স্যার পর্ব-২০

0
1767

#স্যার
#পর্ব_২০
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছে না রুশার। ব্রিজে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় কাটিয়ে রাত আটটায় বাসায় ফেরে সে। অবশ্য ভাগ্য ভালো থাকায় বাবা ফেরার আগেই সে ফিরে আসে। রাস্তায় নানান চিন্তায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো রুশার। বার বার মা’কে ফোন করে জেনেছে বাবা ফিরেছে কি-না? ভাগ্যের কথা বলা যায় না। যদি বাসায় ফিরে দেখে বাবা ড্রইংরুমে কাগজ হাতে বসে আছে। তখন প্রশ্ন করবে। কী উত্তর দিবে তা মনে মনে সাজিয়ে নিয়েছে রুশা। রিকশায় ফায়াজ নিজ অধিকারে রুশার হাত ধরে। রুশা তেমন বাধা দেয়নি। ফায়াজ হাত ধরেই চমকে ওঠে।
হাত ঠান্ডা দেখে রুশাকে সে জিজ্ঞেস করে,
“শরীর খারাপ লাগছে না-কি রুশা?”
“নাহ।”
“হাত তো একদম বরফ হয়ে আছে।”
“এমনি হয়তো হয়েছে।”
“মানুষ যখন অতিরিক্ত টেনশন করে কিংবা অসুস্থ হয় তখন তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।”
“ওহ।”
“কী ওহ? বলো কী হয়েছে?”
“একটু চিন্তা হচ্ছে। যদি ফিরে দেখি আব্বু চলে আসছে।”
ফায়াজ কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু বলেনি।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফায়াজের কথাগুলো ভাবছে রুশা। ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে ফায়াজের বলা কথাগুলো রুশার কানে লাগছে। মন ভাবছে, সত্যিই কি সেদিন স্যারের কোনো রাস্তা ছিলো না? সত্যিই কি স্যার সেদিন সব ভুলে গিয়ে আমাকে আপন করতে পারতো না? প্রথমবারের আঘাত ভুলে গিয়ে একবার অন্তত আমার হাতটা ধরেই দেখতো? আমি তো তার ক্যারিয়ার দেখে তাকে ভালোবাসিনি। আমার মনটা অকারণেই তাকে ভালোবেসেছিলো। আমি শুধু তাকে ভালোবেসেছিলাম। তখন তো আমি ক্যারিয়ার কী তা-ও জানতাম না। কিন্তু তার দেওয়া কষ্টগুলো আমায় হুট করেই কত কিছু বুঝতে শিখিয়ে দিলো। কত দ্রুত আমায় বড় করে দিলো। আচ্ছা, আমি কি খুব বেশিই বড় হয়ে গেছি?
ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে। আপাতত রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। ভাবনাতে ডুবে থাকতেই বেশি ভালো লাগছে তার। ভাবছে, স্যার আমায় নিয়ে কী ভাবছে এখন? আমারই বা কী করা উচিত? আমি মানুষটাকে ভালোবাসি। হ্যাঁ ভীষণ ভালোবাসি। আমার এই ভালোবাসাটাই আমায় ভীষণ দুর্বল করে দিচ্ছে। মাঝে মধ্যে আমি ভেবে পাই না এই দুনিয়ায় কি আর কোনো পুরুষ ছিলো না। আমার ভালোবাসা স্যারের উপরেই কেন পড়তে হলো? আমার কেন স্যারকেই ভালোবাসতে হলো। লোকটার মাঝে কী এমন দেখেছিলাম উপরওয়ালা-ই ভালো জানেন।
দুটো বছর। বিগত দুটো বছর অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আমায়। যদি তিনি এতটুকুও বুঝতেন আমায়?
ফোনটা অনবরত ভাইব্রেট হচ্ছে। এবার বিরক্ত লাগছে রুশার।
“কে এতবার ফোন করে। দেখছে রিসিভ হচ্ছে না, তবুও ফোন করতে হবে কেন?”
বলতে বলতে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফায়াজ ফোন করেছে। সাটার ডাউন করে দেখে প্রায় তিন টা মিসড কল উঠে আছে তার ফোনে। রুশা ফোন রিসিভ করে কানে নেয়।
“হ্যালো।”
“ঘুমিয়ে গেছ?”
“নাহ।”
“রুশা, টিচিং প্রফেশনালে থেকে থেকে সরাসরি কথা বলা অভ্যাস হয়ে গেছে আমার। তাই ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলতে পারি না। সরাসরিই বলি, আমায় বিয়ে করবে?”
কথাটা শুনে মনে হলো যেন ৪৪০ ভোল্টেজের কারেন্ট লাগে রুশার শরীরে। রুশাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফায়াজ আবারও বলে,
“রুশা, বলো কিছু? বিয়ে করবে আমায়? আমি আমার তরফ থেকে কোনো সাফাই দিবো না। শুধু তুমি মনকে জিজ্ঞেস করো। থাকবে আমার সাথে? দুই বছর আগে যেই আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তোমায়। সেই আমিই বলছি তোমায়, থাকবে সারাজীবন আমার হয়ে? কথা দিচ্ছি পুরোটা না হলেও তোমার অর্ধেকের বেশি কষ্ট আমি আমার করে নিবো। এতটাই ভালোবাসা দিবো যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার হাতটা ছাড়বো না। আমি ফোনটা রাখছি। তুমি আমায় তোমার ভাবনা জানাতে পারো। ধীরে সুস্থে। কোনো তাড়া নেই। তবে রুশা, আমার মনে হচ্ছে আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না। ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। কতটা ভালোবাসি তা জানি না। তবে ভালোবাসি।”
ফায়াজ ফোন রেখে দেয়। রুশার দু’চোখ পেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। অশ্রুগুলো কি তবে আনন্দের?

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়……………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে