#স্যার
#পর্ব_৫
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার
রুশা অপেক্ষায় আছে তার জবাবের। নাসরিন ভাবছে মেয়েকে কীভাবে বোঝাবে ভালো লাগা মানে কী? রুশা আর অপেক্ষা সহ্য করতে পারছে না। মা’কে প্রশ্ন করে,
“একটা ছোট প্রশ্নের উত্তর দিতে এতক্ষণ সময় লাগে বুঝি?”
নাসরিন হালকা হাসে। তার মেয়ের কাছে যেটা ছোট প্রশ্ন তার কাছে সেই প্রশ্নের অর্থ বিরাট। সহজ ভাষায় মেয়েকে বোঝাতে হবে। রুশা আবারও প্রশ্ন করে,
“আম্মু বলো না, ভালো লাগা মানে কী?”
“ভালো লাগা মানে চোখের আকর্ষণ।”
“সেটা কী আম্মু।”
“আমরা যখন শপিংমলে যাই তখন শপের বাহির থেকে ভেতরের জিনিস গুলো দেখি। আমাদের চোখে তখন ভালো লাগা কাজ করে। দেখিস না, মাঝে মাঝে তোর সব কিছুই ভালো লাগে। ওটা আসলে ভালো লাগা না, ওটা চোখের আকর্ষণ।”
“উত্তরটায় আমি মুগ্ধ হইনি আম্মু।”
“তবে?”
“আমি জামা-কাপড় কিংবা অর্নামেন্টের কথা বলছি না। জামা-কাপড় কিংবা অর্নামেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের সবারই ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু আমি অন্য কিছু মিন করছি, যা তুমি হয়তো বুঝতে পারছো না। নয়তো বুঝেও না বোঝার ভান ধরছো?”
“আচ্ছা কী হয়েছে তোর, বল তো আমায়।”
“কোনো মানুষকে কোনো মানুষের প্রথম দেখায় ভালো লাগলে তাকে কীভাবে নেবে তুমি?”
মেয়ের এমন কথায় নাসরিন একটু বিচলিত বোধ করে। সে মেয়েকে বোঝাতে চেয়েছে এক কিন্তু মেয়ে প্রশ্ন করেছে আরেক। এক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ।
রুশা এবার কোল থেকে সরে উঠে বসে। মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তুমি কি আমার কথা বুঝতে পেরেছো মা?”
“কাকে ভালো লেগেছে শুনি?”
“কাউকেই না। শুধু বলো এই ভালো লাগার মানে কী?”
নাসরিন মেয়ের মাথায় হালকা হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“সেটাও চোখের আকর্ষণ। কাউকে প্রথম দেখায় ভালো লাগলে বুঝতে হবে চোখের আকর্ষণ। চোখের আকর্ষণ খুব খারাপ হয়। এ আকর্ষণ অনেক সময় অনেক খারাপ কাজ করিয়ে দেয়।”
“তবে লোকে কেন বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট।”
“প্রথম দেখায় ভালোবাসা?”
“হ্যাঁ।”
“তুই এখনো ছোট। আগে বড় হ, এরপর না হয় বোঝাবো৷”
“আমায় এখনি বোঝাও।”
“আমি তোর নানুর সামনে কখনো এইসব উচ্চারণও করিনি। আর তুই আমার মেয়ে হয়ে আমার সামনে এইসব উচ্চারণ করিস। হ্যাঁ রে, ভয় লাগে না তোর?”
“আমি যদি তোমায় ভয় করি তবে বন্ধুত্ব করবো কার সাথে আম্মু?”
রুশার কথা শুনে নাসরিন আরও অবাক। আসলেই তো, মা’কে ভয় পেলে বন্ধুত্ব করবে কার সাথে? খুব দামী একটা কথা বলেছে তার মেয়ে।
“এখন তোর জানার আগ্রহ কিসে, সেটা বল।”
“ভালো লাগা এবং ভালোবাসা কি এক?”
“কখনো কখনো এক আবার কখনো কখনো আলাদা।”
“কখনো কখনো এক কেন?”
“কারণ, ভালো লাগা থেকেই ভালোবাসার শুরু। যাকে ভালো লাগে তার প্রতিই ভালোবাসা কাজ করে। তবে এটা কেবল বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে।”
“কখনো কখনো আলাদা কেন?”
“কারণ, সব ভালো লাগা ভালোবাসায় রুপ নেয় না। ভালো লাগলেই যে ভালোবাসতে হবে তেমন কথা নেই। কাউকে ভালো লাগতেই পারে। যেমন টিভিতে হিন্দি নায়ক সালমান খান, শাহরুক খান এদের ভালো লাগে কিন্তু এদের তো বলা যায় না যে ভালোবাসি।”
“তবে মানুষ বুঝবে কী করে কোনটা ভালো লাগা আর কোনটা ভালোবাসা?”
নাসরিন মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এর আগে কখনো রুশাকে এতো প্রশ্ন করতে দেখেননি তিনি। এর আগে কখনো রুশা এতোটা শান্তও থাকেনি। নাসরিন মেয়ের বুকের বাম পাশে হাত রাখে এরপর হেসে জবাব দেয়,
“সে জানে।”
“সে! সে টা কে আম্মু?”
“এই যে এইখানে যে থাকে।”
“কে থাকবে এইখানে?”
“এই ঘিলু নিয়ে আসছে প্রশ্ন করতে। বোকা মেয়ে এইখানে মন থাকে। বাকি সব প্রশ্ন মনকে করবি, দেখবি সব উত্তর পেয়ে যাবি। কিন্তু আমার কথা অন্যখানে।”
“কোন খানে?”
“তুই কারো প্রেমে ট্রেমে পড়লি না তো?”
“আম্মু, তুমিও এমন বলো।”
“এইসব শুধুই চোখের আকর্ষণ। সেই পর্যন্ত যেতে হলে আগে অনেক বড়ো হতে হবে। এর আগে এইসব শুনলে মেরে তক্তা বানাবো। এবার যান পড়তে বসেন। স্যারের পড়া ক্লিয়ার করেন।”
মায়ের মুখ থেকে স্যারের কথা শুনেই বুকটা ধক করে ওঠে রুশার। নিজের ঘরে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসে পড়ে সে।
ভাবছে, স্যারের প্রতি তার অনুভূতি কী? শুধুই ভালো লাগা নাকি প্রথম দেখার ভালোবাসা? ভালো লাগা চোখের আকর্ষণ তবে ভালোবাসা কী? মনের মাঝে লুকায়িত সুপ্ত অনুভূতি।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………………