স্যার পর্ব-০৬

0
1795

#স্যার
#পর্ব_৬
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

রুশা বই দেখছে কম আড় চোখে দেখছে বেশি। সামনে যে তার স্যার বসে আছে। ফায়াজ স্যার। মনে মনে ভাবছে, যদি স্যার না বলে ফায়াজ বলে ডাক দেওয়া যায় তাহলে কি খুব খারাপ হবে? সে কি বকা দিবে? নাকি মারবে?
আচ্ছা, সত্যিই কি ভালো লাগা মানে চোখের আকর্ষণ? যদি তাই হবে তবে ভালোবাসা মানে কী? মনের মধ্যে খচখচ হচ্ছে তার। প্রশ্নের উত্তরটা জানা জরুরী। মা বলেছিলো সব উত্তর নাকি মন দেবে। মন ঘন্টা দেবে, মন কি কথা বলতে পারে? যে কথা বলতে পারে সে নিজেই উত্তর দিতে পারবে।
ফায়াজ রুশার দিকে তাকিয়ে আছে। হাতের কলম দিয়ে টেবিলে হাবিজাবি আঁকছে রুশা। ফায়াজ লক্ষ করে রুশা আজ একটু চুপচাপ। তার মন বলছে নিশ্চয়ই রুশা কোনো দুষ্টু বুদ্ধি আঁটছে। ফায়াজ প্রশ্ন করে,
“রুশা, এনিথিং রং?”
স্যারের কন্ঠ শুনে রুশা চমকে ওঠে। জবাবে বলে,
“নাহ স্যার। সব ঠিকঠাক।”
“না পড়ে চুপ করে বসে থেকে টেবিলে কী আঁকছো?”
“ভাবছি একটা কথা।”
“কী কথা?”
“ভালো লাগা আর ভালোবাসা এই দুটো শব্দের অর্থ কী?”
ফায়াজ থ হয়ে তাকিয়ে থাকে রুশার দিকে। এই মেয়ে আবার শুরু করে দিয়েছে। তবে এবার প্রশ্নের ধরণ পালটে দিয়েছে।
রুশা আবারও প্রশ্ন করে,
“আপনি বলুন তো স্যার, ভালো লাগা আর ভালোবাসা কি এক নাকি আলাদা?”
ফায়াজ জবাব দেয়,
“জালি বেতের বারি খেয়েছো কখনো?”
“নাহ খাইনি তো। খেতে কেমন?”
“রুশা, তুমি কিন্তু বড্ড বেশি ফাইযলামি করছো আজকে। পড়তে বলেছি, পড়ো।”
“উত্তরটা প্রয়োজন আমার। বলে দিলেই হয়?”
“তোমার আম্মুকে ডাকবো এখন আমি।”
“আম্মুকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম। বললো, মনকে প্রশ্ন করতে। মন কি কথা বলতে পারে?”
“পড়াগুলো শেষ করো।”
“আগে উত্তর দিন।”
ফায়াজ বিপাকে পড়ে গেছে। রুশা বড্ড নাছোড়বান্দা। খুব ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে যে, সে উত্তর না পেলে ঘাটাতেই থাকবে। তাই ফায়াজ বলে,
“দুটো শব্দ আলাদা। এবং দুটো শব্দই ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। যে কোনো কাউকে ভালো লাগতেই পারে। যাকে ভালো লাগবে তাকে ভালোবাসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আবার ভালোবাসা হচ্ছে এক মায়াবী অনুভূতি। যার প্রতি এই অনুভূতি কাজ করে বুঝতে হবে মন তাকেই ভালোবাসে। ভালোবাসি মুখে বললেই হয় না, কাজে করে দেখাতে হয়। আশা করি তুমি উত্তর পেয়ে গেছো। এবার পড়ো।”
রুশা তার স্যারের বলা কথাগুলো অনুধাবন করছে। কথাগুলো নিজের মনে সাজাতে লাগলো সে। স্যার কি সঠিক বলছেন? ভালোবাসা এক মায়াবী অনুভূতি। স্যারের জন্য তার মনে একদিকে যেমন মায়া কাজ করছে। অন্যদিকে স্যারের জন্য মনে অনুভূতির জন্ম হয়েছে। তার মানে সে স্যারকে ভালোবাসে। মস্তিষ্ক জানান দেওয়ার সাথে সাথে রুশা বলে ওঠে,
“স্যার, একটা কথা বলি?”
“হ্যাঁ বলো।”
“স্যার আমি মনে হয় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
“মানে কী?”
“হ্যাঁ স্যার, আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
“এবার কানের নিচে মারবো। বেয়াদব মেয়ে, এইসব কী ধরনের কথাবার্তা। আমি কি তোমার সাথে প্রেম করতে আসছি এখানে। ডাকো তোমার আম্মুকে। এইভাবে আর হয় না?”
রুশা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। এখন যদি স্যার তার মা’কে বলে দেয় তখন তার কী হবে? স্যার যদি চলে যায়, তখন তার কী হবে?

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে