স্যার পর্ব-১৮

0
1744

#স্যার
#পর্ব_১৮
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

আজ তিন দিন ধরে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছে রুশা। সেদিন রাতে শাহীন ভাইয়ার প্রাইভেট কার দিয়ে রুশাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এই তিন দিনে আশরাফ এবং নাসরিন রুশাকে অন্তত চার থেকে পাঁচ জন ভালো ডক্টর দেখিয়েছেন।
রুশা এর আগে কখনো সেন্সলেস হয়নি। সেদিনই হুট করে কেন এইভাবে পড়ে গেল। এটাই মাথায় আসছিলো না তাদের। তবে ডক্টরদের একই কথা, রুশা প্রচুর চিন্তিত থাকে। তার মস্তিষ্কে সব সময় দ্রুত গতিতে রক্ত সঞ্চালন হয়। এর ফলে তার মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। এই কারণেই বিপি হাই হয়ে যায়। এই বয়সে বিপি হাই থাকায় প্রায় সব ডক্টররাই অবাক হয়ে গেছে। মেডিসিন দিলেও তারা একটা কথাই বলেছেন, রুশাকে সব সময় হাসি-খুশি থাকতে হবে। বেশি টেনশন করা যাবে না। বিপি হাই হতে দেওয়া যাবে না। নিয়মিত খাবার খেতে হবে। আর কিছুদিন রেস্টে থাকতে হবে।
আশরাফ অফিস থেকে এসেই মেয়ের মাথার পাশে বসে থাকেন। বাকি সময়টা নাসরিন আর রাইসুল দেখে রাখে রুশাকে। মাঝে একদিন রিমি এসে দেখে গেছে। গতকাল থেকে রুশা ঘুমাচ্ছে প্রচুর। তাকে জোর করে ঘুম থেকে তোলা হয় শুধু কয়টা ভাত আর মেডিসিন খাওয়ানোর জন্য। বেঘোরে ঘুমানোর পর রুশা আজ বিকেলে থেকেই সজাগ। তার বিছানার পাশে ফল, জুস সব কিছু দিয়ে ভরপুর করে রাখা হয়েছে।
খাবারে রুশার অরুচি। তবুও বাধ্য হয়েই তাকে খেতে হয়। এই তিন দিন মোবাইলের সাথে তার যোগাযোগ নেই বললেই চলে। রুশা ভাবে, আচ্ছা মোবাইলটা কোথায়? তার যতটুকু মনে পড়ে ফায়াজের কাছ থেকে আসার পর বুকে ব্যথা হচ্ছিলো তার। কোনো দিক না পেয়ে সে তার খালামনির ঘরে চলে যায়। আর সেখানে যাওয়ার পর মাথাটা এমনভাবে ঘুরে যায় যে সামনে অন্ধকার নেমে আসে। এরপর আর কিছুই মনে নেই তার। ততক্ষণ পর্যন্ত তার হাতেই ছিলো মোবাইলটা। এখন কোথায়?
“আম্মু, এই আম্মু?”
মেয়ের ডাকে নাসরিন দ্রুত মেয়ের ঘরে আসে।
“হ্যাঁ বল।”
“আম্মু, আমার ফোনটা কোথায়?”
“লাগবে?”
“হ্যাঁ। একটু দাও তো।”
নাসরিন মেয়ের হাতে ফোন দিয়ে গ্লাসে জুস ঢেলে মেয়েকে খাইয়ে দেন।
“আমার ওজন এই তিন দিনে প্রায় পনেরো কেজি বেড়ে গেছে আম্মু।”
“হ্যাঁ, আপনাকে তো বলেছে। খা এটা।”
রুশা চুপচাপ জুসটা খেয়ে নেয়। নাসরিন রান্নাঘরে চলে গেলে রুশা মোবাইলটা ওপেন করে। ওয়াইফাই কানেকশন দিতেই মেসেঞ্জারে টুং-টাং শব্দ শুরু হয়। মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখে ফুয়াদ প্রায় ২৫+ মেসেজ দিয়েছে। রিমির মেসেজও আছে কিছু। ডিপার্টমেন্টের গ্রুপে মেসেজ। এক এক করে রুশা সব কিছু চেক করে।
মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় একটা আন-নোন নাম্বার থেকে ফোন আসে। মনে হচ্ছিলো কেউ একজন তার ফোন ওপেন হবার অপেক্ষায় ছিলো। রুশা ফোন রিসিভ করে কানে নেয়।
“হ্যালো, কে বলছেন?”
ফোনের ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই রুশা আবারও বলে,
“কে বলছেন?”
এবার ওপাশ থেকে গলা খাকাড়ি দেওয়ার শব্দ তার কানে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তার বুকটা ধক করে ওঠে। কন্ঠস্বরটা হুবুহু ফায়াজের মতো। ফায়াজ নয়তো? নিম্ন কন্ঠে আবারও বলে ওঠে,
“হ্যালো, কে বলছেন?”
অপেক্ষায় আছে উত্তরের। তার সেই অপেক্ষাকে অবসর দিয়ে জবাব আসে,
“কেমন আছো রুশা?”
এবার সন্দেহ নেই। এ যে ফায়াজ। কিন্তু সে তার নাম্বার পেয়েছে কোথায়? কে দিতে পারে তাকে নাম্বার? ফোন কেটে দেওয়ার জন্য ফোন কান থেকে নামাতে যাবে এমন সময় ফায়াজ বলে,
“রুশা স্টপ। লাইন কাটবে না একদম।”
আশ্চর্য! সে বুঝলো কী করে যে লাইন কাটবে এখন। ফোন কানেই আছে তার। ফায়াজ বলার পর আর ফোনটা নামায়নি সে। ফায়াজ বললো,
“রুশা, কেমন আছো?”
“ভালো আছি।”
ফায়াজ কথা খুঁজে পাচ্ছে না। খুব কায়দা করে সে রুশার নাম্বার জোগাড় করেছে কথা বলবে বলে। কিন্তু এখন কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
এরই মধ্যে রুশা বলে,
“রাখছি।”
“রুশা, শোন।”
রুশা আবারও ভড়কে যায়।
“জি বলেন।”
“দেখা করবে একবার?”
“কোন প্রয়োজনে?”
“সব কিছু কি প্রয়োজন বুঝে হয়?”
“অবশ্যই প্রয়োজন বুঝে হয়। আপনি আমার স্যার ছিলেন। এখন আবার ভার্সিটির লেকচারার। এখনো আপনি আমার স্যার। আমার জানা মতে, একজন স্যারের সঙ্গে তার ছাত্রীর যোগাযোগ একমাত্র প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ। এটা আপনিই শিখিয়ে দিয়েছিলেন। মনে আছে তো?”
প্রতিটা কথা তীরের মতো বিঁধছে ফায়াজের শরীরে। যেন রুশা তীর ছুড়ে মারছে তাকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফায়াজ আবার বলে,
“দেখা করবে কি-না?”
“আমি অসুস্থ। আজ তিন দিন বিছানা থেকে একমাত্র ওয়াসরুমে যাওয়া ছাড়া নিজেদের ড্রইংরুমটাও দেখিনি। আর আপনি বলছেন দেখা করার কথা।”
“আচ্ছা, দেখা করতে হবে না। ভালো থাকো।”
ফায়াজ নিজেই ফোন রেখে দেয়। রুশার জবাবের অপেক্ষা না করেই কিংবা রুশাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন রেখে দেয়। কথা হচ্ছে, দেখা করতে না চাওয়াটায় কি তার ইগোতে লেগেছে নাকি সে কষ্ট পেয়েছে? যদি ইগোতে লেগে যায় সেটা ভিন্ন যদি কষ্ট পায় সেটা? হু হু করছে বুকের ভেতরটা? সে কি কিছু বলতে চায়? দেখা করাটা কি উচিত? সাথে সাথে কল ব্যাক করে রুশা।
দুইবার ফোন বেজে যায় কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেনি। রুশা তৃতীয় বার ফোন করবে না করবে না করেও করে। এবার ফোন রিসিভ হয়।
“হ্যাঁ রুশা বলো।”
“ফোন রিসিভ করলেন না যে।”
“আমি স্টাডিরুমে গিয়েছিলাম একটু। এসে দেখি দুইটা মিসড কল উঠে আছে। কল ব্যাক করতে তোমার নাম্বারে গিয়েছি এর মাঝেই আবার ফোন করলে।”
“ওহ।”
“কিছু বলবে?”
“তখন এইভাবে ফোন রেখে দিলেন।”
“তুমি দেখা করবে না। জোর করি কীভাবে? তাই রেখে দিলাম।”
কন্ঠস্বরটা ভার ভার লাগছে। সে ঠিক ধরেছে, তার স্যার কষ্ট পেয়েছে।
“আপনি আজ ভার্সিটি যান নি।”
“আজ তেমন ক্লাস নেই। তাই যাইনি।”
“ওহ।”
“আর কিছু বলবে?”
কী উত্তর দেবে ভাবছে রুশা। এদিকে রুশার নিস্তব্ধতা ফায়াজকে পোড়াচ্ছে।
“রুশা, তুমি কি কিছু বলবে?”
ফায়াজের প্রশ্নের জবাবে রুশা বলে,
“কোথায় দেখা করতে চান?”
কথাটা শুনে ফায়াজের কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠে। মনে হচ্ছিলো হার্ট-বিট বেড়ে যাচ্ছে তার। রুশা কি তবে দেখা করার জন্য রাজি হয়েছে? আর এটা বলার জন্যই কি তবে ফোন করেছে? সাথে সাথে জবাব দেয়,
“রুশা, দেখা করতে চাইছো?”
“কোথায় আসতে হবে?”
“কোথাও আসতে হবে না। তুমি বিকেলে রেডি থেকো। আমিই আসবো তোমার বাসার সামনে।”
“আপনি আসবেন?”
“হ্যাঁ। আমিই আসবো।”
“আচ্ছা।”
“সাড়ে চারটা কিংবা পাঁচটা নাগাদ আমি আসবো।”
“আচ্ছা।”
ফায়াজ ফোন রেখে দেয়। সে নিজে আসবে তাকে নিতে। এটা ভাবতে পারছে না রুশা। বেশ অবাক লাগছে বিষয়টা। ফায়াজের কষ্টটা সে সহজেই ধরতে পেরেছে। এখন মা’কে ম্যানেজ করতে হবে। নয়তো কী করে যাবে সে? মা যেহেতু সবই জানে। এখন মা’কেই বলা উচিত। কিন্তু তার চিন্তা, মা কি তাকে যেতে দেবে বাহিরে? কেন জানি মনে হচ্ছে তার শরীরে এখন আর কোনো অসুখ নেই। মুহুর্তেই শরীরটা পাতলা লাগছে তার কাছে।
বিকেল চারটা বেজে বিশ মিনিট। রুশা নিজের চুল নিয়ে বিপদে পড়েছে। এই তিনদিনে চুলগুলো কেমন তেল চিটচিটে হয়েছিলো। দুপুরে মা’কে বলে শ্যাম্পু করিয়েছে। এখন কীভাবে বাঁধবে সেটাই ভাবছে রুশা। নাসরিন পাশে বসে আছে।
“আম্মু, চুলগুলো?”
“ছেড়ে রাখ। তোকে ছাড়া চুলে ভালো লাগে।”
“আচ্ছা।”
নাসরিন প্রথমে না করেছিলেন। কয়েক দফায় না করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে চিন্তা করলেন একটু নরম হয়ে দেখাই যাক না মেয়েটা তার ভালো থাকে কি-না। কারণ, আর কেউ না জানুক তিনি অন্তত জানেন তার মেয়ের মনে শুধুমাত্র একজনেরই বসবাস। কিন্তু মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওই ছেলেটার ওপর। আগেই সে তার মেয়েটাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। এতটাই দুঃখ দিয়েছে যে তিনি নিজে মা হয়ে নিজের মেয়ের আচরণগুলোর সাথে অপরিচিত হয়ে গেছেন। এখন আবার কেন দেখা করতে চায়? যত্তসব আদিক্ষ্যাতা দেখায়। মেয়েটাও হয়েছে গাধা। যে এত দুঃখ গুলো তার ডাকেই সাড়া দিচ্ছে। ওই ছেলের জায়গায় যদি আশরাফ হতো, তাহলে আশরাফের কপালে খারাপি ছিলো বহুত।
“আম্মু, কী ভাবছো?”
মেয়ের ডাকে ধ্যান ভাঙে নাসরিনের।
“ভাবছি, ফায়াজের জায়গায় তোর বাবা হলে আর আমি তোর জায়গায় হলে তোর বাবার কপালে খারাপি ছিলো। আমি জীবনেও তোর মতো দেখা করতে যেতাম না।”
হালকা হাসে রুশা।
“কেন যেতে না? আমার আব্বু তো প্রচুর হ্যান্ডসাম। তুমিও না করতে পারতে না।”
“একটা কাজ করবি?”
“কী?”
“ইচ্ছামতো খেয়ে আসবি। মিনিমাম বিল করবি ২০০০/৩০০০ টাকা। এরপর একশো কথা শুনাবি।”
রুশা যেন আকাশ থেকে পড়ে। তার মা তাকে এসব কী শিখিয়ে দিচ্ছে?
“আম্মু! তুমি এইসব কী বললে?”
“ঠিকই তো বললাম।”
“আমায় দেখে মনে হয় আমি ৩০০০ টাকার খাবার খেতে পারবো? আর কথা যা শোনানোর তা তো শুনিয়েই দিলাম সেদিন।”
“তুই না খেলে আমার আর রাইসুলের জন্য নিয়ে আসিস।”
“আম্মু!”
নাসরিন হেসে দেয়। মায়ের মুখে হাসি দেখে রুশাও হাসে তবে আগের মতো সেই প্রাণখোলা হাসি আর আসে না তার। নাসরিন মনে মনে বলে, হাস না রে মা। আগের মতো প্রাণ খুলে হাস। তোর হাসিটা দেখার জন্য কলিজা আমার শুকিয়ে গেছে। একটু হাস না মা।
রাইসুল এসে বোনকে রেডি হতে দেখে বলে,
“এই তুমি যাচ্ছো কোথায়? আম্মু, আপু কোথায় যাচ্ছে? আমি এক্ষুনি আব্বুকে ফোন করে বলে দিচ্ছি আপু বাহিরে যাচ্ছে আর তুমি কিছু বলছো না আপুকে।”
নাসরিন ঠোঁট কামড়ে হুড়োহুড়ি করে ছেলের হাত শক্ত করে ধরে।
“এই আব্বুর চামচা, সবই কি আব্বুকে বলতে হয়? ফাযিল ছেলে। তোকে খাওয়াই আমি, পড়াই আমি। আর তুই আব্বু আব্বু করিস কেন রে?”
“তুমি খাওয়াও ঠিকাছে, পড়াও ঠিকাছে কিন্তু টাকা তো দেয় আব্বু।”
নাসরিন ভাবে এইটুকুন ছেলে এত পাকনা কথা বলে কীভাবে? রুশা রাইসুলকে বলে,
“আসার সময় তোর জন্য বার্গার নিয়ে আসবো তা-ও আবার চিকেনওয়ালা বার্গার। কিন্তু শর্ত একটাই আব্বুকে কিছু বলতে পারবি না।”
“ঘুষ দিচ্ছো নাকি। আমি সচেতন নাগরিক। দুর্নীতি করি না।”
নাসরিন বলে,
“আসছে আমার সচেতন নাগরিক। তুই যে আমার পার্স থেকে দশ/বিশ টাকা লুকিয়ে নেস। সেটা দুর্নীতি না?”
রাইসুল ধরা পড়ে গিয়ে চুপ হয়ে গেছে। এখন আর উপায় নেই। এরা যা বলে তা-ই করতে হবে।
“ওকে ওকে। বলবো না যাও। তবে সাথে একটা কোকা কোলা আনবা। নয়তো খবর আছে।”
রুশাও সহমত পোষণ করে।
রিকশায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে রুশা। ফায়াজ তার পাশেই বসা। হাতের উপরের অংশটা ফায়াজের বাহুর সঙ্গে মিশছে বার বার। জড়তা হচ্ছে। একই রিকশায় পাশাপাশি তারা দু’জন। ফায়াজ রুশার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। মেয়েটার মুখটা মলিন হয়ে আছে। হাসিটা যেন কতদূরে হারিয়ে গেছে। খুঁজে আনতে অনেক সময় লাগবে। কিছুই বলতে পারছে না মেয়েটা। তার উপর অসুস্থতা। আরও কাবু করে ফেলেছে মেয়েটাকে।
সংকোচ হচ্ছে ফায়াজের রুশার সাথে কথা বলতে। তবুও কথা বলতে ইচ্ছে করছে। খুব ইচ্ছে করছে। হাতটা ছুঁয়ে দেখতে পারলে ভালো হতো। ছোঁবে নাকি একবার?
“রুশা, কোথায় যেতে মন চাইছে?”
নীরবতা ভেঙে রুশা জবাব দেয়,
“পোস্তগোলা ব্রিজের ওপর।”
“সেখানে যেতে চাও?”
“হ্যাঁ।”
ফায়াজ রিকশাওয়ালা মামাকে বলে,
“মামা পোস্তগোলা ব্রিজে নিয়ে চলেন।”
রিকশাওয়ালা মামা বেশ রসিক মানুষ। একবার পেছনে তাকিয়ে ফায়াজের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে চোখের ইশারায় হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়েন তিনি। পানের পিক ফেলতে ফেলতে বলেন,
“আন্নেগো দুইজনরে ভালোই লাগতাছে। তয় আম্মাজানে কি রাগ করছেনি?”
ফায়াজ মুচকি হেসে রুশার দিকে তাকায়। আর রুশা তাকায় ফায়াজের দিকে। ফায়াজ হাসি থামিয়ে বলে,
“আপনার আম্মাজান আমার সাথে রেগে আছেন মামা।”
রিকশাওয়ালা মামা বললেন,
“কিলিগা গো আম্মাজান রাইগা আছেন? রাইগেন না আম্মাজান। জামাইর লগে রাইগা থাওন ভালা দেহায় না। কত্ত সোন্দর রাজপুত্রের লাহান চেহারা আপনের জামাইর।”
এবার দু’জনেই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে রিকশাচালকের দিকে। কী বললেন তিনি? এখনো কিছুই হলো না, আর তিনি একেবারে তাদের দু’জনকে স্বামী-স্ত্রী বানিয়ে দিলেন। ফায়াজ বলে,
“মামা একটু তাড়াতাড়ি চালান।”
“আইচ্ছা বাজান, আইচ্ছা।”
রিকশাওয়ালা আপন মনে রিকশা চালাচ্ছে। ফায়াজ রুশার উদ্দেশ্যে বলে,
“হঠাৎ ব্রিজে যেতে চাচ্ছো? আমি চাচ্ছিলাম কাছে-পিঠে কোথাও একটা জায়গায় বসতে। তোমার শরীরের অবস্থাটাও তো তেমন ভালো না।”
“নাহ। আজ ব্রিজেই যাই।”
“খোলামেলা আকাশ দেখবে?”
“হ্যাঁ। আর সেই আকাশে কিছু দুঃখ নিলাম করবো। যেখানে দুঃখগুলোকে সুখ বলে মনে হবে। কান্নাগুলোকে হাসি বলে মনে হবে। যেখানে আমার আমিটাকে একটা অবয়ব বলে মনে হবে।”
মন্ত্রমুগ্ধের মতো রুশার কথাগুলো শুনছে ফায়াজ। যেন মনে হচ্ছে, তার কানের কাছে কেউ গুন গুন করে গান গাইছে। মেয়েটার কন্ঠস্বরে একটু পরিবর্তন এসেছে।
“তোমার কথাগুলো আজকাল ভালো লাগে রুশা। আর কি নিলাম করতে চাও?”
“কিছু জমাট বাঁধা কষ্ট আছে, সেইগুলোও ফুরুৎ করে উড়িয়ে দেবো।”
ফায়াজ মুচকি হেসে রুশার কথা বলার ঢং দেখছে। মলিন চাহনির এই ঢংটা সোজা গিয়ে ফায়াজের বুকে লাগছে।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়……………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে