#স্যার
#পর্ব_২১
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার
ক্যাম্পাসে আসতেই ফুয়াদ জেকে ধরে রুশাকে। কেমন আছে, শরীরের কী অবস্থা, আরও অনেক কিছুই জিজ্ঞাসাবাদ করছে সে। রুশার ফুয়াদের কথার দিকে কান নেই। তার চোখ আশেপাশে স্যারকে খুঁজতে ব্যস্ত। যদি কোথাও থেকে স্যার একবার দেখে ফেলে তাহলে আবারও সন্দেহ করবে। রুশার ধ্যান অন্য কোথাও যা ফুয়াদ বুঝতে পেরেছে।
“রুশা, এই রুশা। আমি যে কিছু বলছি তোমায়। তুমি শুনতে পাচ্ছো?”
রুশা চমকে যায় ফুয়াদের কথা শুনে। ফুয়াদ বেশ উচ্চস্বরেই কথাটা বলেছে।
“চেঁচাচ্ছো কেন ফুয়াদ? আমি তো শুনতে পাচ্ছি। এত জোরে কথা বলা লাগে?”
“তোমার ধ্যান তো অন্য কোথাও।”
“রিমি কোথায়? আজকে এসেছে?”
“হ্যাঁ। ক্লাসেই আছে।”
“আচ্ছা।”
রুশা ক্লাসে চলে যেতে নিলে ফুয়াদ পতজ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে রুশার সামনে।
“কী ব্যাপার ফুয়াদ! পথ আটলে দাঁড়িয়ে গেলে যে? ক্লাসে যাবে না?”
“আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেও তো। তুমি কি আমায় ইগনোর করছো?”
“কেন, ইগনোর কেন করবো। তুমি তো ইগনোর করার মতো কোনো কাজ করো নি। তবে ইগনোর কেন করবো?”
“মনে হচ্ছে ইগনোর করছো।”
“এখন তোমার মনে হওয়ার সাথে আমি কী করতে পারি বলো। চলো ক্লাসে যাই।”
এইভাবে ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলায় রুশা ভয় পায়। যদি একবার ফায়াজের চোখে পড়ে তাহলে ঝামেলা।
ক্লাসে গিয়ে বসার ১০ মিনিটের মাথায় ফায়াজ ক্লাসে এন্ট্রি নেয়। রুশা আজ সেকেন্ড বেঞ্চে বসেছে। ফুয়াদ বসেছে শেষের বেঞ্চের আগের বেঞ্চে। ফায়াজ ক্লাসে এসেই পড়ানো শুরু করে। রুশা চুপচাপ পড়ায় মনোযোগ দিয়ে বসে আছে। ফায়াজ কিছুক্ষণ বুঝিয়ে পড়া জিজ্ঞেস করা স্টার্ট করে দেয়। আর তার প্রথম টার্গেট হয় রুশা।
আজকের ক্লাসে সর্বপ্রথম স্যারের মুখে নিজের নাম শুনেই রুশার কলিজায় কামড় পড়ে। রুশা বাধ্য হয় দাঁড়াতে। রুশা একবার তার স্যারের দিকে তাকায়। দেখে ফায়াজ মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় রুশা। গতকাল রাতে বলা ফায়াজের কথাগুলো কানে বাজছে তার। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ফায়াজ তাকে।
পড়া জিজ্ঞেস করা হলে রুশা চুপ করে থাকে। এতক্ষণ সব পড়া মনোযোগ দিয়ে দেখলেও এখন আর মাথায় কিছুই নেই তার। কী বলবে না বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। ফায়াজ হালকা হেসে প্রশ্ন করে,
“এনিথিং রং রুশা?”
ফায়াজের মুখে এই ‘এনিথিং রং রুশা’ এই লাইনটা বেশ সুন্দর মানায়। রুশা মাথা নেড়ে বলে,
“নো স্যার।”
“এতক্ষণ যাবত পড়ালাম। এরপর জিজ্ঞেস করলাম। এর মাঝেই সব ভুলে গেলে?”
রুশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ক্লাসের সব স্টুডেন্টদের নজর একবার স্যারের দিকে একবার রুশার দিকে। ফুয়াদ পেছন থেকে একবার রুশাকে দেখছে একবার স্যারকে দেখছে।
রুশা ঠিকঠাক কিছু বলতে পারছে না। ফায়াজ রুশার দিকে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
“বসো।”
স্যার বলার সাথে সাথে বসে পড়ে সে। হাফ ছেড়ে বেঁচেছে মনে হলো।
রিমি কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে,
“স্যার তোকেই আগে পড়া জিজ্ঞেস করেছে। আজকে সকালে আমি কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছি কে জানে? জানে বেঁচে গেছি। তোর পাশেই ছিলাম। আমায় বাদ দিয়ে তোকেই ধরেছে।”
রিমির কথাগুলো রুশার কানে লাগছে ঠিকই কিন্তু সে কিছু বলছে না।
ক্লাস শেষে বাসার দিকে রওনা হয় রুশা। আজকে আর কোথাও দাঁড়ায়নি। সোজা বাসায় যাবে বলে হাঁটা শুরু করে।
ফোনের শব্দ পেয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে রুশা। স্যার ফোন করেছে। রুশা ভাবছে, ওনাকে তো ডিপার্টমেন্টের অফিসে দেখে এলাম। বসে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। এখন আবার ফোন করলেন। রুশা ফোন রিসিভ করে।
“হ্যালো।”
“তুমি চলে গেছ?”
“বের হয়েছি। হাঁটছি।”
“রিকশা নাও। নয়তো আবারও অ্যাক্সিডেন্ট করবে।”
“সমস্যা নেই।”
“রিকশা নিতে বলেছি রুশা।”
রুশা চুপ করে আছে। ফায়াজ আবারও বলে,
“রুশা, তুমি যে কিছু বললে না।”
“কোন ব্যাপারে?”
“তোমাকে গতকাল রাতে কী বলেছি আমি?”
বিয়ের কথাটা নিয়ে ফায়াজ কথা তুলেছে। কিন্তু রুশা কী বলবে, এটাই সে ভাবতে পারছে না। সে হ্যাঁ করবে না-কি না করবে তা নিয়েও তার দ্বিধা জন্মাচ্ছে।
রুশার নীরবতা ফায়াজকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। জবাবটা পাওয়া খুব জরুরী তার জন্য। রুশার জবাবের জন্য সে মুখিয়ে আছে এক প্রকার। তার রীতিমতো ভয় হচ্ছে। রুশা না করে দেবে না তো? রুশার মন ঘুরে যাবে না তো? নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সে খাটি সোনা হারিয়ে ফেলছে না তো?
এই প্রথম ফায়াজ কিছু নিয়ে ভয় পাচ্ছে। এর আগে কখনো সে এতটা ভয় পায়নি। রুশার জবাবের অপেক্ষা মূলত তাকে ভয় দেখাচ্ছে। মনে বার বার ঘুরে ফিরে একটাই কথা আসছে তার। রুশার মন ঘুরে যায়নি তো?
রাতের বেলায় খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রুশা। ভাবছে, আচ্ছা এমন যদি হয় আমি আর সে, আমরা দু’জন মিলে কোনো এক রাতে অন্ধকারে হাতে হাত রেখে পায়ের তাল এক রেখে হেঁটে যাবো বহু দূরে। চারপাশটা থাকবে নীরব। আর আমাদের দু’জনের সাথে সাক্ষী হয়ে থাকবে আকাশের ওই চাঁদের আলো। কেমন হবে তবে? আমি সাদা শাড়িতে আর সে সাদা পাঞ্জাবিতে। যেখানে পবিত্রতা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। কেমন হবে তবে?
কল্পনা দেখতে তো সবার ভালো লাগে। কিন্তু সেই কল্পনা আদৌ বাস্তবে রুপান্তরিত হয় কি-না সেটাই বড় প্রশ্ন।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………….