স্যার পর্ব-২২

0
1665

#স্যার
#পর্ব_২২
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

অতিরিক্ত জোরেই ফুয়াদ রুশার হাতটা ধরে রেখেছে। রুশা ব্যথা পাচ্ছে, কিন্তু সে ছাড়ছে না। হয়তো জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। তবুও ছাড়ছে না। রুশা বার বার বলার পরেও ফুয়াদ ঠিক একইভাবে হাতটা ধরে আছে।
“ফুয়াদ, তোমার সমস্যা কী?”
“তোমাকে কিছু কথা বলার আছে।”
“এইভাবে জোর করে চেপে হাতটা ধরে আছো। আমি ব্যথা পাচ্ছি। তুমি বুঝতেছো না?”
“নাহ, আমি বুঝতে পারছি না। তুমি গত একমাসে এত বদলে গেলে কেন?”
“আমি বদলে গেছি, কী সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো ফুয়াদ তুমি?”
“যা বলছি ঠিক বলছি। তুমি বদলে গেছ। আমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলো না।”
“এর আগে কি আমি তোমার সাথে খুব বেশি কথা বলতাম ফুয়াদ?”
এই কথা শোনার পর ফুয়াদ একটু দমে যায়। এরপর আবার বলে,
“শোন রুশা, আমি আর পারছি না। আমাকে আজকে বলতেই হবে৷ তোমার মতিগতি ভালো ঠেকছে না। তোমায় আমি ভালোবাসি রুশা।”
ফুয়াদের মুখ থেকে নিজের জন্য ভালোবাসার কথা শুনে রুশা যেন আকাশ থেকে পড়ে। এসব কী কথাবার্তা শুরু করেছে ফুয়াদ। যার আগা-মাথা কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না রুশা। সে শুধু ফুয়াদের সাহস দেখছে।
“তোমার মাথা ঠিকাছে ফুয়াদ? কী সব আজগুবি কথা বলছো তুমি?”
“কোনো আজগুবি কথা না রুশা। আমি ভালোবাসি তোমাকে।”
“আমরা তো বন্ধু ছিলাম ফুয়াদ। এখানে ভালোবাসা আসলো কোথা থেকে?”
“তুমি আমার আচার-আচরণে বোঝো নি আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।”
“থামো প্লিজ। প্লিজ একটু থামো। বার বার ভালোবাসার কথা বলতে এসো না প্লিজ। অস্বস্তি লাগছে আমার।”
“রুশা, আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ মোর।”
ফুয়াদকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে রুশা। এই মুহুর্তে ছেলেটাকে উন্মাদ বলে মনে হচ্ছে তার। এত বড় অডিটোরিয়ামে সে আর ফুয়াদ একা। ফুয়াদ সুযোগ বুঝে এখানে রুশাকে আটকে ফেলেছে।
এখানে কোনো খারাপ ঘটনা ঘটে গেলেও কেউ বুঝতে পারবে না। রুশার মন কু ডাকছে।
কান্নাকাটি করে কোনো লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না রুশার। সে শান্ত স্বরেই প্রশ্ন করে,
“তুমি আমায় ভালোবাসো। আমি তোমায় ভালোবাসি কি-না সেটা জানা কি তোমার উচিত ছিলো না ফুয়াদ?”
“তুমিও আমায় ভালোবাসবে।”
“ভালোবাসবে,,, এটা কেমন কথা? আমি কি আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমায় ভালোবাসবো না-কি?”
“মনের বিরুদ্ধে কেন যাবে। মন থেকেই ভালোবাসবে।”
“কিন্তু তা যে সম্ভব না ফুয়াদ।”
রুশার বলা এই কথা শুনে ফুয়াদের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। সম্ভব না মানে কী! কেন সম্ভব না। এটা তো হতে পারে না। ফুয়াদ এবার রুশাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
“কেন সম্ভব না রুশা? কেন সম্ভব না?”
“আহ, ফুয়াদ আমি ব্যথা পাচ্ছি। এমন বিশ্রী বাজে ব্যবহার কেন করছো তুমি আমার সাথে?”
“বলো আমায় ভালোবাসো।”
“আমি তো তোমায় ভালোবাসি না। তবে মিথ্যা কেন বলবো?”
“আমি কি ভালোবাসার যোগ্য না? আমায় কি দেখতে খারাপ লাগে? আমার মধ্যে ভালোবাসার মতো কি কোনো গুন নেই?”
“কে বলেছে তুমি ভালোবাসার যোগ্য না। কে বলেছে তুমি দেখতে খারাপ। তোমার মধ্যে ভালোবাসার সব গুনই আছে। কিন্তু তোমার সৃষ্টি আমার জন্য হয়নি ফুয়াদ। অন্য কারো জন্য হয়েছে। তোমার সাথে আমার জুড়ি না, অন্য কারো সাথে তোমার জুড়ি।”
“তুমি কি আল্লাহর ছোট বোন না-কি? সব জানো আগে আগে।”
“নিজের মনের খবর জানতে আল্লাহর ছোট বোন হওয়া লাগে না ফুয়াদ। আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। এসব বোলো না প্লিজ। শুনতে খারাপ লাগে। আর আমি, আমি হয়তো অন্য কারো জন্য সৃষ্টি হয়েছি। তোমার জন্য না।”
ফুয়াদ রুশাকে নিজ থেকে আলগা করে দেয়। রুশার বলা এই কথাটা তার বুকে গিয়ে লাগে। তবে কি রুশা অন্য কাউকে? কিন্তু কোথায়, সে তো এমন কাউকে দেখেনি। নিজের মনকে স্থির রাখতে পারছে না ফুয়াদ। তবে রুশার হেসে কথা বলা কি ছিলো?
“তবে আমার সাথে তোমার হেসে হেসে কথা বলার কারণ কী ছিলো? বলো রুশা।”
“এসব কী ধরনের প্রশ্ন করছো ফুয়াদ। বাচ্চা ছেলের মতো প্রশ্ন করছো। হেসে হেসে কথা বললেই কি ভালোবাসতে হবে।”
“তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো?”
“সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমার থেকে এইসব আশা কোরো না ফুয়াদ।”
“রুশা, আই রিয়েলি লাভ ইউ।”
“বোকার মতো কথা বোলো না প্লিজ। বোঝার চেষ্টা করো। আমি তোমায় ভালোবাসি না।”
“তবে কাকে ভালোবাসো?”
“সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার ব্যক্তিগত জীবন। তুমি প্লিজ আমায় আর জোর কোরো না।”
“আমার ভালোবাসার দাম নেই?”
“তা বলিনি। তোমার ভালোবাসাও ভালোবাসা। তবে তা আমার জন্য না।”
ফুয়াদ আর কিছু বলেনি। দুই পা পিছিয়ে যায় সে। রুশা তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতটায় পুরো চার আঙুলের ছাপ পড়ে আছে। লাল হয়ে আছে পুরো জায়গাটা। জেদের বসে ফুয়াদ এত জোরে ধরেছে যে পুরো জায়গাটায় দাগ পড়ে গেছে।
ফুয়াদ আর একটা শব্দও করেনি। চোখের পানি মুছে রুশা অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে যায়।
রুশা সিঁড়ির কাছে আসতেই কেউ একজন বলে,
“রুশা, গেইটের বাহিরে চলে যাও। আমি সেখানে আসছি দুই মিনিটের আসছি।”
চমকে গিয়ে রুশা পেছনে তাকিয়ে দেখে ফায়াজ দাঁড়িয়ে আছে।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়……………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে