স্যার পর্ব-০৭

2
1847

#স্যার
#পর্ব_৭
লেখনীতে – আফরোজা আক্তার

আজ প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেছে।
এই দুই মাসে রুশা তার মনের সব কথা তার স্যারকে বলে দিয়েছে। খুব ভালোবাসে সে তার স্যারকে। ফেসবুকে খুব জ্বালাতন করে সে তার স্যারকে। কিন্তু একটাই অভিযোগ তার ভালোবাসা তার স্যার বুঝতে পারছে না। এই দুই মাস যতবার সে ভালোবাসি উচ্চারণ করেছে ততবারই স্যার তাকে ভালো মন্দ কথা শুনিয়েছে। কিন্তু সে তো তার অবুঝ হৃদয়ে ভালোবাসার জানান দিয়েছে, সেই ভালোবাসা সে আর তার কাছ ছাড়া করতে চায় না।
ফায়াজ প্রচন্ডরকম বিরক্ত হয়ে গেছে রুশার প্রতি। পড়া কম এই মেয়ে প্রেম/ভালোবাসার কথা বলে বেশি। প্রায় ৬০ দিন হয়ে গেছে ফায়াজের রুশার বাসায় যাতায়াত। এই ৬০ দিনের মধ্যে প্রায় ৫৮ দিনই রুশা তার ভালোবাসার কথা জানান দিয়েছে। কিন্তু সে এইসব পছন্দ করে না। বার বার রুশার ছেলে মানুষী ভেবে বিষয়টাকে অবহেলা করে গেছে সে। রুশার সব কিছুতেই সে ছেলে মানুষী খুঁজে পায়। তাই এই বিষয়টাকেও সে ছেলে মানুষী হিসেবেই নিয়েছে। কয়েকবার স্কেল দিয়ে হাতে মেরেছিলো। তবুও যেই রুশা সেই রুশা হয়েই আছে। পরিবর্তন আর হয়নি। জালি বেত দিয়েও কয়েকদিন মেরেছে। কিন্তু মারার পর সে আরও হাসে। ফায়াজ মাঝে মাঝে ভেবে পায় না সে কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে?
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফায়াজ। আজ-কাল এখানে আসতেও তার ভালো লাগে না। স্যার হয়ে পড়াতে আসে সে এখানে। কিন্তু পড়ানোর বদলে তাকে প্রেমের কথা শুনতে হয়। এটা খুব বিব্রতকর তার জন্য।
সন্ধ্যা সাত টা বেজে ৪৫ মিনিট।
রুশা তার চেয়ারে। ফায়াজ রুশার সিট রেডি করে দিচ্ছে। রুশাকে পড়া রেডি করতে দেওয়া হয়েছে। ফায়াজ আন্দাজ করতে পেরে রুশার দিকে তাকিয়ে দেখে সে তাকিয়ে আছে। অসহ্য একটা অনুভূতি হচ্ছে তার ভেতর। তাই প্রশ্ন করে,
“কী ব্যাপার রুশা? পরিসংখ্যান না পড়ে আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
স্যারের প্রশ্নের উত্তরে সোজা-সাপ্টা উত্তর দেয় রুশা।
“আপনাকে দেখছিলাম স্যার।”
“আমায় দেখার কী আছে? আমার কি রুপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে নাকি?”
“স্যার, আমি তো শুনেছি মেয়েদের রুপ বেয়ে বেয়ে পড়ে। ছেলেদের কীভাবে পড়বে?”
ফায়াজ এবার খুব বিরক্ত। রুশাকে ঠাটিয়ে দুটো চড় কষিয়ে দিলে তার মনের জ্বালা মিটতো।
“অত্যন্ত ফাযিল হয়ে গেছ তুমি রুশা। পড়ায় মন দাও। নয়তো মার খাবে।”
“স্যার, আপনার হাতের মার টাও আমার ইদানীং মিষ্টি মিষ্টি লাগে।”
ফায়াজ তাকিয়ে আছে রুশার দিকে। অত্যন্ত বিরক্ত লাগছে তার। ইচ্ছা করছে জালি বেতটা দিয়ে কষিয়ে দু ঘা তার পিঠে বসিয়ে দিতে। কিন্তু পারছে না। এত বড় মেয়ের গায়ে হাত দিতেও লজ্জা লাগে। এমনিতেও কয়েকদিন মেরেছিলো তার নিজের কাছেই লজ্জা লেগেছে। ফায়াজ এইসব ভাবছে আর সেই ফাঁকে রুশা আবারও বলল,
“স্যার, পরিসংখ্যানের রুলস থেকে আপনার সাথে প্রেম করাটা অনেক বেশি সহজ।”
এবার ফায়াজ আরও অবাক হয়ে যায়। মনে মনে ভাবছে, এখনই আমি অক্কা পাব, আই মিন পটল তুলব। এই মেয়ে কী সব বলে? ফায়াজ ইচ্ছে করে আবারও প্রশ্ন করে,
“রুশা, তুমি যে এইভাবে আমার সাথে ফ্ল্যার্ট করো। তোমার ভয় লাগে না?”
“ভয় কেন লাগবে স্যার? আপনি তো শিম্পাঞ্জি নন। আপনি তো মানুষ।”
“সরাসরি শিম্পাঞ্জির সাথে তুলনা করে দিলে?”
“দু’জনেই এক টাইপ আর কি।”
“তাহলে তো তুমিও সেই দলের।”
“যাক গে সেসব কথা। এই সূত্রটা আপনার থেকেও গোলমেলে।”
“আমি গোলমেলে?”
“হ্যাঁ, আপনি আমার সহজ সরল জীবনে হুট করে ঢুকে পড়া এক গোলমেলে সূত্র।”
“কী করে বুঝলে?”
“বোঝা যায়।”
“এখনো অনেক ছোট তুমি। আমাদের বয়সের ফারাকটা জানো? তোমার কত হবে, জোরে গেলে ১৮ কি ১৯ আমার ২৯। হিসাব করে দেখো তো, কতটা বড় আমি তোমার থেকে৷ একে তো এতো বড়, তার উপর আমি তোমার স্যার। আর তুমি আমায় প্রতিনিয়ত প্রেম ভালোবাসার কথা বলো এবং এখনো বলো। এলেম আছে তোমার।”
রুশা তার স্যারের কথা শুনে হেসে দেয়।
“স্যার, এই যে সেদিন আপনি আমায় স্কেল দিয়ে মারলেন। আবার তার পরদিন জালি বেতটা দিয়ে মারলেন। আমি যতটা ব্যথা পেয়েছি এর চাইতে বেশি ব্যথা আপনি পেয়েছেন। কারণ আমাকে মারার পর আপনি আর এক মুহুর্তও এখানে ছিলেন না। সোজা উঠে চলে গিয়েছিলেন। স্যার, আমি আমার মনে থাকা প্রশ্নটা অনেক খুঁজেছি। আপনার প্রতি আমার ভালো লাগা কাজ করে না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর এটাই সত্যি।”
রুশা তার কথায় অটল। সে ভালোবাসে এটাই সত্যি৷ ফায়াজ বলতে শুরু করে,
“ভালোবাসা কী রুশা? বললেই হয়ে যায়? আমায় কতটা চিনো? কতটা জানো? তোমার বাবা-মাকে আমি এইসব আরও আগেই বলতে পারতাম। কিন্তু বলিনি। কারণ, তারা মনে কষ্ট পেতো৷ তাদের একমাত্র মেয়ে তুমি আর খুব আদরের। তাদের কষ্ট দিতে চাই না আমি।”
“ভালোবাসা হয়ে গেলে কিছু করার আছে?”
“একটা কথা মনে রেখো রুশা, আমি তোমার স্যার। এর বাহিরে অতিরিক্ত আর কিছুই না। আমার পক্ষে এর বাহিরে যাওয়া পসিবল না।”
“স্যার, আপনাকে বাহিরে যেতে কে বললো? বাহিরে কেন যাবেন? আমরা দু’জন বাসাতেই থাকবো। বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
“রুশা তুমি কবে বুঝবে, বলো তো।”
“বোঝার কিচ্ছু নেই তো। আমি ভালোবাসি আপনাকে। এটাই বোঝার কথা।”
ফায়াজ রুশার কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। রুশাকে তার কথাগুলো বুঝিয়ে বলায় সে ব্যর্থ। সে তার মনের কথাগুলো রুশার কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ। ব্যর্থতা নিয়ে সে রুশার দিকে তাকিয়ে আছে। অবুঝ রুশাও মিষ্টি হাসি দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে।
ভাবছে, আমি আপনাকেই ভালোবাসি স্যার। আমার ভালোবাসা শুধুই ভালো লাগা নয়। আমার ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা। আমার ভালোবাসা শুধুই আমার অন্তরে লুকায়িত সুপ্ত অনুভূতি। আমার ভালোবাসা শুধুই আপনার জন্য। হ্যাঁ, আমার ভালোবাসা একমাত্র আপনার জন্যই। এই ভালোবাসা আমি আর কাউকে দিতে পারবো না।
ফায়াজ চাইছে না এখানে আর বসে থাকতে। সে রুশার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। রুশার সাথে কথা বলার মতো শক্তিটাও তার নেই। রুশার চোখ দুটো অন্য কথা বলছে। যেটাকে সে ছেলে মানুষী হিসেবে ধরে বসে আছে সেটা কি আসলেই ছেলে মানুষী? নাকি সত্যি? রুশার মনে কি তবে তার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা জন্মেছে? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব হয়? তার পক্ষে তো রুশাকে তার সাথে এইভাবে জড়ানো ঠিক হবে না? তার যে পিছুটানের অভাব নেই। সেগুলোও তো তাকে দেখতে হবে। কিন্তু মেয়েটাকে সে বোঝাবে কি করে? মেয়ে তো তার কোনো কথাই বুঝতে চাইছে না। সে তো কেবলমাত্র তার কথা-ই বলে যাচ্ছে। সে ভালোবাসে। ফায়াজ এই ভালোবাসার দাম টুকুন হয়তো দিতে পারবে না। রুশাকে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। হ্যাঁ, দিতেই হবে।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………………

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে