#স্যার
#পর্ব_১০
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে যাবে এমন সময় হাতে থাকা পরিসংখ্যান বইটা পড়ে যায়। হয়তো তাড়াহুড়োতেই এমন হয়েছে। ক্লাস থেকে কোনো রকম বের হয়ে দ্রুত পায়ে নেমে যাওয়ার সময় এমন অঘটন ঘটলো। ক্লাসে ফায়াজ তাকে দেখেছে। বাম পাশের চার বেঞ্চ পর যখন ফায়াজ নাম জিজ্ঞেস করলো, দু’জনের পর রুশা দাঁড়ায়। কে জানে ফায়াজের মনে তখন রুশাকে দেখে ধাক্কা লেগেছিলো কি-না? যেমনটা রুশার লেগেছিলো ফায়াজকে দেখে।
রুশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফায়াজের চেহারায় পরিবর্তন আসেনি। এটা লক্ষ করেছে রুশা। তবে অস্বস্তি হচ্ছিলো তার। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো ফায়াজের সামনে থাকতে। ভেতরটা লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলো। তবে অবাক করার মতো একটা কান্ড ঘটেছে। আর সেটা ছিলো, ফায়াজ তার নাম জিজ্ঞেস করেনি৷ নাম না জিজ্ঞেস করেই বলেছিলো, জিপিএ ফোর পয়েন্ট এইট জিরো? উত্তরে রুশা জ্বি ছাড়া আর কিছুই বলেনি। ফায়াজ নেক্সট উচ্চারণ করলে রুশা বসে যায়। মনের মধ্যে তুফান উঠেছে, স্যার তার পয়েন্ট জানে কীভাবে? কে বলেছে? নাকি স্যার তার খোঁজ রেখেছে? এত কিছুর পর নিশ্চয়ই খোঁজ রাখবেন না আর। তবে কে বলতে পারে? মিম আপু নয়তো? বলতেই পারে, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তার সাথে তো আবার স্যারের গলায় গলায় ভাব ছিলো। এখনো আছে কি-না, কে জানে?
বইটা তড়িঘড়ি করে তুলে সামনে পা বাড়াতেই ফায়াজকে দেখতে পায় রুশা। আবারও সব কিছু এলোমেলো হচ্ছে তার। নাহ, সব কিছু এলোমেলো হতে দেওয়া যাবে না। সে ভালোবাসে। হ্যাঁ, সে ভালোবাসে। তার ভালোবাসা বড্ড যত্ন করে বানানো। বহুত কষ্টে আগলে রাখা ভালোবাসা তার। না হোক মানুষটা তার। তাকে নিজেকে বশে রাখতে হবে। নয়তো আবারও এলোমেলো হয়ে যাবে সব কিছু। মানুষটা খুব ব্যক্তিগত।। হ্যাঁ, এই মানুষটা তার খুব ব্যক্তিগত। এই ব্যক্তিগত মানুষটাকে সে তার হৃদ মাঝারে রেখে দিয়েছে। কোনো এক লুকানো জায়গায়। অতি যত্নে। পরম আদরে।
এমন ভাবে পা বাড়াচ্ছিলো যেন মনে হচ্ছে সে চোর। কিছু চুরি করে ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ফায়াজ তখনই আরেকজন স্যারের সাথে কথা সেরে একা হয়েছে। রুশা পাশ কাটিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হোঁচট খায়। ভাগ্যিস সামনে দেওয়াল থাকায় দু’হাত দিয়ে দেওয়াল আঁকড়ে ধরে। ফায়াজের সামনেই ঘটনাটা ঘটেছে। কী বলবে, বুঝতে পারছে না সে। তবে ভাবছে, এত সুন্দর ফ্রেশ জায়গায় রুশা হোঁচট খেল কী করে? মেয়েটা কি তবে আজও আগের মতোই আছে? সেই চঞ্চল, সেই দুষ্টু বুদ্ধিওয়ালি। তবে দেখে তো এমন মনে হচ্ছে না। কেমন যেন চুপসে যাওয়া এক জীবন্ত প্রাণীর মতো লাগছে তাকে। উপরটা ঠিকঠাক তবে ভেতরটা মরা।
ফায়াজের খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে রুশা ব্যথা পেয়েছে কি-না? অন্য কিছু না হোক, অন্তত মানুষ হিসেবে মানবিকতার দিক থেকে প্রশ্ন করা যেতেই পারে।
“ব্যথা পেয়েছো?”
বুকে ঝড় উঠেছে। প্রশ্নের উত্তর নেই। যেই ব্যথা অতীত তাকে দিয়েছে সেই ব্যথার কাছে এই ব্যথা কিছুই না।
“আমি ঠিকাছি।” বলেই রুশা সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায়।
রাস্তার পাশে ফুটপাতের ওপর দিয়ে হাঁটছে রুশা। কেন এই ভার্সিটিতে এডমিশন নিলো সে? কেন আবারও দেখা হলো তাদের? কেন আবারও স্মৃতি গুলো মনে পড়ছে? ভালোবাসা এমন অদ্ভুত কেন হয়? এ এমন একটা অনুভূতি যা এক দিনেই আঁকড়ে ধরে। আবার এ এমন একটা অনুভূতি যা শত কিংবা সহস্র বছরেও আঁকড়ে ধরতে পারে না।
সে কি এখনো সিঙ্গেল? বিয়ে করেছে? বাচ্চা আছে? মন বলছে, কী সব স্টুপিড চিন্তাভাবনা করছিস রুশা? দুই বছরে কেউ বাচ্চার বাপ হয়? যদি হয়, হয়তো বিয়ে হয়েছে। অন্যদিকে মস্তিষ্ক বলছে, ইচ্ছা থাকলে এক সপ্তাহে বাচ্চার প্ল্যান করা যায় আর এখানে তো দুই বছর। এক বছরে বারো মাস তাহলে দুই বছরে বারো যোগ বারো সমান সমান চব্বিস মাস। বাচ্চা হতে সর্বোচ্চ নয় মাস। বেশ অনেক সময়। বাচ্চার বাপ হতে নিশ্চয়ই নয় মাসের অধিক সময় লাগে না?
কখন যে ফুটপাত থেকে নিচে নেমে রাস্তায় চলে এসেছে খেয়াল নেই রুশার। উল্টো সাইড থেকে অটোরিকশা হর্ণ দিতে দিতেও রুশা সরার সুযোগ পায়নি। সাথে সাথে পায়ের পাতার ওপর চালিয়ে দেয় রিকশা। রুশা সাথে সাথে রাস্তায় বসে পড়ে।
“মা গো।” বলে চেঁচিয়ে ওঠে।
আশেপাশের লোকজন দৌড়ে আসে। রিকশাওয়ালা রিকশা থামায়। এক্ষেত্রে রিকশাওয়ালার দোষ নেই। দোষটা রুশারই। সে মেইন রোডে নেমেছে। ভাগ্য ভালো অটোরিকশা ছিলো। সি এন জি কিংবা প্রাইভেট কার অথবা বাস হলে আজকে একেবারে পিষিয়ে রেখে যেতো।
রিকশাওয়ালা বেশ চোটপাট করছে। রুশা তখন পা চেপে ধরে বসে আছে রাস্তায়।
“ওই মাইয়া, চোখে দেহো না। মরনের এত শখ ক্যান? আজাইরা পাগল ছাগল মানুষ। আমার রিকশার তলেই আইয়া পড়ে।”
আশেপাশের লোকজন রুশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সাধারণত এমন দুর্ঘটনায় ভিক্টিম বেশ চোটপাট করে। কিন্তু এখানে ঘটনা উলটো৷ ভিক্টিম চুপচাপ বসে আছে। উলটো রিকশাওয়ালা কথা শোনাচ্ছে। এমতাবস্থায় এক ভদ্রলোক বলেন,
“মা, ব্যথা বেশি পাইছো?”
“নাহ, আমায় একটা রিকশা ধরে দেন আংকেল।”
“আচ্ছা, আসো উঠো দেখি।”
কয়েকজন মিলে রিকশাওয়ালাকে চুপ করিয়ে পাঠিয়ে দেয়।
আরেকটা রিকশা ধরে রুশাও বাসায় রওনা হয়। উপরওয়ালা আজ সাথে ছিলেন, নয়তো আজ হয়তো শেষ দিন হতো তার জীবনে। বিপদ কানের নিচ দিয়ে গেল। পায়ের দিকে নজর দেয় রুশা। অসম্ভব রকম ফুলে আছে বাম পা টা। ইশ! লাল হয়ে আছে। ছিলে গেছে বেশ খানিকটা। এই পা এখন কয়েকদিন তাকে ভোগাবে। খুব ভোগাবে।
আজ তিন দিন পার হয়ে গেছে।
এর মধ্যে দু’দিন ফায়াজের ক্লাস ছিলো। ফায়াজ ক্লাসে এসেছে ঠিকই। কিন্তু তার নজর রুশাকে খুঁজেছে। এই খোঁজার কারণ কী? নাকি অকারণেই খুঁজছে এই নজর রুশাকে। ফায়াজ পড়াচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তার পড়া গুলো খাপ ছাড়া লাগছে। এগুচ্ছে না ঠিকঠাক মতো। স্টুডেন্টরাও একটু কাচুমাচু করছে। স্যার পড়াচ্ছেন কী?
প্রথম দিন রুশার সাথে রিমিকে দেখেছিলো ফায়াজ। হয়তো বেশ ভালো সম্পর্ক তাদের দু’জনের। কারণ পুরো ক্লাসেই রিমি রুশার সাথে কথা বলছিলো। ভালো সম্পর্কগুলো খুব সহজেই মানুষের চোখে পড়ে। এক্ষেত্রেও বিপরীত কিছু নেই। কিন্তু ফায়াজ তো এই মেয়েকে চিনেই না। শুধু নামটুকুই জানে, রিমি। সেদিন নাম বলেছিলো। আর গতকাল পড়া জিজ্ঞেস করায় পেরেছিলো। ব্যাস এইটুকুই। চেনা নেই জানা নেই হুট করে তাকে রুশার কথা জিজ্ঞেস করা উচিত হবে তো? বাই এনি চাঞ্চ যদি রিউমার ছড়িয়ে দেয়। তবে ক্যারিয়ার শেষ। কিন্তু রুশার অনুপস্থিতিটাও তাকে তীর ছুঁড়ে মারছে। কিন্তু কেন? এর উত্তর নেই।
ক্লাস শেষে রিমি বের হলে ফায়াজ রিমিকে দাঁড় করায়।
“এক্সকিউজ মি, মিস রিমি?”
স্যারের ডাকে রিমি দাঁড়িয়ে যায়। কন্ঠস্বরটা একটু ভারী কিন্তু শুনতে বেশ। সহজেই কানে লাগার মতো। রিমি সালাম দেয়। ফায়াজও সালাম নেয়। স্যারকে বেশ ভদ্র মনে হচ্ছিলো রিমির কাছে। কত্ত সুন্দর করে ডাকলেন। ফায়াজ প্রশ্ন করে,
“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ক্যান আই আস্ক ইউ আ কোশ্চেন?”
রিমি জবাব দেয়,
“শিওর স্যার। প্লিজ।”
“হয়ার ইজ রুশা?”
স্যারের মুখে রুশার নাম শুনে বেশ অবাক হয় রিমি। পরিসংখ্যানের অংকের সূত্র ধরে ফলাফল মেলানোর মতো এই ফলাফল মেলাতে ব্যস্ত রিমি। উত্তর দেবে কী? স্যার রুশাকে চেনে? সেদিনও নাম জিজ্ঞেস না করে রুশার পয়েন্ট বলে দিলো। স্যারকে দেখে রুশার ওমন করাটা। এখন আবার আলাদাভাবে দাঁড় করিয়ে রুশা কোথায় জিজ্ঞেস করা। কেমন জানি গোলমেলে লাগছে সবটা। রিমিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফায়াজ আবারও প্রশ্ন করে,
“রিমি, রুশা কোথায়?”
স্যারের প্রশ্নের জবাবে রিমি বলে,
“রুশা একটু অসুস্থ। সেদিন বাসায় ফেরার পথে ছোট-খাটো একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।”
অ্যাক্সিডেন্টের কথা শুনে ফায়াজের বুকটা ধক করে ওঠে। এক সেকেন্ড সময় না নিয়ে পরবর্তী প্রশ্ন করে,
“অ্যাক্সিডেন্ট! কীভাবে? কোথায় আছে এখন? কী অবস্থা এখন?”
“স্যার, রুশা ভালো আছে। একটা অটোরিকশা তার রিকশা রুশার পায়ের ওপর তুলে দেয়৷ ওরও খেয়াল ছিলো না। আনমনে হাঁটছিলো হয়তো। বাম পা টা ফুলে গেছে। আর সাইড থেকে খানিকটা ছিলে গেছে। তাই দু’দিন রেস্ট নিচ্ছে। আগামীকাল হয়তো আসবে।”
নিশ্চিন্ত হতে পারছে না ফায়াজ। ভেতরে কী যেন চুরমার হচ্ছে। কিন্তু কী চুরমার হচ্ছে, তা বুঝতেছে না সে। রিমি সালাম দিয়ে চলে যায়। ফায়াজ এসে অফিস রুমে বসে। বাকি স্যাররা হয়তো ক্লাস নিতে গেছে। গোটা অফিস রুমে সে একা।
ভাবছে রুশার কথা। দুই বছরে কতখানি বদলে গেছে মেয়েটা। কথাও বোধ হয় খুব কম বলে। চোখ জোড়া আগের থেকে অনেক গভীর হয়েছে। বিয়ে হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না। আচ্ছা, রুশা কী কোনো রিলেশনে আছে? কোনো নতুন সম্পর্কে পা রেখেছে? আগে যেমন ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে তুলতো এখনো কি আগের মতোই ভালোবাসে? নাকি আমার দেওয়া ব্যথাগুলোতে মলম লাগিয়ে নিজে ভালো থাকার উপায় খুঁজে নিয়েছে?
দুটো বছর। হ্যাঁ, দু দুটো বছর পর তাকে সেদিন দেখার পর ভেতরটা নড়ে উঠেছে। রাতের ঘুমটাও ঠিকঠাক মতো হলো না। দূরত্ব এতটাই করে দিয়েছিলাম যে খুঁজেও পায়নি আমায়। তবে কেন এই দুটো বছর পর তার এখানেই আসতে হলো? ক্যারিয়ার সাজাতে ব্যস্ত ২৯ বছরের ছেলেটা আজ ক্যারিয়ার সাজিয়ে ৩১ বছরের সুদর্শন পুরুষ হয়েছে। সেদিনের সেই অবুঝ ১৯ বছরের মেয়েটি আজ ২১ এ পা রেখেছে। হয়তো অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। মন কেন এমন অদ্ভুত আচরণ করছে আজ চারটা দিন। এই আচরণের কারণ কী হতে পারে? সেই ১৯ বছরের মেয়েটি না তো?
সেদিন সম্পর্ক নামক শব্দটা আর ভালোবাসা নামক শব্দটাকে ঘেন্না লাগতো। কিন্তু আজ কেন যেন ভালোবাসা নামক শব্দটাকে ভালো লাগতে শুরু করেছে। ভালোবেসে বড় ধাক্কা খাওয়া সেদিনের সেই ছেলেটা এতদিন পর ভালোবাসাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। বয়স বাড়ছে, কিন্তু মন যেন অবুঝ হচ্ছে।
মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুক লগ ইন করে ফায়াজ। রুশার ফেসবুক আইডি টার নাম এখনো মনে আছে তার। তনিমা আফরোজ রুশা। সার্চ করতেই একদম প্রথমেই একটা আইডি চলে আসে। প্রোফাইল পিকচারটা বেশ সুন্দর। লাল ড্রেস পরা। কাঁধে চাদর জড়ানো। গালে হাত দিয়ে বসে আছে। চোখ জোড়া একদম শান্ত এবং শীতল। আজ প্রায় বহুদিন পর রুশার আইডি ঘুরছে সে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার নেশায় তখন এতটাই মগ্ন ছিলো যে সব বাদ দিয়েছিলো জীবন থেকে। কিন্তু এখন সব কিছুকেই জড়াতে ইচ্ছে করে।
“ফায়াজ সাহেব, ক্লাস নেই আর?”
পেছন থেকে ডিপার্টমেন্ট হ্যাড মোস্তাফিজ স্যার বলে উঠলেন। ফায়াজ দ্রুত মোবাইলের স্ক্রিন-লাইট অফ করে দেয়। হালকা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ে।
“আজ আর নেই। বাসায় চলে যাবো ভাবছি।”
“ওহ আচ্ছা। তা চা দিতে বলি?”
“নাহ স্যার। লাগবে না।”
“চিন্তিত লাগছে কেন? কিছু হয়েছে?”
“নাহ স্যার।”
“সামনের মাসে তো অ্যানুয়েল স্পোর্টস এর অনুষ্ঠান। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে ফার্স্ট ইয়ার থেকে দুটো স্টুডেন্ট বাছাই করবেন। তারা প্রধান অতিথিকে এবং বাকি টিচারদের ব্যাচ পরাবে।”
“জি আচ্ছা, স্যার।”
“চা খান। দিতে বলি?”
“নাহ স্যার। আজ আর খাবো না।”
হাঁটতে একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তবুও হাঁটছে রুশা। ব্যথাগুলোকে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। নয়তো এরাও তাকে কষ্ট দেবে। রুশা তার জীবন থেকে কষ্টগুলোকে একটু একটু করে দূর করতে চায়।
নাসরিন এসে মেয়ের পাশে দাঁড়ায়।
“ঘুমাস নি?”
মায়ের প্রশ্নে মুখ তুলে তাকায় সে মায়ের দিকে।
“হাঁটার চেষ্টা করছি। ভাবছি কাল ভার্সিটি যাবো।”
“এই পা নিয়ে?”
“ক্যাম্পাস অবধি আব্বু এগিয়ে দেবে। সমস্যা হবে না।”
“বাড়ি ফিরবি কী করে?”
“রিমি থাকবে তো।”
নাসরিন তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। তার মেয়েটা বদলে গেছে। আগের মতো ছোটাছুটি করে না। বেশি কথা বলে না। তার কোলে মাথা রাখে না। ছুটির দিন গুলোতে নিজের ঘরে সাউন্ড সিস্টেমে রবীন্দ্র সংগীত শোনে। আর বাকিদিন গুলোতে পড়াশোনা। না কোথাও বেড়াতে যায়। না কোথাও বসে কথা বলে। নাসরিন জানে, মেয়ের মনে এখনো সেই মানুষটাই বসবাস করছে। মাঝে মাঝে মেয়ের শান্ত মুখটা দেখলে বুকটা ছ্যাত করে ওঠে।
একজন স্যার। যেই স্যারের জন্য তার মেয়ে এতটা বদলে গেল। কে জানে মেয়ের কপালে কী আছে?
নাসরিন কিছু না বলে চলে যেতে নিলে রুশা বলে,
“আম্মু, কোনো কিছুতে অনুভূতি পাই না কেন গো? খাবারেও স্বাদ লাগে না। রুচি নষ্ট হয়ে গেল নাকি কে জানে?”
মেয়ের কথা শুনে কলিজাটা নড়ে ওঠে নাসরিনের।
“খিচুড়ি করি কালকে? খাবি?”
“নাহ থাক। যাও ঘুমাও গিয়ে।”
নাসরিন আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। রুশা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আজ আকাশে চাঁদ উঠেনি। তবে কি আজ আকাশেরও মন খারাপ?
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………