#স্যার
#পর্ব_১৫
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার
ফায়াজ ক্লাসে এলে রুশার মাথা নিচু হয়েই থাকে। আজও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। ফায়াজ ক্লাসে এসেছে প্রায় ২৫ মিনিট পার হয়ে গেছে। এই ২৫ মিনিটে একবারও রুশার মাথা উঁচু হয়নি। ফায়াজের খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো। সে চেয়েছিলো রুশা একবার অন্তত তার দিকে তাকাক। কিন্তু নাহ, রুশা তাকে দেখছে না। ফায়াজ সাথে সাথে বুদ্ধি করে এক চ্যাপ্টারের দশটা সূত্র সবাইকে দেখতে বলে। তার উদ্দেশ্য ছিলো সে রুশাকেও জিজ্ঞাসা করবে। তখন রুশা না তাকিয়ে থাকতে পারবে না।
৫ মিনিট পর ফায়াজ পড়া জিজ্ঞেস করা শুরু করে। ৬ জনকে জিজ্ঞেস করার পরেই সে রুশা বলে ডেকে ওঠে। ফায়াজের কন্ঠে নিজের নামটা শুনেই বুকটা ধক করে ওঠে রুশার। এদিকে ক্লাসের অনেকেই এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। কে রুশা? কারণ, অনেকেই জানে রুশাকে রুশা নামে চিনে না। শুধু রিমি আর ফুয়াদ ছাড়া বাকি কয়েকজন তাকে তনিমা আফরোজ নামেই জানে।
রুশা সংকোচ নিয়েই দাঁড়ায়। রুশা দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর হালকা গুন গুন হয় চারপাশে। গুন গুন করে একে অপরকে প্রশ্ন করছে স্যার কীভাবে তনিমা আফরোজের শর্ট নেইম জানে? তারা কি পূর্ব পরিচিত নাকি? বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত স্মার্ট। শুধু স্মার্ট না এরা ওভার স্মার্ট। কিছু একটা আন্দাজ করতে পারলে এর শেষ অবধি দৌড়ায়।
ফায়াজ নির্দ্বিধায় রুশার দিকে তাকিয়ে আছে। রুশার মাথা তখনও নিচু। ফুয়াদ পেছন থেকে রুশাকে দেখছে।। ভাবছে রুশা মাথা নিচু করে আছে কেন? ফায়াজ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে প্রশ্ন করে,
“এনিথিং রং রুশা?”
স্যারের এনিথিং রং কথাটা শুনে রুশা সেই পুরনো দিনে ফিরে যায়। একবার স্যার তার পাশে বসে এই প্রশ্নটাই করেছিলেন তাকে। উত্তরে সে বলেছিলো, নাথিং। আজও অন্যরকম কিছু হয়নি। জবাবে বলে,
“নাথিং।”
“বেঞ্চে কি কিছু আছে?”
“নাহ স্যার।”
“ওকে, লুক এট মি।”
রুশা ফায়াজের চালাকি ধরে ফেলে। সে বুঝে গেছে এইসব পড়া জিজ্ঞেস করা শুধুই ছক মাত্র। স্যার গেইম খেলেছে। রুশা এবারও তাকায়নি। ফায়াজ আবারও বলে,
“রুশা, লুক এট মি।”
রুশা আর না তাকিয়ে থাকতে পারেনি। ফায়াজ ক্লাসের মধ্যে এমন করবে সে ভাবেনি। ফায়াজ রুশাকে পড়া জিজ্ঞেস করছে। রুশা জবাব দিচ্ছে। নিজেকে যতটা পারছে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভেতরে উথাল-পাতাল ঢেউ দুলছে। রুশা এবং বাকি সবার মনে হচ্ছে স্যার তাকেই বেশি প্রশ্ন করছে।
ক্লাস শেষে রুশা বের হলেই ফুয়াদ তাকে আটকায়।
“রুশা, বাসায় চলে যাবে?”
“হ্যাঁ। থেকে কী করবো?”
“চলো, কোথাও বসি।”
“নাহ ফুয়াদ। বাসায় যেতে হবে। অন্য আরেকদিন বসবো।”
“তোমার কি মন খারাপ?”
“নাহ, আমি ঠিক আছি।”
রুশার আসলেই ভালো লাগছে না কিছু। সে বাসায় যেতে চাচ্ছে। তাই দ্রুত গতিতে পা ফেলছে। ফুয়াদ আবারও প্রশ্ন করে,
“ফায়াজ স্যার কি তোমার পূর্ব পরিচিত?”
প্রশ্নটা শুনে পা জোড়া থেমে যায় রুশার। যা সন্দেহ করেছিলো, তাই-ই হলো। ফায়াজ সবার মনে সন্দেহের বীজ বপন করে দিয়েছে।
ফুয়াদ আবার জিজ্ঞেস করে,
“কী হলো, বললে না যে?”
“কী বলবো?”
“ফায়াজ স্যার কি তোমার পূর্ব পরিচিত?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“ক্লাসে তোমার শর্ট নাম ধরে ডাকলেন। আসলে সবাই তো তোমার নাম তনিমা আফরোজ জানে।”
“সবাই জানে। তুমি তো রুশা জানো।”
“তুমি বলেছো বিধায় জানি।”
“তাহলে ভাবতে কেন পারছো না। হয়তো আমার নামের শর্ট ফ্রমটা উনার কানে গিয়েছে। তাই ডেকেছেন। নাম ধরে ডাকা আহামরি কিছু না। তাই না? এ নিয়ে এত কানা-কানি, মাতা-মাতির কিছু আছে বলেও আমার মনে হচ্ছে না।”
“তুমি রেগে যাচ্ছো কেন?”
“রাগার মতো কথা বললে। তাই রাগলাম।”
“আচ্ছা স্যরি।”
“আসছি আমি।”
ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছে রুশা। মনে মনে বলছে, কাজটা তিনি একদম ঠিক করেননি। আদিক্ষেতা করে রুশা না বললেও পারতেন। অহেতুক সবার মনে সন্দেহ তৈরি করে দিলেন। চাইছেন কী উনি এখন? সমস্যা কী উনার এখন? বিরক্ত করার মানুষ তো উনি নন। তবে এমন কেন করছেন?
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………
#স্যার
#পর্ব_১৬
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার
রুশার অস্বস্তি হচ্ছে। এতক্ষণ এক টানা এক জায়গায় থাকতে তার ভালো লাগে না। নেহাৎ মা জোর করলেন। সেইজন্যই আসা। সং সেজে বসে থাকতে অসহ্য লাগে তার কাছে।
নাসরিন তার দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ি বিকেলে বেড়াতে এসেছেন। এখানে একটা জন্মদিনের অনুষ্ঠান আছে। রুশাকে কয়েকবার আসতে বলা হয়েছিলো কিন্তু সে রাজি হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে মায়ের গোমড়া মুখ দেখে রাজি হতে বাধ্য হয়। কালো রঙের শাড়িটায় রুশাকে বেশ মানিয়েছে। শাড়ি পরতে চায়নি সে। তবুও মায়ের জন্য পরতে হলো। মা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে তাকে। তাই আর না করেনি।
এইসব অনুষ্ঠানে সাধারণত একটা গ্যাং থাকে। যার নাম আন্টি গ্যাং। যারা অন্যদের নিয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত থাকে। রুশার কাছে এইসব বিরক্ত লাগে। কার মেয়ের বিয়ে হয়েছে, কার মেয়ে পালিয়ে গেছে, কার মেয়ের জামাই কেমন, কার মেয়ে অনেক রাজার হাওলাতে আছে এইসবই তাদের মূল আলোচ্য বিষয়।
রুশা মা-ও তাদের সাথেই বসে আছেন। রুশা আরেক পাশের সোফায় বসা। একজন ভদ্রমহিলা নাসরিনকে বললেন,
“আপা, মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে। বিয়ে দিবেন না?”
নাসরিন জবাব দেয়,
“ভাবী, আপনাদের চোখে বড় হয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে এখনো ছোট। সবে অনার্স ফার্স্ট ইয়ার।”
“কী যে বলেন না ভাবী, মেয়েদের এস এস সি শেষ হলেই বিয়ে দেওয়া ভালো।”
“কেন, ভালো কেন?”
“তাড়াতাড়ি সংসার বোঝে। বাচ্চা কাচ্চাও তাড়াতাড়ি হয়।”
“ভাবী, আমার বিয়ে হয়েছে মাস্টার্স শেষ করার পরে। এরপর বিয়ে। বিয়ের অনেক বছর পর রুশা হয়। এখন আপনার কথা ধরলে তো বলতে হয়, আমি এখনো সংসার বুঝি নাই।”
ভদ্রমহিলা তীর ঠিকঠাক লাগাতে পারছেন না। তাই তিনি চুপচাপ হয়ে যান৷ নাসরিন আরেকজনকে বলেন,
“আমার মেয়ে তো বলেই দিয়েছে, সে বিয়ে পরে করবে। আমার আর তার বাবারও একই সিদ্ধান্ত। আগে মেয়ের পড়ালেখা শেষ হবে। এরপর চাকরি করবে। তারপরই বিয়ে।”
“এটাই ভালো ভাবী।” অন্য একজন ভদ্রমহিলা জবাব দেন৷
রুশা ওই মহিলার মুখ দেখছে। ঠোঁট বাকিয়ে মুচকি হাসে সে। মহিলা বেশ ভালো অপদস্ত হয়েছে। যা অন্য সবাই এবং তিনি নিজেও বুঝতে পেরেছেন।
বাসায় ধীরে ধীরে অনেক মানুষের আগমন ঘটছে। যার বাসায় তারা এসেছে মানে তাহমিনা বেগমের বাসায়, তিনি এসে নাসরিনকে বললেন,
“নাসরিন, বোন বসে আছিস। সমস্যা হচ্ছে কোনো?”
“আরেহ না। ঠিকাছি আমরা।”
“আসলেই আমার ননস আসবেন। সাথে ননসের বড় জা আর তার ছেলেমেয়ে আসবে। আমি দাওয়াত করেছি তাদের। কখনো আসেনি আমার বাসায়। তারা আসলেই আমরা অনুষ্ঠান শুরু করবো।”
তাহমিনা বেগম খুব আনন্দিত। তার ছেলের ঘরের নাতির প্রথম জন্মদিন। তাই বেশ জাকিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে। নাতিকে কোলে নিয়ে ঘুরছেন। গুলুমুলু একটা বাবু। রুশার দিকে পিট পিট করে তাকিয়ে আছে। তাহমিনা বেগম রুশাকে দেখে হাসি মুখে বললেন,
“আমাদের রুশামনি দেখি বড় হয়ে গেছে। এবার বিয়ে শাদী দিয়ে দিবো।”
রুশা হালকা হাসি দেয়। তাহমিনা বেগম আবারও বললেন,
“এই রুশা, আমার নাতি তোর দিকে কীভাবে তাকিয়ে আছে দেখছিস। ফুপিকে ঠিক চিনতে পারছে।”
রুশা বলে,
“তোমার নাতি বড় হয়ে ফ্লার্টবাজ ছেলে হবে। তার চোখেই লেগে আছে, সে হাজার নারী নাচাবে।”
“যাহ। কী সব বলস। আমার নাতি লাখে একটা হবে।”
“লাখে না খালামনি, বলো কোটিতে একটা হবে।”
“যাহ ফাযিল।”
রুশা হাসি মুখে বাবুকে কোলে তুলে নেয়। সোফায় বসে বাবুকে আদর করছে। বাবুটাও চুপচাপ রুশার আদর খাচ্ছে।
এমন সময় তারা সবাই চলে এলেন। তাহমিনা বেগমের ননস এবং তার বড় জা একত্রে বসার ঘরে ঢুকলেন। সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ হয়। নাসরিনকে ওই মহিলা আগে থেকেই চিনেন। তাই খুব খাতির হয়ে যায়। তাদের সাথে একটা মেয়েও আছে। রুশার চেয়েও বড় মেয়েটা। আশেপাশে তাকিয়ে তাহমিনা বেগম বললেন,
“ছেলে কই? ও আসলো না?”
জবাবে ওই মেয়েটা বললো,
“ভাইয়ার নাকি ভালো লাগে না আন্টি। তাই আমাদের নামিয়ে দিয়ে গেল। সে আসবে না। তার না-কি খুব কাজ।”
“এটা কোনো কথা?”
খানিক বাদেই কেউ একজন দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই আওয়াজ দেয়,
“ফারহানা?”
সবার নজর দরজার দিকে যায়। সোফায় বসে থাকা মেয়েটা দৌড়ে দরজার কাছে যায়।
“কী ব্যাপার! তুমি না বললা আসবা না? এখন দেখি চলে আসলা।”
“চড় খাবি। মা পার্স ফেলে আসছে। সেটা দিতে আসছি।”
তাহমিনা বেগম হাসি মুখে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলেন,
“ফায়াজ, কত্তদিন পরে আসলা তুমি। ভেতরে আসো।”
“আন্টি আরেকদিন আসবো। আজ যাই।”
“খবরদার যেতে পারবা না। শাহীন শুনলে রাগ করবে। তুমি তার ছেলের জন্মদিনে এসেও চলে যাচ্ছো।”
“আন্টি, মা, কাকি, আর এই ফাযিলটা তো এসেছে। আপনি শাহীন ভাইকে বলবেন। আমি পরে একদিন আসবো।”
ফায়াজের মা উঠে এসে বলেন,
“এত করে বলছে যখন থেকে যা। অন্তত কেক কাটা পর্যন্ত ওয়েট কর। এরপর না হয় চলে যাস। আর তাছাড়া কালকে তো কলেজও নেই।”
ফায়াজের কাকি রোকসানা বেগমও বলেন,
“এই ফায়াজ, এখানে আয়। বোস এখানে। কেক কাটার পর চলে যাস।”
সবার কথা উপেক্ষা করতে পারেনি ফায়াজ। ভেতরে যেতে বাধ্য হয় সে। নাসরিন বেগম প্রথমে বুঝতে পারেননি। ফায়াজ নামটা চেনা চেনা লাগলেও প্রথমে গায়ে মাখেননি। কিন্তু যখনই ফায়াজ বসার ঘরে এসে সবাইকে সালাম দেয় তখনই নাসরিন শিওর হোন এই সেই ফায়াজ যাকে দুই বছর আগে নিজের মেয়ের পরিসংখ্যান টিচার হিসেবে রাখা হয়েছিলো। নাসরিনের হুট করে আগের সব কথা মনে পড়ে যায়।
একই ভাবে নাসরিনকে দেখে ফায়াজও ভড়কে যায়। কিন্তু মুখে কিছু বলেনি।
এদিকে মহিলা সবাইকে ভেতরে যাওয়ার কথা বললে সবাই ভেতরে চলে যায়। ফায়াজ আশেপাশে দেখছে। রুশার মা যখন এসেছে নিশ্চয়ই রুশাও এসেছে। কিন্তু কোথায় রুশা।
এরই মধ্যে তাহমিনা বেগমের ছেলে শাহীন এসে বসার ঘরে উপস্থিত হয়। ফায়াজকে দেখেই হ্যান্ডসেক করে। হাসি মুখে কথা শুরু করে। এক এক করে শাহীনের কিছু কলিগ আসা শুরু করে। শাহীন তাদের সময় দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে ফায়াজ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। কোথাও রুশাকে দেখা যায় কি-না।
নাসরিন তার মেয়েকে খুঁজছেন। মেয়েকে নিজের কাছে বসিয়ে রাখা প্রয়োজন। ও ঘরে যেতে দেওয়া যাবে না। মনে মনে সময়কে গালমন্দ করতে ব্যস্ত তিনি। আর সময় পেলো না ফায়াজ এখানে আসার। এমন হলে রুশাকে না আনা-ই উচিত ছিলো।
নাসরিন রুশাকে দেখতে না পেয়ে তাহমিনা বেগমকে বললেন,
“রুশা কোথায় আপা?”
“রুশা তো বউয়ের ঘরে। নাতিকে কোলে করে সেখানে বসে আছে। বউয়ের অন্য বোনরাও এসেছে।”
“ওহ।”
এত মানুষের মধ্যখান থেকে মেয়েকে ডেকে এনে পাশে বসিয়ে রাখাটাও অদ্ভুত দেখাবে। কী করবেন তিনি এখন? রুশা যদি ফায়াজকে দেখে ফেলে পুরো অনুষ্ঠানে তার মেয়ে বিমর্ষ মুখ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে যা তার সহ্য হবে না। নাসরিনকে একটু চিন্তিত দেখে তাহমিনা বেগমের ননস রোকসানা বেগম বললেন,
“নাসরিন আপা, আপনাকে এত চিন্তিত দেখা যাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে?”
নাসরিন কথা ঘোরাতে চেয়েও পারছেন না।
“আসলে আপা, মেয়েটাকে দেখছি না তো। তাই আর কি।”
“মেয়ে আছে তো ঘরেই। চিন্তা করবেন না।”
রোকসানা বেগম তার বড় জা মানে ফায়াজের মা’য়ের সাথে নাসরিনের পরিচয় করিয়ে দেন। নাসরিন এতক্ষণে বুঝে গেছে যে ইনি ফায়াজের মা। ইচ্ছা হচ্ছে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্ত্য সব ইচ্ছাকে সব সময় উষ্কানি দিতে নেই। নাসরিন চুপ করে আছেন। হাসতে না চেয়েও জোর করে হাসছেন। আর সবার সঙ্গে কথা বলছেন।
রুশার খালাতো ভাই শাহীন ভাইয়ার বউ অনেক মিশুক একজন মানুষ। শাহীন ভাইয়াও মানুষ ভালো। হাসি হাসি মুখ তাদের। সবার সাথেই হাসি মুখে কথা বলেন। ভালোবেসে বিয়ে করেছে তারা। তাদের বিয়েটাও অদ্ভুত ভাবেই হয়েছে। তখন রুশার এইচ এস সি এক্সাম। পরীক্ষা আর ব্যক্তিগত জীবনে নিয়ে রুশার তখন আশেপাশে তাকানোর সময় নেই। পরে মায়ের কাছ থেকে শুনেছে তাদের বিয়ে নাকি রাত একটায় হয়েছে। বিয়ে হবার পরেই নাকি তারা দু’জন পুরো দুই ঘন্টা মানে রাত তিন টা পর্যন্ত গাড়ি দিয়ে ঘুরেছে। কেউ মানা করেনি। এটা না-কি তাদের ইচ্ছা ছিলো। কিছু কিছু ভালোবাসার সম্পর্ক খুব অদ্ভুত হয়। সেখানে সব অদ্ভুত চিন্তাভাবনার উদয় ঘটে।
শাহীন ভাইয়ার বউ ওয়াজিফা রুশাকে বললো,
“রুশা, বাবুকে তোমার ভাইয়ার কাছে দিয়ে আসো না একটু। আমিই যেতাম, তবে দেখছোই তো একটু রেডি হচ্ছি।”
“ভাবী, বাবু আমার কোলেই থাক না। ভাইয়া তো বাহিরে।”
“নাহ, তোমার ভাইয়া বসার ঘরে। তার কলিগরা এসেছে। তারা বাবুকে দেখতে চাইছে। মা হয়তো অন্য ঘরে ব্যস্ত। যাও না ভাই, একটু দিয়ে আসো।”
“আচ্ছা ভাবী।”
বাবুকে তুলতুক করতে করতে রুশা হাঁটা শুরু করে ড্রইংরুমের দিকে। যেতে যেতে রুশা বাবুর সাথে কথা বলে,
“এই ছেলে, বড় হয়ে একদম মেয়ে নাচাবি না। যে ভালোবাসতে চাইবে তাকেই ভালোবাসবি।
বুঝলি গুপলু সোনা।”
বাবুটা রুশার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। সে বুঝে না রুশা তাকে কী পরামর্শ দিচ্ছে।
বসার ঘরে এদিক সেদিক না তাকিয়ে রুশা য়ার শাহীন ভাইয়াকে বলে,
“ভাইয়া, তোমার ছেলেকে নাও।”
রুশার কন্ঠস্বর অতি সূক্ষ্মভাবে ফায়াজের কানে গিয়ে লাগে। ফায়াজ সঙ্গে সঙ্গে এদিক ঘুরে দাঁড়ায়৷ ফায়াজকে এই মুহুর্তে এইখানে নিজের সামনে দেখে রুশা যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। তার ভাবনাতেও ছিলো না যে ফায়াজকে এখানে সে দেখবে।
শাহীন ভাইয়া রুশাকে বললেন,
“রুশা এখানে আসো। তোমার সাথে আমার কলিগদের পরিচয় করিয়ে দেই।”
রুশার মনে হচ্ছিলো সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে এক্ষুনি। বুকে ব্যথা করছে তার। চিন চিন ব্যথা, যা সরাসরি কলিজায় গিয়ে আঘাত করছে।
“ভাইয়া, আমি ভেতরে যাচ্ছি।”
এই বলে রুশা দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে যায়।
ওদিকে রুশাকে আরও একবার শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে ফায়াজ যেন নজর সরাতে পারেনি। রুশা যতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো ফায়াজের নজর ততক্ষণই রুশাকে দেখছিলো। শেষে রুশাকে অসুস্থ বলে মনে হয় তার। সে বোঝে, রুশার এই সমস্যার কারণ সে নিজেই। কবে সে রুশার এই অসুস্থতা কাটাতে পারবে? কবে সে রুশার এই মলিন মুখে আগের সেই মিষ্টি হাসি ফোটাতে পারবে? খুব বেশি দেরি যেন না হয়ে যায়।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়……………..