয়াদব মেয়ে। পড়াশোনা বাদ এইসব করো। আজ আসুক তোমার আব্বু।”
নাসরিন মেয়ের কৃতকর্মের জন্য অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে। এবং সেদিনই স্যার রুশাকে পড়ানো ছেড়ে দেয়।
অফিস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অতীত মনে পড়ে রুশার। সেইসব দিন গুলো খুব দুর্বিষহ ছিলো তার জন্য৷ একেকটা দিন একেকটা রাত কত বর্ষ সমান ছিলো। এই এতগুলো দিন অতিবাহিত হবার পরেও রুশার মনে এখনো সেই মানুষটাই রয়ে গেছে। হৃদয়ের এক কোণে সুপ্ত ভালোবাসার আঁচলে মোড়ানো অবস্থায় রয়ে গেছে।
নবীন বরণের অনুষ্ঠানও শেষ। নিউ ফার্স্ট ইয়ারদের অত্যন্ত আদরের সঙ্গে সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে। শরীর অসুস্থ থাকায় রুশা সেদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেনি। আজ ক্লাস মিস করা যাবে না।
ক্যাম্পাসে এসে পা রাখতেই ফোন বেজে ওঠে তার। রাসিন ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে রুশা।
“হ্যাঁ রাসিন, বল।”
“কেমন আছিস?”
“এইতো, ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”
“আমি বেশ আছি রে।”
“ইশা কেমন আছে?”
“ও ভালো আছে।”
“ওহ।”
“মিস করি রে তোকে।”
“ইশা আছে তো কাছে। মিস করবি না আর।”
রাসিন চুপ হয়ে যায়। ইশা আর সে সম্পর্কে আছে। সেটা রুশাকে জানানো হয়নি। হয়তো রুশার কষ্টের কারণ এটাই। এমন কি তারা দু’জন মিলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার কথাটাও রুশাকে বলা হয়নি। সত্যিই একজন ভালো বন্ধু হিসেবে রাসিন কখনো কোনো দায়িত্ব পালন করেনি। এদিক থেকে সে বরাবরই ব্যর্থ। তবে রুশার আচরণ আগের থেকে অনেক বদলে গেছে। তার ভাষ্যমতে, গোটা রুশাটাই বদলে গেছে। হাসি-খুশি সেই চঞ্চল রুশা আর নেই। তার নীরবতাকে ছুটি দিয়ে রুশা বলে ওঠে,
“ক্যাম্পাসে এসেছি তো। ক্লাসে যাবো। পরে কথা বলি?”
রুশার কথায় বোঝা যাচ্ছে যে সে কথা বলতে চাইছে না। আজ-কাল কথাও তেমন বলে না। আগে ফেসবুকে অনলাইনে দেখলেই মেসেজ করতো কিন্তু এখন অনলাইনে থাকলেও মেসেজ করে না। আর না মেসেজের ঠিকঠাক উত্তর দেয়। রুশার সব কিছুই এখন নতুন নতুন লাগে তার কাছে। তবুও আচ্ছা বলে ফোন রেখে দেয় রাসিন। নিজেকে নিজের কাছে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। রুশাকে এইভাবে অবহেলা না করলেও পারতো সে।
৩১৮ নং কক্ষে গিয়ে পঞ্চম বেঞ্চে বসে রুশা। চারপাশে অনেক ছেলে মেয়ে। রুশার সাথে পরিচয় শুধু হাতে গোনা চার কি পাঁচ জনের সাথে। যাদের সাথে সে ইন্টারমিডিয়েট পড়েছে। এর মধ্যে রিমি একজন। রিমি তার খুব কাছের একজন মানুষ। সবাই অবহেলা করলেও রিমি করেনি। সব সময় তার পাশে বন্ধু কম একজন বোনের মতো থেকেছে বেশি।
রুশার পাশে বসে আছে রিমি। রুশার মনটা অনেক ভার ভার লাগছে। রিমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে। প্রশ্ন করবে কি-না ভাবছে। রুশা প্রায় সময়ই এমন ভার থাকে।
“রুশা?”
রিমির ডাকে ধ্যান ভাঙে রুশার।
“হ্যাঁ বল।”
দু’চোখে যেন অসহায়ত্ব ভর করেছে তার। মেয়েটার দিকে এক দন্ড তাকিয়ে থাকলে মায়া লেগে যায়। এই মায়া সহজেই নারী এবং পুরুষ উভয়কেই কাবু করার জন্য যথেষ্ট।
“তোকে এমন ভার ভার লাগছে কেন?”
“বুঝতেছি না। জানিস, ক্যাম্পাসে পা রাখার পর থেকেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন গুমোট হয়ে আছে। মনে হচ্ছে আশেপাশে কিছু একটা আছে। কিছু তো একটা আছে।”
“রুশা, তোকে এমন অবস্থায় দেখতে আর ভালো লাগে না। এইভাবে চুপসে থাকতে থাকতে একদিন স্ট্রোক করে বসবি তো তুই। এখনকার যুগের মানুষ সব হুটহাট মরে যায়। আমার কিন্তু একদম ভালো লাগে না এইসব।”
“রিমি, অস্থির লাগছে ভীষণ। আশেপাশে কিছু একটা আছে। যা আমায় অতিরিক্ত অস্থির করে তুলছে।”
“আচ্ছা। একটু পানি খা। খুব বেশি খারাপ লাগছে? বাসায় যাবি?”
“নাহ। প্রথম ক্লাসটা করে নেই। এরপর না হয় চলে যাবো।”
রিমি কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকে। দু’জনের ফোন দু’জনের সামনে। টেবিলের ওপর রাখা। হঠাৎ রিমির ফোনে নিজের মায়ের ফোন থেকে আসা ইনকামিং কল চোখে পড়ে রুশার। ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায় সাথে সাথে। তাকে ফোন না করে তার বান্ধবীকে ফোন করলো কেন তার মা। ফোনটা রুশার সামনে আসাতে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রিমি। রুশার অগোচরে তার মা রিমিকে ফোন করে। এতদিন কিছু না জানলেও আজ রুশা জেনে গেছে। রিমির ব্যাপারে কী ভাবছে কে জানে?
“ফোনটা রিসিভ কর। বলে দিস আমি দেখিনি কিছুই।”
রিমি ফোন রিসিভ করে। দুই মিনিটের মাথায় কথা শেষ করে ফোন রাখে। কথোপকথন শুনে বোঝা যাচ্ছে নাসরিন মানে মা তার ভালো মন্দের খবর জানতেই রিমিকে ফোন করেছেন। রুশা আর উচ্চবাচ্য করেনি। রিমি নিজ থেকেই বলে,
“শোন না, রাগ করিস না প্লিজ। তুই এমন চুপচাপ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আন্টি আমায় ফোন করে। বিশেষ করে তুই যখন আমার কাছে থাকিস তখন বেশি ফোন করে। কী করিস, ভালো আছিস কি-না, আরও অনেক কিছু।”
রুশা হালকা হেসে বলে,
“মেয়ের খবর রাখার জন্য মেয়ের বান্ধবীকেই হায়ার করে। বাহ!”
“ভুল বুঝিস না প্লিজ। আন্টি তোকে নিয়ে ভীষণ ভয় পায়।”
রুশার অস্থিরতা আবারও বেড়ে যায়। কী যেন তাকে খুব বিরক্ত করছে। রুশা চুপচাপ বসে থাকে। ইচ্ছা করছে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে। কিন্তু আবার কেন যেন ইচ্ছা করছে বসে যেতে। কী অদ্ভুত অনুভূতি?
পাশ থেকে একজন বলছিলো প্রথম ক্লাস নাকি কোন এক স্যার নিবেন। প্রথম ক্লাস ব্যবসায় পরিসংখ্যান। স্যারকে নাকি হেব্বি দেখতে। খুব সাধারণ একজন মানুষ তবে এই সাধারণের মাঝে যেন অসাধারণ কিছুও তার মাঝে বিদ্যমান।
আরেকটা ছেলে বলছিলো ব্যবহারে নাকি মুগ্ধতা লেপ্টে থাকে। ওই ছেলের ভাই নাকি এই স্যারের বিশাল বড় ভক্ত। পরিসংখ্যান প্রাইভেট পড়ে স্যারের কাছে। গত দুই বছর আগেই নাকি এই কলেজে জয়েন করেছেন তিনি। প্রথমে গেস্ট টিচার হলেও এখন পুরোদমে লেকচারার। বি.সি.এস ক্যাডার।
রুশার অস্থিরতা যেন আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়। প্রথম ক্লাস ব্যবসায় পরিসংখ্যান! সেই পরিসংখ্যান যেই পরিসংখ্যানে সে দশ পেয়েছিলো। আর এরপরেই স্যার রাখা হয়েছিলো তার জন্য। স্মৃতি গুলো বাস্তব হয়ে চোখের সামনে ঘুরঘুর করছে তার। না পারছে স্থির হয়ে বসতে, না পারছে উঠে চলে যেতে। ক্লাস ভর্তি ছাত্র-ছাত্রী। প্রথম ক্লাসটা ব্যবসায় পরিসংখ্যান এবং প্রথম ক্লাসটাই কোনো এক স্যার করাবেন। মস্তিষ্ক কাজ করছে না রুশার।
ঘড়িতে তখন ঠিক এগারোটা। প্রায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চ হবে লম্বা একজন সুদর্শন পুরুষ ক্লাসে ঢোকে। সবাই দাঁড়িয়ে যায়। মনে হচ্ছে ইনিই স্যার। পঞ্চম সারির মাঝে বসায় সামনের চার বেঞ্চের ছেলেমেয়ের জন্য রুশা আর স্যারের মুখটা দেখতে পারেনি।
“আপনারা সবাই বসতে পারেন।”
কথাটা শুনে সবাই যে যার জায়গায় বসলেও রুশার কলিজায় টান লাগে। চেনা সেই কন্ঠস্বর। কে সে?
সবাই বসে পড়লে রুশার চোখ যায় সামনে। মস্তিষ্কের প্রতিটা স্নায়ুকোষ তাদের ক্রিয়াকার্য বন্ধ করে দিয়েছে ওই মুহুর্তে। মাথার চারপাশটা ভো ভো করে ঘুরছে। এ কাকে দেখছে সে? কেন-ই বা দেখছে? আবার সেই সাক্ষাৎ! সাক্ষাৎ হওয়াটা কি খুব জরুরী ছিলো?
রুশা মাথা নিচু করে রেখেছে। বুকে ব্যথা হচ্ছে। চিন চিন একটা ব্যথা। যার যন্ত্রণা একমাত্র নিজেকে উপলব্ধি করতে হয়। যার ভাগ একমাত্র নিজে ব্যতীত অন্য কাউকে দেওয়া যায় না এবং দেখানোও যায় না। আজ প্রায় দুই বছর পর সে আবারও দেখতে পেলো তাকে। কিন্তু কেন? দুই হাতের আঙুলগুলো সমানে মোড়াচ্ছে রুশা। রিমি রুশার আচরণ দেখে বলে,
“কী হয়েছে রুশা? এমন করছিস কেন?”
রিমির ডাকে মাথা নিচু করে তাকায় রুশা।
“আমি বাসায় যাবো।”
“এখন?”
“হ্যাঁ।”
“স্যার ক্লাসে দাঁড়িয়ে আছে। আর তুই বলছিস বাসায় যাবি!”
“হ্যাঁ বাসায় যাবো। নয়তো এখনি মরে যাবো। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।”
“কী সব বলতেছিস? একটু পানি খা। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এইভাবে মাথা নিচু করে রেখেছিস কেন? স্যারটাকে দেখ। অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে। তাকা একবার।”
রুশা চুপ হয়ে যায়। আর কিছুই বলতে পারছে না সে। ক্লাসের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে স্যার কথা বলছেন। বেশ জোরেই কথা বলতে হচ্ছে তাকে। ছাত্র-ছাত্রীরা বলছে,
“স্যার আপনি আমাদের আপনি বলে সম্বোধন করছেন। কেমন একটা লাগছে?”
উত্তরে স্যার বলছেন,
“আপনারা যথেষ্ট বড়। আপনাদের অবশ্যই তুই কিংবা তুমি বলা ঠিক হবে না। আর আপনাদের সাথে এটা আমার প্রথম সাক্ষাৎ। সেই সুবাদে ভদ্রতার খাতিরে আপনি সম্বোধনটাই পারফেক্ট বলে মনে করলাম।”
স্যারের কথা শুনে সবাই বেশ খুশি। কয়েকজনের নাম ধাম জিজ্ঞেস করা হলো। এইচ এস সি রেজাল্ট জিজ্ঞেস করা হলো। এবার বাকিরাও স্যারের নাম জিজ্ঞেস করলো। মুখে উত্তর দেওয়ার বদলে স্যার হালকা হেসে মার্কার পেন দিয়ে হোয়াইট বোর্ডে তার নাম লিখে দিলেন।
ফায়াজ কারিম
পেশায় – একজন লেকচারার
বিষয় – ব্যবসায় পরিসংখ্যান

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে